কাঠাঁল পাড়ার ঘটনা

ক্লাস এইটে ওঠার পরেই কলেজের আম পাড়তে শুরু করি । মিল্কব্রেক টাইমে জুনিয়রদের ফল ইনের সাথে আগে আগে চলে আসতাম আর আম গাছ থেকে আম পাড়তাম । পাড়ার পর তা পাশের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রাখতাম আর লাঞ্চের পর হসপিটালে যেতাম । যখন সবাই ডাইনিং হল থেকে নেমে যেত তখন ঐ ঝোপ থেকে আম গুলা নিয়া আসতাম । হাউসে এন্টিকাটার ছিল আর ডাইনিং হল থেকে লবণ নিয়ে আসতাম । ক্লাস এইট এই ভাবেই চলল ।
তারপর এল ক্লাস নাইন । তখন কাঠাঁল পাড়তে শুরু করলাম । প্রতিদিন আমি, সালমান আর মাহবুব গেমস টাইম এর পর তাড়াতাড়ি গোসল সেরে মসজিদের পিছনের কাঠাঁল বাগান থেকে কাঠাঁল পাড়তাম । অন্যরা তখন খুব ভয় পেত । মাত্র ক্লাস নাইনে ওঠেছে আর এখনই এসব।ত্তখন ওদের গায়ে ক্লাস নাইনের হাওয়াটা লাগে নি। তাই অনেকে আমাদের বারণ করত। যাই হোক আমরা আমাদের মত পাড়তে লাগলাম।
তারপর এল ক্লাস টেন। কাঠাঁল পাঁকার প্রথম দিকে আমি হসপিটালে এডমিট ছিলাম।তখন আমার সাথে এডমিট ছিল ২২ ইনটেকের সাব্বির ভাই,আশিক ভাই,সরওয়ার ভাই আর ফারুক ভাই।আমরা পাঁচজনে মিলে প্ল্যান করলাম আজ রাতে কাঠাঁল পাড়ব। তাদের কাছে টরচ ছিল আর হসপিটালের চাবি ছিল।ওনারা ক্লাস টেন এ থাকতে ফারশাদ ভাইয়ের জন্ডিস হইছিল তখন উনি এই হসপিটালের চাবি ছাপ নেয়ে বানায় ফেলে। যাই হোক রাত সাড়ে ১২ টায় আমরা রওনা হলাম।তারপর কাঠাঁল পেড়ে নিয়ে আসলাম।হসপিটাল থেকে বের হয়ে একদিন প্রেপে যাওয়ার সময় দেখলাম অনেকগুলা কাঠাঁল স্টাফ বিল্ডিং এর সামনে। প্রেপে গিয়ে আমি,সালমান আর মনোয়ার মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে অনেক তো বাইরে কাঠাঁল পেড়ে খেয়েছি এইবার হাউসে নিয়ে সবাই মিলে খাব। আমাদের মধ্য সালমান ছিল ভাল রানার তাই প্ল্যান অনুযায়ী সে সবার আগে থাকবে এবং সিগন্যাল দিবে যে রাস্তা ফাঁকা।তারপর মনোয়ার কাঠাঁল নিবে আর আমি যেহেতু সবচেয়ে লম্বা তাই আমি পিছনে যাতে মনোয়ারকে না দেখা যাই।
প্রেপ শেষের ঘন্টা দিল।আমরা দিলাম দৌড়।সালমান বলল কেউ নাই তাই মনোয়ার কাঠাঁল নিল কিন্তু রাসেল ভাইকে(মেস ওয়েটার)দেখে রেখে দিল।আমি ছিলাম ড্যাম কেয়ার।তাই কাঠাঁল তুলে নিলাম আর দৌড়াতে লাগলাম।কিন্তু হসপিটালের সামনে এসে দেখি কামরুল স্যার।আমি তাড়াতাড়ি কাঠাঁল ফেলে দিলাম।উনি জিঙ্গাসা করল কিসের শব্দ আমি বললাম কিছুর না।পাশে ছিল আম গাছ তাই উনি বলল কি আম পাড়তাছিলা? আমরা বললাম না স্যার।তখন উনি রাসেল ভাইকে জিঙ্গাসা করল।উনি বলল জানি না স্যার। স্যার জিঙ্গাসা করল এত আগে আসলা কেন?সালমান বলল ম্যান ইউর খেলা দেখতে।তারপর আমরা হাউসে এসে টিভি দেখতে শুরু করলাম।কে জানি কামরুল স্যারকে সব বলে দিল।তারপর উনি হাউসে এসে আমাদের ধরল।উনার কাছে ধরা খাওয়া মানে শেষ।স্টেটম্যান লেখাল।কিন্তু শেষমেষ বেচেঁ যাই নাহিয়ান ভাই,সাদ ভাই(তিতাসের দুই জেপি)আর মোখলেস(হাউস মাষ্টার)স্যারের জন্য।পড়ে নাহিয়ান ভাই তার পাওনা বুজে নিয়েছে।আমাদের তিনজনের কাছ থেকে তিনটা মাচু আইসক্রীম নিয়ে।তারপর ও আরও কাঠাঁল আরও পেড়েছি।ধরাও খেয়েছি।
গতবছর কাঠাঁল পাড়তে পারিনি কারণ ক্যান্ডিডেট’স ভ্যাকেশনে ছিলাম।তাই এইবার তা সুদে আসলে পারব।কিন্তু প্রবলেম একটাই আমার কাঠাঁল পাড়ার সঙ্গী হবে কে?

১,৮৭৯ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “কাঠাঁল পাড়ার ঘটনা”

  1. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    দোস্ত...আইস্যা পড়সো!ওয়েলকাম!লেখা ফাটাফাটি হইসে! :clap: :clap:
    সঙ্গী আমি আছি...চিন্তা করিস না! 😉
    আর আহসান আকাশ ভাইয়ের কথাটা একটু মনে রাখিস!বলা তো যায় না......। 😛


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।