সবুজ প্রজাপতি ( যবনিকাপাত)

(গতকাল সন্ধ্যায়, বাসার কাছের গলিটাতে, ঘড়িতে সাড়ে সাতটা)

নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের সাথে আমি মিলে মিশে এক হয়ে গেছি। ওঁৎ পেতে আছি অচেনা সঙ্গীনীর রুদ্ধশ্বাস প্রত্যাশায়। সে কি আসবে? এক যুগ কিংবা শতাব্দীর সমান দীর্ঘ মুহূর্ত শেষে? আমার লোহিত-বেদীতে গৌরবময় উৎসর্গের উপঢৌকন হতে। অদেখা মানুষটির জন্যে আমার অধীর আগ্রহ। ধনুকের ছিলের মত সটান আমার শিকারী শরীর। দেহের প্রতি কোষে উন্মাদনা, অদৃশ্যমান কাঁপুনি। চোয়ালের কাঠিন্য আসন্ন উত্তেজনার মন্ত্রমুগ্ধ করা উল্লাসের পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে । মঞ্চ আজ প্রস্তুত। আমার মুখে আর কানে অর্গল ভেঙ্গে রক্তধারা উষ্ণতা বয়ে নিযে ছুটে আসছে । তীব্র জ্বরের সাথে এর কিছুটা তুলনা চলে। কিন্তু মনোবিকল করা উত্তাপ নয়, আমাকে যা নেশাগ্রস্ত করে তা হল এর ঝিম ঝিম সংশয়। মাত্রই সন্ধ্যা হয়েছে। অথচ এই গলিতে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় এলাকার সর্বজনীন বিরক্তির উৎস। গলির মুখে পচা-গলা আবর্জনায় ভরা ডাস্টবিন। লোকমুখে এই রাস্তার নাম ‘পচা-গলির মোড়’। নরকের বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ত এমন ই হবে। এখানটাতে আগে অনেকগুলি বিস্কুট,চানাচুর, মোমবাতি বানানোর ছোট ছোট কারখানা ছিল। সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এখানের কর্মব্যাস্ততা, শুধু উড়ে যাওয়া স্বার্থপর পাখির পালকের মত ফেলে গেছে লম্বা টিনশেড ঘরগুলি। এরকম তিনটি ঘরের সীমানা-দেয়ালের মিলনের ফসল এই অন্ধ গলি। প্রবেশপথ আছে, বের হবার জায়গা নেই। শুধু মুখওয়ালা গুহ্যদ্বারহীন প্রাণীর মত দুর্গন্ধময় বিষ্ঠা জমে আছে। কি গৌরবে ভরা এই নাড়ীভুঁড়ি উলটে দেয়া দুর্গন্ধ! কালো সেলন গাড়িটা রাখা আছে দেয়ালার ওপারে একটা ওয়ারহাউসের মুখে। আমি সাবধানী। শুধু সাবধানতা অবশ্য আমার টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। আমাকে পরিকল্পিত থাকতে হয়েছে। সিলেটের মত আরো তিনটি নিরাপদ বাসা রয়েছে আমার। একেকটার একেক প্রয়োজনীয়তা। একটিতে রাখা জাল কাগজপত্র, ক্যাশ টাকা, চেহারার ভোল পাল্টানোর সরঞ্জাম। আমার যদি কখনো পালাতে হয়, আমি সেখানেই যাবো। নয়ত নয়। পাঁচ বছরে সেখানে আমি পা ফেলিনি। দরকার পড়েনি। পড়বেওনা। এই দেশে আমাকে ধরার মত ‘বলস’ বা ‘ব্রেইনস’ নিয়ে কেউ জন্মায়নি। মানুষের বুদ্ধিহীনতার কথা ভেবে আমার মুখ দিয়ে অজান্তে বিরক্তির আওয়াজ বেরিয়ে আসে। বড় বেশী অনুমানযোগ্য ওরা। প্রতিটি পদক্ষেপেই গৎবাঁধা পূর্ব -পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের প্রভাব। আমার অননুমেয়তা তাই আমাকে সব সময় হাজার হাজার কদম এগিয়ে রেখেছে। শুধু আমিই জানি আমি কি করবো। আমার পরিকল্পনায় কোন খাদ নেই, কোন খুঁত নেই।

তাই দু’রাত আগের ছিনতাইয়ের ঘটনাটা নিয়ে আমি বিরক্ত হয়ে আছি। এই গলিতে শিকারে আসার কোন ইচ্ছা আমার ছিলোনা। আমাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। আমার চরিত্রের সাথে যা বেমানান। কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা। বাসায় ফিরতে পারিনি। আমার তিন নাম্বার সেফ হাউজটা, এই শহরেই। সেখানে গিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়েছে। ওখানে যে গাড়িটি রাখা ছিলো,সেটা আরেকজনের নামে কাগজ করা। আমার পরনের কালো টারটলনেক আর ঘোরতর কালো কার্গো প্যান্ট অন্ধকারে মিশে যাবার জন্য একদম ঠিকঠাক। এর সবই আমি আগে থেকেই গুছিয়ে রেখে দিয়েছিলাম।ইম্প্রোভাইজ আমি আগেও করেছি, কিন্তু এবারের মত করে নয়। তারপর ও বেশ সাফল্যের সাথে একটা ফালতু অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি কেবল নিজের দক্ষতার গুণে। নিজের কর্মজ্ঞানে গর্ববোধ করতাম, যদি প্রাণ নেয়ার ইচ্ছা আমার বাকি সব অনুভূতিকে আচ্ছন্ন না করে রাখত।

আমি একপাশের দেয়ালের সাথে পিঠ ঘেঁসে মিশে আছি। আমার অবস্থান থেকে রাস্তার মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। একাকী কোন নারী এখনও আসেনি, কিন্তু আমি নিশ্চিত অপেক্ষায় থাকলে আসবেই!শুধুই সময়ের ব্যাপার। আর তার জন্য আমি সারারাত এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি। বেশ কয়েকজন অবশ্য আমার সামনে দিয়েই পার হয়ে গেলো। ছায়া ছায়া অবয়বগুলি আমার প্রয়োজনের সাথে যায়না। আমি এখানে আসার পর সব মিলিয়ে পাঁচজন এখান দিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে দুজন ছেলে, আর গেছে তিনজন মেয়ে, কিন্তু মেয়েগুলি একসাথে,দলবেঁধে ছিলো। গলির কাছে এসে নাক চেপে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে সবাই। আমি ওদের ছায়ার শরীর সরে যেতে দেখেছি, কিন্তু আমার অস্তিত্বের কথা ওদের জানা হয়নি।

এখানে আগেও এসেছি আমি। দু’বার। তখনকার সাথে খুব বেশী পরিবর্তন আসেনি। মুখের কাছে লুকিয়ে থাকার জন্য একটা জুতসই অন্ধকার। ল্যাম্পপোস্টটাতে বাতি নেই, কিন্তু আড়ালের কাজ করছে। তিনপাশ ঘিরে থাকা উঁচু দেয়ালের কারণে অন্ধকার আরো ঘনীভূত হয়েছে। পায়ের নিচে পাথর আর উঠে যাওয়া সুড়কির অস্তিত্ব টের পাই। অযত্নে পড়ে আছে এই মহান তীর্থস্থান। আমি জানি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমার দুঃসময়ে এই গলি আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি, আজ ও দেবেনা। কিন্তু আমার ধৈর্য ধরতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। মাথায় চেপে বসেছে অবর্ণনীয় তাড়না। আমাকে উন্মাদ করে তুলেছে। একটা মানুষ খুব দরকার! খুব বেশী দরকার!

এই জগতের আমিই ইশ্বর। তাই আমার প্রার্থনা করার কেউ নেই। আমার প্রবল আকাঙ্ক্ষার জবাব দিতেই বুঝি প্রকৃতিতে সাড়া পড়ে গেলো। এক অদ্ভুত স্বস্তি নিয়ে দেখলাম, দূরের একটি ছায়া শরীর,একলা……আমার দিকে এগিয়ে আসছে। অন্ধকারে আর কিছু বোঝার উপায় নেই, কিন্তু আমি আমার অভ্যস্ত চোখে মুহূর্তেই বুঝে নিলাম- যে আসছে, তাকে দিয়েই আমার প্রয়োজন মিটবে।

আমার শরীরে শিহরণ চলছে। পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে আমি সিংহের মত শিকারের জন্য প্রস্তুত হলাম। নিজের হৃৎপিণ্ডের আওয়াজে নিজেই চমকে ওঠার উপক্রম হয় এমন অবস্থা। আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমার একটু পরের সঙ্গিনী। আর মাত্র পনেরো কদম। আমি গলির একদম মুখটাতে অবস্থান নিলাম, সন্তর্পণে। সাবধানী চোখে খেয়াল করলাম, আমার শিকারের মনোযোগ অন্যদিকে। আর মাত্র পাঁচ কদম! ঢিপ-ঢিপ-ঢিপ-ঢিপ। হাতুড়ীর ক্রমাগত বাড়ি পরছে বুকের খাঁচায়। আর এক কদম!

কিছু বোঝার আগেই হ্যাচকা টানে তাকে আমি অন্ধকারে ঢুকিয়ে নিয়ে এলাম। অভ্যস্ত হাতে চেপে ধরলাম কণ্ঠনালী। আরেকহাতে মুখ চাপা দিয়ে রাখলাম, যাতে বিন্দুমাত্র আওয়াজ বের করতে না পারে। আমার সাথে পেরে ওঠার সামর্থ্য নেই এই ক্ষীণ শরীরে। দশ সেকেন্ডের মাঝে শরীর থেকে সব প্রতিবাদ মিইয়ে গেলো। এলিয়ে পড়লো আমার হাতের উপরে। আমি টান দিয়ে পায়জামা নামালাম। উত্তজনায় প্রচণ্ড শক্ত হয়ে আছি। টের পেলাম গলির মুখের সামনে দিয়ে কিছু মানুষ হেটে চলে গেলো। আমি তাই আরেকটু ভেতরের দিকে ঢুকে গেলাম। এখন আর আমার কোন দুশ্চিন্তা নেই। রাস্তা দিয়ে আরো গেলো একটা রিকশা, শব্দ করে চলে গেলো একটা বাইক। আমি পাত্তা দিলাম না। পাত্তা দেয়ার কিছু নেই ও। আর সহ্য হচ্ছিলোনা। অন্ধকারে শরীরটাকে শুইয়ে দিলাম আমার নিচে। কি নরম তুলতুলে শরীর। দুঃখের ব্যাপার এই শরীর কেটে টুকরো করা হবেনা। আজ অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাকে।
প্যান্টের জিপার টেনে নামিয়ে চলে গেলাম ভেতরে। শরীরটা আরামে ঝন ঝন করে উঠলো। মেয়েটার গায়ের ঘ্রাণ বেশ সুন্দর। কেমন কাঁচা একটা মাদকতা আছে। বেশ বেগ পেতে হলো। অনভ্যস্ত শরীর মেয়েটার। ভেতরে যেতেই আমার পরের ধাপের কথা মনে পড়লো। মুখ না দেখলে আমার রিচুয়াল কমপ্লিট হবেনা।

আমি এক হাতে পকেটে ফ্ল্যাশ লাইট খুঁজতে থাকলাম।

(আজকে, ইশতিয়াক আহমেদের বাসায়)

সালমার কাছে বিষয়টা মোটেও ভালো ঠেকছেনা। রাফির শরীর এতটা খারাপ আগে কোনদিন করেনি। ক্লাস সিক্সে থাকতে মাম্পস হয়েছিলো। গাল-টাল ফুলে একাকার। পৃথিবীর সব ছেলেরা মা-পাগল……আর এটা বাপের জন্য মরে! হাত কেটে সেলাই পড়লো সতেরোটা, ক্লাস থ্রিতে, ওর বাবা তখন নেত্রকোনায়। ছেলেকে নিয়ে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাবা না আসলে সে সেলাই করবেনা। আর এখন ছুটিতে এসেই জ্বর বাধিয়েছে। কতবার মানা করেছি! পুকুরে যাস নে! জ্বরের ঘোরে এখনো বাবার জন্য কান্না করছে। ইশতির কি এসব দেখার সময় আছে! কতবার ফোন দেয়ার পর একবার ধরলো। ধরে কোথায় ছেলের খবর নেবে- তা না! বকা বাদ্য করে এখন ফোনই অফ করে দিয়েছে।
সালমা সিদ্ধান্ত নিলো মনিরকে কল দেয়ার। মনির তার বাবার গ্রামের বাড়ির ছেলে। তাই পারিবারিকভাবে একটা আন্তরিকতা আছে। ইশতি যদিও খুব কঠিন কঠিন ভাব দেখায়, ওর মনটা অনেক নরম। সালমার অসুস্থতার সময় দেখেছে, কেমন পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলো তার রগচটা ভালোমানুষ স্বামী।
তিনবার রিং হতেই মনির ধরলো।
-হ্যালো। স্লামালিকুম আপা। কেমন আছেন?
-ওয়ালাইকুমস্লাম। তোমার স্যারকে একটু দাও তো। ওর ফোন অফ পাচ্ছি!
-আপা স্যার তো খুব ব্যাস্ত।এখন ফোন নিয়ে ঢুকলে আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। আজ সারাদিন তার অফিসে কেউই ঢুকতে পারেনি!
-আমি অত শত বুঝিনা মনির। ছেলেটার শরীর অনেক খারাপ করেছে। তুমি তো জানোই ও কেমন!
-জানি আপা। ভাগ্নে তো স্যার কে ছআড়া কিছুই বোঝেনা। আচ্ছা দাঁড়ান আমি দেখছি! আপনি লাইনে থাকেন।
সালমা নখ খুঁটতে থাকেন। কিছুটা সংশয়ী। ইশতিয়াকের মেজাজকে ভয় না পাওয়ার মত বোকামি তিনি করেন না। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা আলাদা।
ওপাশ থেকে খেঁকিয়ে ওঠার আওয়াজ শুনতে পায়। মনিরকে বকছে। মনির মিন মিন করে ব্যাপারটা বোঝলো।
-তোমাকে আমি একবার মানা করি নাই! বলি নাই আমি ব্যাস্ত! আমার মাথা খাচ্ছো কেনো!
-প্লিজ আমার কথাটা শোনো! ছেলেটার শরীর খুব বেশী খারাপ করেছে! তোমার নাম নিচ্ছে জ্বরের ঘোরে। আজ অন্তত ডিউটিটা বাদ দাও।
ওপাশের গলার স্বর নরম হয়ে আসে। ছেলের জন্য স্বামীর মনে কতটা দরদ তা সালমার চে ভালো কেউ জানেনা।
-কত উঠেছে? আমি যে ১০২ দেখে এসেছিলাম…বেড়েছে নাকি?
-হ্যাঁ। তিনের কাছাকাছি এখন। তুমি দয়া করে জলদি এসো। আমার ভয় করছে। হাসপাতালে নেয়া লাগবে।
-আচ্ছা। আল্লাহ ভরসা। আমি স্বপনকে বলে দিচ্ছি। ও বাসার নিচের কম্পাউন্ডারকে নিয়ে চলে যাবে। তুমি দুশ্চিন্তা কোরোনা। আমিও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসবো। আজকে খুব বেশী জরুরী একটা কাজ পড়ে গেছে। নয়ত আমি এখনি চলে আসতাম!
-জলদি এসো প্লিজ!
ফোন কেটে যায়। সালমা আস্তে করে ছেলের ঘরে ঢোকেন। এখন ঘুমুচ্ছে। ওর বাবাকেও ঘুমালে এমন দেখায়।
প্রচণ্ড অসহায় লাগতে থাকে সালমার। হুট করেই তার প্রচণ্ড কান্না পেতে থাকে। তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঠোঁট চেপে কান্না সামলাতে সামলাতে স্বামীর দ্রুত প্রত্যাবর্তনের প্রার্থনা করতে থাকেন।

…………………………………

দিনে দুবার ঐন্দ্রিলা ঘর থেকে বের হয়, সকালে আর এই সময়টাতে। দুবারই বের হয়ে সে তার বান্ধবীর বাসায় যায়। মোরশদের হিসাব করা আছে। বান্ধবীটার চেহারা অত জুতের না। গালে দাগ। কিন্তু বুক দুটা বেশ টসটসে। সেটাও ভাগাভাগি করে যে কোন এক সাগরেদকে দিয়ে দিবে বলে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। সে তার চ্যালা-চামুন্ডা নিয়ে রাস্তার আরেকপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান। হাতের বেনসন পুড়তে পুড়তে ফিল্টারে চলে এসেছে। তার অস্থির লাগছে। আজ দেরী করে ফেলছে মেয়েটা!মোরশেদের মেজাজ খারাপ হতে থাকে। সেদিন সন্ধ্যায় সে আর থাকতে না পেরে হাত ধরে ফেলেছিলো। মেয়েটা তার দিকে এত ঘিন্না নিয়ে তাকালো- যে মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ও রাগের মাথাতেই বলে ফেলেছিলো- ‘তোমাকে **তে চাই, দিবা?’
শহরের সবাই তার ভয়ে কাঁপে! আর মেয়েটার কি না এত বড় সাহস! গত পরশু তার জন্য পুলিশের হাতে চড় ও খেতে হয়েছে। আজ তাই মোরশেদের মাথায় ভূত চেপেছে। আজ সে কিছু একটা করবেই। চাচার পাটের গুদাম খালী করা আছে। মাইক্রো রেডি রাখা আছে। কিন্তু মেয়েটাকে তার জানে মারার ইচ্ছে নেই। চেষ্টা করবে পেট বাঁধিয়ে দিতে। তাহলে আর যাবার জায়গা থাকবেনা। ওর পরিবার বড়লোক, কিন্তু নিরীহ ধরণের। ক্ষমতার জোরে পারবেনা। এরপর পেটে বাচ্চা চলে আসলে বিয়ে দিতে বাধ্য। এই মেয়েকে ঘরের বউ করে পেলে ডেইলি দিন রাত সুখ করা যাবে। তার মাথা সে চিন্তাতে ঝিম ঝিম করে উঠে।

ভাবতে ভাবতেই বের হয়ে আসলো ঐন্দ্রিলা। চুলে বেণী করা। কালো একটা সালোয়ার পড়েছে গায়ে। ছিটকে বের হয়ে আসতে চাইছে তার শরীরের সম্পদগুলি। মোরশেদের চোখ চকচক করে ওঠে। সে তার সাগরেদদের হাত দিয়ে ইশারা করে। আজ তারা অন্য দিনের মত কাছাকাছি থেকে ফলো করবেনা। মাইক্রো ওর বান্ধবীর বাসার সামনে রাখা। এখান থেকে বাঁয়ে যাবার পর পচা-গলি পাড় হতেই তাকে গাড়িতে তোলা হবে। ওখানে পোলাপান অপেক্ষমান আছে। হাতের সিগারেট ছুড়ে দিয়ে মোরশেদ ঐন্দ্রিলার চলার পথের দিকে এগিয়ে যায়। আজ তাদের মাঝে বেশ অনেকখানি দুরত্ব। কিন্তু বেশিক্ষনের জন্য না। আইজকা তোমারে খাইয়া দিমু টিয়াপাখি- মোরশেদ মনে মনে ভাবে। মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয় অপেক্ষমান চ্যালাদের।

ঐন্দ্রিলা ওদের খেয়াল করেছে, কিন্তু বুঝতে দেয়নি। হারামির বাচ্চাগুলি আজকেও আসছে। আজ অবশ্য কোন একটা কারনে বেশী কাছে আসছেনা। গতকাল পুলিশের মার খাবার কারণেই হয়ত একটু ভয় পেয়েছে। একবার চকিতে পেছনে তাকায় ও। নাহ! আজকে আর কোন তাড়া দেখাচ্ছেনা ওরা। তবু দ্রুত পায়ে ও এগুতে থাকে ও। বের না হয়েও উপায়ও নেই। ওর পড়াশুনা, গাল-গপ্পো সবই শ্রাবন্তীর সাথে। আর এই এক সন্ধ্যাবেলাতেই শুধু ওকে ফ্রি পাওয়া যায়। শ্রাবন্তীর একটা সমস্যা হচ্ছে, ঐন্দ্রিলাদের বাসায় ও আসতে চায়না একেবারেই। এর কারণ টা ঐন্দ্রিলা জানে। তাই জোরাজোরি করেনা। ওর মা বেশ আদর করেন ঐন্দ্রিলাকে। প্রতি সন্ধ্যায় নাস্তা বানিয়ে রাখেন ওর জন্যে। এই বদ গুলার জন্য কি ও সামাজিক জীবন বাদ দিবে! ভুলেও না! আজ ব্যাগে ছুরিটাও আছে। দিবে একদম ঢুকিয়ে।
বাঁয়ের মোড় ঘুরতেই নাকে এসে লাগে ডাস্টবিনের উৎকট ঘ্রাণ! ঐন্দ্রিলা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়।

মিনিটখানেক বাদেই মোরশেদ আর তার চ্যালারা রাস্তা পার হয়। রাস্তায় ঐন্দ্রিলা কে দেখা যাচ্ছেনা। এতক্ষণে বোধয় পাখি খাঁচায় বন্দি। মোরশেদ নিশ্চিত করার জন্য ফোন বের করে।

(ইশতিয়াক আহমেদের রুমে)

-জার্মানির ক্রিস্টমান নামে এক বনদস্যু সাড়ে নয়শো মানুষকে মেরেছিলো। সে সুন্দরী মেয়েদের তার গুহায় আটকে রাখত। তাদের সাথে দিনের পর দিন শারীরিক নিপিড়ন চালাত। মেয়েগুলির পেটে যে বাচ্চা জন্মাত, সেগুলিকে মেরে, গায়ের চামড়া দিয়ে সে তার গুহা সাজিয়ে রাখতো। এরপর আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে নেচে নেচে সে গান করতো। মধ্যযুগের খুনী বলেই তাকে ধরা পড়ার পর ক্যাথেরিন হুইলে পিষে পিষে মারা হয়। একটা একটা করে তার গায়ের হাড্ডি ভাঙ্গা হয়। তিনদিন অবর্ণনীয় শারীরিক কষ্ট সহ্য করে ধীরে ধীরে তার মৃত্যু হয়। মধ্যযুগের শাস্তিগুলিতে একটা সঠিক জাস্টিসের ব্যাপার ছিলো।
-এখন কি আর মানুষ যোগ্য শাস্তি পায় না?
-না না। তা বলতে চাইছিনা। আমার ব্যাপারটাই ধরুন। আপনার মতামত কি? আমার কেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ? প্রথাগত নিয়মে আমার বড়জোর ফাঁসি হবে। সেটাও একবারই দেয়া যায়, অথচ আমার হাতে মরেছে পঞ্চাশের কাছাকাছি মানুষ। ফাঁসি হওয়া তো তেমন আহামরি কোন শাস্তি না। অতি দুখী মানুষ মুক্তি পেতে গলায় ফাঁস নেয়, সে হিসেবে উলটো এক ধরনের আরামদায়ক ব্যাপার, তাই নয় কি?
-সেটা আদালত ঠিক করবে। আর আমার যেটা ইচ্ছা সেটা শুনে আপনার কোন লাভ হবেনা, আমারো বলে কোন লাভ হবেনা।
-তারপরেও বলুন। শুনে দেখি।
‘আমার ইচ্ছা তোরে আরবের তেজী মর্দ ঘোড়া দিয়া পু*কি মারাই। মারাইতে মারাইতে তোর গলা দিয়া ঘোড়ার ইয়ে বের হয়ে আসবে। তখন সিলেটি নাগা মরিচ দিয়া তোর রক্তাক্ত পা*র ফুটায় ডলা দেয়া হবে- মনে মনে এই কথা বলেও আমি মুখে বললাম
-থাকুক না! আপনি আপনার কথা শেষ করুন।
গল্পের রোমহর্ষকতাও এখন আমার মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেনা। মাথায় রাফির জন্য দুশ্চিন্তা। মনিরকে ডেকে বলে দিব একে আজকের রাতটা লক-আপে রেখে দিতে। কালকে এসে সব বোঝানো যাবে।
-আমি আপনাকে বলেছিলাম জীবনে প্রথম আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে আমার এখানে আসা।
আমি মাথা নেড়ে সায় জানাই।
-কিন্তু আমার মত মানুষের আবেগকে প্রশ্রয় দিলে চলেবেনা। সারভাইভাল উইল অলওয়েজ বি মাই ওনলি ইন্সটিংক্ট, এটাও আমি বুঝে গেছি। আপনাকে একটু আগে আমি বলেছিলাম যে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মনে আছে?
-হুম। মনে আছে।
-কি সিদ্ধান্ত সেটা কি আপনি শুনতে আগ্রহী?
-সবই যেহেতু শুনলাম। এটাও শুনি। বলুন।
রুমী সামনের দিকে ঝুঁকল। যেনো অনেক বড় কোনো রহস্য বলবে। ইশতিয়াক তাই বুঝে উঠতে পারেনি, যখন রুমীর বিদ্যুতগতি হাতের তালুর নিচে লুকিয়ে রাখা রাখা সুইস নাইফের ফলা তার কন্ঠনালী ভেদ করে একদম ঘাড়ের পেছন দিয়ে বের হোল। রুমীর মুখের অদ্ভুত অভিব্যাক্তিই তাই ঝানু অফিসার ইশতিয়াক আহমেদের জীবনের দেখা শেষ দৃশ্য। রাফির জ্বরাক্রান্ত মুখ আর তার দেখা হবেনা।

রুমী পকেটে রাখা রুমাল বের করে ভালোভাবে হাত মুছলো। ইশতিয়াকের মাথাটা ডেস্কের উপর গলাকাটা পশুর মত প্রাণহীন পড়ে আছে। মরার আগে রুমীর সবচে বড় রহস্যের কথা তার জানা হয়নি। এই রহস্য শুধু সে একাই জানে। রুমালটা শরীরের পাশে ফেলে রুমী খুব স্বাভাবিক মুখে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে।

…………………………………………………………

রফিকদের চালান করার কাগজপত্র গুছাচ্ছিলো নিবিড় মনে, এমন সময় মনির দেখলো লোকটা বেরিয়ে এসেছে। সে ডেস্ক থেকে উঠলো।
-আপনার কাজ শেষ?
রূপবান মুখে আন্তরিক হাসি ফুটিয়ে লোকোটা উত্তর দক।
-জ্বি হ্যাঁ! আপনাদের বস অসাধারণ মানুষ! খুব বড় একটা ঝামেলায় পড়ে তার কাছে আসা। উনি সব শুনে সমাধান করে দিয়েছেন।
-কি হয়েছে জানতে পারি?
-অবশ্যই! আমাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে। পয়সা-কড়ির সাথে কিছু স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট ও চুরি গেছে। সেগুলি নিয়েই বিপত্তি।
-ও আচ্ছা! ইদানিং চুরি ডাকাতি বড় বেড়েছে! সাবধানে থাকবেন।
-অবশ্যই। আর আপনারা আছেন তাই ভরসা। নয়ত কামাই-রোজগার যাই করি, গায়ের জোরে নেয়ার মত মানুষের অভাব নেই। আমরা নিরীহ ব্যাবসায়ী মানুষ। সন্ত্রাসীদের হাতেই জিম্মি হয়ে থাকি।
-আরে না না! এটা তো আমাদের দায়িত্ব! এভাবে বলছেন কেনো! আচ্ছা আসুন তবে! আপনাকে আর আটকে রাখবনা।
অল্প কথাতেই লোকটাকে অনেক ভালো লেগে গেলো মনিরের। খুবই সজ্জন লোক।
-জ্বি ধন্যবাদ। আসি তবে।
লোকটার শরীর মূল ফটক পার হতেই আমি ঘুরে দাঁড়াই। রফিকদের কি ব্যাবস্থা করবো সে ব্যাপারে স্যার কে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি তার রুমের দিকে এগুতে থাকি।

(গতকাল, সন্ধ্যা সাতটা চল্লিশে)

আমি হাতড়ে হাতড়ে ফ্ল্যাশলাইটটা পেয়ে গেলাম পেছনের পকেটে। আমার নিচে চাপা পড়া নরম শরীর,এক হাতে বোতাম টা মুখের উপর চেপে ধরলাম।
আমার সমগ্র মহাবিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেলো। কানের ভেতর পোঁ-ও-ও-ও-ও আওয়াজ শুনতে পেলাম।
লাইটের আলোয় চকচক করছে, আমার জন্ম দেয়া মেয়ের মুখ। আমার সৃষ্টি করা প্রাণের প্রতিফলন ওর মুখে।
আমার থেমে পড়া উচিৎ! এখুনি! এই মুহূর্তে!
নিজের ছুরির ফলাতে নিজেকেই জীবন্ত ফালি ফালি করে কাটা উচিৎ।
নিজেকে জগতের সব ভয়াবহ শাস্তির হাতে সমর্পণ করা উচিৎ!
গায়ে আগুন জ্বালিয়ে তীব্র যন্ত্রণায় জ্বলে মরা উচিৎ!
কিন্তু আমি এর কিছুই পারলাম না!
উচিত-অনুচিতের বোধের স্থান আমার, ভেতরের প্রবৃত্তির তাড়নায় নেই। সে প্রবৃত্তি শুধু সন্তুষ্টি খোঁজে। আর তার সন্তুষ্টিও কেবল এক জায়গাতেই।
ওর ষোলতম জন্মদিনে আমার স্ত্রী একটা সবুজ এমারেল্ডের লকেট দিয়েছিলো ওকে। প্রজাপতির গড়নে বানানো। টর্চের আলো সে নিস্প্রাণ প্রজাপতির সবুজ ডানায় ঠিকরে ছড়াচ্ছে!
আমার মাথার ভেতর হাজার হাজার কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেলাম – এ তো ভুল! আমার শাস্তি হওয়া উচিৎ! আমাকে শাস্তি পেতে হবে! চরম শাস্তি!
কিন্তু আমি থামতে পারলাম না!
গ্রহ-নক্ষত্র এক প্রবল বিধ্বংসী বিস্ফোরণের তোড়ে চুরমার হয়ে গেলো। আমি জীবনে প্রথম এই অন্ধকার গলিতে মাথা ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। যেভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ কাঁদেনি।
………………………………………………………

(থানা থেকে বের হবার একদিন পর, মধ্যরাতে)

অন্ধকার কেটে এগিয়ে চলেছে কালো রঙের গাড়িটা। একটা সেলন। ভেতর থেকে বেজে আসছে ডেবুসির ‘ক্লেয়ার দে লুনা’-র মাতাল করা আওয়াজ। আকাশে চাঁদ নেই। রাস্তায় চাঁদের মত উজ্জ্বল হেডলাইটের চোখধাঁধানো আলো।
গাড়ি যাচ্ছে চট্টগ্রামের দিকে। বান্দরবানের গহীনে। পাঁচ বছর ধরে খালি পড়ে থাকা একটা বাসার উদ্দেশ্যে।
গাড়ির ট্রাঙ্ক থেকে ভেসে আসছে, চাপা গোঙানোর আওয়াজ।
……………………………………………

দুই পায়ের মাঝে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ঐন্দ্রিলার জ্ঞান ফিরে আসলো। চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা সে। হাতগুলিও নাড়াতে পারছেনা। কেমন একটা দুলুনি হচ্ছে। আর ভ্যাপসা ঘ্রাণ। বুক ভরে বাতাস নিতে পারছেনা সে। মুখের ভেতরে গুঁজে দেয়া কাপড়ের টুকরো।
ঐন্দ্রিলার মাথা ভারী হয়ে আছে, যার কারণ কড়া ডোজের সেডেটিভ।
সবকিছুই কেমন অস্পষ্ট। ওর মনে হচ্ছে যেনো তুলোর মাঝে সাঁতার কাটছে। মাথার ভেতরে হাতড়াতে হাতড়াতে মনে পড়ে গেলো, বাসার সামনের পচা-গলির ওখানে সন্ধ্যাবেলা কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরেছিলো। ওকে মেলাদিন ধরে ফলো করা ছেলেগুলির একজনই হবে। এরপর আর কিছুই তার মনে নেই।
ঐন্দ্রিলা মাথা তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মাথা পর্বতের মত ভারী হয়ে আছে। মাথার একটু উপরেই ধাতব কিছুর সাথে স্পরশ লাগে। পা ছড়াতে চায়। টের পায় পায়ের মাঝখানটা ভিজে আছে। রক্ত?

ঘোর অল্প কাটতেই বুঝতে পারে ওর হাত-পা বাঁধা। ছোট্ট একটা জায়গায় বাঁধা মুরগীর মত ফেলে রাখা হয়েছে তাকে।
প্রাইভেট কারের ট্রাঙ্ক? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা আমাকে!
প্রচণ্ড ভয়ে আর অসহায়ত্বে তার চোখ ফেটে পানি বের হয়ে আসে।
তার ঘরের কথা মনে পড়ে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে নয়, ঐন্দ্রিলা সাহায্যের প্রার্থনা করে ওঠে তার অতি প্রিয় একজনের কাছে!
-আমাকে বাঁচাও বাবা, এ বিপদ থেকে আমাকে বাঁচাও!

আগের পর্বসমূহের লিঙ্ক-
১।সবুজ প্রজাপতি (প্রথম পর্ব)
২।সবুজ প্রজাপতি (দ্বিতীয় পর্ব)
৩।সবুজ প্রজাপতি (তৃতীয় পর্ব)
৪।সবুজ প্রজাপতি (চতুর্থ পর্ব)
৫।সবুজ প্রজাপতি (শেষের আগের পর্ব)

২,৪৮৬ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “সবুজ প্রজাপতি ( যবনিকাপাত)”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    গত পর্ব থেকেই মনে হচ্ছিল, এধরণের কিছু। একটা পর্বে লিখেছিলাম, বাংলা ভাষাতেই এওধরণের মৌলিক গল্প বিরল। শেষ পর্ব পড়ে মনে হচ্ছে তুমি তোমার প্রতিভার অপচয় করছো। আমা র ধারণা তুমি অনেকের কাছে অনেক বাহবা পাবা। তবে লেখকের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে।তুমি যদি এই বিষয়টা মাথায় রাখো তাহলে
    তোমার অসাধারণ প্রতিভা দিয়ে একদিন সময়কে অতিক্রম করতে পারবা


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. আরিফুল হক শোয়েব (২০০২-২০০৮)

    এন্ডিংটা কি খুব 'ট্যাবুড', অশ্লীল হয়ে গেলো ভাইয়া? আমি দোটানায় ছিলাম...কিন্তু রুমীর মত মানুষদের ট্যাবু বলে কিছু নেই। তাই অন্য কোন নির্দেশনায় ওকে নিতে পারিনি। সরি ইফ দিজ ডিসএপয়েন্টেড ইউ, ভাইয়া! 🙁 🙁 আই ট্রাইড মাই বেস্ট!

    জবাব দিন
    • সাইদুল (৭৬-৮২)

      লেখালেখির নিয়ম কানুন আমি বই পড়ে শিখিনি। আমার একজন প্রিয় শিক্ষক লেখার ধার বাড়াতে গল্পের কলকব্জা নামের একটি বই আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছর আমি কিছু লিখতে পারিনি। আমি মনে করি নিয়ম কানুন পড়ে লেখা লেখাটা খুব সতঃস্ফূর্ত নয়।
      তুমি শালীনতার কথা বলেছো, ব্যাপারটী আপেক্ষিক। গল্পের ৪টি বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ
      কাহিনী,চরিত্র,গাঁথুনী আর গতি
      এর বাইরেও একটি বিষয় আছে সেটি হচ্ছে সংযম। সব কিছু চোখে দেখিয়ে দেবার দরকার নেই।
      আমি তোমাকে চারজন লেখকের নাম বলবো,
      ফ্রেডারিখ ফোরসাইথ, ড্যান ব্রাউন, রবার্ট লুডলাম, জেফ্রি আর্চার এদের বাইরেও অনেকের কথা বলাযায়। এদের লেখা শেষ হবার পরও তার রেশ থাকে অনেকক্ষণ। ছোট বড় কোন চরিত্রই বাড়তি মনে হয়না।
      আমি আবার বলছি, তোমার মত শক্তিমান গদ্য লেখক শুধু সিসিবিতে নয়, বাংলা সাহিত্যেই এখন হাতে গোনা। ভালো থেকো


      যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

      জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      ঘটনা নিয়ে আমার কোন এলার্জি নেই। গল্পটা যে প্রথাগত থ্রিলারের কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি, এলার্জি হলো এখানেই।

      লেখকের দায়বদ্ধতা নিয়ে অনেক কথাই তোলা যায়। ক্লেদাক্ত জমিনেও কুসুম কিংবা ধতুরার চাষ করেও শিল্পোর্ত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। যদি তুমি চাষের প্রয়োজনীয়তাটুকুকে যথার্থ করে তুলতে পার। নবোকভের 'লোলিটা', মমের 'অব হিউম্যান বণ্ডেজ', ফ্লোবিয়ারের 'মাদাম বোভারি', কিম্বা বোদলেয়ারের 'ল্য ফ্লোয়ার দু মলের' কথাই ধর। নারায়ন স্যান্যালের 'সুতনুকা, কোন দেবদাসীর নাম নয়'-উপন্যাসটি পড়া আছে তোমার? পড়া থাকলে বিষয়টি বুঝতে অনেকটা সুবিধে হবে। (সম্পাদিত)


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  3. আরিফুল হক শোয়েব (২০০২-২০০৮)

    পড়া নেই। কিন্তু পড়বো অবশ্যই। এই গল্পের মূল চরিত্র একজন অস্ট্রিয়ানের ছায়ায় নির্মাণ করা। আমি ক্রমিক-খুনীদের ব্যাপারে বেশ ফ্যাসিনেটেড ছিলাম। তাই টেড বান্ডি, হোমস আর কল্পনার ডেক্সটার মোজেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটাই চলে এসেছে তার মাঝে। থ্রিলার আমার ফোর্টে নয়। কিন্তু চেষ্টা থাকবে এই জনরাতে নতুন কিছু করার। হয়ত সামনের বার খোলস ভেঙ্গে বেরুতে পারবো। এই পুরো সিরিজেই আপনাদের দ্বারা অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। নিজের কাছে প্রত্যাশা থাকবে এটাকে জ্বালানি করে কিছু একটা প্রথার বাইরে করার। যে চেষ্টাটা এখানেও ছিলো। 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। সরি আই ডিজএপয়েন্টেড! 🙁

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আরো ভয়ংকর কোনো সমাপ্তির জন্য সম্ভবত পাঠক অতিশয় উদগ্রীব ছিলো ।
    আবার এ ও নিশ্চিত নয় যে পাঠক কতোটা ভয়াবহতা নেবে ।
    সুতরাং শ্রেয়তর সেই কাহিনীর গতিপথ নির্ণয় করা সত্যি দুরুহ ।
    এখন থেকে মনে হচ্ছে অর্গল খুলে আরো ভয়ংকরকে প্রশ্রয় দেয়াটাই শ্রেয়তর ছিলো ।
    আবার মনে হচ্ছে ... নাহ, এটুকুই মন্দ কেনো !

    থানায় খুনটাকে ঘটনাক্রমের মাঝে ঠিক সাজাতে বাগ পাচ্ছি না ...

    আর মনে হলো যেনো এক রকমের তাড়াহুড়ো কোথাও ওত পেতে থেকে খানিক ঝামেলা পাকানোর পাঁয়তারা করেছে ।

    পুরো কাহিনীটা ... পুরো লেখাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা স্বাদ এনে দিয়েছে সিসিবিতে । অনেক পরে এই ব্লগে এসেও এমনটা মনে হয়েছে । যারা পুরোনো তারা আরো ভালো বলতে পারবে ।

    "কুয়ো" গল্পটির চেয়ে শব্দ ও বাক্য ভিন্ন ও পরিপক্ক হয়েছে । যদিও ওই গল্পটা উপস্থাপনা আর গাঁথুনির ঢঙ্গে অনন্য ছিলো ।

    আরো আরো লেখা চাই । নিয়মিত ।

    জবাব দিন
  5. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতো দেরীতে মন্তব্য করবার জন্য। সিসিবিতে তুমি আমার অন্যতম প্রিয় একজন লেখক। তোমার লেখা কুয়ো পড়ে যে মুগ্ধতায় ডুবে ছিলাম তার রেশ এখনো ফুরোয়নি। ভাইয়া, তোমার লেখা আমি অশেষ আনন্দের সাথে পড়ি এবং অকপটে বলি, তোমার একটি লেখা শেষ হলে পরেরটির জন্য অপেক্ষা করি অধীর আগ্রহে।

    আমার ঝুলিতে বাংলায় লেখা সাইকো থ্রিলার যা রয়েছে তার সবই সেবা প্রকাশনীর বোধকরি। তোমার সবুজ প্রজাপতি আমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল প্রথম দিনই। প্রতিটি পর্বে মুগ্ধ হয়েছি বললেও কম বলা হবে।

    নতুন লেখক হিসেবে আমি প্রথমেই তোমাকে বিশ্বমানের কারো সাথে তুলনা করতে চাইনা। আমি বরং বিনীত ভাবে বলি, আঞ্চলিকতার পথ পেরিয়ে তবেই না আন্তর্জাতিক হওয়ার পথে চলি আমরা। মৌলিক এই লেখাটির বিষয়বস্তু, বর্ণনা এবং লেখনীর কারণে তোমার ভক্ত হয়ে গেলাম নতুন করে, ভাইয়া!

    ঘটনার নাটকীয়তা খানিক আঁচ করতে পারলেও আদ্যোপান্ত তোমার লেখার মুন্সীয়ানার কারণে উতরে গেছে ভালভাবেই। তোমার লেখা পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল অরুন্ধতি রায়ের লেখা দা গড অব স্মল থিংস এর কথা যেখানে জমজ ভাইবোন রাহেল এবং এস্থার একটি সম্পর্ক দেখতে পাই আমরা। অরুন্ধতি রায় লিখেছেন বলে আপন টুইনদের এই সম্পর্ক ঢোক গিলে মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের কিছু করবার নেই।

    সমাজে যেমন পান খাওয়া টুপিওয়ালা হুজুর আছেন, তেমনি আছেন খুনী, বাটপার, চাইল্ড মলেস্টার, বউ পিটানো সমাজসেবক অথবা, শিশুর গায়ে খুন্তী ছেঁকা গৃহিণী। রুমির মত মানুষেরা আমাদের বাঙ্গালী সমাজে বিরল প্রজাতি হলেও তারা আছেন আমাদের মাঝেই। সিরিয়াল কিলারও আমাদের সমাজেরই বাসিন্দা। আমরা কেবল পরিচিত নই তাদের মনস্তত্তের সাথে।

    একদিনেই রবি ঠাকুর হয়ে ওঠা যায়না তুমি জানো আশা করি। তোমার লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে ভাইয়া, তাই আমার প্রত্যাশা বড় বেশী তোমার কাছে। কারো প্রতি প্রত্যাশা যখন বাড়ে তখন তার দায়িত্ব বহু গুণে বেড়ে যায় তুমি জানো নিশ্চয়ই।

    তোমাকে নিয়মিত সিসিবিতে দেখতে চাই, হক। এটি আমার আব্দার বল, অথবা আদেশ কিংবা পুত্রসম ভাইটির কাছে দাবীও বলতে পারো। অল দা বেস্ট, লিটল ওয়ান। মাচ লাভ! (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হক (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।