মালয়েশিয়া ধামাকা

পর্ব-১

৩ এপ্রিল ২০১৪

আরিফের ইচ্ছা হল মালয়েশিয়া যাবে। তাই ভিসার সব ফর্মালিটি সেরে ফেললো।কি মজা যে লাগছে! ১০ তারিখের টিকেট কেটে ফেলেছে! আমার জন্মদিনের অ্যাডভান্স ট্রিট এটা। কিন্তু রাতেই জানা গেল আজকাল মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে ১০ দিন লাগে।সুতরাং ইচ্ছায় গুড়েবালি। ১০ তারিখে যাওয়া হবেই না! তাও বসে বসে দূয়া করি, যদি ৭ দিনে হয়! ৭ দিনে হলেও যাবার দিনেই পাওয়া যাবে ভিসা। ফ্লাইট রাতে, তাই আশা আছে। আরিফ সব সময় আমাকে প্যানিকেই রাখে! অবশেষে ভিসা যাদুর মত ৬ দিনেই পেয়ে গেলাম। ভাগ্যিস আগে থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে ছিলাম খানিক। ঝড়ের বেগে কিভাবে যেন সব গুছালাম! কাল তাহলে যাব, কি আনন্দ!

১০ এপ্রিল, ২০১৪

সারাদিন আরিফের খবর নেই। রাত ৯টায় ফ্লাইট। এবারের গন্তব্য নিয়ে লাফাচ্ছি আমি আর রীহান। টিকেট আমার হাতে তাই ভরসা, যাওয়া হবেই। কিন্তু বিকাল ৫টা বাজার পরেও যখন আরিফকে ফোনে পাওয়া গেল না, তখন চিন্তায় পড়লাম। টিকেট আসল নাকি নকল তাই বার বার চেক করা শুরু করলাম।আরিফ ধাপ্পা দিচ্ছে না তো। ভিসা তো আর মিথ্যা না। তাহলে আরিফ চুপ কেন? কিছুই বুঝতে পারছি না। ৬ টা বাজে। এতক্ষণে বের হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এয়ারপোর্টের পথে। কিন্তু আরিফের খবর নেই।এত খারাপ লাগছে যে, কান্না আসছে।

ঠিক ৬টা ৫ মিনিটে আরিফের ফোন এলো। “তোমরা রেডী?”

আমিঃ তুমি কোথায়? কখন আসবে? আমরা কি যাব?

আরিফঃ ১০ মিনিটেই বের হব

আমিঃ কিভাবে?

আরিফঃ আমি বনানীতে। আর মাত্র ৫ মিনিটেই চলে আসব।তুমি ব্যাগ বের কর

আমিঃ তুমি খাবে না ? দুপুরে খেয়েছো?

আরিফঃ খেয়েছি। আসব, আর কাপড় বদলে চলে যাব

অবশেষে ৬.৪৫ মিনিটে তিনি এলেন।আমি ভয়ে শেষ। আজ বৃহস্পতিবার। রাস্তায় জ্যাম। কিভাবে ফ্লাইট ধরব! আরিফী এই ১২ বছরে কোনদিনই প্যাকিং করেনি। কোথাও যেতে হলে মাত্র ৫ মিনিটেই এসে একসাথে বেরিয়েছে। এটাই তার হ্যাবিট। ভাগ্যিস আমি ক্যাডেট ছিলাম! নাইলে ৫ মিনিটে কিভাবে রেডি হতাম! ধন্যবাদ আমার ক্যাডেটশীপকে। যাই হোক, এসে আরিফ একটা গোসলও দিয়ে ফেললো। ৭টা বাজে। এখনো বাসায় আমরা।

আমিঃকখন বের হবে? ফ্লাইট ছেড়ে দিবে? রাস্তায় গিয়ে ট্যাক্সি খুজে তবে তো যাওয়া। তোমাকে বললাম ট্যাক্সি নিয়ে আসতে!

আরিফঃ না পেলে কি করব?

আমিঃ এইটা কি গুলিস্তানের বাস নাকি যে তোমার জন্য থেমে থাকবে?

আরিফঃ প্লেন তোমাকে ছেড়ে যাবে না, বললাম তো

আমিঃ এখন ৭.২৫ বাজে।তুমি একটা লেটু

সবাইকে টাটা দিয়ে নিচে নাম্লাম লাগেজ নিয়ে। মনের মধ্যে রাগে আগুন জলছে। দুনিয়া বদলে গেল, কিন্তু এই লেটুকে বদলাতে পারলাম না। আজীবন লেট। এর দেখাদেখি ছেলেটাও লেট। এমনকি জন্মের সময়েও রীহান ৬ দিন লেট করেছিল। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছি। আল্লাহ প্লিজ কোন কেরামতি দেখাও। আমাদের এয়ারপোর্টের জন্য একটা ট্যাক্সি দাও, আর জ্যাম দিও না, প্লিজ!

নিচে নেমে দেখি আরিফ গেটের দিকে যাওয়া বাদ দিয়ে উলটা যায়

আমিঃ আরে লেটু কই যাও তুমি?

আরিফঃ লাগেজ রাখতে

আমিঃ কোথায়?

আরিফঃ গাড়িতে

আমিঃ কি বলে? গাড়ি?

আরিফঃ এইদিনে কি ট্যাক্সি পাওয়া যায়। তাই গাড়ি ভাড়া করে আনলাম

গাড়ীতে উঠে মনে মনে হাসছি। লেটু লাস্ট মূহুর্তে সব কিছু এত সুন্দর করে গুছিয়ে করে কিভাবে! একদম জ্যামে পড়িনি।কি অবাক কান্ড!মাত্র ২৫ মিনিটে এয়ারপোর্টে ঢুকে লাগেজ জমা দিয়ে দিলাম। ইস, আল্লাহ এত ভালো কেন! তার সাথে আমার লেটু আরিফ।

আমিঃ তুমি গাড়ি ভাড়া করেছো বলনি কেন?

আরিফঃ তোমার টেনশন না থাকলে এখন এত মজা লাগত?

আমিঃ পুরাটাই টেনশন। ভিসা পাব কিনা, সারাদিন তোমার খবর নাই।যাওয়া হবে কি না…।সব সময় এমন টেনশন দিতে তোমার মজা লাগে?আমি যদি রেডী না থাকতাম?

আরিফঃ আমি জানতাম তুমি রেডী থাকবে

আমিঃ কিছু যদি নিতে ভুলে যেতাম?

আরিফঃ তোমার কোনদিনই কিছু নিতে ভুল হয় না

আমিঃসারাদিন কল দিলে না, ধরলেও না যে!

আরিফঃ ব্যস্ত ছিলাম টাকা যোগাড় করতে।

আমিঃ কি! টাকা ছাড়াই তুমি টিকেট কেটে রেখেছিলে?

আরিফঃ আবার জিগায়!

পর্ব-২

১০ এপ্রিল ২০১৪

প্লেন টেক অফ এর আগেই ইমিগ্রেশন থেকে বলল একটু দেরী হতে পারে। একটু দেরী ৩০ মিনিট দেরি হল। কারণ অজানা। রীহান কে বাসা থেকে এক গ্লাস হরলিক্স খাইয়ে রওনা দিয়েছিলাম ৭.৩০ টা বাজে। এখন কি উপায়।ইমিগ্রেশন পেরিয়ে লাউঞ্জে অপেক্ষা করছি। রীহানের ক্ষুধা লেগেছে।প্লেনে উঠার পরেও অনেক দেরী হচ্ছে। এমনটা আগে দেখিনি। তার ওপরে মশা কামড় দিচ্ছে। কি বিপদ! এই ৩ ঘন্টা মশার কামড় খেতে খেতে যাব মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সে!

আমিঃ প্লেনে অনেক মশা দেখতে পাচ্ছি। আমার ছোট বাচ্চা আছে দেখতেই পাচ্ছেন।এভাবে মশার কামড় কিভাবে সহ্য করবে বেচারা!

ক্রুঃ ম্যাডাম, তোমাদের দেশে এসে দরজা খোলা মাত্র ঝাকে ঝাকে মশা ঢুকে গেল। ৩০ মিনিট ধরে ৩ ক্যান ওষুধ দিয়েও কিছুই হচ্ছে না। এখনো কিছুই উপায় করা যাচ্ছে না। এমন কোথাও হয় নি। কি করব, আমরা বুঝতে পারছি না।

আমিঃ আমাদের দেশে মশা মারা ব্যাট পাওয়া যায়। পটপট করে মশা মরে। আমাদের মশা দূর্বল না। ওষুধে মরে না।

কি আর করা। ব্যাগ খুজে একটা ছোট হাতপাখা পাওয়া গেল।তাই দিয়ে বাতাস দিয়ে মশা তাড়াতে তাড়াতে যাচ্ছি মালয়েশিয়া। কপাল আমার। তার ওপরে খাবার নিয়ে চিন্তায় আছি। বনানীর আরবান স্পাইস এ খেয়েছিলাম ইন্দোনেশিয়ান ফুড, যেটা মালয়েশিয়ার সাথে কমন। খেয়ে রীহান রেগে গিয়েছিল।আজ কি করবে কে জানে! নাসি লামেক দিয়েছে রীহান কে। আমি আর আরিফ নিয়েছি খাসির কোরমা আর ভাত। ঝাল খেতে মন চাইছে। ভালই লাগল। রীহান ছোট্ট “বেবী ফিস” দেখে খুশিতে খেল। আমাদের দেশে আরবান স্পাইস এ তাহলে কি রান্না করেছিল? ব্যাটাদের পিটায়ে দোকান বন্ধ করে দেয়া উচিত। পারবি না তো রাধবি কেন নাসি লামেক?

আমরা খাবার খাচ্ছি, মশা আমাদের খাচ্ছে। রীহান ভেবেছিলাম ঘুমাবে। রাত বাজে ১২ টা। দিন হলে তাও আকাশ দেখা যেত। কি করব।ম্যাগাজিন পড়ে পড়ে বিরক্ত। আই প্যাডে রীহান খেলে। অবশেষে এই ৩ ঘন্টা= ৩ বছর শেষ হল। পৌছে গেলাম কুয়ালালাম্পুর এয়ারপোর্টে। আমাদের ইমিগ্রেশনে শুধু ছবি তুলতে যে দেরী করে, আমার ঘুম পায়। এখানে এত লম্বা সময় নষ্ট করল না। থাইল্যান্ডে আরো কম সময় লেগেছিল। রাত ৪ টা বাজে। ৭টার আগে হোটেলে গিয়ে লাভ নেই। তাই এখানেই ঘুরব ভেবেছি। অনেক বাংলাদেশী দেখা যাচ্ছে।এটা একটা শান্তি।10247347_10154082173185383_4500437843447981737_n

১,৯২৮ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “মালয়েশিয়া ধামাকা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    চলুক :thumbup:

    কেএল এয়ারপোর্টে রাতে নেমে আমরা দুজন বেঞ্চে লম্বা হয়ে শুয়ে সকাল পর্যন্ত দারুন একটা ঘুম দিয়েছিলাম 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "পারভেজ ভাই, বর নিয়ে বেড়ালে ভ্রমণ তো প্রেম কাহিনীই হবে!"
    এইটা ভাল বলেছো।

    বিবাহিত মানুষদের মধ্যেও যে প্রেমের একটা ব্যাপার থাকে তাতো আসলেই ভুলতে বসেছি।
    কোন গল্প কবিতা সাহিত্য উপন্যাসে এই বিষয়টা উঠে আসে না।
    প্রেমের সব কাহিনীই পূর্ন্তা পায় বিবাহে। ধরেই নেয়া হয়, বিবাহিত জীবনে ঐ নায়ক-নায়িকা অটোমেটিক ভাবে প্রেমময় জীবন কাটাচ্ছে। আর তাই কাহিনী আগে বাড়ানোর দরকার নাই। ফুলস্টপ।
    "প্রেমের বিয়ে থেকে অটোমেটিক প্রেমময় জীবন" - সেটা কি সম্ভব?
    একদমই নয়। আমার মনে হয় প্রেম জারি রাখার জন্য যে এফর্ট উভয় পক্ষ প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে সেটাও আলোচনায় আসা উচিৎ।
    একইভাবে "প্রেমের বিয়ে = অটোমেটিক সুখি" এই ধারনার বসবর্তি হয়ে যারা ঠিক এফর্টটা দিচ্ছে না বা অসম ভাবে দিচ্ছে, তাঁরা কি কি চ্যালেঞ্জের মুখমুখি হচ্ছে, সেটা নিয়েও আলাপ হওয়া উচিৎ।

    আমার কাছে প্রেমময় থাকাতে সচেতনভাবে এফর্ট নেয়ার কাহিনী সম্বলিত বর্ননাংশটা খুব উতসাহব্যাঞ্জক লেগেছে।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।