অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তা ………আজাইরা পর্ব

সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরন —– পুরা আজাইরা প্যাচাল।

ছুটিতে যাবার আগে জেরোম কে জেরোমের থ্রী মেন ইন অ্যা বোট পড়ে ব্যাপক মজা পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম ধারাবাহিক অনুবাদ শুরু করে দেবো কিনা। পরে দেখলাম, সেবা প্রকাশনী আর প্রজাপতি প্রকাশনী দুইটা থেকেই ত্রি রত্নের নৌবিহার নামে অনুবাদ করা হয়ে গিয়েছে। আলসেমি করে আর কিছুই লেখা হয়নি। অবশ্য কি নিয়ে লিখবো সেটাও খুজে পাচ্ছিলাম না। আজ দিহান ভাবী লেখার টপিকও ধরিয়ে দিলেন।

দেশে পৌছালাম ১৯ তারিখ সকাল ২ টায়। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে প্রথম যেটা অনুভব করলাম, তা হলো ভ্যাপসা গরম। আমাকে নিতে আসা ড্রাইভার আর আমার ছোট ভাইয়ের কাছে থেকে জানলাম, বৃষ্টি লুকোচুরি খেলার কারনে আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে গরমে সবারই কাহিল অবস্থা। পরের কয়েক দিনে আমিও খেয়াল করলাম ব্যাপারটা, আকাশে মেঘ আছে, চার-পাঁচ মিনিটের জন্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হচ্ছে, কিন্তু বর্ষার যে আমেজ, সেটা পাওয়া যাচ্ছে না বরং আরও বেশী অরম লাগছে। ধারে কাছে কোনো আবহাওয়াবিদও খুঁজে পাচ্ছিলাম না যাকে জিজ্ঞেস করবো – বর্ষা কেনো ডজার ? কেনো এই কার্পণ্য বৃষ্টি নামাতে? এর মধ্যে হঠাৎ মনে হলো, মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরে আসি। মেয়ের মা গিয়েছে পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্যে, সেখান থেকে আবার বিআরটিএ অফিসে যাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স আনতে। মেয়েকে নিয়ে ওর পিছু পিছু ছুটলাম। ঠিক হলো, মিরপুর ১০ এ একত্র হবো, তারপরে লাঞ্চ করে চিড়িয়াখানা যাওয়া যাবে। খাওয়া দাওয়া পরে বাইরে এসে দেখি, মোটামুটি সব কিছু ভাসিয়ে দিচ্ছে। তিনজনে মোটামুটি আধা ভেজা হয়ে আশ্রয় নিলাম ফুফাতো ভাইয়ের বাসাতে। বৃষ্টি থামার পরে বাসাতে ফেরার জন্যে সিএনজি নিয়ে শেওরাপাড়া পৌছুতে পৌছুতে বুঝলাম, লোকজনের বৃষ্টি প্রার্থনাতে বর্ষা বিরক্ত হয়ে মোটামুটি ভালোই ঢেলে দিয়েছে। রাস্তাতে বেশি গাড়ি না থাকলে আর পানিটা একটু পরিষ্কার হলে, সিএনজিটাকে নৌকা কল্পনা করে ভাবতে পারতাম, তিন প্রহরের বিলে নৌভ্রমন করছি। কি জানি … তিন প্রহরের বিলের পানিও হয়ত এখন নোংরা হয়ে গিয়েছে, কামরুল বা আর যারা নিয়মিত যায়, তারা ভালো বলতে পারবে। তবে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, জানুয়ারিতে মালেয়শিয়া আসার আগে একবার ভেবেছিলাম মেয়েকে চিড়িয়াখানাতে নিয়ে যাবো। যেদিন যাবো বলে ঠিক করেছিলাম ঠিক সেদিনও এই রকম অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিলো। আমার সাথে বৃষ্টির এই দুশমনি কেনু কেনু (কপিরাইট – সম্ভবত রায়হান আবীর)?? যাহোক, রাতের বেলাতে একটু রোমান্টিক আমেজ পাবার জন্যে বারান্দার দরজা খোলা রেখেছিলাম, বৃষ্টির গন্ধটা যেনো ঘরে থাকে। মাঝরাতে দেখি রুমের মধ্যে পানিতে ভেসে যাচ্ছে। বউ নগদে ঝাড়ি দেয়া শুরু করলো, কেনো বারান্দার দরজা খোলা রেখেছি। পরে বাতি জ্বালিয়ে দেখি রুমের অর্ধেক ভেসে যাচ্ছে, যেটা শুধু বৃষ্টির ছাটের পক্ষে করা সম্ভব না। রুমের বাইরে গিয়ে দেখি, মেইন দরজা দিয়ে পানি ঢুকে আমার এবং আমার বোনের রুম ভাসিয়ে দিয়েছে। গ্রাউন্ড ফ্লোর ঢুবে গেলো কিনা দেখার জন্যে বের হয়ে বুঝলাম, ছাঁদ উপচে সিড়ি বেয়ে পানি সব ফ্লাটের মধ্যে ঢুকছে। বুয়েটে থাকতে আমাদের শেষ সেমিস্টারে, মোটামুটি সব হলের নীচ তলা অর্ধেক ঢুবে গিয়েছিলো। তখন তরুন মনের কারনে কিংবা রশিদ হলের পাঁচ তলায় থাকার কারনে ব্যাপারটা খুব রোমান্টিক লেগেছিলো। কিন্তু এইবার বাসার পানি ঊঠাতে উঠাতে সিরিয়াস কিছু গালাগালি করছিলাম। বয়েস হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।

দুই সপ্তাহের ছুটির প্রথম সপ্তাহ কেটেছে ছোট ভাইয়ের বিয়ের জন্যে দৌড়াদৌড়ি করে। আকদের পরে বড় চাচা যখন বললেন, তুমিও শেষ পর্যন্ত ভাসুর হয়ে গেলা !!!! তখন নিজেকে বেশ মুরুব্বি মুরুব্বি লাগছিলো। কিন্তু কিছুক্ষন পরে আমাদের এক আত্মীয় কনে পক্ষের একজনের কাছে – “বরের ভাই” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবার পরে সে যখন বললো, “বরের তো জানতাম একটা বড় ভাই আছে, ছোট ভাইয়ের কথা তো জানতাম না!!!!”, তখন চিন্তা করছিলাম একটু অপমানিত বোধ করবো কিনা। পরে মনে হলো থাক …… কি দরকার … এমনিতেই ইদানিং বিয়ের অনুষ্ঠানে মন খারাপ থাকে। এক বন্ধুর বিয়েতে আমার মেয়ে খুব মনোযোগ অনুষ্ঠান দেখছে দেখে আমি ওকে বলেছিলাম, তুমি ওই আন্টিটার মতো পাপাকে রেখে চলে যেতে পারবা ?? সে তখন আমার দিকে ফিরে হাত নেড়ে বলেছিলো, “তা তা পাবা …… ” (পাবা = পাপা এবং বাবার মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, এখনি মেয়ে ডিজুস হয়ে গেসে, খুব চিন্তায় আছি)। তখন থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেই মনে হয়, আর ২২ বা ২৪ বছর …… তারপরে আমারটাকেও ……

ন্ধু বান্ধবদের সাথে ঠিক মতন দেখা করতে পারিনি দাঁতের কারনে। দেশে ফেরার পরের দিনই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। উনি জানালেন, একটা রুট ক্যানাল, একটা ক্যাপ, তিনটা ফিলিং এবং ষোল হাজারের মতন টাকা লাগবে। নোড়া দিয়ে বাড়ি মেরে অই দাঁত ফেলে দেবার কথা খুব সিরিয়াসলি চিন্তা করছিলাম। পরে বাসার সবাই ঝাড়ি দিয়ে ডাক্তারের কাছে সময় নিতে বাধ্য করার পরে দেখি সবগুলো সিটিং সাড়ে সাতটার পরে। অর্থাৎ আড্ডা জমার আসল সময়ে আমাকে হাঁ করে এবং কথা না বলে থাকতে হবে, এবং উত্তরা ঢাকার আড্ডার আসল জায়গাগুলো থেকে বিরক্তিকর রকম দূরে হওয়ায় আড্ডা মিস। তবে মাঝখানে একদিন আকিককে সাথে নিয়ে রনির অফিসে দুপুরে হানা দিয়ে দেখি, ওয়ারিদের অফিসে বুয়েটের সিভিলের অনেক ক্লাসমেট আছে। কিভাবে কিভাবে জানি সবাই মিলে রনিকে বেটে দুপুরের খাবার স্পন্সর করিয়ে ফেললাম। এখনো পরের পয়সায় ট্রিট পাইতে ভালো লাগে।

হুদিন পরে ১ তারিখে সিসিবিতে ঢুকে প্রথমেই যত লেখা মিস করেছি সব পড়ে ফেললাম। আমার অবজারভেশন –
১) বৃষ্টি আসার পরের দিনগুলিতে খুব জটিল রোমান্টিক কিছু কবিতা এসেছে। সানা ভাইয়ের কাছে আবদার থাকবে উনি যেনো নুপুর ভাই, আন্দালিব এবং সৌমিত্রের মধ্যে একটা ত্রিমুখি কবিয়াল লড়াইয়ের আয়োজন করেন।
২) হাসানের “তিনি” সিরিজ এবং এই নতুন লেখা ডাল দারুন লেগেছে।
৩) রবিন ভালোবাসার বন্ধুত্ব ঝুলিয়ে রেখে ভ্যাগাবন্ড (কোনো ভাবেই জেমস বন্ডের সাথে মেলানো চলবে না) হয়ে যাচ্ছে।
৪) আমাদের কলেজের, আমার হাউসের, ৯৪ ব্যাচের আরেক ছেলে, যে কিনা রাত জেগে মোটেও লেখাপড়া করতে পারে না, বহু আগে বলেছিলো, সুন্দরী প্রতিবেশীনি নিয়ে একটা প্লটের ওপরে কাজ করছে। আমার উচিৎ ছিলো, কি কাজ করছে জানতে চাওয়া। প্লটের ওপরে গল্পের বদলে বাড়ি ঘর বা অন্য কিছু তুলে দিলো কিনা কে জানে ……
৫) সানা ভাই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময় নিয়ে আর লেখেননি।
৬) মাহমুদ ফয়সাল এবং আরো অনেকেই নিয়মিত লিখছে না।
৭) দিহান ভাবীর লেখা দুইটা ভাল্লাগসে।
৮) কাইয়ুম অনেক দিন পরে লেখা দিসে।
৯) আর মনে পড়তেসে না ……

৩,০৩৯ বার দেখা হয়েছে

৫০ টি মন্তব্য : “অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তা ………আজাইরা পর্ব”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)
    আলসেমি করে আর কিছুই লেখা হয়নি। অবশ্য কি নিয়ে লিখবো সেটাও খুজে পাচ্ছিলাম না। আজ দিহান ভাবী লেখার টপিকও ধরিয়ে দিলেন।

    দিহান দেখি খালি সর্বোচ্চ কমেন্টকই না ... লেখকদের'কে টপিক দিয়া দিয়া, লেখা দেওয়ার উৎসাহ দানেও এগিয়ে আছে ... 😉


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    যাক......মইনুল ভাই আবার ফিরা আসছে আমাদের মাঝে! :hug:
    আপনার সাথে দেখা হইল না, উত্তরায় থাকি তারপরও। সরি ভাইয়া, আমার উচিত ছিল আপনার সাথে যোগাযোগ করা। 🙁
    প্রতিবেশীনিকে নিয়ে প্লটের কাজ এখনও আগায়ে চলতেছে.........কাজ শেষ হইলে লেখক গল্প লেখার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবেন বলে জানিয়েছেন। 😀
    লেখায় :thumbup:

    জবাব দিন
  3. মইনুল ভাই অবশেষে ফিরে এসেছেন...
    ভাইয়া, আপনার কমেন্ট দারুণ মিস করতাম...
    দিহান আপু আপনার জায়গা দখল করার চেষ্টায় আছেন... অনেকদিন ফাঁকা মাঠে অবলীলায় গোল দিয়ে চলেছেন...

    আপনার লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
    এইরকম লেখা আমার অসম্ভব ভালো লাগে--- সরল ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ...... আরেকজন মানুষের চিন্তার ধরণকে অনুভব করা যায়...

    স্বাগতম ভাই।
    🙂 🙂

    জবাব দিন
  4. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    কিভাবে কিভাবে জানি সবাই মিলে রনিকে বেটে দুপুরের খাবার স্পন্সর করিয়ে ফেললাম। এখনো পরের পয়সায় ট্রিট পাইতে ভালো লাগে।

    শত ধুইলেও কি কয়লা থেকে ময়লা যায়......?????

    জবাব দিন
  5. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    রবিন ভালোবাসার বন্ধুত্ব ঝুলিয়ে রেখে ভ্যাগাবন্ড (কোনো ভাবেই জেমস বন্ডের সাথে মেলানো চলবে না) হয়ে যাচ্ছে।

    ভাইয়া,কিছুদিন আগে আমার ল্যাপটপ ডাকাতি হইছে। তাই বাসায় আপাতত পিসি নাই।আর অফিস থেকে উপন্যাস লেখা সম্ভব না

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    ৫) সানা ভাই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময় নিয়ে আর লেখেননি।

    প্রিন্সিপালরেও কি কৈফিয়ত দিতে হইবো নাকি?? ~x( ইয়ে মানে আমি আসলে অফিসের কাজ নিয়া ভীষণ ব্যস্ত। ল্যাপটপ হারায় নাই। তবে এর মইধ্যে অন্য কয়েকটা নামাইয়া ফালাইছি!! ;;;


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  7. দিহান আহসান

    মইনুল ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখার জন্য। একদিনের মধ্যেই ভাইয়া দিলেন ব্যস্ততার মধ্যেও। 🙂
    খুব ভালো লেগেছে আপনার লেখা।

    দিহান ভাবীর লেখা দুইটা ভাল্লাগসে।

    ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার নিজের যদিও ভালো লাগেনাই। আপনার কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। 🙂

    জবাব দিন
  8. রকিব (০১-০৭)

    ভাইয়া, কত্তোদিন পর :hug: :hug: :goragori: :goragori:
    অসংলগ্ন ভাবনাচিন্তাগুলো কিন্তু দারুন হয়েছে। আপনার পিচ্চিটা কেমন আছে?


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  9. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আরে ভাইয়া কি খবর? যাক দেশে থেকে ঘুরে আসছেন এখন পুরা চার্য হয়ে কাজকর্ম করেন । আমি দেশ থেকে ঘুরে গেলে কেন যেন এক মাস ভীষণ মন খারাপ থাকে । প্লেন থেকে নেমে বাসায় এসে যখন ঘুম দেই তখন শুধু ক্লাশ সেভেন এর কথা মনে হয় । ভাইয়া একটা গল্প লিখেন । আপনার লেখা ভালু পাই 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ ফয়সাল (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।