ইস্তানবুল,কিছু অভিজ্ঞতা এবং আমি (১)

আজকে আবারও হটাৎ করেই লিখতে বসা। আসলে গণহারে এক্সামগুলোতে কাঁচা কাঁচা সব বাঁশ খেতে খেতে লেখতে বসার সময়ই হয় না। সেই সাত সকালে উঠে কাঁধে এক ঝোলা নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে যেতে হয় ইউনিভার্সিটিতে। সারাটা দিন কানের পাশে তুর্কী ভাষায় প্যাঁচাল শুনতে শুনতে যখন দেখি কানটা  প্রায় ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় ৬ টা বাজে। এটা হল আমার নিত্ত নৈমিক ব্যাপার। তো যাই হক,আজকে আবারও কিছু অভিজ্ঞতার কথা সবার সাথে শেয়ার করতে মন চাইল। জানি না এটাকে কি ধরনের অভিজ্ঞতা বলব। ইস্তানবুল থেকে সকালে ট্রেনে  করে আঙ্কারা মানে তুরস্কের রাজধানীতে যাবো। সঙ্গে রয়েছে এক বাঙালি ছোট ভাই। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম অবস্থা সুবিধের না। তো ট্রেন সকাল ৭ টায়। আমি আবার আধা ইউরোপে থাকি।হে হে… আমার থাকার জায়গা থেকে সাধারণত ১ ঘণ্টায় ট্রেন স্টেশনে পৌঁছানো যায়। বের হলাম ২ ঘণ্টা আগে। বাঙালি ছেলে। সব কিছুতেই ঢাকার কথা মাথায় আসে।ভোর ৬ টায় চালু হবে ট্রাম। মেট্রোবাস নামে এক বাস আসে যেটা ইস্তানবুলের যানজটকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। এই বাসের জন্যে আলাদাভাবে একটা লেনই করা আছে। আমার ডরমিটরি থেকে মেট্রোবাস হেঁটে ১৫ মিনিটের পথ। পথে দেখলাম এটিএম বুথ। ভাবলাম পকেটটা একটু গরম করেই যাই। কিন্তু আমি তখনো জানি না যে এটিএম বুথ কাদা পানিতে থাকা মহিষের মতো বেঁকে বসবে।আমি তো মহা আনন্দে এটিএম বুথে কার্ড দিয়ে পাসওয়ার্ড দিলাম। দেখলাম লেখা এল কত টাকা তুলতে চান। বিশাল এক ভাব  নিয়ে যখন টাকার পরিমাণটা লিখলাম তারপরেই যেন সিন্দাবাদের মালিকা হামিরার জিনদের মতো এটিএম ও আমার কার্ডটাকে গিলে নিল। বলল যে যাও বাবা সায়খ,খেয়ে দিলাম তোমার বড় আদরের কার্ডটা।আমি তো পড়লাম মহা বিপদে। এখন কার্ডটা ভিতরে, পকেটটা ফাঁকা।উপরন্তু, কার্ডটা থেকে যেন কেও টাকা তুলতে না পারে তার জন্যে ব্যাংকে ফোন করে জানাতে হবে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫ টা বেজে ৩০ মিনিট।পাশে তাকিয়েই দেখতে পেলাম সরকারি অফিসের গেট। একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখতে পেলাম এই শীতের রাতে পেঙ্গুইনের মতো সাদা আর কালোর মিশ্রণে এক ধরনের অদ্ভুত পোশাক পরা লোক। তারা আবার সরকারি পাহারাদার। তো আমি তাদেরকে গিয়ে আমার সমস্যার কথাটা বলে তাদের সরকারি ফোনটা ব্যাবহার করতে চাইলাম। তো তারা প্রথমে আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যে আমি মনে হয় তাদের কাছ থেকে তাদের আত্মাটা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছি। কিছুক্ষণ তারা পরস্পরের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন তারা এই পৃথিবীতে সদ্য জন্ম নিয়েছে। তো যাই হোক, কি কারণে জানি না তারা বললো যে ঠিক আছে। আমি তখন ফোন করলাম। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দেখি কোকিলা কণ্ঠী এক নারীর সুমধুর কণ্ঠধ্বনি। তো তিনি ফর্মালিটি শুরু করলেন। আর শুরু হল আমার আর তার মধ্যে কিছু তুর্কী আর কিছু ইংরেজি ভাষায় এক অবোধ্য বাক্য বিনিময়। আমি তাকে যতোই বুঝাতে চাই যে আমার কার্ডটা এটিএমের ভিতরে তিনি ততই বলেন আপনার কার্ডটা হারিয়ে গেছে তাই না। একপর্যায়ে মেজাজটাই গরম হয়ে গেল। তখন সেই কোকিলা কণ্ঠীকে মনে হচ্ছিলো সাত সকালে কানের পাশে কাক ঘ্যানর ঘ্যানর করতেছে। পরবর্তীতে অনেক কষ্টে যখন তাকে বুঝানোর পর্যায়ে আসলাম তখন ঘটে গেল আরো এক বিপত্তি।আমার পাশের ছোট ভাইটা তার ব্যাগটা রেখে আমার কথা শুনছিল। এই ফাঁকে সেই দুই পেঙ্গুইনধারী মানুষ তার ব্যাগ খুলে চেক করা শুরু করে দিয়েছে। তাদের ধারণা ব্যাগে অবৈধ কোন কিছু থাকতে পারে। মেজাজটা এমনিতেই গরম তার উপর এই ফাউ ঝামেলা। তাদের সাথে বাক বিতণ্ডা সেরে যখন আমি বাসের জন্য স্টেশনে পৌছালাম তখন ঘড়ির কাঁটায় ৬ টা ১৫। তো তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠলাম। যাক বাবা, আর তো মাত্র ২৫ মিনিট লাগবে। অবশেষে ট্রেনটা ধরতে পারবো তাহলে। কিন্তু কথায় আছে বিপদ যখন আসে একেবারে আঁটঘাঁট বেধেই আসে। তার প্রমাণ আবারও মিললো একবার। হটাৎ করেই পথিমধ্যে বাসের গেট গেল অকেজো হয়ে। আর ঠিক হয় না। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬ টা ৪০ মিনিট। আমার তো মাথায় বাজ পড়ার কায়দা। কি করি!!! হটাৎ করেই বাসের দরজা ঠিক। যাক বাবা হয়তো বাংলাদেশের মতো এইখানেও ট্রেনটা লেট করতে পারে এই আশা নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু। কিন্তু হায় হায়!!! যখন বাস থামল ততোক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় ৬ টা ৫৫ মিনিট। আশেপাশে লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম যে ট্রেন কি এই বাস স্টেশনের পাশের ট্রেন স্টেশন দিয়ে যায় কিনা। লোকজন জানালো যে সব ট্রেনই এই স্টেশন দিয়ে যায়। যাক বাবা!! আল্লাহ তাহলে মুখ তুলে তাকাল। স্টেশনে বসে অপেক্ষা করতেছি। হটাৎ করেই এক ট্রেনের আগমন।তো আমাদের দেশে যখন কোন ট্রেন এসে স্টেশনে থামে তখন স্বাভাবিক ভাবেই ১ থেকে ২ মিনিট তো দেরি করেই। মাথায় তো আমার সেইটাই রয়ে গেছে। তো ট্রেনটি থামার পরপরেই দেখতে পেলাম যে এটি আমাদের সেই কাঙ্খিত ট্রেনটি। তো ট্রেনের আমাদের বগিটি খুঁজতে লাগলাম। আল্লাহর কি রহমত যে ৩০ সেকেন্ডের মাথায় বগিটির দেখা মিলে গেল। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না কপালের লিখন যায় না খণ্ডন। আমার কপালটা মনে হয় আজকে ফাটাই ছিলো।যে কারনেই মনে হয় কোন সুপার গ্লুতেও কাজ হচ্ছিল না। যেই না বগিটিতে আমরা উঠতে যাব তখনি বাংলা সিনেমার মত ট্রেনটি সামনের দিকে এগোতে লাগলো। হটাৎ এই রকম আচমকা ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্যে মনে হয় কড়া ডোজের এক ইলেকট্রিক শক খাওয়ার অনুভূতি হয়েছিল। কিন্তু অতি দ্রুত সম্বিৎ ফিরে পেয়ে আমি আর আমার সেই ছোট ভাইটি বাংলা সিনেমার নায়কদের মত সেই চলন্ত ট্রেনের পিছনে দৌড়াতে লাগলাম। বাংলা সিনেমায় তো নায়ক যে ভাবেই হোক না কেন ট্রেনে উঠবেই।আমিও নিজেকে ওই সময় উসাইন বোলট মনে করে দৌড়াতে লাগলাম। একটা সময় ঠিকই ট্রেনের কাছে পৌঁছে গেলাম কিন্তু ইলেকট্রিক গেট ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় মনে হল আমার সকল আশা ভরসা চুরমার হয়ে গেল।আর সাত সকালে লোকজন এই রকম মজাদার দৃশ্য দেখে অভিভূত। ট্রেন ও যাচ্ছে ট্রেনের পিছনে দুই বিদেশীও দৌড় ঝাপ করছে। যাই হোক, আমাদেরকে চমকে দিয়ে হটাৎ করেই একটু দূরে গিয়ে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর যা ঘটিল তা আমার কল্পনার ও অতীত ছিল। ট্রেন থেকে হটাৎ করেই ট্রেনের টিটি লাফ দিয়ে নিচে নামলেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে চিল্লাতে লাগলেন এই বলে যে তোমরা দৌড়াও।কিন্তু বেচারা তখনও জানেন না যে তার অবস্থাও আমাদের মতই হবে। তিনি আমাদের দিকে যখন তাকিয়ে ছিলেন তখন যে ট্রেনের চালক আবার ট্রেনটিকে চালাতে আরম্ভ করেছেন ওই বিষয়টা তিনি খেয়ালি করেন নি। তিনি যখন ব্যাপারটি খেয়াল করলেন ততক্ষণে আমরা তার কাছে পৌঁছে গেছি। ফলাফল হিসাবে যা দাঁড়ালো তা হল আমরা দৌড়াদৌড়ি তো করছিই আমাদের সাথে এবার যুক্ত হলেন ট্রেনের সেই হোঁৎকা টিটি সাহেব। সাতসকালে এই দৃশ্য দেখে আমি কাঁদবো না হাসবো না ট্রেনের পিছনে দৌড় দিব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তো স্বভাবগতভাবেই ট্রেনের সেই টিটি সাহেব ট্রেন চালককে এমনই গালি দিতে লাগলেন যা শুনে আমি আক্কেল গুড়ুম। একদিকে গালাগালি আর এক দিকে দৌড়াদৌড়ি। তো পুরোপুরি মেছাকার অবস্থা।আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিল যেন ইন্টারন্যাশনাল কোন দৌড়ের প্রতিযোগিতা চলছে যেটা আর থামার মত নয়। যেখানে প্রতিযোগী বাঙালিই বেশী। তো এমতাবস্থায় হটাৎ করেই মনে হয় আমাদেরকে ট্রেনে কর্মরত রেস্তোরার কেউ একজন দেখে ফেলে এবং ট্রেনের শিকলটিকে ধরে টান দিয়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়। ফলাফল আমাদের বহু প্রতীক্ষিত ট্রেনে উঠা এবং আঙ্কারা গমন করা…

এবারের ঘটনার প্রেক্ষাপট হল একটি খাবারের দোকান। আর ভালভাবে বললে বলা চলে যে সকালের নাস্তার দোকান। তো তুর্কী জাতিদের আমি বরাবরই বর্বর এবং অসভ্য বলি কিন্তু এরা মনে হয় ফ্রেঞ্চদের থেকে কিছুটা সভ্য। তবে এরা প্রচলিত ইউরোপের প্রথা অনুযায়ী সব কিছুতেই ব্রেড খায়। একবার তো এক তুর্কীকে আমি খিচুড়ি এনে খেতে দিয়েছিলাম আর ওই ব্যাটা খিচুড়িকে কিনা সোজা ব্রেডের মধ্যে চালান করে দিল। মনে হচ্ছিল কানের গোঁড়ায় কষে একখানা জুতার বাড়ি দেই আর বলি শালার পুত কাম পাছ না ইতরামি করস। তো যাই হোক সেই কথা বাদ দেই। আসি এবার আসল ঘটনায়। তো আমাদের এখানে সদ্য তুর্কী ভাষা শিখেছেন এমনই একজন বড় ভাই এই চরিত্রের রূপকার। তো ভাই একদিন সকালবেলা গিয়েছেন এমনই একটি নাস্তা করার দোকানে। উদ্দেশ্য সকালের জন্যে কিছু কেনাকাটা করা। তো তুর্কীরা সকালে এক ধরনের বিশেষ রুটি খায় যেটাকে তারা আচমা বলে। তো প্রায়সময়ই এই নামটি নিয়ে বাঙ্গালীদের বিশেষ করে যারা নতুন তুর্কী ভাষা শিখছেন তাদের একটু সমস্যা পোহাতে হয়েছে। আমাদের এই বড় ভাইটি ও তার ব্যতিক্রম নন। তুর্কী ভাষায় চাচাকে বলা হয় আমজা। তো সব বাঙালি এই জায়গাটিতেই ভুলটি করে বসেন। ভাই ও তার ব্যতিক্রম হলেন না। তিনি সোজা হাব ভাব নিয়ে দোকানে গিয়ে তুর্কী ভাষায় যেটা বললেন সেটা আমি পুরোটাই লিখছি নিচে

 

বির তানে আমজা ভেরেবিলিরমিছিন…

যার বাংলা করলে দাঁড়াবে

আমাকে একজন চাচা আপনার দোকান থেকে দিতে পারবেন…

অথচ ভাই যেটা বলতে চেয়েছিলেন সেটি হল

বির তানে আচমা ভেরেবিলিরমিছিন…

যার অর্থ হত

আমাকে একটি ব্রেড দিতে পারবেন…

বেচারা দোকানদার পুরাই হিমশিম খেয়ে গেল। সে হাসবে নাকি কথাটার উত্তর দিবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তার অবস্থা অনেকটা মাঝপথে পথ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ড্রাইভারের মত। কি যে করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আর এদিকে ভাই ও সময়ের সাথে সাথে গলার স্বর ভারী করে সেই ভুল তুর্কী ভাষা বলতে লাগলেন। সময় ও যায় ভাইয়ের গলার আওয়াজ ও বাড়ে। এদিকে ওই সময় দোকানে ব্রেড কিনতে আসা সবাই ও হতবাক এবং হেসে বেমালুম। কিন্তু ভাই ততক্ষণেও বুঝতে পারেন নি যে তিনি ভুল বলে চলেছেন। পরবর্তীতে ভাইয়ের পাশে থাকা এক তুর্কী ভদ্রমহিলা ভাইকে তার ভুলটি ধরিয়ে দিলেন। বেচারা ভাইয়ের তখন যে অবস্থা দাঁড়ালো তা অনেকটা ক্রিকেটের ভাষায় হান্নান সরকার ডাক মারার পরে যে সুন্দর একখানা হাসি দেন সেই হাসিটার মত। পরবর্তীতে ভাই কিন্তু ঠিকই আচমা নিয়ে দোকান থেকে বের হয়েছিলেন এবং এখন অবধি ভাই আর আচমা কিনতে গিয়ে কোন ধরনের ভুল করেন না…

আরেকটি শোনা ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করি। সময়টা ১৯৯৩ কিংবা ১৯৯৪ হবে। স্থান আঙ্কারা। সেই সময় আঙ্কারাতে অধ্যয়নরত আমাদের এক বড় ভাই এর কথা বলছি। ভাই ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছেন। ভাই এর তুর্কী ভাষার দক্ষতা মাশাল্লাহ না বললেই নয়। উনাকে বলা হয় প্রথম বাঙালি ব্যক্তি যিনি কিনা মহা দক্ষতার সহিত তুর্কী ভাষা ভুল বলতেন। যে রকম কনফিডেনট এর সাথে ভাই ভুল বলতেন আমার মনে হয় অনেকেই এই রকম কনফিডেনট এর সাথে পরীক্ষাতে উত্তর পত্রে সঠিক উত্তরটিও লেখেন না। সময়টা তখন রাত ১০ টা হবে। আঙ্কারাতে রাত ১০ টা মানে রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কমে যাওয়া। আর সেটা যদি হয় শীতের রাত তাহলে তো কথাই নেই। তো বাসে বলতে গেলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী আছেন। বাস চলছে। তো ভাই যে জায়গাতে নামবেন সেই জায়গা পৌঁছানোর আগে ভাই নামার জন্যে যে সুইচ আছে সেটি প্রেস করতে ভুলে গেছেন। এর পেছনে কারন ভাইয়ের একটু ঝিমুনি ভাব। তো যথারীতি বাস ভাই এর গন্তব্য স্থলে এসে হাজির। হটাৎ করেই ভাই এর মন থেকে এক আচমকা আভাস এল যে তার গন্তব্য স্থলে বাস চলে এসেছে। ভাই তড়িঘড়ি করে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটি কাটিয়ে উঠে নামার জন্যে বাসের ড্রাইভারকে বলতে লাগলেন। আর এই খানেই ঘটে গেল বিপত্তি। ভাই বলতে চেয়েছিলেন

ইনেজেক ভার…

যার অর্থ হল যাত্রী নামবে

কিন্তু ভাই এর তো আবার কনফিডেনট এর সাথে ভুল বলার স্বভাব আছে। আর তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা সেই মাত্রাকে আরও বারিয়ে দিয়েছে। ভাই প্রথমে বলে উঠলেন

ইনেক ভার…

তুর্কী ভাষায় ইনেক মানে হল গরু। যার মানে হল

নামার জন্যে একটি গরু বাসে রয়েছে।

ড্রাইভার তো মনে করেছে কেও শয়তানি করতেছে। তো সে ব্যাপারটাকে খুব বেশী একটা পাত্তা না দিয়ে যেই না গাড়িকে সামনে বাড়িয়েছে অমনি ভাইয়ের গলার স্বর ও বেড়ে গেছে। ভাই তখন আর জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন

ইনেক ভার। কাপ্তান ইনেক ভার।

যার অর্থ

নামার জন্যে একটি গরু বাসে রয়েছে। ড্রাইভার সাহেব আপনি বুঝছেন না কেন নামার জন্যে একটি গরু বাসে রয়েছে।

আর এই দিকে তহ বাসের সবাই হেসে কুপোকাত। ভাই পরে আর সহ্য করতে না পেরে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখিয়ে বললেন

বাকমিয়রসুন…ইনেক ভার।

অর্থাৎ যার অর্থ দাঁড়ায়

দেখতে পাচ্ছেন না আপনি নামার জন্যে একটি গরু বাসে রয়েছে।

অথচ ভাই বলতে চেয়েছিলেন

বাকমিয়রসুন…ইনেজেক ভার।

যার অর্থ

দেখতে পাচ্ছেন না আপনি বাস থেকে নামার জন্যে যাত্রী রয়েছে।

ওই এক জে ভুল করে বাদ পড়ায় আজ ও তুর্কীর বাঙ্গালী ছাত্রদের কাছে ইতিহাস হয়ে আছেন তিনি… হে হে

আজ আপাতত এতোটুকুই থাক।পরে আবার কোন এক দিন না হয় আর ও কিছু অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগাভাগি করব।সেই পর্যন্ত সবাইকে শুভেচ্ছা।

ইস্তানবুল থেকে

সায়খ         র ক ক (২০০১-২০০৭)

২,১৪৮ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “ইস্তানবুল,কিছু অভিজ্ঞতা এবং আমি (১)”

  1. রাফায়েত (২০০২-২০০৮)

    বেচারা ভাইয়ের তখন যে অবস্থা দাঁড়ালো তা অনেকটা ক্রিকেটের ভাষায় হান্নান সরকার ডাক মারার পরে যে সুন্দর একখানা হাসি দেন সেই হাসিটার মত
    ইনেক ভার ইনেক ভার......কাপ্তান!! ভারি মজা পাইলাম!!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।