সংবাদপত্র জগতের মানুষের গল্প

১। এই গল্পটা প্রেস ক্লাবে খুব চালু। পুরোনো সাংবাদিকরা প্রায়ই উদাহরণ দিয়ে বলেন। গল্পটা সন্তোষ দাকে নিয়ে। সন্তোষ গুপ্ত তখন সংবাদে। উনি একটু দেরিতে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর প্রথম গেলেন প্রেস ক্লাবে। বন্ধুরা জানতে চাইলেন কেমন লাগছে নতুন জীবন, অভিজ্ঞতাই বা কি।
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সন্তোষদা বললেন, এমনিতে ঠিকই আছে, কিন্তু প্রাইভেসি বলতে আর কিছু রইলো না।
২। এটাও সন্তোষ দা কে নিয়ে। একদিন তিনি সংবাদ অফিসে বসে কাজ করছেন। ফোন করলেন সম্পাদক আহমেদুল কবির। বললেন- সন্তোষ, আমি কবির বলছি।
একটা অন্যমনস্ক ছিলেন হয়তো সন্তোষ দা, তিনি মনে করলেন তার এক বন্ধু আছে নাম কবির, সে মনে হয় ফোন করেছেন। সন্তোষ দা বন্ধু কবির মনে করে বলে ফেললেন-কিরে কবির কেমুন আছিস।
ও পাস থেকে আহমেদুল কবির-সন্তোষ তুমি কি দিনে বেলায়ই খেয়ে এসেছো?
৩। বশির ভাই সংবাদের অত্যন্ত পুরোনো ক্রাইম রিপোর্টার। একদিন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। আর কাউকে না পেয়ে বার্তা সম্পাদক বশির ভাইকেই বললেন বৃষ্টি নিয়ে একটা রিপোর্ট লিখে দিতে। বশির ভাই ক্রাইম রিপোর্টার মানুষ, থানার সঙ্গেই তার নিত্য যোগাযোগ। রিপোর্ট লিখতে হবে তাই কি আর করা। ফোন করলেন থানায়, ওসির কাছে জানতে চাইলেন বৃষ্টি হচ্ছে কি না।
ওসি বললো-আরে ভাই জানালা দিয়ে তাকালেই তো দেখা যাচ্ছে যে বৃষ্টি হচ্ছে।
বশির ভাই নিজেও কিন্তু বৃষ্টি দেখছেন। তারপরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার বললেন- আপনি আমারে কনফার্ম করেন যে বৃষ্টি হচ্ছে।
৪। সংবাদের আরেকটা বিখ্যাত গল্প বলি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক পর পর। সংবাদের এক বড় সাংবাদিক একটা রিপোর্ট লিখলেন, বিষয় ছিলো যুদ্ধে কতগুলো গরু মারা গেছে। রিপোর্টটি পড়ে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেছিলেন যে, একটা গরু তো দেখি এখনো বাইচা আছে। তারপর থেকে ঔ রিপোর্টারের নাম হয়ে গেলো গরু——-(নাম আর বললাম না)। এখনো তাকে গরু রিপোর্টার বলেই সবাই জানে।
৫। এরশাদের সামরিক শাসন। দীর্ঘদিন রাজনীতি বন্ধ থাকার পর ঘরোয়া রাজনীতি মাত্রই চালু করা হয়েছে। চালুর পর সর্বদলীয় রাজণীতিবিদদের প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল একজন বড় মহিলা কবির বাসায়। পরেরদিন ঐ বৈঠকের ছবি সহ সংবাদ তৈরি করা হলো ইত্তেফাকের জন্য। তখন হ্যান্ড কম্পোজ ছিল। ছবিটা ছিল এই রকম, বেগম———- চা দিয়ে আপ্যায়ন করছেন রাজনীতিবিদদের। কিন্তু ছাপার ভুলে চা এর আ কার বাদ দিয়ে হয়ে গেল উ কার। (সেন্সর, পোলাপানের পড়া নিষেধ) x-(
৬। এরশাদের সময়। এরশাদের মন্ত্রী তখন ইত্তেফাকের এক মালিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আরেক মালিক ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। তখন ছিল এরশাদের পথকলি ট্রাস্ট। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই ট্রাস্টে ইত্তেফাকের পক্ষে সম্ভবত ৩০ লাখ টাকা দান করলেন। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের ঝগড়া। মুখোমুখি ঝগড়া। ঝগড়া করতে করতে তারা চলে আসলেন নিউজ রুমে। বার্তা সম্পাদক তখন সারোয়ার ভাই। নিউজ রুমে সব সাংবাদিক তখন উপস্থিত। সবার সামনেই তুমুল ঝগড়া। গালাগালিও চলছে। এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু খারাপ একটা গালি দেওয়ায় ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন চিৎকার করে বলে উঠলেন-তুই আমারে চাকর বাকরদের সামনে গালি দিলি। ইত্তেফাকে এই গল্প এখনও শোনা যায়।
৭। প্রেস ক্লাবের আরেকটি চালু গল্প। নির্মল সেন ও ফয়েজ আহমেদ-দুজনের কেউই বিয়ে করেন নি। একদিন প্রেস ক্লাবে বাথরুম থেকে ফেরত নির্মল সেন মধ্যরাতের অশ্বারোহী ফয়েজ আহমেদকে বললেন, -আরে ফয়েজ আল্লাহ তোরে একটা জিনিষ দিলো তাই খালি …… (আবার সেন্সর) শেষ করলি, আর কোনো কামে লাগাইলি না।

(সামুতে প্রকাশিত)

২,৮৫০ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “সংবাদপত্র জগতের মানুষের গল্প”

  1. হাসতে হাসতে বরবাদ হইয়া গেলাম। :khekz: :khekz: :khekz: একটার চেয়ে একটা মারদাঙ্গা। তয় আমাদের শফিক রেহমান সাহেবরে নিয়ে কোন গল্প দেন নাই দেইখা খুব কষ্ট পাইলাম। আমার ধারনা , এই টাইপ গল্প তারে নিয়া লেইখা শেষ করা যাবে না। 😀 😀

    আর একটা কথা জিগাই ভাইয়া, ৫ নাম্বারের মহিলা কবি টা কি খালেদা এদিব চৌধুরী ? নাম না বলতে চাইলে সমস্যা নাই। 😀 😀

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    বস্ হাসতে হাসতে পিরা গেলাম =)) =)) :just: :pira:
    একেকটার চেয়ে একেকটা ডেন্জারাস :gulli2: :gulli2:
    তবে আপনার কোন এক নায়িকার সাক্ষাৎকার নেয়ার কাহিনিটা কইলেননা যে 😉 :grr: :grr:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    প্রথমে বেশ একটু নড়েচড়ে বসেছিলাম সিরিয়াস কোন লেখা বুঝি এই সন্দেহে।
    কিন্তু দুই লাইন পড়তে না পড়তেই কেমুন যেন মজা মজা লাগা শুরু হইল........আবারও নড়েচড়ে বসলাম (এইবার যাতে পইড়া না যাই সেই জন্য 😛 😀 )।
    দূর্দান্ত শওকত ভাই :clap: :clap: ।
    চলুক এটার সিরিজ...........আছি সাথে।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  4. তাইফুর (৯২-৯৮)

    শওকত ভাই, সংবাদপত্র জগতের মজার আরও গল্প নিয়ে সিরিজ চলুক। অপেক্ষায় রইলাম।

    (যে কোন সাংবাদিকের সামনে কাউকে চা দিয়ে আপ্যায়নের দিন শেষ।)


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  5. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    বশির ভাই নিজেও কিন্তু বৃষ্টি দেখছেন। তারপরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার বললেন- আপনি আমারে কনফার্ম করেন যে বৃষ্টি হচ্ছে।

    :)) :)) =)) =)) :goragori: :goragori: :pira: :pira: :khekz: :khekz:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শওকত (৭৯-৮৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।