বই পড়া, বই উপহার পাওয়া

মনে আছে খুব ছোট বেলায় আমার মা আমাকে আলালের ঘরে দুলাল বইটা কিনে দিয়েছিল। বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস। পড়েছিলাম এবং কিছুই যে বুঝি নি সেটাও বেশ মনে আছে। আলালের ঘরে দুলাল ছিল আমার প্রথম নিজের বই।
সিক্সে পড়া সেই আমার তখন বই কেনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। মনে আছে একবার শিশু একাডেমিতে যেয়ে ৫/৬টা বই কিনে এনেছিলাম। নাম এখন আর মনে নেই। একটা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করার ইচ্ছা তখন থেকেই আমার মাথায়।

তারপর অনেক বই কিনেছি। চারটা সেল্ফ ভরে গেছে বইয়ে। চাকরি করার পর বই কেনা আরও সহজ হয়ে গেছে। আমার একটা সখের বাজেট আছে। কিছু টাকা আমি আলাদা করে রাখি সখ পূরণে। বই কিনি, গান কিনি, ডিভিডি কিনি।

বড় হয়েছি। এখন সব কিনতে পারি। বই আর উপহার পাইনা। বউ আমার জন্য শার্ট কেনে। মা কেনে ফতুয়া। শশুর বাড়ি থেকেও পাই শার্ট। আজকাল কেউ আর বই দেয়না।

ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়তাম, উপহার মানেই বই। পকেট ভারি থাকতো না বলেই হয়তো বই দিতাম, বই পেতাম। সেসব বইতে আমরা লিখে দিতাম অনেককিছু। এখন আমেরিকায় আছে শিমুল, প্রতি জন্ম দিনে বই দিতো। কানাডায় থাকা বিন্দুও বই দিতো। একবার এক বালিকাকে বই দিয়ে লিখে দিয়েছিলাম-

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার
শ্রাবণবরিষণে একদা গৃহকোণে
দু’কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।

সেই মেয়ে পরে……………। সে অন্য গল্প।

বই ঘেটে দেখলাম উপহার পাওয়া বইয়ের মধ্যে সবগুলোই কোনো না কোনো বালিকার দেওয়া। ছেলেদের মধ্যে একমাত্র বই উপহার দিয়েছিল আপন ভাই (ত্রপা মজুমদারের জামাই)।

এক বালিকার সঙ্গে অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল। চানক্য সেনের পুত্র পিতাকে বইটা দিয়েছিলাম তাকে। সেই বই পড়ে বালিকার পিতাই মুগ্ধ হয়ে গেল। আমার কাছ থেকে কত বইযে পড়তে তিনি নিলেন। সেই বই একটাও আর ফেরত পাইনি, মেয়েটাকেও দেয়নি। :((

এখন যে একেবারেই বই উপহার পাই না, তা নয়। আজকাল বই পাই কর্পোরেট কালচার হিসেবে। কর্পোরেট হাউজগুলো মাঝে মধ্যে বই পাঠায়। বই এমনই একটা জিনিষ পেলে না বলা যায় না। এ বছরই দুটো বই পাঠালো ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। একটা হলো লালন সমগ্র, আরেকটি জীবনানন্দ দাশের কবিতা সমগ্র। দুটোই মূল্যবান ও প্রিয় বই। তারপরেও উপহার পাওয়ার মজাটা এখানে নেই।

বহুদিন পর আবার উপহার পেলাম বই। কতদিন পর??? মনে করতে পারছি না। আমার এখন অনেক বই। ঘর জুড়ে বই। তারপরেও উপহার পাওয়া বইটি আমি হাতে নেই, নেড়েচেড়ে দেখি। মুগ্ধ হই। উপহার পাওয়া বইটি বিশেষ একটা কিছু বলে মনে হয়।

আহা কতদিন পর বই উপহার পেলাম।

৩,৬৩৪ বার দেখা হয়েছে

৫৫ টি মন্তব্য : “বই পড়া, বই উপহার পাওয়া”

  1. তানভীর (৯৪-০০)
    তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
    নামাতে পারি যদি মনোভার
    শ্রাবণবরিষণে একদা গৃহকোণে
    দু’কথা বলি যদি কাছে তার
    তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।

    শ্রীকান্ত আচার্য্যের গলায় গাওয়া "এমন দিনে তারে বলা যায়"- এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটা আমার খুব খুব পছন্দের! এর লিরিক্স অনন্য সাধারণ বলা যায়!

    ছোটবেলায় জন্মদিনের উপহারে আম্মু সবসময়ই বই দিত। তখন খুব ভাল লাগত। আর এখন তো বড় হয়ে গেছি, কেউ আর বই দেয় না! 🙁

    শওকত ভাই, একেবারে নষ্টালজিক করে দিলেন!

    জবাব দিন
  2. বই উপহার পেতেই আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। কিন্তু আফসোস দু'একজন ছাড়া আর কেউই বই দেয় না। সবাই খালি জামা-কাপড় আর জুতো, যেগুলি আমার অনেক সময় আলমারি থেকে বেরই করা হয় না।

    সেই বই একটাও আর ফেরত পাইনি, মেয়েটাকেও দেয়নি।

    জগতের সব বালিকাদের বাবাকে মাইনাস।

    সবচেয়ে বেশি আপ্লুত হলাম রবীন্দ্রনাথের গানের কথাগুলি পড়ে। যদিও বর্ষাকাল নয় তাও আবার শুনলাম গানটা একেবারে চোখ বুজে। আহা!!

    সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
    নিভৃত নির্জন চারি ধার।
    দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি,
    আকাশে জল ঝরে অনিবার-
    জগতে কেহ যেন নাহি আর।।

    কেমন যেনো কষ্ট কষ্ট লাগছে মাসুম ভাই। 🙁

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    সবাই বই এর বদলে অন্য উপহার পেয়ে আফসোস করে গেল।

    আর আমি লাস্ট কবে কার কাছ থেকে কোন কিছু উপহার পাইসি সেটাই মনে করতে পারতেসিনা 🙁


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. শওকত (৭৯-৮৫)
    সমাজ সংসার মিছে সব,
    মিছে এ জীবনের কলরব।
    কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
    হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব---
    আঁধারে মিশে গেছে আর সব।

    কামরুল মনটা কেমন যেন বিষন্ন হয়

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।