স্বপ্ন

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই টের পেলাম ব্যাপারটা । বাম হাতের জয়েন্টে সামান্য ব্যথা করছে । কেনো ? কি হলো আবার ? আল্লাহ মানুষকে একখান শরীর দিয়া ক্যান যে তার এতো প্রবলেম দিসেন –তা একমাত্র আল্লাহ নিজেই জানেন ? এতো অসুখ- বিসুখ দেওয়ার দরকার কি ছিলো ? আর তার জন্য দুনিয়ার ঔষুধ ‌, তার আবার হাজারো টাইম-টেবিল । আমার একটা বড় দূর্বলতা হলো আমি কখনো কোন একটা ঔষুধ ঠিক টাইম- টেবিল মেনে তার কোর্সটা শেষ করতে পারি না । আল্লাহই জানে এই ব্যাথা কি জন্য আর কতটুকুই বা সে ভোগাবে ?
“কাল কি কিছু এমন করেছিলাম যে তার জন্য এই সমস্যা ?” চোখ খুলে চাইলাম চারপাশে । আমার ঘর ।ফ্যানটা আমি পছন্দ করে কিনেছি কয়েকদিন আগে । হটাত আগের ফ্যানটা নষ্ট হয়ে গেলো। আর এজন্য মার কি যে বিরক্তি । এমনিতেই খরচের জন্য সারাদিন হিসাব মেলাতে তার মাথা প্রায় খারাপ হওয়ার যোগাড় , তার মধ্যে এই উটকো খরচ । মার সে দিনের কথা মনে পড়ে কেমন হাসি পেয়ে গেলো । বেচারি । কিন্তু বিছানাটা এমন লাগছে কেনো ? আরে ? এটা তো আমার বিছানাও না । এতো ডাবল বেড ।
আমার বেডটা কই ?? আর এটা কি পরে শুয়েছি আমি ? শর্টস কই ? চারপাশে এত ফুল……এবার মনে পড়লো সবকিছু । কাল আমি জীবনে প্রথমবারের মত ডাবল বেডে শুয়েছিলাম । কারও সাথে । বেডের ডান দিকে । ঘুমাতে একটু দেরীও হয়েছিল । কত কথা যে বলছিলাম দুজনে—–সুন্দর সময় কাটছিল। গত কয়েকদিনের কত ঝঞ্ঝাট । কিভাবে সবকিছু ম্যানেজ করা হচ্ছিল …। মনের ভিতরের না জানা কত শঙ্কা –কত কিছু । কথা হচ্ছিল আর হাসাহাসি । জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর রাত । আমি আর সে , আমরা দুজনেই শিহরিত হচ্ছিলাম । ঘুমাবার আগে সে বলল যে তার ঘুম আসছে না । কি করা যেতে পারে ? আমি বললাম আমার বুকে মাথা রেখে শোয়ার জন্য । আমার হৃৎপিণ্ডের একটানা আবিরাম ধ্বক-ধ্বক শব্দে হয়তো ঘুম আসতেও পারে । সেও মাথা রাখলো। তার চুলের গন্ধে আমি যেন হারিয়ে গেলাম কোন অজানা জগতে । মনে মনে বললাম “ভাই তোমার তো ঘুমের ব্যাবস্থা হইলো কিন্তু আমার ঘুম যে উধাও হয়ে যাচ্ছে তোমার গন্ধে ।”
হটাত সে বলে উঠলো ” আচ্ছা আমি যদি চাই প্রতিদিনই তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ? ” আমার পৃথিবীটা যেন আনন্দে দুলে উঠল । যাক । প্রতিদিনই তোমার চুলের গন্ধে আবিষ্ট হয়ে ঘুমাতে যেতে পারব । আনন্দের শীতল স্রোত যেন বয়ে গেল আমার সারা শরীরে । পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানি না । ঘুম থেকে উঠে অনুভূত হওয়া হাল্কা ব্যাথাটা মনে পড়তে এবার আনন্দই লাগলো । শুয়ে শুয়ে ভাবছি । হয়তো একটু মুচকি হাসছিলামও ।
“এতো ঘুম ? একা একা পাগলের মতো হাসছ কেন? উঠবে না ? ” আমার উনি কখন যে রুমে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার পাশে -টেরই পাইনি ।
“এইত উঠছি।”
“এই নাও চা”………………আরে এভাবে এতো বার ডাকছ কেন ? আর একটু মিষ্টি করে বলা যায় না ?

“স্যার ওঠেন । চা আর অষুধ । টাইম পার হইইয়া গেছে।অষুধ খান স্যার ।”
আমি ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলাম । শালার ব্যাটম্যান ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য ধাক্কাইতে ধাক্কাইতে হাতের ব্যাথাটায় ধাক্কা দিসে ।
“কি হইছে ?” আমি রেগে জিজ্ঞাসা করলাম। “এতো জোরে ধাক্কাইতেছিস ক্যান ?”
“স্যার ফুটবল টীমের জ়েসিও স্যার আপনারে দেখতে আসছে । কালকে পইরা হাতে যে ব্যথা পাইসেন তার অবস্থা জানার জন্য ।বাইরে দাড়াইয়া আছে । কি কমু স্যাররে ?”
চোখটা ডলে ভাল করে চেয়ে দেখি………… সেই পুরনো বেড , সেই চিরচেনা পুরনো ফ্যানটা আমার মাথার উপরে ঘুরছে। রাতে হাতের জয়েন্টে মাখা মুভের গন্ধে নিজেরই বমি আসতেছে ।
হায়রে স্বপ্ন …………। “…………সাহেব , আসতেছি একটু দাঁড়ান ….

১,৩৫৩ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “স্বপ্ন”

  1. শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

    ভাই ব্যাটম্যান হইল সেই সব পোলাপাইন যাদেরকে ফৌজে অফিসারা বেতন দিয়া রাখে নিজেদের ফাইফরমাশ খাটার জন্য । এই যেমন ধর ড্রেস রেডী করা, ছোটখাট টুকটাক কাম কইরা দেওয়া .........এইতো

    জবাব দিন
  2. মুহিব (৯৬-০২)

    শিবলী হারমোনিয়াম ছাইড়া ফুটবলে লাথি দিতাছ আজকাল, তাই না? ব্যাথা তো পাইবাই। যাক আঙ্কেল আন্টি রে এই পোষ্ট টা প্রিন্ট কইরা পাঠাইয়া দেই , কি কও? অবশ্য যদি এর কারণে ঝাটার বারি কপালে জুটে তাহলে আমার দোষ দিও না।

    অঃ টঃ বিয়ার কথা বাদ দিলাম। বেটা ফাজিল তর কি এই স্বপ্ন দেখার বয়স হইছে? স্বপ্ন দেখার জন্য লাল কালি দেয়া হইল।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহিব্বুল (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।