অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তা ……… প্যাচাল পর্ব

ছোটবেলাতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে দাদাবাড়ি বেড়াতে যেতাম। সেই সময় মেহেরপুর থেকে ফেনি যাওয়া ছিলো গোটা দুই দিনের ব্যাপার। মেহেরপুর থেকে বাসে করে ঢাকা, তারপরে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ফেনি। আবার ফেনি ষ্টেশনে নেমে বিলোনিয়া এক্সপ্রেসে করে বা বাসে চড়ে পরশুরাম। সেখান থেকে রিকশাতে করে দাদাবাড়ি। খুবই ক্লান্তিকর ছিলো এই ভ্রমনটা, কিন্তু তারপরেও, গোটা বছর এই ভ্রমনটার জন্যে অপেক্ষা করতাম। বিশেষ করে শেষ তিন/চার দিন তো কোনোকিছুতেই মনোযোগ বসতো না। বার্ষিক পরীক্ষাগুলো শেষ হলেই আমার আব্বু আবার উপরের ক্লাসের বইপত্রগুলো জোগার করে নিয়ে আসতেন, যেনো আমি অংক আর বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে কিছুটা পড়া এগিয়ে নিতে পারি। বলাই বাহুল্য যে বার্ষিক পরীক্ষার পর পরেই এই নতুন ক্লাসের জন্যে লেখাপড়া রীতিমতন অমানবিক এবং অমানুষিক অত্যাচারের মতন মনে হত। দাদাবাড়িতে যাবার এই শেষ তিন/চার দিন পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের মধ্যে গল্পের বই লুকিয়ে গল্প পড়তাম। আজ প্রায় পঁচিশ বছর পরে মনে হচ্ছে পরিস্থিতির তেমন একটা বদল হয়নি। মেহেরপুর-ঢাকা-ফেনী-পরশুরামের বদলে শুধুমাত্র আলজিয়ার্স-দোহা-কুয়ালালাম্পুর-ঢাকা হয়েছে, ভ্রমনের মাধ্যম বাস/ট্রেনের জায়গাতে বিমান হয়েছে আর পড়ার টেবিলে বইয়ের মধ্যে গল্পের বই লুকিয়ে গল্প পড়ার বদলে কাজের টেবিলে বসে অফিসের ল্যাপটপে ব্লগ লিখছি। কিন্তু সেই আগের মতনই কয়েক দিন পরেই দেশে যাবার অ্যান্টিসিপেশনটা অনুভব করছি।

মাঝে মাঝে মনে হয়, বড় হয়ে আসলে তেমন একটা লাভ হয়নি। ছোট থাকতে বাবা মায়ের শিডিউল অনুযায়ি সব কিছু করতে হত, এখন বাচ্চাকাচ্চাদের শিডিউল দেখে করতে হয়। আগে আব্বুর খবর দেখার জ্বালায় কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতে পারতাম না, এখন বাচ্চার কার্টুন দেখার জ্বালাতে আমি ফুটবল দেখার সুযোগ পাই না। ছোট থাকতে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া লাগতো, এখন যাচ্ছি অফিসে। আগে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতাম, এখন দুশ্চিন্তা করতে হয় নিজেদের ভবিষ্যত, বাচ্চাকাচ্চাদের লেখাপড়া, বাচ্চাকাচ্চাদের বেড়ে উঠার সোসাইটি – এইসব কিছু নিয়ে। দুই একটা সুযোগ সুবিধা ছাড়া বড় হতে হতে মনে হচ্ছে পরিস্থিতির উন্নতির চাইতে অবনতিই বেশী হয়েছে।

আলস্থ্যতা (আলসেমি + ব্যস্থতা) রোগে ভুগছিলাম। তাই সিসিবির সবার সাথে একটা ব্যক্তিগত গুরুত্বপুর্ণ খবর শেয়ার করবো করবো করেও করা হয়ে উঠছিলোনা। ভাবছি, এত দেরী যখন হলোই, আরো একটু দেরী করি।

যা হোক, “দৃষ্টি আকর্ষন” ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম গত কয়েকদিন ধরে। পত্র-পত্রিকার দৃষ্টি আকর্ষন টাইপের বিজ্ঞাপন না, আমাদের সবার মধ্যেই অন্যের মনোযোগ পেতে চাইবার যে প্রবণতাটা আছে সেটা আরকি। সেই ছোটবেলা থেকে শুরু হয় কান্নাকাটি দিয়ে বাবা-মায়ের দৃষ্টি আকর্ষন। একটু বড় হয়ে গেলে স্কুলে গিয়ে ভালো লেখাপড়া করে বা ভালো করে দুষ্টামি করে টিচারদের দৃষ্টি আকর্ষন। আরেকটু বড় হবার পরে একটু কুউল টাইপের অ্যাকসেন্ট দিয়ে বন্ধু-বান্ধবের দৃষ্টি আকর্ষন, তারপরে মাঞ্জা-টাঞ্জা মেরে মনে দোলা লাগানো মেয়ে বা ছেলেটার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা। তারপরে চাকরী জীবনে ঢুকে বসের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যে গাধার মতন খাটা বা হাল্কার ওপরে ঝাপসা চাপাবাজির ওপরে থাকা। জুটি বাধার পরে স্পাউসের (শব্দটার ভালো বাংলা মনে আসছে না, কারো জানা আছে কি?) মেজাজ খারাপ করিয়ে দিয়ে (ছেলেদের জন্যে প্রযোজ্য) বা নিজের মেজাজ গরম দেখিয়ে (মেয়েদের জন্যে প্রযোজ্য) স্পাউসের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা। সব সময় বাকি সবার মনোযোগের মধ্যমণি হবার চেষ্টা করতে করতে নিজেও যে অন্যদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, সেটা অনেকেরই আর মনে থাকে না।

শহীদ ভাইয়ের লেখা ভালোবাসা সংক্রান্ত লেখাটা পড়ে একটা ব্যাপার মাথায় আসলো। প্রেম করার সময়ে প্রেমিক বা প্রেমিকারা অপর জনের প্রতি যতটা মনোযোগ দেয়, বিয়ের পরে মনে হয় এই মনোযোগ দেবার পরিমান বা মাত্রাতা বেশ কমে যায়। অর্থাৎ বিয়ে হয়ে গেলে আমরা সবাই অনেক ব্যাপার, for granted (এটার বাংলা প্রতিশব্দ মনে আসছে না), হিসেবে ধরে নেই। ফলাফল হিসেবে, বিয়ের পরে রোমান্সের পরিমানটা মনে হয় কিছুটা কমে যায়। আমরা যখন কৈশোরকালে ছিলাম, তখন মুরুব্বীদের মুখে মুখে শুনতাম – প্রেমের বিয়ে টেকে না। প্রেমের বিয়ে না টেকার পেছনে এই রোমান্স কমে যাবার ব্যাপারটা একটা কারন হতে পারে। কারন সেই সময়ে প্রেম করতে হত মুরুব্বিদের নজর এড়িয়ে বা আদেশ নির্দেশ অমান্য করে। তারপরে বাপ মায়ের ওপরে গোস্বা বা কান্নাকাটি করে বিয়ের জন্যে রাজি করাতে হত। রোমাঞ্চ আর রোমান্স – ওই বয়েসটাতে (১৮-২৮) ছেলে মেয়েরা সাধারনত যেটা চায় আরকি, সেটার বিশাল একটা সোর্স ছিলো এই প্রেম করার প্রসেসটা। এখন বিয়ে হয়ে গেলে রোমান্সের পরিমান সাময়িকভাবে বেড়ে গেলেও, পরে একটার পরে একটা বড় বড় দায়িত্ব, এই যেমন উপার্জন, বাচ্চা-কাচ্চা ইত্যাদি, চলে আসতে থাকে তখন রোমান্সও কমে যেতে থাকে। আর যেহেতু প্রেম করার সময়ে যে পরিমান ড্রামা করা লাগতো বিয়ের পরে তা করা লাগছে না, তাই রোমাঞ্চ ব্যাপারটা মোটামুটি প্রথমেই বিদায় নেয়। তাই একঘেয়ে সম্পর্কটাকে টানতে টানতে একটা সময়ে একজনের বা দুইজনেরই হঠাৎ মনে হতে পারে, “ভুল করলাম নাকি?” তবে শুধু প্রেমের বিয়ে না, অ্যারেঞ্জড বিয়েতেও প্রায় একই রকম কারনে সম্পর্কে একঘেয়েমি আসতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা, কারো হাত ধরে অন্তহীন পথে চলতে চলতে হঠাৎ আবিষ্কার করা যে মানুষটার বদলে মানুষটার ছায়ার হাত ধরে আছি, মানুষটা পেছনে কোথাও কোনো বাঁকে হারিয়ে গেছে।

মানুষ পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় কেনো বা বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেনো – প্রশ্নদুটির বড় একটা উত্তর হয়ে পারে, সম্পর্কে একঘেয়েমি। বিয়ে ভাঙ্গার আরো কারনগুলোর মধ্যে থাকতে পারে, স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি সন্মানবোধের অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি। যাহোক, পরকীয়া ব্যাপারটার যদি কোনো ফ্লো-চার্ট করা যায়, সেটা কেমন হতে পারে? আমার মতে –
১) প্রিকন্ডিশন (পুর্বকারন, এটা কি আদৌ কোনো একটা শব্দ?)
ক) বাসাতে বউ একঘেয়ে ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে খালি ক্যাচক্যাচ করে, শালার লোকে যে বলে, পুরুষ ২ প্রকার, জীবিত আর বিবাহিত — ঠিকই বলে, জীবনটা তামা তামা হয়ে গেলো। — ইত্যাদি ইত্যাদি
খ) স্বামী এত ডমিনেটিং কেনো, মেয়ে হয়েছি বলে কি আমার কোনো স্বাধীনতা নেই? আমি কেনো ওকে আমার কোন সময়ে কি কি করলাম সব কিছুর রিপোর্ট দিতে হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি

২) মুল চরিত্র
আসলে পরকীয়া চরিত্র যেকেউ হতে পারে। আগের দিনে মনে হয় একটু দূর সম্পর্কের ভাই বা ভাবীদের প্রাধান্য ছিলো এই পরকীয়ার মুল চরিত্রের ক্ষেত্রে। তবে এখন মোবাইল বা নেট এর সুযোগে অপরিচিত অনেকের সাথেই পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ আছে। এবং লাস্ট বাট নট লিস্ট, অফিসের কলিগ। বর্তমানে কর্পোরেট কালচারের কারনে অনেককেই মাঝে মাঝেই ১০/১২ ঘন্টাও অফিস করতে হয়। টিমের মধ্যে ছেলে মেয়েরা সবাই পাল্লা দিয়ে কাজ করে। এবং দিনের অনেকটা সময় একসাথে কাটালে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা চলে আসেই। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থেকেই হয়তো পরকীয়ার শুরু হতে পারে।

৪) ফলাফল
৩ নম্বর স্টেপটা বাদ দিয়ে গেলাম, কারন ওই স্টেপে কি আছে, তা মোটামুটি সবারই জানা আছে। তো ফলাফলে থাকছে, স্বাভাবিকভাবেই, ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া, যেটা হলো পরকীয়ার সবচাইতে কম গুরুত্বপুর্ন কন্সিকোয়েন্স। বড় কন্সিকোয়েন্স এর মধ্যে, এই মুহুর্তে সেই বাবা-মার প্রতি বাচ্চাদের এবং বাচ্চাকাচ্চাদের দাদাদাদি বা নানানানিদের সন্মানবোধ নষ্ট হয়ে যাওয়া ছাড়া এই মুহুর্তে আর কিছু মাথায় আসছে না। বাচ্চাদের দাদাদাদি বা নানানানিদের কথা আনলাম, কারন, আমার মনে হয়, বাচ্চাকাচ্চারা যতই বড় হয়ে যাক না কেনো, তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতার জন্যে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে বাবামায়েরা সবসময়ে নিজেদের দায়ি করেন। একটা বয়েসের পরে সবার মনে হতেই পারে আমার নিজের সুখটাই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন, বাবা-মা বা বাচ্চাকাচ্চাদেরকে পরিবর্তনের ব্যাপারটা জাস্ট মেনে নিতে হবে। কিন্তু তারপরেও তারা জাস্ট মেনে নিতে পারেনা। তবে ভবিষ্যতে যখন পরিবারের ভেতরের বদলে বাচ্চাকাচ্চারা ল্যাবরেটরিতে জন্ম নেবে এবং সেখানেই বড় হবে, তখন আশা করা এই মেনে নেবার ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে, ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইনা এই ধরনের সময় কখনোই আসুক।

তাহলে সম্পর্কের একঘেয়েমি থেকে কিভাবে বাচা যায়? মাথাব্যাথার জন্যে মাথাকাটা টাইপ সমাধান হলো, বউকে চাকরী করতে দেয়া যাবে না, ঘর থেকে বের হতে দেয়া যাবে না। মোবাইল কোম্পানিগুলোকে চাপ দিতে হবে নতুন প্রোডাক্ট বের করার জন্যে। এই যেমন, যুগল সিম। স্বামীর সিমটা মাস্টার অ্যাকাউন্ট। মাস্টার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য সিমের ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি নম্বর হিসেবে ১০/১২ টা নম্বর সেট করে দেয়া যাবে। (জামাই ছাড়া আর ১০/১২ জন আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ থাকলেই তো মেয়েদের জন্যে যথেষ্ঠ, নাকি??) আর মেয়েরা ইন্টারনেট দিয়ে কি করবে? ফাইজলামী করো মিয়াঁ?
আর ছেলেদের জন্যে, সানা ভাই যেমন বুদ্ধি দিয়েছিলেন, ছেলেদেরও বোরকা পরিয়ে রাখার চলন শুরু করা যেতে পারে। সম্পর্কের একঘেয়েমিটা আসলে কাটবেনা এবং পরকীয়া দূর করে ফেলসি — এই টাইপের একটা স্বান্তনা মনে আসা ছাড়া এই পদ্ধতির কোনো ভালো দিক নেই।

শহীদ ভাইয়ের লেখাটাতে দুইজনের একান্ত সম্পর্কটাতে আরো একজন বা দুইজনকে যোগ করার বেশ কিছু উপায়ের নাম লেখা আছে, আমি আর এখানে আলাদা করে লিখলাম না। আসলেই যদি আমাদের দেশে এই ব্যাপারগুলোর চল শুরু হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে, ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো ব্যাপারটা দুঃখজনক। যাহোক, এই উপায়গুলো মাথাব্যাথার জন্যে এ্যাসপিরিন খাবার মতন সহজ সমাধান। মানে হলো মাথাব্যাথা ছাড়বে ঠিকই, কিন্তু লিভারেরও বারোটা বাজতে থাকবে।

যুগল সম্পর্কের কথা কিছুক্ষনের জন্যে ভুলে কিছুক্ষনের জন্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আসা যাক। ক্যাডেট কলেজ ব্লগের সাথে আছে এমন কাউকেই ব্যাখ্যা করে বলে দেয়া লাগবেনা যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সব সময়েই ইন্টেরেস্টিং। আমরা ১০/১২ বছর পরেও পুরোনো স্মৃতিগুলো নিয়ে জাবর কাটি, সেই জাবর কাটার সময়েই দেখা যায় নতুন নতুন জোক্স সৃষ্টি হচ্ছে, যেটা কিনা আমরা পরের গেট টুগেদারে নিশ্চিতভাবেই জাবর কাটবো। মোট কথা, কোনো বোরিং পার্ট নেই এই সম্পর্কটাতে। এখন স্ত্রী বা স্বামীর সাথে এই ধরনের বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। স্বামীর বা প্রেমিকের আরো মেয়েবন্ধু এবং স্ত্রী বা প্রেমিকার আরো ছেলেবন্ধু থাকতে পারে। এক ছোট ভাইয়ের কমেন্টানুযায়ি (ভাই, তোমার নাম মনে আসতেছে না আর পুরানো ব্লগগুলা ঘেটে দেখতেও ইচ্ছা করতেছে না, নাম উল্লেখ না করার জন্যে সরি (আমি আবার বিনয়ের আবতার কিনা)), “গার্লফ্রেন্ড কারো সাথে হেসে কথা বলতে দেখলে কলিজায় ব্যথা লাগে”। স্বাভাবিক উলটো ব্যাপারটাও ব্যাপকভাবে সত্যি এনং খুবি স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন এই প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রীর নিজেদের দায়িত্ব হচ্ছে কোনোভাবেই তার বন্ধুত্বগুলো যেনো তার স্পাউসের ঈর্ষার কারন না হয় সেটা নিশ্চিত করা। খুবই কঠিন কাজ।

ছোট বাচ্চারা পার্কে বা খেলার মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আছাড় খেলে দেখা যায়, প্রথম এক দুই সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে থাকে, তারপরে বাবা-মা বা যার সাথে বেড়াতে এসেছে তার দিকে হাত বাড়িয়ে চিল চিৎকার দিয়ে কান্না। কান্নাটা কিন্তু ব্যথার চাইতে ভয় এবং বাবা-মা বা যার সাথে বেড়াতে এসেছে তার মনোযোগ এবং আদর পাবার জন্যে। এই বাচ্চারাই আস্তে আস্তে বড় হয়, পার্কের বদলে জীবনের রাস্তাতে হোচট খায়, পড়ে যায়। তবে বড় হতে হতে নিজের যত্ন নেয়াটাও যেহেতু তারা শিখে নিয়েছে, তাই কারো দিকে হাত বাড়িয়ে হয়ত কান্নাকাটি করা শুরু করেনা। তবে যত বড়ই হই না কেনো আমরা, আছাড় খাবার পরে যত্ন নেবার জন্যে, স্বান্তনা দেবার জন্যে কেউ যদি কেউ থাকে, মনটাই ভালো হয়ে যায় সাথে সাথে। ন্যাগিং বা ডমিনেট করার চেষ্টা করাটা সহজ। পার্টনারের প্রতি সব সময়ে মনোযোগ দেয়া, যেনো সে জীবনের রাস্তাতে পিছিয়ে বা বাঁকে হারিয়ে না যায় এবং সন্মান দেখানো যেনো সে তার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার শক্তি অর্জন করতে পারে, কঠিন কাজ। কিন্তু এই কঠিন কাজ করে যেতে পারলে, শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলা যাবে — worth it।

যা হোক অনেক প্যাচাল পেড়ে ফেললাম। পুরোটাই জাস্ট আমার ব্যক্তিগত অসংলগ্ন চিন্তা। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই ইউনিক। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সবার সব রিলেশনশীপগুলোও ইউনিক। তাই কোনো কিছুকেই রিলেশনশীপের রুল হিসেবে দাবী করা যায়না। মাথায় ঘুরোঘুরি করছিলো দেখে লিখে ফেললাম। বাংলার অনভ্যাসে অনেক ইংরেজী ব্যবহার করেছি, এবং প্রচুর বানান ভুল আছে। আশা করি, বড় এবং ছোট ভায়েরা ঠিকঠাক মতন ধরিয়ে দেবেন। তো প্রথমে যে খবরটা শেয়ার করবো বলে বলেছিলাম। এই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে আরো একটা কন্যার জনক হয়ে গিয়েছি।

ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, ছোটটা (হানি-মইনুল)v2.0, তবে ব্যক্তিগতভাবে সে, আনুশা ইসলাম মানহা, নামেই পরিচিত হবে। সবাই v1.0 এবং v2.0 দুইটার জন্যেই দোয়া করবেন।

১,০৪২ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তা ……… প্যাচাল পর্ব”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    দুই মেয়ের বাবা এখন তুমি - অনেক অনেক অভিনন্দন। অনেকদিন ডুব দিয়ে অবশেষে ভেসে উঠলে। তুমি দেখি দিন দিন সম্পর্ক বিশারদ ডঃ লরা হয়ে যাচ্ছে। হু ভাবছি তোমার লেখার কি বিশ্লেষণ করব? মেয়েদের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলতে পারি মেয়েরা সবচেয়ে ভুল করে যখন তারা মনে করে আরেকজন এসে তাকে সুখি করবে। যতক্ষণ সে নিজে সুখি হতে জানছে না ততক্ষণ সে সুখি হচ্ছে না তা সে যতই সংগি পাল্টাক না কেন। আর একজন অসুখী মেয়ে স্বভাবতই অভিযোগপ্রবণ হবেই। আর ছেলেরা মেয়েদের স্বাধীনতা দিতে কুন্ঠা বোধ করে না যদি সে নিশ্চিত হয় যে এই মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না। মজার ব্যাপার হলো অনেক এক্সদের আবার ডেট করতে দেখছি। অর্থাৎ সম্পর্ক ভেংগে যাওয়ার পর আবার ডেট করছে। আমার মতে তড়িৎএর মতো সম্পর্কেও দুটো ভাগ থাকে। ট্র্যানজিয়েন্ট আর স্টেডি স্টেট। তা একবার প্রেম কতো কি দশবার প্রেম করো ট্র্যআনজিয়েন্ট না তো জানা হয়ে যায়। কিন্তু স্টেডি স্টেটটা জানতে হলে সুইচ অন করে রাখতে হয়। এই আর কি। ভালো থেক।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

      ধন্যবাদ ওয়াহিদা আপা।

      মেয়েদের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলতে পারি মেয়েরা সবচেয়ে ভুল করে যখন তারা মনে করে আরেকজন এসে তাকে সুখি করবে। যতক্ষণ সে নিজে সুখি হতে জানছে না ততক্ষণ সে সুখি হচ্ছে না তা সে যতই সংগি পাল্টাক না কেন। আর একজন অসুখী মেয়ে স্বভাবতই অভিযোগপ্রবণ হবেই। আর ছেলেরা মেয়েদের স্বাধীনতা দিতে কুন্ঠা বোধ করে না যদি সে নিশ্চিত হয় যে এই মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না।

      পুরোপুরি একমত।
      এক্সদের ডেটিং এর ব্যাপারটা বেশ কিছু বই পড়ার আর কিছু সিরিজ দেখার সময় খেয়াল করেছিলাম। বেশ মজা লেগেছিলো। এক্সদের মধ্যে ডেটিং এর ব্যাপারটা দুইজনের জন্যেই অনেক সহজ হবার কথা। নতুন কারো সাথে পরিচিত হতে হবে ---- এই টাইপের কোনো প্রেশার নেই আর অনেক কমন জোক্স জানা আছে, কথা বলতে বলতে awkward সাইলেন্সের কোনো ভয় নেই। 🙂 🙂 🙂
      হয়ত বিয়ের সম্পর্কটা বা কমিটেড রিলেশনশীপ ব্যাপারটা এদের মনে প্রেশার সৃষ্টি করে। এই জন্যে হয়ত ইচ্ছে করেই সম্পর্কটাকে স্যাবোটাজ করে ফেলে।

      জবাব দিন
  2. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ফেব্রুয়ারিতে ভাতিজি হয়েছে আর ডিসেম্বরে খবর দেওয়া হল।

    সানা ভাই যদি এটার একটা দৃষ্টান্তমূলক বিচার না করে তাহলে আর খেলব না। শুধু ফ্রন্টরোলে হবে না। এইটার জন্য ইডি...।

    আল্লাহ প্রিন্সেস ১ এবং প্রিন্সেস ২ টাকে জীবনে অনেক অনেক সুখী করুক।

    জবাব দিন
  3. সামিয়া (৯৯-০৫)

    চমৎকার লেখা। মাঝে মাঝে অলীক চিন্তাও মনকে গ্রাস করে। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে- এই ইনসিকিরিউটি থেকে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। পার্টনারের এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখা উচিৎ। স্পেশালি অনেক টান বাড়ানোর জন্য পার্টনারের মধ্যে ঈর্ষা জাগানোর চেষ্টা করে, এটা খুবই খারাপ। এতে করে উল্টোটা হয়।

    মঈনুল ভাই, এতদিন পর আপনার লেখা পড়ে খুবই আনন্দ নিয়ে পড়লাম। শেষে এসে আনন্দটা দ্বিগুন হলো। আমি তপু ভাইয়ের সাথে সহমত, ফেব্রুয়ারীর খবর ডিসেম্বরে জানানোর মানেটা কি? তিনশটা আইসক্রীম ডিউ থাকলো।

    জবাব দিন
  4. রাব্বী (৯২-৯৮)

    রশীদ হলের সবুজ লনে বসে যাকে দেখেছি ভাবলেশহীন বিকাল পার করতে একসময় সে এখন আলজিয়ার্সে 'অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তা' করে! অধঃপতন। ঘোর অমানিশা চারিদিকে 😕

    তোর মেঘবালিকাদের জন্য শুভকামনা! 🙂


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সোজা পাঁচতারা।

    এই পোস্ট সম্পর্কে একটা কথাই বলা যায়। কুড নট এগ্রি মোর !!!

    যা হোক দ্বিমতের জায়গা তেমন নেই বলে নারী পুরুষ সম্পর্ক বিষয়ক ভাবনায় খুব বেশি গেলাম না।

    আপনার মেয়েকে প্রথম জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা 😀 😀

    আর আপনাকে আর ভাবীকে বাসি অভিনন্দন।

    অহ, প্রথম পিচ্চি বাদ গেছে। ভাতিজির জন্য অনেক আদর। 🙂

    ভালো থাকুন অনেক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।