রাজনীতি, সংঘাত ও আর কর্পোরেট ক্রাইম নিয়ে পছন্দের কিছু ছবি

সিনেমা আমি দেখি সব ধরণের। তবে ঘরানা হিসেবে পছন্দ পলিটিক্যাল বা কর্পোরেট ক্রাইম জাতীয় সিনেমা । সত্য ঘটনা অবলম্বনে হলে ভাল হয়। আবার অনেক সময় এমন হয় কাহিনীটা হয়তো বানানো কিন্তু স্থান বা ঘটনাটি হয়তো এরকমই। তালিকা আমার পছন্দের ক্রমানুসারে করা হয়নি। যখন যেটার কথা মনে হয়েছে সেভাবেই তৈরি।

১। মিসিং-১৯৮২ সালের ছবি। পরিচালক গ্রীক পরিচালক গোস্তা গারবাস। জ্যাক লেমন আর সিসি স্পাসেক। ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ক্যু হয় চিলিতে। নিহন হন সালভাদর আলেন্দে, মতায় বসে সামরিক শাসক আগাস্তো পেনোসে। একই সময় চিলিতে ঢুকছিলেন মার্কিন লেখক চার্লস হারমান। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি। বউ সিসি স্পাসেক আর বাবা জ্যাক লেমন খুঁজতে থাকে চার্লসকে। খুঁজতে খুঁজতে তারা ঠিকই বুঝে ফেলেন যে এই ক্যু-এর পেছনে হাত রয়েছে সিআইএর, যা জেনে ফেলায় মেরে ফেলা হয় চার্লসকে। ছবির কোনো দৃশ্য ৭১-কে মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ নদীতে ভেসে যাওয়া লাশ, কিংবা স্টেডিয়ামে আটক রাখার দৃশ্য। এটি সত্যি ঘটনার ছবি। চার্লস-এর বাবা মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন।
২. আন্ডার ফায়ার-নিক নল্টে আর জেনে হেকমান আছে এই ছবিতে। নিকারাগুয়ার সমোজা সরকারের শেষ সময়ের ঘটনা নিয়ে ছবি। কাহিনী সত্যি নয়। কিন্তু সত্যি ঘটনার উপর ভিত্তি করেই তৈরি। তিন সাংবাদিকের দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখা হয়েছে সময়টাকে।
৩। হ্যারিসনস ফাওয়ারস: মূলত এটা একটা ফ্রেঞ্চ ছবি। নিউজউইকের পুরস্কার পাওয়া ফটো সাংবাদিক হ্যারিসন লয়েড। ১৯৯১ সালে যায় যুগোস্লাভিয়ায় ছবি তুলতে। তখন সেখানে চলবে সার্ব বাহিনীর অত্যাচার। খবর আসে যে হ্যারিসন মারা গেছে যুদ্ধের সময়। বিশ্বাস করে না বউ সারা। সাংবাদিক পরিচয়ে চলে যায় যুগোস্লাভিয়ায়। এক সময় ফিরিয়ে আনে হ্যারিসনকে। কাহিনী সত্যি না। কিন্তু ঐ সময় যুগোস্লাভিয়ায় প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিল। যে ম্যাসাকেরর বিভৎস দৃশ্য আছে সেটি আসলেই ঘটেছিল। ১৯৯১ সালের ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সিভিলিয়ানদের উপর যে ম্যাসাকার হয়েছিল তা এখন ইতিহাস। ছবিটা আসলেই সেটি নিয়েই।
৪. দি কিলিং ফিল্ডস: আরেকটি অসাধারণ ছবি। কম্বোডিয়া নিয়ে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর রিপোর্টার সিডনি আর তার দোভাষি নিয়ে ছবি। রোনাল্ড জোফে পরিচালক। সত্যি কাহিনীর ছবি। খেমার রুজের সঙ্গে কম্বোডিয়ার ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে গৃহযুদ্ধের সময়কার কাহিনী। এই ছবি না দেখা পাপের সমান।
৫। অল দ্য প্রেসিডেন্টস ম্যান: ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ছবি। পুরোটা ফাস করে দিয়েছিল ওয়াশিংটন পোষ্টের দুই সাংবাদিক। আর তাদের তথ্য দিয়েছিল ডিপথ্রোট নামের অজ্ঞাতনামা এক সূত্র। পুরোটাই সত্যি কাহিনী। এর ফলে নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সেরা ঘটনা। অভিনয়ে রবার্ট রেডেেফার্ড আর ডাস্টিন হফম্যান।
৬। মিসিসিপি বার্ণিং: মিসিসিপিতে ১৯৬৪ সালে তিনজন মানবাধিকার কর্মী খুন হয়েছিল। সেই খুনের ঘটনা নিয়ে ছবি। এফবিআইয়ের দুইজন তদন্তকারীর তদন্ত নিয়েই ছবি। জেনে হেকম্যান ও উইলিয়াম ডেফো অভিনীত।
৭। জেড: গ্রীক পরিচালক গোস্তা গারবাসের আরেকটি ছবি। গ্রিসের গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদ গ্রেগরিস ল্যামব্রাকিস খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে ছবি।
৮। জেএফকে: জন এফ কেনেডির হত্যা রহস্য নিয়ে ছবি। নানা ভাবে দেখার চেষ্টা হয়েছে হত্যাকান্ডকে। অলিভার স্টোনের ছবি। নানা বিতর্ক আছে। কিন্তু দেখার জন্য খুবই ভাল একটা ছবি।
৯। সালভাদর: এটিও অলিভার স্টোনের ছবি। সালভাদরের গৃহ যুদ্ধ সময়কার ছবি। বামপন্থী গেরিলারা একদিকে, অন্যদিকে ডানপন্থী সেনাবাহিনী। বলাই বাহুল্য এই সেনাবাহিনীর সমর্থনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
১০। মিউনিক: ১৯৭২ সালে মিউনিক অলিম্পিকের সময় অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকে আরব গেরিলারা ১১ জন ইসরায়েলী ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছিল। সেই হত্যাকান্ডের পরের ঘটনা নিয়ে ছবি। এর পর পাল্টা আক্রমনসহ যেসব ঘটনা ঘটেছিল সে কাহিনী নিয়ে এই ছবি। স্পিলবার্গ ছবির পরিচালক। তবে হত্যাকান্ড যেভাবে ঘটেছিল তা নিয়েও রয়েছে অসংখ্য ছবি। যেমন, এর মধ্যে দেখতে পারেন ২১ আওয়ার্স এট মিউনিক।
১১. হোটেল রোয়ান্ডা: ১৯৯৪ এর রোয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে ছবি। ভাল একটা ছবি। যদিও এটি নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ইতিহাস বিকৃতির। এই বিষয় নিয়ে আরও দুটি ছবি দেখতে পারেন। যেমন, সামটাইমস ইন এপ্রিল এবং শুটিং ডগস।
১২. দি কনস্টান্ট গার্ডেনার: এটি একটি কর্পোরেট ক্রাইমের ছবি। স্থান কেনিয়া। ওষুধ কোম্পানি ওষুধের প্রভাব পরীা করার জন্য বেছে নেয় আফ্রিকাকে। আর এসব খুঁজতে গিয়ে খুন হয় ব্রিটিশ কূটনীতিকের বউ র‌্যাচেল। একসময় হত্যা রহস্য খুঁজতে বের হয় কূটনীতিক স্বামী। অনেক পছন্দের একটি ছবি।
১৩। দি ইনসাইডার: আল পাচিনো ও রাসেল ক্রো। সত্যি ঘটনা নিয়ে ছবি। সিগারেট কোম্পানির এক কর্মকর্তা ফাঁস করে দেয় কর্পোরেট অসততার ছবি। সাহায্য করে এক সাংবাদিক। সিএসবি চ্যানেল এটি উদঘাটন করেছিল।
১৪. এরিন ব্রোকোভিচ: জুলিয়া রবার্টস-এর ছবি। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিল। পরিবেশ দূষনের বিরুদ্ধে এক নারীর একক যুদ্ধ এর বিয়ষ।
১৫. চার্লিস উইলসন ওয়্যার: এটাতেও জুলিয়া রবার্টস। সাথে টম হ্যাঙ্ক। আফগানিস্তান এর পটভূমি।
এর বাইরে আছে । ১৯৬০ সালের সান ফ্রান্সিসকোর সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে ছবি। দেখতে পারেন ডি কেপরিওর ব্লাড ডায়মন্ড-বিষয় সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ। সেভিওর বসনিয়ার যুদ্ধ সময়কার ছবি। দি লাস্ট কিং অব স্কটল্যান্ড ইদি আমিন আর তার ডাক্তার বন্ধু নিয়ে ছবি।

৩,৭২০ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “রাজনীতি, সংঘাত ও আর কর্পোরেট ক্রাইম নিয়ে পছন্দের কিছু ছবি”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    জেড: গ্রীক পরিচালক গোস্তা গারবাসের আরেকটি ছবি। গ্রিসের গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদ গ্রেগরিস ল্যামব্রাকিস খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে ছবি।

    এই ছবিটা অনেক ভাল্লাগছিল.আর বাংলাদেশের রাজনীিতর কখা মনে পড়ছিল.......দারুণ পোস্ট বস


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    এখানেও মাত্র তিনটা দেখছি:
    হোটেল রুয়ান্ডা
    দি ইনসাইডার
    এরিন ব্রকোভিচ

    এরিন ব্রকোভিচ খুবই ভাল লেগেছিল। জুলিয়া রবার্টসের সেরা অভিনয় এটাই মনে হয়েছে। যদিও তার খুব বেশি সিনেমা দেখি নাই।

    জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    অনেকগুলাই দেখা। কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার এর নাম দেখে আরেকটা মুভি'র কথা মনে পড়লো।

    এ মাইটি হার্ট।

    সত্য ঘটনার উপরে বানানো। পাকিস্তানে ধরে নিয়ে আসা ড্যানিয়েল পার্লের স্ত্রীর কাহিনী। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনয় করেছে।

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ১। মিসিং
    ২। দি কিলিং ফিল্ডস
    ৩। জেড
    ৪। মিউনিক
    ৫। হোটেল রোয়ান্ডা
    ৬। দি লাস্ট কিং অব স্কটল্যান্ড
    ৭। এ মাইটি হার্ট

    :awesome: :awesome: :awesome:
    এই প্রথম ৭টা কমন পড়লো!! আমি দেখি চলচ্চিত্র বোদ্ধা হইয়া যাইতাছি? নেক্সট কি ফিল্ম নিয়া পোস্ট দিমু?? :gulli2: :gulli2: :gulli2:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমারো এই ঘরানার ছবি খুব ভালো লাগে।
    অনেকগুলি ছবি দেখা হয়নায়। কবে দেখতে পারবো বুঝতে পারছি না।

    সিনেমা নিয়া আপনার পোস্টগুলি খুব দরকারী। পোস্ট ও মন্তব্যে অনেক ছবির নাম পাওয়া যায়, আলোচনা-সমালোচনা পাওয়া যায়, নিজের পছন্দের তালিকা করা যায়। :thumbup:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  6. দিহান আহসান
    সিনেমা নিয়া আপনার পোস্টগুলি খুব দরকারী। পোস্ট ও মন্তব্যে অনেক ছবির নাম পাওয়া যায়, আলোচনা-সমালোচনা পাওয়া যায়, নিজের পছন্দের তালিকা করা যায়।

    সহমত। 🙂
    লিষ্টের অনেক ছবি অবশ্য দেখা হয়নি।

    জবাব দিন
  7. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    শওকত ভাই আপনার সিলেকশন সবগুলো ই ভালো লেগেছে । সাম্প্রতিক ছবির মধ্যে আপনি "অপারেশন ভ্যালকেরি" [ টম ক্রুজ] দেখতে পারেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হিটলারকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে ছবিটা।

    দেখা হয়েছে :

    এরিন ব্রোকবিচ
    মিসিং
    দি কিলিং ফিল্ডস [ দেখা শুরু করেছিলাম, শেষ করা হয়নি]
    মিউনিক [ স্পিলবার্গের এই ছবিতে ইসরাইলকে অনেক বেশি তোষন করা হয়েছে]
    হোটেল রোয়ান্ডা [ আমি এটাকে সবচেয়ে উপরে রাখতে চাই ]
    দি লাস্ট কিং অব স্কটল্যান্ড [ forest whitaker is fabulous]
    এ মাইটি হার্ট [ অ্যান্জেলিনা জোলির ভিন্ন মাত্রার অভিনয়]
    অল দ্য প্রেসিডেন্টস ম্যান

    জবাব দিন
  8. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    দি কিলিং ফিল্ডস: আরেকটি অসাধারণ ছবি। কম্বোডিয়া নিয়ে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর রিপোর্টার সিডনি আর তার দোভাষি নিয়ে ছবি।

    সত্যিই অসাধারণ ছবি। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এই সিডনি কি ৭১'এ বাংলাদেশ কাভার করেছিলেন?


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শওকত (৭৯-৮৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।