বউরে ডরায় না কেডা?

করিম সিদ্ধান্ত নিছে জীবনেও সে বিয়ে করবে না। একদিন সবাই গিয়া ধরলো, কেন বিয়া করবা না। করিমের জবাব, ভয়ে। বিবাহে তার ভয় নাই, ভয় বৌকে। যে জীবনেও বিবাহ করে নাই তার আবার বৌকে ভয়? কেমনে কী?
করিম বললো, অনেক আগে একবার বন্ধুর বিয়ে খাইতে গেছিলাম। ভীড়ের মধ্যে হঠাৎ এক মহিলার শাড়ীর আঁচলে পা পইরা গেলো। সেই মহিলা ঘুইরাই কইলো, চোখের মাথা খাইছো? দেইখ্যা হাঁটতে পারো না? এক চরে দাঁত ফালাইয়া দিবো। কোনো কান্ডজ্ঞান নাই। আন্ধা কোনখানকার।
এইটুক বলার পরই সেই মহিলার চোখ পড়লো আমার উপর। জিহবায় কামড় দিয়া কয়, ও সরি, আপনি। আমি ভাবছিলাম আমার হাজব্যান্ড।

সেই কথা করিম ভাবলে এখনও আইতকা ওঠে। তারপর থেকেই তার প্রতিজ্ঞা, জীবনেও বিবাহ করবে না।

তাইলে পুরান আরেকটা গল্প কই।
চোর ধরা পড়েছে। ধরলো আবার দবিরের বউ সখিনা। খালি ধরাই পড়েনি, সখিনা তাকে এমন মার দিয়েছে যে বেচারা চোর হাসপাতালে।
আসলো পুলিশ। পুলিশ সখিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো-এই বেটা দাগী চোর। বহুদিন ধরে খুঁজছি। তা আপনি একা একজন মেয়ে মানুষ ধরলেনই বা কিভাবে আর এভাবে মার দিলেনই বা কিভাবে?
সখিনা-আসলে এটা যে চোর আমি বুঝতে পারিনি । অনেক রাত ছিলোতো। আমি ভেবেছিলাম আমার স্বামী বাসায় ফিরেছে।

আজাইরা গল্প বাদ। এবার একটা সত্যি কাহিনী কই।
এই লোক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ছিলেন। কড়া লোক। বাঘের মতো সবাই তারে ডরাইতো। রিটায়েরমেন্টের পর তারে বানানো হইলো একটা সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। সেইখানেও তার ভয়ে বাঘে-মহিষে এক টেবিলে কাজ করে।
একদিন এই লোকের পিএস রুমে ঢুইকা দেখে সারা রুম মোটামুটি তছনছ। চেয়ারম্যান সাব সবগুলা বই একটা একটা কইরা নামাইয়া কি যেন খুঁজতাছে। পিএস জিগাইলো কাহিনী কী। কাহিনী হইলো-আগের দিন বোর্ড মিটিং ছিল। বোর্ড মিটিং হইলে সেসময় ৩ হাজার টাকা কইরা দেওয়া হইতো। সেই টাকা তিনি বইয়ের মধ্যে লুকাইয়া রাখছিলেন। আইজ আইসা আর পাইতাছেন না, কোন বইয়ের মধ্যে রাখছেন সেইটাও মনে নাই।
বইয়ের মধ্যে কেন? বউয়ের ভয়ে। টাকা দেখলেই নাকি বউ নিয়া জায়গা।

কথা হইলো বউরে ভয় পায় না কেডা?

তারাপদ রায় একবার একটা বিলাতী ছড়ার অনুবাদ করছিলেন। কোনো এক বিলাতী পাবে এই ছড়াটা লেখা আছে।

বাড়ি ফিরেই সেই তো আজও
বৌয়ের হাতে খাবেন মার
বরং সখা, থাকুন না কেন,
থাকুন কিছুক্ষণটা আর।

এই পাবে নাকি বেজায় ভিড়। বসার জায়গা পাওয়া যায় না।

বউ আসলেই ভয়ের বস্তু। আমিও বউডে ডরাই। বউরে ভয় পাওয়া নিয়ম এবং লাভজনক। বউলে ভয় না পাইলেও ভয় পাইতাছি এরম ভাব ধরাটা বিপুল পরিমাণ উপকারী। বউরে খালি বুঝাইতে হইবে যে, তারে ভয় পাই। বাস, তাতেই বউ খুশী। বউয়ের কাছে বোকা-সোকা মানুষ সাইজা থাকা আরও লাভজনক। আরও কামের কাম হইলো, দোকান থেইকা ভুল-ভাল জিনিষ কেনা, ইচ্ছা কইরা ঠকা। বউ যদি একবার টের পায় তার জামাইরে সাদাসিদা পাইয়া সবাই খালি ঠকায়, তাইলে তো কথাই নাই।
এইসব অবশ্য আমার কথা না। আমার একটাই কথা-বউরে ভয় পাওয়া স্বাস্থ্যকর কাজ। আমি রুটিন কইরা এই কাজটা করি।

(অবশেষে বাসায় নেট নিলাম। বউয়ের ভয়ে আমার হাত পা………। খাল কাইটা কুমির আনা ঠিক হইলো কিনা বুঝতাছি না। আমার জন্য দোয়া কইরেন। যদি কেউ দেখেন মাথায় তিনটা সেলাই আর ভাঙা হাত নিয়া ঘুরতাছি তাইলে কেউ আবার অন্য কিছু মনে কইরেন না। বুঝবেন যে বাথরুমে পইড়া গেছিলাম।)

১০,৬৬০ বার দেখা হয়েছে

১১০ টি মন্তব্য : “বউরে ডরায় না কেডা?”

  1. হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    বউলে ভয় না পাইলেও ভয় পাইতাছি এরম ভাব ধরাটা বিপুল পরিমাণ উপকারী। বউরে খালি বুঝাইতে হইবে যে, তারে ভয় পাই। বাস, তাতেই বউ খুশী। বউয়ের কাছে বোকা-সোকা মানুষ সাইজা থাকা আরও লাভজনক। আরও কামের কাম হইলো, দোকান থেইকা ভুল-ভাল জিনিষ কেনা, ইচ্ছা কইরা ঠকা।

    আমার ধারণা এটা :just: ফ্রেন্ডদের জন্যও প্রযোজ্য ;))

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    আমারও করিমের মত বিয়া করতে ডর লাগে... 🙁 যদিও এখনো বাচ্চা পোলাপান...বিয়াশাদী আইতে দেরী আসে...তয় বড় মিয়া (মোত্তাকী - ১৭৩০ -[১৯৯৪-২০০০] মকক) আগামি মাসেই :duel: তারপরেই আমার সিরিয়াল। সুতরাং আম্মাজান আমার বিয়াশাদীর নীল নকশা করার আগেই :just: উচ্চতর শিক্ষার নাম কইরা দেশ ছাইড়া পালাইতে হবে... 😛


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. আহমদ (৮৮-৯৪)

    ভাইয়া,
    কোন লাইন কোট করলাম না। লেখা চরম হইছে। ৫ তারা। প্রিয়তে যোগ। পড়তে গিয়া সিরাম মজা পাইছি। আপনিও বউরে ডরান দেইখা ইট্টু ভরসা পাইলাম। টিপসগুলার জন্য সহস্র সালাম। :boss:


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    এলিজেবল ব্যাচেলর পার্টিকে ভয় দেখানোর জন্যে মাসুম ভাইয়ের ব্যাঞ্চাই।

    সভাপতি কাইয়ুম এর পক্ষে

    (সাক্ষর অস্পষ্ট)
    রবিন
    সাধারণ-সম্পাদক।
    এবিপি (এলিজেবল ব্যাচেলর পার্টি)


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. আছিব (২০০০-২০০৬)

    বউ রে ডরানোর ভাব দেখান আর যাই দেখান......ভাবী আপনারে লাই দিয়া দিয়া মাথায় তুলছে,বাথরুমে পড়ার দরকার আছে মনে হয় :grr: :grr:
    ভাই..................ঈমানে কইতেছি,আপনার এত সুন্দর ব্লগিং এর পিছনে ভাবীরও অবদান আছে,আপনি সুখী মানুষ :boss:

    জবাব দিন
  6. মিশেল (৯৪-০০)

    সাধারণ স্ট্যান্ডার্ডে পাচ তারা হইলেও শওকত ভাই স্ট্যান্ডার্ডে চার তারা। (হাসতে হাসতে চেয়ার থিকা পিরা গিয়া পিরায়ে মীরা গেলে সেটারে আমি শওকত ভাই স্ট্যান্ডার্ড পাচ তারা ধরি B-) )

    জবাব দিন
  7. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    করিম সিদ্ধান্ত নিছে জীবনেও সে বিয়ে করবে না। একদিন সবাই গিয়া ধরলো, কেন বিয়া করবা না। করিমের জবাব, ভয়ে। বিবাহে তার ভয় নাই, ভয় বৌকে। যে জীবনেও বিবাহ করে নাই তার আবার বৌকে ভয়? কেমনে কী?

    ক্যান জানি নিজেরে বিয়াপক ভাবে করিম-করিম লাগে ! :grr: :goragori:

    জবাব দিন
  8. বাংলা বিভাগের দিনেশ sir একবার একটা গল্প বলসিল। ওইটা শেআর না কইরে থাকতে পারলাম না।
    ১ রাজা তার বৌরে ভয় পাইত। এইজন্য তার মধ্যে ১ টা ভয় ছিল যে এইটা কেউ জেনে ফেললে তাকে আর কেউ হয়ত ভয় পাবে না। কিন্তু সে দেখতে চাইছিল তার প্রজাদের কি অবস্থা। তাই সে একদিন রাজ্যের সকল পুরূষ প্রজাকে আসতে বলল।এইবার রাজা বলল যারা বউকে ভয় পায় তারা যেন ডান দিকে দাঁড়ায় আর বাকিরা বাম দিকে দাঁড়ায় তখন দেখা গেল ১ জন ছাড়া আর সবাই ডান দিকে দাঁড়ায়সে রাজা তখন এই কথা ভাবে খুশি অন্তত ১ জন তার রাজ্যে আছে যে তার বৌরে ভয় পায়না তখন রাজা তাকে কাছে ডেকে জিগ্গেস করলো সে কোথা থেকে এত সাহস পায় আর সবাই যেখানে তার বুকে ভয় পায় তখন সে কিভাবে নিজেকে এই আতঙ্ক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে ?
    প্রজা উত্তরে বলল হুজুর এত কিছু জানিনা আসার সময় আমার বউ আমাকে বলসে সবাই যা করবে তুমি তার উল্টাটা করবা তাই যখন দেখলাম সবাই ডান দিকে গেসে তাই আমি বাম দিকে গেসি

    জবাব দিন
  9. আব্দুর রহমান আবিদ (৮০-৮৬)

    পাঠকরা সবাই সাক্ষী- আমি কিন্তু কোনো মন্তব্য করি নাই। বউয়ের নির্দেশ- বউ সংক্রান্ত কোনো লেখালেখিতে আমি যেন কোনো মন্তব্য না করি।

    জবাব দিন
  10. ইফতেখার (৯৯-০৫)

    :khekz: :khekz: :khekz: :pira: :pira: :pira:

    "........এইটুক বলার পরই সেই মহিলার চোখ পড়লো আমার উপর। জিহবায় কামড় দিয়া কয়, ও সরি, আপনি। আমি ভাবছিলাম আমার হাজব্যান্ড।"

    :khekz: :khekz: :khekz:
    ভাই শীরররাআআআম মজা পাইলাম। প্রিয়তে+৫ ✰✰✰✰✰ + শেয়ারে...
    :pira: :pira:

    জবাব দিন
  11. জুলফিকার (২০০০-২০০৬)

    কেন যে এই পোষ্টটা পড়তে গেছিলাম, আগে যাওবা বিয়া করনের এট্টু সাধ আছিল, অহন সেইডাও শেষ হয়া গেল 🙁 🙁 🙁
    শওকত ভাই লেখা পড়ে মজা পাই নাই :(( :(( দুঃখ পাইছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাহাত (২০০০-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।