কামব্যাক পোস্ট

এইখানে সামার মানে আনন্দ আনন্দ আর আনন্দ। সবাই ক্যালেন্ডারের পাতা দেখে জামা কাপড়ের দৈর্ঘ্য কমায় আর কাজ কর্ম শিকেয় তুলে বেড়াতে বের হয়ে যায়। সবচেয়ে মজা হয় সকালের দিকে পার্কে বা মাঠে গেলে। ডে-কেয়ার সেন্টারের আন্ডাবাচ্চাগুলোকে একটার পর একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে একসাথে শিকলের মতো করে নিয়ে ঘুরতে বের হয় প্রায়ই। কি বিচিত্র তাদের কান্ডকীর্তি তা না দেখলে বলে বুঝানো আমার কর্ম না। আমি আর তৌফিক একসাথে বের হলে এদের দেখি আর হাসি, বলি দেশে যাওয়ার সময় একটা দড়ি কিনে নিয়ে যেতে হবে ভাগ্নের জন্য। যা একপিস হচ্ছে দিন দিন, দড়ি ছাড়া বাইরে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ না।

সম্প্রতি গাড়ি চালানো শিখছি। মাঝে মাঝেই অন্য গাড়ির দিকে তেড়ে গেলেও এখনো উভয় পক্ষই অক্ষত আছি। এর মাঝে একদিন সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা, ড্রাইভার তৌফিক। সিটি সার্ভিসের বাস আমাদের পাশ দিয়ে যাবার সময় দিব্যি একটু ছোঁয়া দিয়ে গেল। ফলাফল? বাম্পারের রূপসজ্জায় পাক্কা ১৯০০ ডলার খসানোর বন্দোবস্ত, তাও আবার সিটির পক্ষ থেকে!!! ইনসুরেন্সের নিয়ম নীতি সম্পর্কে জ্ঞান নিতে গিয়ে দেখলাম সবচেয়ে কঠোর নিয়ম গাড়িতে বাচ্চা থাকলে। জীবন ধংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা দুইজনেই বড়মানুষ বলে সিটিকে বেশী বাঁশ দেওয়া গেল না। কিন্তু আমি ভালোই জেনে গেলাম বাচ্চাকাচ্চাদের বুস্টার সিট,সিটবেল্ট ইত্যকার জিনিসপত্র ছাড়া গাড়িতে নিয়ে বের হওয়া যাবে না। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। নিজের এখনো আন্ডাবাচ্চা নাই, আপাতত চিন্তা নাই।

দেশে থাকতে সকালে পেপার পড়া না হলে অস্থির লাগতো। আজকাল অনলাইনে পড়ি, তাই বিকেলবেলা পেপার না পড়লে মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে। দেশের খবর পড়ি, হা হুতাশ করি, কখনো আশান্বিত হই, তারপর আবার দৈনন্দিন কাজে ফিরে যাই। মাঝে মাঝে দুই একটা খবর স্তব্ধ করে দেয় কিন্তু সময় আবার ভুলিয়ে দেয় সবকিছু। আশরাফ ভাইয়ের মৃত্যুটা আমি মেনে নিতে পারিনি। পুষণ আর ভাইয়ার বিয়ে, হলুদ, নতুন বাসা, আমরা আড্ডাবাজি করতে গিয়ে রাতের বেলা ভাইয়াকে বাবার বাড়ি থাকতে পাঠানোর স্মৃতি এখনো তরতাজা। প্রানবন্ত এই মানুষগুলো ছবি হয়ে যেতে সময় লাগে না মোটেই। একদিন বিকেলে পেপার খুলে ট্রাক উলটে এতোগুলো বাচ্চার মৃত্যু আবার আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। আমাদের নেতারা “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার”দের কে ৫০ হাজার টাকা করে দেন আর তার আবেগঘন ছবি ছাপেন। মোল্লারাও “হারাম ফুটবল খেলা দেখা” নিয়ে ফতোয়া দিতে ব্যস্ত। রাগে দুঃখে কি করব দিশা পাই না মাঝে মাঝে। এসবের কি বিচার হবে কোনদিন? নাকি আমার মতো আরও অনেকেই কেবল নিরাপত্তার জন্য কোন ভিনদেশে সন্তান বড় করতে চাইবে?

১,৮৪৯ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “কামব্যাক পোস্ট”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ওয়েলকাম ব্যাক, লেখা দারুন হইছে... তা মিষ্টি টিষ্টি খাব নাকি? 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    সুন্দর লেখা... 🙂

    টাইটেল দেখে মনে হচ্ছে কামব্যাক করে প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে ব্লগ নামবে। আমরাও আশায় থাকি, পেডো শিরীনের ব্লগ নিয়মিতই পড়তে পারব। 😀

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    অনেক আগে, খালেদার প্রথম টার্মে নিয়ম করা হইছিলো ড্রাইভারগো এস এস সি পাস করতে হইবো। তো ড্রাইভাররা কইল, " প্রধানমন্ত্রী এস এস সি পাস না, আর আমাগো কয় এস এস সি পাশ করতে। "


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)

    শুভ প্রত্যাবর্তন আপু।
    শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে প্রত্যাবর্তন করে প্রতি সপ্তাহান্তে একটি করে ব্লগ নামবে। আমরাও আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি, শিরীন আপুর ব্লগ নিয়মিতই পড়তে পারব। (ক্ল্যাসিক্যাল কপি-পেষ্ট)


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    শিরীন, শুরুটা করেছিলে আনন্দ দিয়ে শেষটা করলে শোকে! এই আনন্দ, এই ক্ষোভ, এই কষ্ট, এই সুখ- এসব নিয়ে মিলে মিশে আছি।

    ওয়েলকাম ব্যাক, শুভ প্রত্যাবর্তন................... :clap: :clap: :clap:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিরীন (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।