মুভিব্লগ: ১০ শিক্ষামূলক সিনেমা

মানুষজন খামাকাই আলতু ফালতু সিনেমা বানায়। সিনেমায় যদি শিক্ষামূলক কিছু নাই থাকে, তাহলে সেসব সিনেমা দেশ বা জাতিকে কি দিতে পারে? শিল্প থেকে শিক্ষার উপাদান আমাদের নিতে হবে। সিনেমা থেকে উচ্ছন্নে যাওয়া কাজের কিছু না। বরং সিনেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন গড়াই হওয়া উচিৎ আমাদের ব্রত। বিশেষ করে যারা বেশি সিনেমা দেখেন তাদের জন্য এটি বেশি প্রযোজ্য। আজকে আমি কিছু শিক্ষামূলক সিনেমার তালিকা দিলাম।
১.ডিরেইলড: দেশে বা বিদেশে পথ চলতে অনেকের সাথেই তো দেখা হয়। হয়তো কথাও হয়। কথা থেকেই কথা বাড়ে। আস্তে আস্তে সেখান থেকে সম্পর্কও হতে পারে। কবিতো বলছেনই যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিও তাই, পাইলেও পাইতে পারো মানিক রতন। রতন বা রত্নার আশায় আপনারা কথা বলেন, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সতর্ক থাকা ভাল।

কেন সতর্ক থাকবেন সেটা জানতে এই মুভিটা দেখতে পারেন। ক্লাইভ ওয়েন একজন ভাল মানুষ, বিবাহিত। একদিন পথ চলতে ট্রেনে পরিচয় হলো মহাসুন্দরী জেনিফার এনিস্টনের সাথে। তারপর তারা একটু গল্প করতে গেলো এক হোটেলে। কিন্তু মানুষ কত্তো খারাপ। এক লোক এসে ক্লাইভ ওয়েনরে দিলো মাইর, আর জেনিফারের নিলো ইজ্জত। এখানেই শেষ না, এর পর এই খারাপ লোকটা ভাল মানুষ ক্লাইভ ওয়েনরে ব্লাকমেইল করা শুরু করলো।
ঘটনা এইখানেই শেষ না। আরও অনেক কিছু আছে। শিক্ষনীয় এই ছবিটা দেখে সেইটা জেনে নিয়েন।

২.ফ্যাটাল এট্রাকশন: দুনিয়ার সকল বিবাহিত মানুষের জন্য আরেকটা শিক্ষামূলক ছবি। বউয়ের কাজই হচ্ছে কদিন পর পর বাপের বাড়ি যাওয়া। বউ যাওয়ার সময় স্বামীরা যতই মন খারাপের ভাব দেখাক, মনে মনে খুশীই হন বেশিরভাগ। এই সুযোগে পরের বউয়ের দিকে চোখও যায় কারো কারো। যেতেই পারে, কিন্তু সাবধান। সতর্ক থাকাই ভাল।

মাইকেল ডগলাস সুখী অথচ বিবাহিত। বউ গেছে বাচ্চাসহ বাবার বাড়ি। এই সুযোগে একটু ফস্টিনষ্টি করতে মন চাইলো তার। দেখা হয়ে গেল গ্লেন ক্লোজের সাথে। ভেবেছিল, এরকম তো অনেকই হয়, তারপরেই দুজনেই ভুলে যায়। কিন্তু এই লোকের ভাগ্যই খারাপ। আঠার মতো লেগে রইলো মাইকেল ডগলাসের সাথে। জীবন তামা তামা করে ফেললো গ্লেন ক্লোজ। তারপরে যা হলো, তা সবাই নিজ দায়িত্বে দেখে নিয়েন।

৩.ডায়াল এম ফর মার্ডার: বউরে ভাল লাগে না এরকম ভদ্রলোকের সংখ্যা নেহায়াতই কম না। আবার বউ মারা গেলে শ্বশুর বাড়ীর সম্পত্তি কিংবা বীমা করা টাকা পাওয়ার বহু উদাহরণ আছে। এ অবস্থায় কেউ কেউ ভাবতেই পারে-আহা বউটা যদি মরতো।

খুব সাবধান। এই পথে যাইয়েন না। গেলে কি হয় সেই শিক্ষা পাবেন এই সিনেমাটা দেখলে। আলফ্রেড হিচককের বহু বিখ্যাত সিনেমা। গ্রেস কেলির মতো এরকম এক মহাসুন্দরী বউরেও মারার পরিকল্পনা করছিল রে মিলান্ড। বুদ্ধিটা ছিল খাসা। বুদ্ধিটা শিখতে হইলে এই ছবিটা দেখেন। তবে থিওরীতে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রাকটিক্যালে চলে গেলে কি যন্ত্রণা হয় তা জানতে দেখেন এই শিক্ষনীয় সিনেমাটা।

৪.এ পারফেক্ট মার্ডার: আজকাল লোকজন শেয়ার বাজারের আশে পাশে খালি ঘুর ঘুর করে। শেয়ার বাজারের পয়সা দিয়ে গাড়ি বাড়ি হাকানোর মানুষের সংখ্যাও কম না। কিন্তু একবার যদি বাজার ধ্বসে পড়ে তাহলে? এই লাইফ স্টাইল কেমনে চালাবেন?

এই ছবির নায়ক মাইকেল ডগলাস এরকমই এক বিনিয়োগকারী। কিন্তু সমস্যা হলো বাজারে ধরা খেয়ে। এখন তার যে কোনো ভাবেই অর্থ দরকার। সুযোগটাও এসে গেল। একদিন দেখলো তার সুন্দরী ও ধনী বউ আরেকজনের সাথে ফস্টিনষ্টি করছে। সবাই তো মীরের গল্পের নায়ক না যে, এই দৃশ্য দেখে গৃহত্যাগ করবে। বরং মাইকেল ডগলাস সুযোগটা নিতে চাইলেন। পরিকল্পনা করলো বউরে মারার, তাও আবার বউয়েরই বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে।
এই শিক্ষামূলক সিনেমাটা দেখলেই বুঝবেন, এসব দৃশ্য দেখে গৃহত্যাগ করাই ভাল। কেন? ছবিটা দেখেন।

৫.ইউ টার্ন: রাস্তায় যদি গাড়ি নষ্ট হয়, খবরদার অজানা গ্যারেজে এবং অচেনা শহরে যাবেন না। আবার সেই শহরে অতিসুন্দরী কাউকে দেখলে মন যতই টানে পিছন পিছন যাবেন না যেন। এর ফলে জীবন কত দুর্বিষহ হতে পারে তা শিখতে দেখতে পারেন অলিভার স্টোনের এই শিক্ষামূলক ছবিটি।

এই কাজটা করেছিলো শেন পেন। পথে দেখা হলো জেনিফার লোপেজের সাথে। ছোট খাট ফস্টিনষ্টি করতে গিয়ে ধরা খাইলো লোপেজের স্বামীর কাছে। তারপরে সেই ব্যাটা অফার দিল, শেন পেন যদি তার বউরে মারতে পারে তাহলে দেয়া হবে অনেক টাকা। আবার বউ পাল্টা অফার দিলে বুড়া স্বামীরে মারতে পারলে দুজনেই ভাগ করে নিতে পারবে অনেক টাকা।
লোভে পাপ, পাপে…….কী? এই শিক্ষনীয় ছবিটা দেখে বুঝে নেন।

৬.আনফেইথফুল: আগেকার বাংলা সিনেমায় দেখা যেতো- কলেজে নায়ক ধাক্কা খেলো নায়িকার সাথে। নায়িকার হাতের বই খাতা সব নীচে। তারপর উঠিয়ে দিলো নায়ক। সেখান থেকে প্রেম। এরকম প্রেমের আশায় এখনো অনেকে রাস্তা ঘাটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুর ঘুর করেন অনেক মানুষ। দুনিয়ায় এখন ৬৮০ কোটি মানুষ। সুতরাং ধাক্কা খাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু সাবধান। ধাক্কা খেয়ে প্রেম হতেও পারে কিন্তু তারপর?

এই সিনেমাটা দেখেন। রিচার্ড গেরের বউ ডায়ানা লেন। একদিন এই সুন্দরী বউ ধাক্কা খেলো এক বই ব্যবসায়ী ফরাসীর সাথে। সেই রাস্তার পরিচয় বিছানা পর্যন্ত গেলো। এতটুকু শুনে যাদের চোখ চক চক করে উঠলো, আশা-ভরসা পাওয়া শুরু করছেন, তারা সিনেমাটা দেখেন। দারুণ এক শিক্ষনীয় ছবি।

৭.স্ট্রেঞ্জার অন ও ট্রেন: কলেজ জীবনে একটা তালিকা বানাতাম বন্ধুরা। কার কার বেঁচে থাকার অধিকার নাই, সেই তালিকা। আমার ধারণা অনেকেই এরকম তালিকা মনে মনে তৈরি করে রাখেন। তারপর ধরেন আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল আরেকজনের সাথে। তারও একটা তালিকা আছে। দুজনে এ নিয়ে আলাপও করলেন। সেই লোক যে মনে মনে তালিকা তৈরি করে রাখেন তা নাও হতে পারে। সুতরাং সাবধান।
সিনেমাটা দেখেন।

বেচারা নায়ক, বউয়ের জ্বালায় অতিষ্ট। আবার প্রেম করাও শুরু করেছেন বিখ্যাত একজনের সাথে। কিন্তু বউ কিছুতেই ডিভোর্স দেবে না। মনে মনে ভাবে বউটা মরে যেতো। একদিন ট্রেনে দেখা হলো ব্রুনো এন্থনির সাথে। ব্রুনোও তার বাবার জালায় অস্থির। কথায় কথায় ব্রুনো বললো, সে পারবে ভদ্রলোকের বউকে মারতে, বিনিময়ে তার বাবাকে মেরে দিতে হবে। তাহলে পুলিশ বুঝতে পারবে না মোটিভ কি সেটা। আলাপ এখানেই শেষ। কিন্তু দেখা গেল ব্রুনো সত্যি সত্যি তার বউকে খুন করেছে। এখন চাপ দিচ্ছে তার বাবাকে মেরে ফেলার জন্য, তা না হলে সব ফাঁস করে দেবে। হিচককের এই শিক্ষামূলক ছবিটা দেখেন।

৮. বিড হিট: আরেকটা শিক্ষামূলক ছবি। নতুন কাউকে দেখলেই লাফ দেন যারা তাদের জন্য। তাইতো কবি বলেছেন, ভাবিয়া শুনিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। ক্যাথলিন টার্নার, উইলিয়াম হার্ট আছে এই ছবিতে।

ওকালতি করে খাচ্ছিল ভালই। নতুন দেখেই মাথা খারাপ হয়ে গেল। সম্পকর্ হলো ক্যাথলিন টার্নারের সাথে। তারপর?
বড়লোকের বউ উকিল প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন করার ফন্দি আঁটে।

৯. ডাবল ইনডেমনিটি: আমি আবার মেয়েদের বেশি ভালবাসি। শিক্ষামূলক ছবি খালি ছেলেদের জন্য হবে তা তো হয় না। ছেলেরা যদি বউ দ্বারা নির্যাতিত হইয়া কিছু করতে চায় তেমনি বদ স্বামীরও তো অভাব নাই। তবে কিছু করার আগে সাবধান।

বারবারা স্ট্যানউইক, ফ্রেড ম্যাকম্যুরের এই ছবিটা ১৯৪৪ সালের। বড়লোকের বৌ বীমার দালালকে প্রেমের ফাঁদের ফেলে স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনার ছবি।

৮.সওদাগর: শিক্ষামূলক ছবি অবিবাহিতদের জন্যও আছে। বিয়ে করা সখ ওয়ালা পোলাপান এই ব্লগেও কম নাই। কিন্তু বাবা-মা বা পাড়া প্রতিবেশি কেউই আগ্রহ দেখায় না। ডাবল খাট কাটা অনেক পুরানো ফর্মুলা, এটা দিয়ে কাজ হবে না। তাদের জন্য এই ছবির শিক্ষামূলক একটা দৃশ্যের বর্ণনা দেই।
রাজা শওকত আকবর আর রাজকন্যা অনজু ঘোষ। অনজু বনে বাদারে নাচ গান করে বেড়ায়। একদিন দেখা হয়ে গেল ভিনদেশী সওদাগর ওয়াসিমের সাথে। তারপর মুখোমুখি লাফালাফি ঝাপাঝাপি। শয়নে স্বপনে এই ভিনদেশী সওদাগর।

একদিন রাতে রাজা শওকত আকবর নিজ রুমে যাচ্ছিলেন। পাশেই রাজকন্যার রুম। রুমে উঁকি দিয়ে দেখলেন, অনজু একটা বিশাল সাইজের কোলবালিশ নিয়ে খালি এপাস ওপাস করছে। এটা দেখে রাজা একটু মুচকি হেসে বললেন, ‘হুমমম, বুঝেছি তোমার এখন একজন রাজপুত্র দরকার।’
পরেরদিনই রাজা রাজপুত্রের খোঁজ-দ্য সার্চ-এর এলান জারী করলেন।
এর চেয়ে শিক্ষামূলক সিনেমা আর কৈ পাবেন?

৬,৫০৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “মুভিব্লগ: ১০ শিক্ষামূলক সিনেমা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    জনগুরুত্বপূর্ণ পোস্ট :hatsoff: তবে অন্য ব্লগে আগেই পড়া


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. আসিফ (২০০১-'০৭)

    মুভিগুলা আসলেই শিক্ষামূলক !! =)) =)) =)) =)) =)) =))
    বাংলা মুভিটা ছাড়া বাকিগুলা মোটামুটি দেখেছি আর কি ! এর মধ্যে আবার অরিজিনাল মুভি আবার তার রিমেক ও রেখেছেন। হিচকক এর ' ডায়াল এম ফর মার্ডার' এর রিমেক হচ্ছে ' অ্যা পারফেক্ট মার্ডার'... আনফেইথফুল একটি ফ্রেঞ্চ মুভির রিমেক, নাম La Femme infidèle. বডি হিট 'এরও অনেক রিমেক আছে, যেমন ' জিসম'। আবার ' ডিরেইলেড' এর হিন্দি ভারসন আছে, নাম " দ্যা ট্রেন'। আনফেইথফুল' কেও বলিউড ছাড়ে নাই,'' মার্ডার' বানাইছে।বিলি অয়াইল্ডার এর ' ডাবল ইনডেমনিটি ' অরিজিনালটা যতটা ভাল লাগছে, রিমেক ঠিক ততটাই বাজে লাগছে। কিন্তু সব কথার শেষ কথা'' হিচকক' এর উপরে কেউ নাই।। :salute: :salute: :salute: :salute: (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬ - ০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।