নতুন বাংলা রচনা আর গুলের কৌটার গল্প

”তোমাকে একটা গল্প বলব অহনা, সহজ সরল ভাষায়,পৃথিবীর সবচে সরল মানুষের গল্প।

শুনবে?”
-”গত ১৭ বছরে অনেকবার ভেবছি তোমাকে এই গল্পটা বলবো। তবু কেন জানি বলা হয়ে ওঠেনি”

-এতো প্রিঅ্যাম্বল না রেখে বলা শুরু করো না!

স্ত্রীর উত্যাক্ত ঝাঁঝালো প্রত্যুত্তর আসে।

ঝগড়া হলেই ও এমনটা নিরলিপ্ত হয়ে যায়। দেড়যুগের এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে পাতা সংসারে অসংখ্যবার দেখছি।

আমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে,ওর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে শুরু করি,

আমার দাদীর কথা যখন মনে করার চেষ্টা করি,চোখের সামনে একটা প্রবীণ, অসম্ভব মায়াবতী মুখ ভেসে ওঠে।গোলগাল আর ডিম্বাকৃতির মাঝামাঝি ছিলো তার মুখের গড়ন । বলিরেখা পড়া তামাটে মুখটা শান্তি আর স্নিগ্ধতার আধার ছিলো। তবে,সবচে অসাধারণ ছিলো তাঁর গভীর কালো চোখ, পাঁচ যুগের টানাপোড়েন দেখে যেখানে প্রাচীন জমিদার বাড়ির দেয়ালের মত আভিজাত্য আর ধ্বংসস্তূপের মিশেল ঘটেছে।কত রহস্য আর রহস্যভেদের গল্প অবলীলায় বলে যেত আমার বৃদ্ধা দাদীর মণিজোড়া। কাঁচাপাকা চুল মাথাভর্তি। তাঁর নাক ছিলো চোখে পড়ার মত। মোঘল তীক্ষ্ণতা ছিলো তাঁর নাকের গঠনে। নিরাভরণ থাকতে পছন্দ করতেন। শুধু হাতে দুটি সোনার বালা পড়া থাকত। জংলিছাপার শাড়ী পড়তেন। কলাপাতা রঙের শাড়ী,মেটে-বাদামী শাড়ী। শক্ত সমর্থ ছিলেন অনেক। লম্বাও ছিলেন বেশ। শৈশবে তাকে আমার মহীরুহর মতো বিশাল মনে হোতো।

অহনা নিঃশব্দে শোনে। আমি একটু থামতে চোখের ইশারায় বলল – ”তারপর?”

ডাকসাইটে সুন্দরী ছিলেন দাদী । লোকমুখে শুনেছি একসময় তার উপস্থিতিতে অনেক ঝা-চকচকে মহিলাদের অস্তিত্বও ক্ষীণ হয়ে যেত। আমাদের শহরের পুরনো বাড়ির এলাকায় জমজমাট দুর্গাপূজা হয় ফি-বছর। তাই আম্মা যখন দাদির মুখটাকে দুর্গাপ্রতিমার সাথে তুলনা করতো, সেই ছোট বেলায় আমার কাছে এক বিন্দু বাড়াবাড়ি দাবি মনে হোতোনা। প্রিয় মানুষদের এমনিতেও অদ্ভুত সুন্দর লাগে। আর আমার শুরুর বছরগুলোতে আমার দাদি ছিলেন আমার সবচে প্রিয়,আমার ছায়াসঙ্গী।

আমার মায়ের স্বাস্থ্য এত অল্প বয়সে এতগুলো সন্তান জন্ম দেয়ার ধকল সামলাতে পারেনি। একুশ বছর বয়সে আমি যখন তার গর্ভে আসি, তার আগেই ২ সন্তানের জন্ম আর অকাল মৃত্যু তিনি দেখে ফেলেছেন। আমার পরেও আমার আরেকটা ভাই হয়েছিলো, বাঁচেনি। আমিই কেবল ডাক্তারদের দেয়া নিশ্চিত মৃত্যুপরোয়ানাকে ফাঁকি দিয়ে টিকে গেছি।আম্মুর মুখে শুনেছি,সপ্তম মাসে প্রসূত, ধরাধামের আলো দেখা আমার ভঙ্গুর শরীরটা নিয়ে নার্স আর ডাক্তারদের প্রবল আবেগের,উচ্ছ্বাসের গল্প। ময়মনসিংহ মেডিকেল এ আমার নাম হয়ে গেছিলো, ”মিরাকেল বেবি”। যাক, সে গল্প না হয় আরেকদিন করা যাবে। আজ আমার অঅতুলনীয়া পিতামহীর গল্প বলি।

আমাকে ছোটোবেলা গ্রামের বাড়ি ফেলে রাখা হয়েছিলো। আম্মা বেশিরভাগ সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল এ থাকতেন।একাকীত্বের মাঝে আমার শৈশবটা ছিলো সুররিয়াল। সালভাদর দালির ছবির মত, সুন্দর আর ভয়াবহতার একটা পরলৌকিক মিশ্রণ। আমার খেলার সঙ্গী ছিলো অনেক, কিন্তু তারা কেউই মানুষ ছিলোনা।

আমার দাদা দশ গ্রামে সবচে অবস্থাশীল লোক ছিলেন।এক নামে সবাই তাকে চিনত। আমাদের বাড়িটা-প্রাপ্তবয়স্ক চোখেই বড় লাগে, আর সেই ছোট্টবেলা মনে হত কি এক অনন্ত গোলকধাঁধার মাঝে পড়ে আছি। বিদ্যুৎ আসেনি তখনও। আব্বা বাড়িতে থাকতেন না। দাদা তাকে অমানুষের মতো খাটাতেন। অনেক বড় একটা অন্ধকার রুমে আমি একা। দরজা লাগিয়ে দিতো কেউ একজন বাইরে থেকে। যাতে হারিয়ে না যাই। আমাকে দেখভাল করার সময় ছিলো না কারো। মা না থাকলে মানবশিশুর প্রতি করুণা করার লোকের অভাব হয়না, কিন্তু ভালোবাসার কেউ থাকেনা।এমন কি জন্মদাতাও না।

আমাকে বলা হোতো আম্মা আমাকে রেখে ঘুরতে গেছেন। আমার অপরিপক্ব মস্তিষ্কে শঙ্কা আসতো, শ্বাপদের মতো। আমি ভয় পেতাম, কিন্তু এই ভীতির মানে বুঝতাম না।

বাড়ির তিনপাশ ঘিরে থাকা অগুনতি গাছের সারি,একপাশে বিশাল উঠান আর বৈঠকঘর। জলপাই,লিচু,আম,জাম, কাঁঠাল,বরই,চালতা, মেহগনি,সেগুন। লতায়-গুল্মে, ঝোপে-ঝাড়ে, লেবু আর কাঁচামরিচের চারায়,শিম-কুমড়ো-লাউয়ের মাচায় রীতিমত অরণ্য।জংলা আর বাড়ির মাঝখানে নিরপেক্ষ সীমান্তে রহস্যময় রসুইঘর। রহস্যময় বললাম কারণ ভেতরে শুধু চুলা ছাড়াও একটা ঢেঁকি ছিলো, মাটির উনুনের পাশেই মাচায় রাখা লাকড়ি…অমাবস্যায় গভীর রাতে শূন্য রান্নাঘরে ঢেঁকি ভানার শব্দে পুরো বাড়ি কাঁপত।

এই রান্নাঘরেই আমার দাদীকে প্রথম অল্প অল্প চিনতে শিখি আমি।

ভুতের ভয় ছিলোনা আমার। যে ঘরে আমি একলা পড়ে থাকতাম দ্বাররুদ্ধ হয়ে, তাঁর সিলিং ছিলো আকাশ ছোঁয়া,অন্তত অতটুকু বয়সে তাই মনে হতো। ঘরের ভেতর ছোট্ট কুপিটা সলতে পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিভে যেত, আর যতক্ষণ জ্বলত আমি ম্রিয়মাণ শিখার নাচন দেখতাম চুন-খসা দেয়ালে। বিশাল বড় ফোর-পোস্টার বিছানাটাকে একটা মাঠ ভাবতে ভালো লাগতো আমার। কোনায় পড়ে থাকা মস্ত তালা ঝোলানো লোহার নীল সিন্দুকটা অজস্র প্রশ্ন এনে দিত আমার শিশুমনে। কি আছে ওতে? ওটা কেঊ কেনো খোলেনা? এখন যদি ওই সিন্দুক খুলে কিছু বের হয় আমি বের হব কিভাবে? দরজা তো বাইরে দিয়ে বন্ধ!!!!!! কিন্তু মুহূর্তেই সামলে নিতাম। ঘরের ভেতর আরেকটা ঘর ছিলো, ওটাতে ঢোকার সাহস পেতাম না দিনের আলোতেও।আমাদের অঞ্চলে ওই ঘরটাকে ”ঊঘার” বলে। ভেতরে ধানের ”ডুলি”(ধান-চাল রাখার বেতের গোলা), বড় বড় কাঁসার বাসন কোসন…আরো কত খুঁটিনাটি। কিন্তু এর কিছুইনা, আমাকে যারা সঙ্গ দিত তারা থাকত আমার অন্ধকার ঘরের সিলিং-এ। কুপির আলোতে তাদের ছায়া দেয়ালে পড়ত। ছায়ায় যতোটা বড় দেখাতো ওরা আকারে বাস্তবিক ততটাই ছোট ছিলো। কড়িকাঠে ঝুলতে ঝুলতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর-পরই নিয়ম করে এসে হাজির হত আমার এক-শো খেলার সাথী। কিচ কিচ আওয়াজ করে ওরা মথ আর প্রজাপতি ধরত।আর সারা ঘরময় উড়ে বেড়াতো।মাঝে মাঝে আমারও ওদের মতো উড়তে ইচ্ছা করতো। সিলিং এ বাদুড় আর মেঝেতে মেঠো ইঁদুরের আওয়াজ এক লয়ে এসে মিলত……সা…রে…গা…মা…কিচ…কিচ…কিচ…কিচ। বেশ লাগতো। তন্দ্রাচ্ছন্ন হতে দেরী হোতোনা। আমার জীবনে ওটাই প্রথম ঘুমপাড়ানি গান।

দাদী রাঁধতে ভালোবাসতেন। কচুভর্তা, শিয়ালমুখি, কালিজিরাভর্তা ,লতা দিয়ে শুঁটকি, লাউয়ের পাতা দিয়ে মোড়ানো শুঁটকির পুলি, শুকানো গরুর মাংস আদা আর রসুন দিয়ে ভর্তা , মাছের মুড়িঘণ্ট,মাসকলাইয়ের ডালভুনা, চালের রুটি, নানা পদের পিঠা-পোয়া,ম্যারা,সেমাই,জামাই,মরিচপিঠা,আউলাকেশী। তাঁর রান্নার কদর যশ করতে মেহমানরা ব্যাতিব্যাস্ত থাকতো। ধুমধাম করে প্রতিবেলাই খাবার আয়োজন হোতো। দাদী প্রবল উৎসাহে ঘটা করে রান্নার প্রস্তুতি নিতেন। আম্মার অবর্তমানে তিনিই আমাকে খাওয়াতেন। আমার সাথে কেউ খুব একটা কথা বলতোনা।যেন নিজের জন্মদাত্রীকে অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী করার গুরু পাপে আমি পাপী। দাদিই যা দুএকটা শব্দ বলতেন। খাবার সময় হলে রান্না ঘরের সামনের আমগাছটার নিচে খাবারগুলো এগিয়ে দিতেন।আমি ইচ্ছা করেই গাছের নিচে বসতাম।গাছটা আমার সখা ছিলো।ওকে আমি নিয়মিত পানি দিতাম।গল্প করতাম। আমার পাশে বসে খেত দাদাজানের পোষা উনিশটা বেড়ালের কয়েকটা। মাঝসাঝে খামচি দিলেও ওরাও আমার বন্ধু ছিলো। ওদের সবার নাম জানতাম আমি। কালচে বাদামী রঙের ”মতুন” ছিলো আমার সবচে প্রিয়। ওর চোখ জোড়া আমার মত বাদামী রঙের ছিলো। ও আমার মত চুপচাপ থাকত,আর নিরাসক্ত চোখে আমার মুখের পানে চেয়ে কি জানি দেখত। বড় আপনজন ছিলো বেড়ালটা।

-চা খাবে?
-দাও এক কাপ। গলাটা কেমন ধরে এসেছে। অনেককিছুই মনে ছিলোনা জানো? তোমাকে বলতে যেয়ে স্মৃতির ফ্লাডগেইট খুলে গেলো।
আমি চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে দেখলাম ও শুকনো করে হাসলো। যেন হঠাত করে মনে পড়লো এমন ভঙ্গিতে বলল,
-আমি তোমাকে কেনো ভালোবাসি জানো?
আমি ভ্রূ তুলে অবাক হই। অহনারর মুখে এমন কথা শুনে অভ্যস্ত না। আমি নিজেও যে বলি তা না। আমাদের যুগলবন্দীতে একটা যান্ত্রিক ব্যাপার আছে।
-”তোমার মাঝে একটা অদ্ভুত সারল্য আছে”- ও নিজেই উত্তর করলো।
আমি হেসে ফেললাম। ”বোসো, চা টা করে আনি”
ও ফিরলো মিনিট পাঁচেক বাদেই।

আমি আবার শুরু করলাম।
কোথায় জানি ছিলাম..উমমমম…হ্যা…
এরপর ,মাসছয়েক পর আম্মা একটু সুস্থ হতেই আমি আব্বা-আম্মার সাথে শহরে চলে এলাম। আমার জীব-জড় বন্ধুরা আর আমার কাচাপাকা চুলের দাদী পেছনে পড়ে রইলো।

চা’টা খেতে বেশ হয়েছে।চুমুক দিতেই চনমন করে উঠলো ভেতরটা। চায়ের এই এক অদ্ভুত গুণ।

সবাই জানতো আমার দাদী ছিলেন অনেক বড় ঘরের মেয়ে। জমিদার ধরনের বংশ। সিংহীর মতো হৃদয় ছিলো তাঁর। প্রতিদিনই গরীবদের রান্না করে খাওয়াতেন,যে যা চাইত দিয়ে দিতেন। অন্তত সামর্থ্যে থাকলে কখনো কেউ কিছু চেয়ে ফিরে যায়নি। তাঁর মাঝে আল্লাহ রূপের কমতি দেননি,কিন্তু তারচে বেশি যা দিয়েছিলেন তা হচ্ছে আত্মসম্মানবোধ। এই বোধটা এতোটাই বেশি ছিলো তাঁর মাঝে যে বাইরে থেকে দম্ভ ভেবে ভুল করতো অনেকেই, এমন কি কাছের মানুষরাও। ভাইয়ের একটা তাচ্ছিল্য মাখা কথায় পিতৃসম্পত্তির দাবি ছেড়েছিলেন মৌখিকভাবে। প্রবল দুঃসময়েও তা আর ফেরত চাননি।

আমার লক্ষ্মীছাড়া দাদা তাই যখন দ্বিতীয়বার হজ্ব করে ফেরার পথে একটা ষোড়শী, ধবধবে রূপসী,বোবা মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে উঠলেন, সবাই ভেবেছিলো এই বুঝি আমার দাদী ঘর ছাড়লেন। তিনি ঘর ছাড়েননি, চুপচাপ মেয়েটাকে মেনে নিয়েছেন। জীবনের শেষ অব্দি তাঁকে কেউ এটা নিয়ে একটা নালিশি কথা বলতে শোনেনি। উনি নির্বিকার ভাবে হাঁটুর বয়সী সতিনের সাথে সংসার করে গেছেন। তিনবেলা নিয়ম করে রান্না করে খাইয়েছেন। সৎ সন্তানদের কোলে পিঠে মানুষ করেছেন মাতৃস্নেহে। এই সবকিছুর বিনিময়ে একদিন রমজানে ইফতারের সময় দাদা তাঁকে এক কাপড়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলেন। সাত কিলোমিটার অভুক্ত অবস্থায় হেঁটে দাদি আসলেন আমাদের শহরের বাড়িতে। উনার আত্মসম্মান অন্য কোনো ঘরে উনাকে পানি খেতে বাধা দিয়েছিলো।

আমার চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে উঠলো যেনো একটু। অহনার চোখে একরাশ অবিশ্বাস মাখা বেদনা।

দাদী যখন এলেন আমি তখন বেশ বড় হয়ে উঠেছি। টুতে পড়ি।

তাঁর সামনে আমি বেশ অপ্রতিভ থাকতাম। আমার আব্বাকে দেখতাম প্রায়শই দাদাজানের উপর উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা করতে চাইতে। আব্বা দাদিকে ইশ্বরজ্ঞান করতো। মায়ের প্রতি ভালোবাসা আমার আব্বাকে পৃথিবীর সবচে ভালো মানুষদের একজন করে দিয়েছে। মাকে ঠাই দেয়ার অপরাধে তাঁকে প্রাপ্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, লোভে পড়ার মত সম্পদ। কিন্তু আমার সরল পিতার কাছে বস্তুগত কিছুর মানে ছিলোনা।তাই, তাঁর বাকী সব দোষ তাঁর অন্ধ মাতৃভক্তিতে চাপা পড়ে গেছে। দাদী আব্বাকে কখনো উস্কানি দেননি।পিতাকে সম্মান করে যেতে বলেছেন। আমি তখনো বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক অনুভূতি বোঝার মত বড় হইনি। তবু আমার মধ্যেও কেমন একটা ক্ষোভ কাজ করতো। এই নোংরা অবিচারের শাস্তি চাইতাম। দাদী চাননি।দুহাত তুলে দোয়া করে গেছেন। দাদাজানের ভালো চেয়ে।

“এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, আমার ডালিমফলের মতো টকটকে লাল দাদা, শেষ বয়সে আক্ষরিক অর্থেই পচে মরেছেন।তার গা ক্ষয়ে ক্ষয়ে মাংস পরেছে। এতটাই দুরগন্ধ হোতো যে তাঁর শুচিবায়ুগ্রস্ত দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁর কাছে ঘেঁসতোনা। সৌদি থেকে আনা সুগন্ধি আতর সেই দুর্গন্ধ ঢাকতে একটুও সাহায্য করেনি। তাঁর মৃত্যু হয়েছে প্রবল যন্ত্রণায়। শেষটায় নিজের পচা শরীরের গন্ধে তিনি নিজেই বমি করতেন।”

যাই হোক, কিছুদিন যেতেই দাদির সাথে আমার সম্পর্কটা স্বাভাবিক হোলো,আমি তারপর তাঁর সাথেই ঘুমোতাম। দাদি হয়ে উঠলেন আমার নতুন বন্ধু। আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, গোসল করিয়ে দেয়া (কোথায় কোথায় সাবান মেখে রগড়ে ঘষতে হবে তাও দাদি বলে দিতেন,আমি খুব লজ্জিত হয়ে আব্বার কাছে নালিশ করতাম)। দাদীর রান্না খেতে পারাটা ছিলো ওই সময়ের সবচে অসাধারন অনুভূতিগুলির একটি। খেতে খেতে আমার মনে হোতো,বেহেশ্তের রান্না বুঝি এমনই হবে! তাঁর সাথে আমি দুনিয়ার সব কথা বলতাম। স্কুলে আমার কোনো বন্ধু ছিলোনা। সমবয়সীরা আমাকে বিচলিত করতো। আমি গাছের সাথে,বিড়ালের সাথে, বাদুড়ের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতাম। সেই অস্থিরতা আমার দাদী তাঁর গল্পের,শ্লোকের পসরায় ঢেকে দিয়েছিলেন। ইশ! কত গল্পই যে জানতেন তিনি! আমি তাঁর বুকে জড়োসড়ো হয়ে শুন্তাম-ডালিম কুমারের গল্প, দুষ্টু মোড়লের কিচ্ছা, চাষির বৌএর চালাকির গল্প…আরো কত কি!! গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তিনি দাঁতে গুল মাখতেন। কালো রঙের কৌটা থেকে। শাহজাদী গুল। গুলের ঘ্রাণ তেমন সুখপ্রদ না…তবু সেই ঘ্রাণে আমার দু-চোখ ভেঙ্গে শান্তির নিদ্রা আসতো। ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে আমি শুনতাম টেনে টেনে আমার শোলোক-বলা দাদী ঘুমপাড়ানী গান গাইছেন! আমার মনে হোতো, আহ! জীবনটা কতই না সুখের!

ঠোঁটের কোণে এসে হাসি জমেছে টের পেলাম। ও কাপে ছোট্ট করে চুমুক দিলো। গল্পে ডুব মেরে গেছে একদম।

আমার কাছে করা দাদীর একটাই আফসোস ছিলো।উনি ভালো পড়তে জানতেন না।ভাঙ্গা ভাঙ্গা,শিশুদের মতো করে পড়তেন। আমি যখন সিক্সে,তখন হুট করে একদিন তাঁকে আমি বাংলা শেখানোর ঘোষণা দিলাম। দাদী তেমন উচ্চবাচ্য করলেন না। পৌত্রের গোঁয়ার্তুমিটা কার কাছ থেকেই পেয়েছে, এটা এই ক’বছরে তাঁর বেশ বোঝা হয়ে গিয়েছিলো। আমার কাছে তখন একটা মোটা ব্যাকরণের বই ছিল ।আমার খুব প্রিয়। বইয়ের প্রচ্ছদে লাল রঙে বড় করে লেখা ছিলো ”নতুন বাংলা রচনা”। আমাকে চমকে দিয়ে,উৎসুক বিদ্যার্থী হয়ে পাঁচ মিনিটেই পুরো লেখাটা তিনি আয়ত্তে নিয়ে নিলেন। আমি প্রশংসা করতেই তাঁর মুখ জুড়ে ফুটলো বালিকা-সুলভ সরল হাসি। হাসলে তাঁকে বড় পবিত্র দেখাতো। তাঁর এই হাসি দেখতেই কি না, এক মাসেই সব অক্ষর আর কাজ চালানোর মতো লিখা-পড়া তাঁকে শিখিয়ে দিলাম। এ নিয়ে তাঁর গর্বের অন্ত ছিলোনা। যে-ই বাসায় আসতো তাকেই বলতেন-আমার নাতী মস্ত বড় হবে! তাঁর চোখে অলৌকিক বিশ্বাস কাজ করতো,যেনো দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছেন আমার উত্থান! কি শিশুর মতো ছিলেন আমার প্রৌঢ়া দাদী!

আমি এর বছর তিনেক পরে ঘর ফেলে অনেক দূরে চলে গেলাম। চিঠি লিখে যোগাযোগ হয়। দাদী আগ্রহ নিয়ে সেই চিঠী পড়েন।প্রতিবার সবাইকে জোরগলায় স্মরন করিয়ে দিতে ভোলেন না তাঁর অসাধারন পঠন-দক্ষতার নেপথ্য কাহিনী।

এরপরের অংশ আমি আনমনে বলে যেতে থাকি। যেন আর কোনো শ্রোতা নেই!

দু-তিন মাস পর পর ঘরে ফিরি।আমাদের গলিটার মুখে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সাঁঝ নেমে আসে। অন্ধকারে অপেক্ষমান একটা অবয়ব প্রতিবার ই চোখে পড়ে। প্রবল আগ্রহে আমার অপেক্ষায় দণ্ডায়মান আমার দাদী। ব্যাপারটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় যেন।গলির মাথায় আসার আগেই আমার চোখ ছায়াটাকে খুঁজতে থাকে। একবার দেখি আবছা অন্ধকারের অবয়বের সেই টান টান বলিষ্ঠতা উধাও হয়ে গেছে।ছায়াটা কুঁজো।দাদী বলেন তাঁর অসুখ।আমি বলি সব ঠিক হয়ে যাবে।”নাতবউ না দেখে তুই মরবিনা,বুড়ি! তোর কিচ্ছু হবেনা!তুই জনম জনম বাঁচবি!” ছোটবেলা দাদী তাঁর হায়াত আমার মাথায় বুলিয়ে দিতো,এবার আমিও দেই। আমার বুড়িটা কেমন একটা অপার্থিব হাসি দেয়…সেই হাসির মায়া এই জগত-সংসারের বোধগম্যতার বাইরে।

ঘর থেকে অনেক দূরে থাকতেই চিঠি এলো দাদীর শরীর প্যারালাইজড। ঘুমের মাঝে স্ট্রোক করেছেন। আমাদের ঘরে তখন ঘোর দুঃসময়।আমার আব্বার পক্ষে আমার পড়াশুনার খরচ দেয়াও মুশকিল হয়ে উঠেছে। গ্রামের বাড়িতে সব সম্পদ দ্বিতীয় স্ত্রী আর সে ঘরের সন্তানকে দিয়ে রেখেছেন আমার দাদা।তখন তাঁর ঘরে সুখ আর সুখ। প্রথম স্ত্রীর করুণ দশা তাঁর প্রফুল্লতায় পানি ঢালতে পারেনা। যে ভাইপোদের জন্য দাদীর স্নেহের সীমা ছিলোনা, চিকিৎসার জন্য দাদী সম্পদে ভাগ চাইতে পারে ভেবে ওরাও কেউ এলোনা।

আমি এরপর যেদিন ঘরে ফিরলাম, গলির মুখটা ফাঁকা থাকবে জানা সত্যেও হুহু করে কেঁদেছিলাম। অথচ আমি কান্না জিনিসটার সাথে মোটেও পরিচিত না।

বিনা চিকিৎসায় আমার সম্রাজ্ঞীর মতো দাদী অভিমান নিয়ে চলে গেলেন। আব্বার কিচ্ছু করার ছিলোনা, অসহায় তাকিয়ে দেখা ছাড়া। হয়ত আব্বার কষ্ট হবে ভেবে কটা দিন আগেই পাড়ি জমালেন।

আমিও সেদিনই শোকে বিছানা নিলাম। উথাল পাথাল জ্বরে আমি উদ্ভ্রান্তের মতো। আকাশ ভেঙ্গে জলধারা নামলো। এতো অসাধারণ একটা মানুষের গৃহত্যাগ পৃথিবীরও সইছিলনা বোধহয়।

তাঁকে নিয়ে যাওয়া হোলো তাঁর ”বাপের বাড়িতে”। শেষ দুমাস কোনো কথা বলতে পারেননি।কিন্তু স্বামীর সংসার ছেড়ে আসার পর সবসময় বলতেন ভাইয়ের পাশেই শেষ ঠাই চান। বড় ভালবাসতেন তিনি নিজের ভাইকে।

আমাকে বাধ্য হয়েই রেখে যাওয়া হয় বাসায়।একা। দেখভাল করার জন্য পাশের বাসার সেতুর মাকে বলে যাওয়া হয়। উনি আর আসেন না।

প্রবল বর্ষণে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। আমার ঘরটাতে বহুদিন পর আমি আবার একা। বিদ্যুতের চমকে কেমন একটা আগুন আগুন খেলা হয় ঘরে। যেন সাদা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ লেপ্টে আছে ঘিয়া দেয়ালে। আমি সিলিঙে দেখি স্পষ্ট ঝুলছে একশো বাদুড়, মথ আর প্রজাপতি ধরছে। আমার পোষা বেড়ালটা অন্ধকারে মতুন হয়ে যায়। বৃষ্টির ছাঁটের সাথে ভেসে আসে গুলের ঘ্রাণ। কিন্তু সে ঘ্রাণে সেদিন আর ঘুম আসেনা!

আমার কন্ঠে আর আওয়াজ নেই। গলায় দলা পাকিয়ে থাকা কি একটা যেন নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। চেপে ধরেছে বুকে,ফুসফুসে,কন্ঠনালীতে…আফিফা পাথরের মূর্তির মতো বসা।যেন ভেল্কি দেখানো জাদুকর ওর নড়াচড়ার শক্তি কেড়ে নিয়েছে। মন্ত্রবলে।

আমি হাতের তালুতে স্ত্রীর হাতের স্পর্শ টের পাই। একটু পর আমার গালটা ও বুকে চেপে ধরেছে অনুভব করি। আমার দৃষ্টি ঢেকে আছে কান্নার দমকে। নয়ত দেখতে পেতাম যা ১৭ বছর সংসার করেও দেখিনি। অহনার গাল বেয়ে অবিরাম ঈষৎ উষ্ণ নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সবচে দুঃখী আর স্বার্থহীন মানুষটার জন্যে।

বাইরে পাইনের বনে তুষার ঝরে ঝরে পড়ে। আমাদের চোখের পানির সাথে অদ্ভুত বৈপরীত্ব রেখে। ঠাণ্ডা আর ধবধবে শুভ্র তুষার। কালচে সবুজ গাছে সাদা তুষার দাদীর মাথার কাঁচাপাকা চুলের মতো দেখায়।

৪,২৭৮ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “নতুন বাংলা রচনা আর গুলের কৌটার গল্প”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    মনে হল অনেক বড় কোন লেখকের লেখা পড়লাম। একটু গোর্কির গন্ধ পাই , তা ওই দাদীকে ঘিরে গল্প জমানোর জন্যে।
    কী ভাবে বাংলা লেখো জানিনা। কোথাও কোথাও যুক্তাক্ষরের গোলমাল লেগে গেছে।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    প্রিয় আরিফুল হক শোয়েব,

    তোমার বয়ে আনা বাক্সের ভেতর চমকে দেবার মত অনেক কিছু আছে। সেগুলো একে একে বের করে আমাদের দেখাও, আমরা বিস্ময়াভিভূত হই। প্রত্যেক লেখকেরই এক বা একাধিক বিশেষ শক্তিমত্তা থাকে। আমার ধারণা, তোমার পটুতা চরিত্র সৃষ্টিতে আর সুকারু কাব্যগন্ধি বর্ণনার তরী বাইতে। গল্পকারদের এই গুণ থাকা জরুরী। এই গল্পে যুক্ত হলো তোমার আরেক শক্তিমত্তা। সেটা হল, মনোবিকলনের কাছাকাছি কিছু কল্পনা বুনে সুরিয়াল আবহ তৈরি করে মনোজগতের কথা বলবার দক্ষতা।

    প্রশংসা আরো ভালো লিখবার প্রেরণা জোগায়, দূর্বলতাগুলো আবিষ্কার করবার ক্ষেত্রে তেমন সাহায্য করে না। নিন্দুকেরাই তাই আখেরে উপকার করে বেশি। মনে হচ্ছিল, এই গল্পটাতে সংলাপ তৈরি করতে গিয়ে উদ্ধৃতিসূচক কমার জেলে তুমি কিছু সম্ভাবনাময় বর্ণনাকে বন্দি করেছ। অথচ সেসব ঘোর-লাগা বর্ণনার মাঝে অপার মগ্নতায় পাঠককে ডুবিয়ে-ভাসিয়ে অনাবিল প্রশান্তি দেবার যাদুকরি শক্তিমত্তা তোমার ছিল।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. আরিফুল হক শোয়েব (২০০২-২০০৮)

    উদ্ধৃতির ধারণাটা আরেকজন দিলো। আমি নিজের লেখার ব্যাপারে প্রবলভাবে স্কেপ্টিক।তাই নিয়েছিলাম। মন সায় দিচ্ছিলোনা। আপনার কথায় তাই শব্দগুলোকে মুক্ত করে দিলাম। একটা প্রশান্তি কাজ করছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      না, আমি ঠিক আক্ষরিক অর্থে শুধু উদ্ধৃতি চিহ্ন তুলে দেবার কথা বলিনি। আসলে আমার ভেতরে তোমার গল্পটা অন্যভাবে রূপান্তরিত হচ্ছিল। 'কুয়ো'-তে তুমি যেমন করে কুয়ো-র চরিত্র এঁকেছিলে, আর আমরা তাতে ডুবে গিয়েছিলাম, আমার ভেতরের রূপান্তরিত গল্পটায় দাদী-র চরিত্রটাও তেমনি বিভা নিয়ে ফুটতে চেয়েছিল। তোমার গল্পটা তোমার, আর তোমার গল্পটা আমার ভেতরে যে গল্পটার জন্ম দিলো, সেটা আমার। দু'টো একইরকম করার প্রয়াস অপ্রয়োজনীয়। বরং তুমি তোমার আমার দুজনের গল্পদু'টিকে অতিক্রম করে আরো একটি প্রবলতর গল্পের জন্ম দাও, আমরা বিমুগ্ধ হয়ে পড়ি, আর আমাদের ভেতর আরো আরো কল্পনার, সৃজনের, নবতর গল্পের জন্ম হোক।

      সদর্পে লিখ। একটা জিনিস আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। সেটা হলো, আমরা কেউই কারো চাইতে বড় কিম্বা ছোট নই, প্রত্যেকেই নিজস্ব স্বকীয়তায় প্রোজ্জ্বল! তাই নিজের লেখা নিয়ে 'স্কেপ্টিক' হবার কোন কারণ দেখছি না। (সম্পাদিত)


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    একই সাথে আনন্দ ও বেদনা।
    আনন্দ - কারন সিসিবিতে আজকাল হচ্ছেটা কি?
    একই সাথে ঝড়-বৃষ্টি-সাইক্লোন-টর্নেডো, সব...
    কোনটা রেখে কোনটা পড়ি।
    আর ভাসি পাঠের সুখে...

    বেদনা - কারন আমার মত কষ্ট-লিখিয়েদের দিন ফুরিয়ে আসছে।
    লিখা আসছে বলে জোর করে যা তা লিখে পাতা ভরার দিনও শেষ হয়ে আসছে।
    এখন থেকে কিছু লিখে পাবলিশ টেপার আগে দশবার ভাবতে হবে, "আদৌ পাবলিশের উপযুক্ত তো"
    তবে সুখের কথা হলো, এই বেদনা বড়ই সুখের বেদনা!!!

    নিজের ঘরে ঘরের ছেলেমেয়েরা এরকম সাজানো বাগান মেলে রাখলে কার না বুক ভরে ওঠে, বলো?

    বাই দ্যা ওয়ে, ওটা দৌহিত্র না পৌত্র হবে। কন্যার পুত্র = দৌহিত্র আর পুত্রের পুত্র = পৌত্র

    আপ্লুত.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দূর্দান্ত লাগলো, নিয়মিত লেখা চাই তোমার কাছ থেকে 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    অনবদ্য ! একদম পারফেক্ট গল্প। চরিত্র, আবহ, আংগিক, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা - সব মলিয়ে পাকা কোনো লেখকের হাতের লেখা যেনো।
    মুগ্ধ হলাম ভালোলাগায়। আনন্দিত হলাম আমাদের এই ব্লগে তোমাকে পেয়ে।
    আর হ্যা আগের লেখায় যা বলেছিলাম সেই সূত্র ধরে বলছি - আমাকে একখান ইমেইল পাঠিও নীচের ইমেইল আইডি তে :
    hossain.lutful@gmail.com
    আরো একটা কথা, স্কেপ্টিক হবার কোনো কারন নেই। নিজের মধ্যে ডুবে থাকাও ভালো, তবে ভাবনার একচ্ছত্র ওড়াওড়ির জন্য, নি:সংগবাদীতাতেও মানা নেই কিন্তু স্কেপ্টিক না হওয়াটা জরুরী। নইলে আমরা যে বঞ্চিত হবো।

    জবাব দিন
  7. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    আগ্রহ নিয়ে আসছি এবং পড়ছি তোমার লিখাগুলো। খুব ভাল লাগছে পড়তে। নিয়মিত লিখবে এইটাই চাই। নিয়মিত না লিখলেও চলবে। এরকম চমৎকার লিখা উপহার দিবে সেটাই চাই! 😀


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    অসাধারণ লেখা! পাঠকের মনযোগ গ্রেপ্তার করে রাখে পাঠ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। :clap:
    অনেক উক্তি আছে এখানে কোট করার মত। আধিক্যের কারণে তা পরিহার করলাম। তবে এই কথাটা আমার মনে গভীর রেখাপাত করে গেছেঃ
    "মা না থাকলে মানবশিশুর প্রতি করুণা করার লোকের অভাব হয়না, কিন্তু ভালোবাসার কেউ থাকেনা।এমন কি জন্মদাতাও না।"

    জবাব দিন
  9. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বাহ!
    ঘটনার ঘনঘটা নেই, অথচ একটা চরিত্রকে একটু একটু করে পেইন্টিং এর মত ফুটিয়ে তুললে। তুলির শেষটানের জন্যে শেষ পর্যন্ত যেতে হল।
    সহজ নয়, একজন গল্প বলিয়ে হতে পারা। তোমার আরো লেখা পাবার প্রত্যাশায়।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।