আশরাফকে খুব মনে পড়ছে

আশরাফকে খুব মনে পড়ছে আজ। কেন জানি না।

সবকিছু তো স্বাভাবিক আছে। হাঁটছি, খাচ্ছি, ঘুরছি। মাঝখানে শুধু ও নেই।আশরাফ কে ছাড়া ওর মা, বাবা, প্রিয়তমা স্ত্রী কেমন আছে কে জানে। আমাদের পাবনা ক্যাডেট কলেজের ১৬তম ব্যাচের বোধকরি সবচেয়ে চৌকস ছেলেটি, বিমান চালাতো। আমরা অনেকে যেখানে সাইকেলই চালাতে পারিনা, সেখানে ও বিমান নিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াত। মিগ-২৯ চালানোর প্রশিক্ষন পাওয়া অল্প কয়জন অফিসারদের মধ্যে একজন ছিল। নাখাল পাড়া বাসায় যখন থাকতাম তখন ১৬ই ডিসেম্বরের প্যারেডের মহড়া হত আর আমাদের বন্ধু আশরাফ সেখানে বিমান চালাত। আমি তখন সদ্য ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি, আর আমার বন্ধু বিমান নিয়ে সাঁই সাঁই করে আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে! ভাবতেই আমার বুকের ছাতি ফুলে যেত কয়েক ইঞ্চি।

আমার বন্ধু রাসেদের খুব ভাল বন্ধু ছিল ও। মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা করে, আশরাফ কে ছাড়া কেমন আছে রাসেদ। রাসেদের সাথে কথা হয়না অনেক দিন। জিজ্ঞাসা করা হয় না। খুব কি অন্য রকম ছিল সেই দিনটা? ২০১০ এর ডিসেম্বরের কোন এক দিন। কি বন্ধু আমি! সেই দিনটির কথাও কি সহজে ভুলে গেলাম। প্রানশক্তিতে টগবগ করে ফুটতো যে ছেলেটি সেই ছেলেটিই বিমানের কি এক যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিধ্বস্ত হয়ে চুপ করে গেল চিরজীবনের জন্য।

ডাইরী ঘাটছি। সেই ১৯৯৯ সালে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে আসার একদিন আগে হবে বোধহয়, ওকে ডাইরী দিয়েছিলাম, বন্ধু আমার সোনার হরফে লিখে দিয়েছিল নিচের কয়টি কথা……

“জীবন সুন্দর!
আকাশ বাতাস, নদী-সমুদ্র, সবুজ বনানি ঘেরা পাহাড় সুন্দর।
আর তার চেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা
তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়?
বিদায়ের সাহনাঈ বাজে-
নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে-
এই যে বেঁচে ছিলাম!দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়- সবাইকে
-অজানা গন্তব্যে
হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি
অজান্তেই চমকে উঠি
জীবন ফুরালো নাকি?

বন্ধু আর মাত্র ১৮ ঘন্টা…তারপর? এইমাত্র কাঁদতে দেখলাম। বন্ধু, কান্না শুরু হয়ে গেছে। বন্ধু, আমি কাঁদতে চাই না। বুঝতে চাচ্ছি না যে একটু পর একেকজন চলে যাচ্ছি—বড় কষ্ট হবে। কিন্তু এই যে বললাম, কান্না! জোর করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভাল লাগে না এসব বিদায়, বিদায় আয়োজন।আমি কাউকে বিদায় টিদায় দিতে পারব না। যাবি কোথায় তোরা আমকে ছেড়ে? ১ মাইল, ১০ মাইল, ১০০ মাইল- এই তো? পালাবি কোথায়? যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস।

আশরাফ ইবনে আহমেদ (সুমন)
১২ই জুন, ১৯৯৯।”

এই আবেগ নিয়ে সবার আগে ও নিজেই পালালো! সবার আগে তোকেই বিদায় নিতে হবে!

১,৭৩৭ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “আশরাফকে খুব মনে পড়ছে”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    🙁 আল্লাহ আশরাফ ভাইকে জান্নাতবাসী করুক


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. রাশেদ (১৯৯৩-১৯৯৯)

    শরীফ তোর লেখা দেখে আমারো লিখতে ইচ্ছা করেছ।তোর মতলিখেত অবশ্য পারি না। তবে চেষ্টা করব।কিন্তু এই ব্লগে যে কি করে লিখতে হয়, তাই বুঝতে পারিছ না। আমার কথা না হয় আমার লেখাতেই জানাব।

    জবাব দিন
  3. রেজা শাওন (০১-০৭)

    আশরাফ ভাইয়ের রি ইউনিয়নে একবার কথা হয়েছিল। সাথে ভাবীও ছিলেন।

    উনার মৃত্যুর পর ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলেছিলাম। no more pt-6( the flying death trap)...

    কিছু বলার নাই আসলে। উনি শান্তিতে থাকুক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : jobayer

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।