আজাইরা কষ্ট,অসীম প্রতীক্ষা

ক। বাসায় ছুটিতে গেলে সেখানে ঈদে আমার কর্মসূচী বেশ একটা সেট প্যাটার্নের । সকালে নামাজ , কিছুটা খাওয়া-দাওয়া আর তারপর সবগুলা টি ভি চ্যানেল এ প্রগ্রামের সাথে সাথে মজা করে এ্যড দেখা । সবগুলা চ্যানেল একসাথে যেন কম্পিটিশনে নামে কে কার চেয়ে বেশি এ্যড দেখাতে পারবে । এবার তার সাথে সন্ধ্যা থেকে শুরু হল খুব বাজে রকম জ্বর । তা এমন ই যে মাথাটা বিছানা থেকে উঠানো যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী কাজ করা । যথারীতি মেজাজ খারাপ হতে লাগল। কিন্তু সেটা সহনীয় মাত্রা ছাড়াল তখন ই যখন প্রায় সবগুলা সাইট দেখেও বুঝতে পারলাম না যে ৭ নভেম্বর আসলে আমাদের দেশে কী হয়েছিল ।আমার মনে আছে কয়েক বছর আগেও এটা ছিল একটা সরকারি ছুটির দিন । আজ হটাত করে এটা কেন একটা কাল দিন হয়ে গেল, আর সেই কাল দিন আমরা কেন ছুটি কাটাতাম তা আমি কেন, আমার মত অনেক গাধাই নিশ্চয় বোঝেন নি ।

খ। লুই কানের নকশার মাঝ দিয়ে মেট্রো রেল নিয়ে গেলে নাকি সংসদের সৌন্দর্য, সম্মান ক্ষুন্ন হবে । আমার প্রশ্ন এই সংসদ ভবন আমাদের কোন কাজে লাগে ? এরবদলে যদি একটা প্রেস কনফারেন্স রুম দেওয়া হয় তাতে আমাদের সরকার,বিরোধীদল ও খুশি থাকবে, সাংবাদিকদেরও বারে বারে বিভিন্ন যায়গায় দৌড়াতে হবে না । আবার সংসদে অনুপস্থিতির জন্য কাউকে কিছু জবাবও দিতে হবে না । কয়জন সামনে বসল আর কয়জন পিছনে বসল তারও সমাধান বের করতে গানিতিক হিসাব কষার দরকার হবে না । উলটা মেট্রো রেল এই এলাকায় হলে বিকালে বেড়াতে আসা অনেকের জন্য সুবিধাই তো হওয়ার কথা, এমনকী ডেটিং করতেও তো ………………

গ। বেচারা নূর হোসেনের সৌভাগ্য যে উনি মারা গিয়েছেন, নইলে আজ গনতন্ত্র আমাদের দেশটাকে যেভাবে চুষে খাচ্ছে……আমি নিশ্চিত এই বেচারা বেঁচে থাকলে আজ আবার গনতন্ত্র নিপাত যাক, জনগন মুক্তি পাক লিখে রাজপথে নামতেন । জনগন নাকি ভাল আছে এই বলছেন এক নেত্রী, আবার জনগন ভাল নেই এই মতবাদ প্রতিষ্ঠায় জনগনের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন অন্যজন । সাধারন পাবলিক আসলে যে কেমন আছে, মনে হয় তারা নিজেরাও কখন চিন্তা করে দেখেনি ।

ঘ। আমি স্কুল জীবলে পড়েছিলাম যে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয় । চট্টগ্রামের স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে উনার পাঠান ঘোষনাপত্র পাঠ করেন। আমার ৬ বছরের ছোট বোন স্কুলের সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছে ২৭ মার্চ শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা প্রদান করেন । তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় । এখন আমার ছোট ভাই, যে আমার বোনেরও ৫ বছরের ছোট সে পড়ছে ২৬ মার্চের কাহিনি । এখন পড়তে পড়তে ২ ভাই – বোনের লাগল গোলমাল । আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে ???? কয় দিন পর আমরা বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপন করব ।

ঙ। ছোটবেলা থেকে মধ্যবিত্ত বাবা -মা শিখিয়েছেন কীভাবে দামি জিনিষের সীমিত ব্যবহার করতে হয় এবং সেই সাথে দামী জিনিষের সম্মান রাখতে হয় । আজ আমাদের জাতির সবচেয়ে দামী মানুষটার ছবি আমরা এতটাই বেশি ব্যবহার করছি যে ১০০০ টাকার নোটে উনার ছবি ,আবার ১ টাকার কয়েনেও উনার ছবি।রাস্তাও উনার নামে,ব্রিজও উনার নামে,সম্মেলন কেন্দ্রও উনার নামে……সবশেষ শুনলাম নভোথিয়েটারও নাকি উনার নামে নামান্তরিত হয়েছে । এত বেশি ব্যবহারে উনি কি খুব বেশি সস্তা হয়ে যাচ্ছেন না ????? আজ বেঁচে থাকলে উনার এত ব্যবহার দেখে উনি নিজেও বোধ হয় লজ্জা পেতেন ।

চ। আমাদের দেশে একটা প্রজন্ম আছেন যাদের হাত থেকে আমাদের খুব তারাতারি নিস্তার দরকার । কেননা আজ পাকিস্তানি জাতি যেমন নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করে চলেছে , আমাদের জন্য তারাও একই ফল নিয়ে আসছেন । হাথ মে বিড়ি মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান এই ডায়লগ মুখে নিয়ে তারা পাকিস্তানের জন্য আন্দলন করেছেন । মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি বলে বাংলাদেশ এর জন্য যুদ্ধ করেছেন আর এখন জয় বাংলা বাংলার জয় নাকি প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ গাইবেন এটা ঠিক করতে না পেরে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছেন । কালে কালে রঙ বদলানো এই লোকগুলোর স্বভাবের বিশ্লেষন করলে আপনি পুরপুরি পাকিস্তানি চরিত্র পাবেন যাদের কাজ শুধু ধ্বংস করা । যারা কখনও কোন সৃষ্টি করেন নি । এক বুক কষ্ট নিয়ে আমি এই প্রজন্মের পতনের পর এমন কারো আগমনের অপেক্ষায় আছি যিনি বাংলাদেশে জন্মেছেন, ঘনঘন রঙ না বদলিয়ে একই আদর্শে অবিচল থাকবেন, কাউকে সন্মান দিয়ে তাকে সস্তা না বানিয়ে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করবেন, মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান ছিল তার আলচনার একটা সমাপ্তি টানবেন ,আর সেই সাথে ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সঠিক ইতিহাস যাতে জাতি জানতে পারে, তার পদক্ষেপ নেবেন । আশা করি আমার ছেলেও এমন প্রতীক্ষা শুরুর আগেই আমার এই প্রতীক্ষার অবসান হবে………………………………………………………………।।

১,৪০০ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “আজাইরা কষ্ট,অসীম প্রতীক্ষা”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    :clap: :clap:
    কি সুন্দর করে মনের কথাগুলো বলে দিলে!
    দেখলাম উদ্ধৃতি দিতে গেলে পুরো পোস্টটাই মন্তব্যে উঠে আসবে।
    জ্বরের ঘোরে এমন সুস্থ চিন্তা করলা কেমনে?
    আসলে মনে হয়, জ্বর হইসিলো বলেই পারলা.... :))

    জবাব দিন
  2. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    আমাদের জন্য আগামীতে কি অপেক্ষা করতে তা আমরা কেউ না জানলেও যা অনুমান করতে পারি তা সুখকর নয় ...... কত প্রজন্মপর আমরা মানুষ হব সেটার হিসাব করার সাহস আমার নেই। তোমার লেখায় যে আক্ষেপ ফুটে উঠেছে তা আমাদের সবার মধ্যেই আছে... আশা করতে দোষ কি ... ???

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    তাও ভাল তোমার মত কেউ আছে যারা অন্তত এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী, কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এগুলো শুধুমাত্র 'আজাইরা' কিছু টপিক, নিজের মত করে দিন পার করতে যেগুলোর উত্তর জানার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

      আসলে স্যর আমি আমার সিনিয়রদের কাছ থেকে কোন সমাধান আশা করেছিলাম...যারা অন্তত আমার ইতিহাসটুকু জানতে সাহায্য করবেন ।আর বাকীটা আসলে নিজের মনে জমা কিছু ক্ষোভ থেকে লিখলাম......লিখতে গিয়ে মনে হল কিসের জন্য লিখছি এই সব...লিখে লাভ কি...এর কী প্রতিউত্তর হতে পারে তাই নিজেই নিজের লেখার নাম দিলাম আজাইরা কষ্ট । তবূও যে আপনাদের মত অনেকের ভাল লেগেছে এই জেনে একটু ভাল লাগল ।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুন (০০-০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।