জীবনালেখ্য

জিতু আপির উপর আমার একটু রাগ হচ্ছে । বাবা তোমার স্টোরে জায়গা নাই , ভাল কথা । তাই বলে তোমার সব লেখাই আমার প্রিয়তে রাখতে হবে—–এ কেমন কথা ? নারী কবিতা পড়েই বোধহয় লিখতে বসেছিলাম……………………

কেউ কথা রাখেনি……………………………

ভয় পেলে ? হা হা হা ভয় নেই,
সুনীলের মত কোন প্রেম কবিতা শোনাতে বসিনি তোমাদের ।
দু’হাত ভরে প্রেমের উপাদান বিলাতে বিলাতে
আমি নিজেই যে আজ নিঃস্ব প্রায় ।
শ্রান্ত-ক্লান্ত আমি তোমাদের বোঝার ভারে
ন্যুব্জ হয়ে পড়ছি ক্রমশ…দিনদিন ।

তবু তোমাদের মন পাইনি কোনদিন–
হয়তবা কোন মধ্যবিত্ত প্রৌঢ়ার মত বিরক্তিকর শোনাচ্ছে আমাকে ।
খুব বেশী চেয়েছিলাম কী ? একবার ভেবে দেখ-

মনে নেই কবে, কখন প্রথম আমার মাঝে এসেছিলে তুমি ।
গর্ভের স্থূলতার সাথে সাথে আমিও পেতে চেয়েছিলাম পূর্ণতার স্বাদ-
বাকি আর সবার মত ।
তুমি এলে আমার কোল জুড়ে , তোমার হাসি-কান্না , আধোবুলি-
আমাকে মা হয়ে গড়ে উঠতে শেখালো ।
আমি আপন করে নিলাম তোমাকে ।
ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে তোমাকে রক্ষা করে বড় করতে চেয়েছিলাম ।
কিন্তু তুমি কি পেরেছো আমার সম্মান রাখতে ?

তোমার চোখের সামনে দিয়ে তারা এলো আমার দরজায়-
তাদের বিষাক্ত কামড় , ধাঁরালো থাবায় আমি ক্ষত-বিক্ষত হলাম ।
আমার স্বর্বস্ব লুটে নিয়ে তারা গড়ে নিলো তাদের স্বর্গ- তুমি বোঝনি ।
আমার চিৎকার, আহাজারি কানে যায়নি তোমার ।
নিজের মায়ের রূপ-যৌবন যখন অন্যে লুট করছিল-
ঘুমিয়ে ছিলে তুমি । জেগে উঠতে বড় দেরী করে ফেলেছিলে ।
যন্ত্রনায় কাতর আমার রক্তাক্ত দেহ কতবার দেখেছ তুমি—
মনে করতে পার?

অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না ।
মা হিসেবে কী দেই নি আমি তোমাকে ?
বাহ্যিক ভালবাসা, আদর, স্নেহ- মমতার পাশাপাশি
দিয়েছি আমার হৃদয় খুঁড়ে গুপ্তধন তুলে নেওয়ার অধিকার —-
তুমি যোগ্য হতে পারনি তা নেবার ।
বর্গী এনে আমার পাশাপাশি আজ নিজের সম্ভ্রমও বিকিয়ে যাচ্ছো ।

তুমি ভালবাসনি আমায়……কখনো, কোনদিন ।
ভালবাসার নামে বারবার প্রতারণা করেছো আমার সাথে ।
আমায় সোনা দিয়ে সাজানোর নামে নিজেই হারিয়ে গেছ বারবার…
বারবার আমাকে রক্তাক্ত করেছো , করছ এখনো ।
তাই আমিও এখন শোধ তুলছি দেখ ।
মমতার ভান্ডার আমার ফুরাল বলে………

আমার বুকের ধন খুঁজতে তোমাকে আজ পাড়ি দিতে হয় বহু পথ ।
হৃদয় খুঁড়ে দেখ…শুধু জঞ্জালই বের হবে আজ
মানিক আমি লুকিয়ে রেখেছি অনেক গভীরে ।
তবুও খোঁড় , খুঁজে দেখ আবার……নিজের শেকড় পাও কি সেখানে ?
চেয়ে দেখ নিজের পানে । ওঠো…জেগে ওঠো তুমি
দেখো দু’হাত প্রসারিত আমি দাঁড়িয়ে আছি-
তোমার জেগে ওঠার অপেক্ষায় ।
একবার প্রাণ ভরে তোর কণ্ঠে শুনি——মা

অন টপিক:

আমার এ লেখায়……
মা = বাংলাদেশের ভূমি
সন্তান = বাঙ্গালির জাতিস্বত্ত্বা
অত্যাচারী = বিদেশী শাসক
বাহ্যিক ভালবাসা = প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য
গুপ্তধন = খনিজ সম্পদ

২,৩৪৫ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “জীবনালেখ্য”

  1. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    এক কথায় দারুণ হয়েছে, শিবলী। তোমার ব্লগের শুরুতেই আমার নাম দেখে বিশাল এক ধাক্কা খেয়েছি। কিঞ্ছিত লজ্জাও পেয়েছি :shy:

    তুমি ভালবাসনি আমায়……কখনো, কোনদিন ।
    ভালবাসার নামে বারবার প্রতারণা করেছো আমার সাথে

    :boss: :boss: :boss:


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  2. রায়েদ (২০০২-২০০৮)
    আমার এ লেখায়……
    মা = বাংলাদেশের ভূমি
    সন্তান = বাঙ্গালির জাতিস্বত্ত্বা
    অত্যাচারী = বিদেশী শাসক
    বাহ্যিক ভালবাসা = প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য
    গুপ্তধন = খনিজ সম্পদ

    ভাইয়া বলে দেয়ার দরকার ছিলনা। আপনি এত স্পষ্ট আর সুন্দর করে আপনার কবিতায় এই জিনিসগুলা তুলে ধরেছেন যে কেও এইটা বুঝতে পারত।

    জিতু আপির উপর আমার একটু রাগ হচ্ছে

    আমার তো কবিদের দেখলেই রাগ হয়। আজীবন চেষ্টা করলেও বোধ হয় একটা পচা কবিতাও লিখতে পারবনা। ভালো কবিতাতো দুরে থাক।

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তুমি যখন প্রথম ব্লগটা লিখেছিলে, বলেছিলে লিখতে বলতে পারোনা etc etc.
    কিন্তু ভাইজান,
    হঠাৎ করে এমনটা লিখতে পারার কথা না.... ;))
    চুপেচাপে লিখে চলছিলে এতদিন, তাই না? :clap: :clap:

    খুব ভালো লাগলো শিবলী....
    খুব।

    জবাব দিন
  4. মুহিব (৯৬-০২)

    শিবলী ভালাই তো লিখছছ। কিন্তু প্রভাবটা কার? আজকাল ফেইস বুক আর সি সি বি তে তরে একটু উদাসীন মনে হয়। ক্যান্টনমেন্টে চইলা আয়। সি উ সাহেবের লগে দেখা কর। সব উদাসীনতে চইল্যা যাইব বইলা মনে কয়।

    তয় চালাইয়া যা। পড়তে আমাগো বালাই লাগে।

    সি সি আর রক্স :boss: :boss: :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।