আমার দুর্ভাগ্যের টার্ম

২০০৯ সালের প্রথমটা আমার ভালই চলছিল। প্রথমে ভিপি স্যার ভ্যাকেশনে ফোন করলেন যে ৯ তারিখ প্রথম আলোর ম্যাথ অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে। স্যার কই থাকব???উনি বললেন কেনো নিজ ব্যবস্থায়। তখন আমি বললাম স্যার তাহলে যাবো না। তারপর তিনি আব্বুকে ফোন করলেন। আব্বু বলল ঠিক আছে আমি নিয়ে যাবো। কিন্ত তারপর আমার বন্ধু নাদিম ফোন করল যে ও আমার রেজিস্ট্রেশন করাইসে আর আমি যাতে ওর বাসায় থাকি। সবকিছু গোছিয়ে আমি ৮ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় গোধূলী ট্রেন করে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া থেকে কুমিল্লায় পৌঁছলাম। সেখানে আমাকে নাদিম রিসিভ করল। তারপর আমরা ব্যাগ রেখে কুমিল্লা ঘুরতে বের হলাম। এরপর দিন পরীক্ষা দিলাম।ত বে পরীক্ষা থেকে আমি খাওয়াই বেশ মজা পেলাম। তারপর বিকালে রেজাল্ট দিল। আমি ৩য় হলাম। তারপর তাড়াতাড়ি করে বাস ধরলাম। বাসায় আসলাম।আম্মু আব্বু খুব খুশি হলেন। বন্ধুদের জানালাম। তারাও খুশি হল।

তারপরের দিন কলেজ খোলা। তারপর কলেজে এলাম। সবাই মিলে একসংগে কলেজে ঢুকলাম। তারপর ডিনার শেষে ভিপি আমরা যারা প্রথম আলো গণিত উৎসবে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ পেলাম তাদের ভালভাবে প্রাকটিস করতে বললেন। আমি সেই সুযোগে ব্লক টাইমে সারাদিন কম্পিউটার ল্যাবে পরে থাকতাম আর রাতে অংক করতাম। কম্পিটিশন ছিল ১৪ ফেব্রুরায়ী। এদিকে ঢাকা থেকে সব কাগজপত্র এসে পরল। তখন কলেজের ভাইভা পরীক্ষা হছে। তাই রেস্ট হাউসে জায়গা ছিল না আর মাইক্রোবাস নিয়ে গেছে। কিন্তু একক আমাদের একটা মাইক্রোবাস দিছিল আর ঠিক হল আমরা ক্যাডেটদের বাসায় থাকবো। কিন্তু কলেজ আর যেতে দিল না। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হল। তারপর ডিনার শেষে হাউসে এলাম। এসে আমাদের হাউসের দেওয়াল পত্রিকার কাজ শুরু করলাম। ২১ তারিখ কম্পিটিশন শেষ হল। তারপর একদিন খুব ঘুমালাম কারণ এতোদিন ঘুমাইনি আর এরপরেরদিন অবস্টেকল কোর্স। ২৩ তারিখ অবস্টেকল শুরু হল। সিনিয়র গ্রুপ এল। আতিক(যে এইবার ছাড়া কখনও দ্বিতীয় হয়নি) নাইনফিট দিতে গিয়ে পিঠে ব্যাথা পেল। ফলে সে ৩.১৮ মিনিটে এল। কিন্তু শরীফ ভাই ৩.১৭ মিনিটে এল। আমার মাথায় যেন বাঁজ পরল। আমি বললাম না সিনিয়রকে প্রথম হতে দেওয়া যাবে না। তাই আমি প্রথম থেকেই জোরে দৌড় শুরু করলাম।নাইন ফিট এক লাফেই উঠে গেলাম।এবং সিপ্ডে লাফ দিলাম।তাই বালু ছেড়ে শক্ত মাটিতে পরলাম। হঠাৎ কি যেন হল। আমি উঠার চেষ্টা করলাম এবং পড়ে গেলাম। তখন বুজলাম পা আমার শেষ। কি আর করা হস্পিটালে এডমিট। তারপর সেখান থেকে সিএমএইচ। রিপোর্টে আসল পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে গেছে। এভাবেই চলতে থাকল……………………………………………………..।
তারপর আসার আগে শুরু হল বাস্কেটবল। এই পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে প্রাকটিস করতাম। মোটামোটি নিশ্চিত ছিলাম যে এইখানে বেস্ট প্লেয়ার হব। কিন্তু খেলা শুরুর কিছুদিন আগে চোখ উঠল। সিএমএইচ থেকে ৭ দিন এক্সিউস দিল। আমি খেলার জন্য ৭ কে ৪ বানালাম। যখন ডিসচার্জ হতে মেডিকেল অফিসারের কাছে গেলাম উনি আমাকে চোখ নিয়ে সেই কি উপদেশ।উনি প্রথম ম্যাচ খেলতে দিলেন না। আমি মনে মনে বললাম ক্রেস্ট ও গেল মেডেল ও গেল।কারণ আমি না থাকলে তিতাস হারবে মোটামোটি নিশ্চিত। কিন্ত তিতাস জিতল। তারপরের ম্যাচ খেললাম। প্রথম দুই কোয়ার্টার বেশি সুবিধা করতে পারলাম না। মেঘনা এগিয়ে গেল। তারপর শুরু হল আমার খেলা। অবশ্য শেষ কোয়ার্টারে আমাকে বসে পরতে হল কারণ পায়ে ব্যাথা পাইছি। এখানেও আমার ক্রেস্টটা অল্পের জন্য মিস হয়ে গেল…………………………….।
এখন নেক্সট টার্ম।আল্লাহই জানে ভলিতে বেস্ট প্লেয়ার হয় নাকি আবার কোনো কাহিনী ঘটে। ফুটবলে তো কোনো চান্সই নাই কারণ পায়ের যে অবস্থা বল কিকই করতে পারি না।

১,৬৬৮ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “আমার দুর্ভাগ্যের টার্ম”

  1. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    ভাইয়া শোন,

    সব কিছুর উর্দ্ধে নিজের সুস্থতা। সবাই হাউসের জন্য, কলেজের জন্য তোমাকে সর্বস্ব উজাড় করে দিতে বলবে। তুমি ভাল কিছু করলে অনেক বাহবাও দিবে। তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে সান্তনাও দিবে। কিন্তু তোমার দূর্ভোগের ভাগ কেউ কোন দিন নিবে না। এই কথাটা মাথায় রাখবা।

    আমি তোমাকে ডিমোরালাইজ করার জন্য কথা গুলো বলিনি। অবশ্যই তুমি তোমার সাধ্য মত চেষ্টা করবে। কিন্তু নিজের উপর অতিরিক্ত প্রেসার দিয়ে নয়। আশা করি এবার তুমি সফল হবে।

    জবাব দিন
  2. আব্দুল্লাহ (২০০৪-২০০৮)

    বাহ তুই ত দেখতেছি জিনিয়াস ১ টা। :boss: :boss: :boss: :boss: সব কিছুর সেরা। অসুবিধা নাই পরের বার যে কম্পিটিশন ই হোক না কেন তুই ইনশাল্লাহ best player হয়ে যাবি। আমার দোয়া রইল তোর সাথে।

    জবাব দিন
  3. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)
    তাই আমি প্রথম থেকেই জোরে দৌড় শুরু করলাম।নাইন ফিট এক লাফেই উঠে গেলাম।এবং সিপ্ডে লাফ দিলাম।তাই বালু ছেড়ে শক্ত মাটিতে পরলাম।

    দোস্ত,সব কিছুতে একটু কম ক্ষেপা ভালো! :)) :))
    উপদেশ মারলাম 😉


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  4. শরীফ
    ঠিক একই জায়গায় একই টাইমে আমার লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল।
    পরের একটা বছর আমি হাঁটতেই পারতাম না ঠিক মত। আর আমার পা ব্যথা যে লিগামেন্ট ছেঁড়া -- এইটা ডিটেক্ট করতে আর্মির ডাক্তাররা লাগাইছিলো ১৬ মাস।

    আমার পরবর্তীতে বীভৎস কেটেছিল জীবন। ইলেভেন থেকে গিয়ে অবশেষে টুয়েল্ভ এর প্রি-টেস্ট এর আগে লিগামেন্ট টিয়ার টের পেয়েছিলাম। সি এক এইচ এর ডাক্তাররা চেক করেনি -- আমি নিজের উদ্যোগে চেক করেছিলাম এম আর আই করার ব্যবস্থা করে। আমি ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার একটা নজীর। ভাবতে আজো আমার লজ্জা হয়।

    ইচ্ছে ছিল খুব আর্মিতে যাওয়ার। আমাকে নিষেধ করেছিলেন একজন ডক্টর...
    হাঃ আর্মি !! আজো চরম ভুগি পা ব্যথায়। স্বাভাবিক ব্যথামুক্ত পা আমার স্বপ্ন
    আজ জীবন অন্যরকম...

    আমি এখনো খেলতে পারিনা ফুটবল... অপারেশন সত্বেও ভুগি...
    এই ব্যথাটা আমার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ ৬ মাস সিক প্যারেডে দাঁড়িয়ে থাকতাম। হাউসে অনেক সময় কমান্ডার থাকত না ড্রিল-এ, প্রিফেক্ট হয়েও চেয়ে চেয়ে দেখতাম। গেমস টাইমে খেলতে নিষেধ ছিলো... আমি বাস্কেটবল ছুঁলেই অ্যাডজুটেন্ট স্যার নিষেধ করতেন......

    এটাকে নিয়ে হেলাফেলা না করাই মনে হয় ভালো... সবার হয়ত আমার মত পরিণতি হবেনা... ইনশাআল্লাহ তোমার হবেনা। আমি এই ব্যথা পায়ে করে দেড়টা বছর পিটি-ড্রিল করছিলাম যা খুব ক্ষতি করেছিল...

    ভাই, দূর্ভাগ্যের গল্প বলিও না। জীবনটা তোমার। এটাকে যেভাবে পার সাজাও।
    তোমার দুঃখ, কষ্টে হয়ত সহানুভূতি পাবা -- কিন্তু তাতে জীবনের ভোগান্তি কমবে না... ...

    তোমার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করি।
    আল্লাহ তোমার সহায় হোন।

    জবাব দিন
  5. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    ওপরে মেহেদী যেমন লিখেছে, আমিও একই পরামর্শ দেবো। নিজের ওপরে টর্চার করে কিছু করার কোনো প্রয়োজন নেই। এইটা সত্যি কথা যে, কলেজের জীবনটা খুবই উপভোগ্য একটা জীবন, কিন্তু সাথে সাথে মাথায় রেখো, জীবনের আসল পার্ট শুরু হবে তুমি কলেজ থেকে বের হবার পরে।

    সম্ভব হলে, যেহেতু এখন ছুটিতে আছো, অন্য কোনো ডাক্তার দেখিয়ে পরামর্শ নিয়ো ......

    জবাব দিন
  6. তানভীর (৯৪-০০)

    শরীফ, এখন হয়ত তোমার কাছে বেস্ট প্লেয়ার হওয়াটাই খুব ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু, এটা যদি তোমার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে তাহলে বাদ দিয়ে দাও। জানি, খুব কষ্টকর বাদ দেয়াটা। সবশেষে সুস্থ্য থাকাটাই কিন্তু আসল কথা।
    দোয়া করি, সুস্থ্য হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।