ডাক্তার-ডাক্তার

আমাদের শেফালী রানীর অনেক ছেলে বন্ধু। বসে বসে খেলে রাজার ধন পর্যন্ত ফুরায়, ছেলে বন্ধু তো ফুরাবেই। তারপরেও অসুখ ভালো হলো না শেফালী রানীর। ডাক্তার পর্যন্ত দেখে আঁতকে উঠলেন। সাত দিন আগে যখন শেফালী রানী ডাক্তারের কাছে এসেছিল তখন তো এরকম ছিল না।
-সে কি, আপনার এরকম চেহাড়া হয়েছে কেনো? খুব ক্লান্ত ও বিধ্বস্থ লাগছে।
-আপনার প্রেসক্রিপশন মানতে গিয়েই তো এই অবস্থা ডাক্তার সাহেব।
-কেন, আপনি আমার পরামর্শ মতো তিন বেলা মিল প্রপারলি খাচ্ছেন না?
এইবার আঁতকে উঠলো আমাদের শেফালী রানী।
-তিন বেলা মিলের কথা বলছিলেন। ও, আমি তো মনে করছিলাম তিন বেলা মেল।

রায়হান সাহেবের অবস্থা অবশ্য এতো খারাপ না। অবসর জীবন যাপন করছেন। এই সময়ে এসে ডাক্তারের পরামর্শ মানতে গিয়ে তারও অবস্থা খারাপ হলো, তবে শেফালী রানীর মতো না। ডাক্তার রায়হান সাহেবকে টিপে-টুপে দেখে মাথা ঝুলিয়ে বললেন, সিগারেট একেবারেই ছাড়তে হবে। সিগারেট আপনার জন্য হারাম। কেবল রাতে খাওয়ার পর, ঘুমের ঠিক আগে তিন পেগ হুইস্কি চলতে পারে। আর কিছু না।
রায়হান সাহেব প্রতিবাদ করে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। অতি ব্যস্ত ডাক্তার শুনলেনই না কিছু।
মুশকিলে পড়লেন রায়হান সাহেব। কঠিন জীবন যাপন করেছেন আজীবন। কখনো সিগারেট খাননি, পানেরও আসক্তি নেই। মদ তো দূরের কথা। অথচ শেষ বয়সে এসে এখন ডাক্তারের পরামর্শে প্রতি রাতে তিন পেগ করে হুইস্কি খেতে হচ্ছে। আজকাল ভাল হুইস্কির যে দাম, তাতে টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। তবে ঘুমটা ভাল হচ্ছে এটা মানেন রায়হান সাহেব।

আমিও গেলাম সেই ডাক্তারের কাছে। মস্ত বড় ডাক্তার। আধা মিনিটের মধ্যে গলা টিপে ধরলেন। কানের মধ্যে টর্চ জ্বালিয়ে কি সব দেখলেন, দুই দফা গালও টিপলেন। ওষুধ দিলেন তিনটা। স্টিমিটেল, সিনাজিন আর ফেনারগান ১০ এমজি করে দুই বেলা।
মনোযোগ দিয়ে ওষুধ খেলাম। ফেনারগান ঘুমের ওষুধ। আমার বউয়ের সব সময়ের অভিযোগ আমি নাকি বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। অতিব্যস্ত ডাক্তারকে সে কথা বলাও গেল না। দিয়ে দিলেন দুই বেলা ঘুমের ওষুধ। আমি এখন খালি নিয়ম করে ঝিমাই। ঘুম থেকে উঠি ১১টার সময়। সকালে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে বললে ঘুম আর জেঁকে বসে। বাজার করতে বললে তো চোখই থুলতে পারি না। অফিসে এসেও ঘুমাই। মাঝে মধ্যে চোখ খুলি, খাই, আবার ঘুমাই। বাড়িতে ঘুমাই, গাড়িতে ঘুমাই, শাড়িতেও ঘুমাই।
আবার গেলাম ডাক্তারের কাছে। সবমিলিয়ে সময় ৩০ সেকেন্ড। এর মধ্যে কোনো রকম ঘুমের কথাটা বলেই ফেললাম। গম্ভীর হয়ে ডাক্তার বললেন, বেশি করে চা, কফি খাবেন। কিন্তু ওষুধ কমানো বা বন্ধ করা যাবে না। দুই মাস খেতে হবে।
আমার অবস্থাও হয়েছে রায়হান সাহেবের মতো। চা বা কফির কোনো অভ্যাস ছিল না। এখন আমি রীতিম চা খোর, কফিসেবক। অফিসের ক্যান্টিন চালায় আমির। সে বেজায় খুশি। পারলে ডাক্তারকে কমিশন দিয়ে আসে। ভাবছি ডাক্তারের কল্যানে সিগারেটটাও ধরবো নাকি?

উপায় অবশ্য আরেকটা আছে। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের গল্পটা বলি। রোগী গেছে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে বললেন,
-অসুখ হলেই ডাক্তারের কাছে আসবা। কারণ ডাক্তারকেও তো খেয়েপড়ে বাঁচতে হবে।
-ডাক্তার অষুধ লিখে দিতে। সেই প্রেসক্রিপশনটা নিবে। কেননা এত্তো এত্তো ওষুধ কো¤ক্সানি গড়ে উঠেছে। এই সব কোম্পানির মালিকদেরও তো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে হবে।
-প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে যাবে ফার্মেসীতে। মানুষজন টাকা পয়সা খরচ করে ফার্মেসী দিছে। ওষুধ যদি না কেনো তাহলে ওরাই বা খেয়েপড়ে কিভাবে বাঁচবে।
-এরপর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে সোজা ডাস্টবিনে ফেলে দিবে। কারণ তোমাকেও তো বেঁচে থাকতে হবে।

৪,৩১৩ বার দেখা হয়েছে

৪৫ টি মন্তব্য : “ডাক্তার-ডাক্তার”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    দুই দফা গালও টিপলেন

    😀

    বাড়িতে ঘুমাই, গাড়িতে ঘুমাই, শাড়িতেও ঘুমাই।

    😀 😀

    দারুন, দারুন। পুরাই পিরা গেলাম মাসুম ভাই =))

    ডাক্তর সাবের কাছে যাইতে, আর শাড়িতে ঘুমাইতে মঞ্চায় 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    ডাক্তারদের নিয়া তিনটা জোক্সঃ

    ১.
    ডাক্তারঃ সর্বনাশ, আপনার দাঁতের মাঝখানে বিরাট একটা গর্ত হয়েছে , বিরাট একটা গর্ত হয়েছে।
    রোগীঃ দু'বার বলার দরকার নেই, একবারেই বুঝতে পেরেছি।
    ডাক্তারঃ দু'বার বলিনি , একবারই বলিছি।
    রোগীঃ আমি তো দু'বার শুনলাম?
    ডাক্তারঃ আপনার দাঁতের গর্তটা এতোবড় যে সেখানে প্রতিধবনি হয়ে দু'বার শোনা যাচ্ছে।

    ২.
    এক লোক তাঁর দাঁত তোলার জন্যে গেলেন চীনে। ডেন্টিস্ট জানালো প্রতি দাঁত তোলার খরচ দুই হাজার টাকা।
    -এতো কেন? আমাদের দেশে একশ টাকা দিলেই দাঁত তুলে দেয়।
    - হতে পারে , কিন্তু আমাদের এখানে দাঁত তোলা অনেক কঠিন কাজ, আমরা দাঁত তোলার পর সেটা কান দিয়ে বের করি।
    - কেন? কান দিয়ে বের করেন কেন?
    - আমাদের দেশে মুখ খোলা নিষেধ, বেআইনি।

    ৩.
    এক লোক এক্সিডেন্টে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। পেটে সেলাই লাগবে।
    অপারেশন টেবিলে শুয়ে সে ডাক্তারকে বললোঃ
    -ডাক্তার সাহেব, একটা কথা.........
    -কী কথা বুঝতে পেরেছি, সেলাইয়ের সময় যাতে ব্যথা না লাগে এই তো ?
    - না, না , সেলাই তো করবেনই,দয়া করে সঙ্গে শার্টের বোতামটাও সেলাই করে দিয়েন, এক্সিডেন্টে ছিড়া গেছে !


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    হা হা হা =)) =)) =)) =))


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শওকত (৭৯-৮৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।