ভালো থাক হাসনাত……ভালো থাক দোস্ত……..

সালটা ২০০৮ এর দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের কিছু বন্ধু যাদের সাথে নিয়মিত চলাফেরা, একে একে সব পাড়ি জমালো সাত সমুদ্রের ওপাড়ে। ইফতেখার, তন্ময়, রুবাইয়্যাৎ সবাই। ইচ্ছে একটাই– আরো বেশী মানুষ হওয়া…..আরো বেশী শিক্ষিত হওয়া।

সৃষ্টিকর্তা আমাকে আর দশটা সাধারণ ছেলের মতনই তৈরী করেছেন। বোর্ড পরীক্ষা গুলোতে খুউব ভালো করলেও নিজের দৌড় প্রথম বুঝতে পারি যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে দেখি ফলাফলটা হয়েছে টেনেটুনে কোন মতে পাঁশ করার মতন। বুঝলাম ওতো বিদ্যা আমার মাথাতে নাই। তাই ওদের মতন আমিও আরো বেশী মানুষ হওয়ার সাহস করিনি। বান্ধবীগুলাও একে একে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আর এই বেলায় মেয়েদের ক্ষেত্রে যা হয়, তারা ভুলে যায় যে তাদের কিছু নিঃস্বার্থ বন্ধু ছিলো।

এ বেলায় খুব একা বোধ করছিলাম। মনে পড়লো যে আমি এমন একটা জায়গা থেকে এসেছি, যেখানে সবাই না হলেও দুই একজন অবশ্যই আছে, যাদের একটু ভালো করে ডাকলেই নিঃস্বার্থ ভাবে কাছে পাওয়া যায়। নাম গুলো জানাই ছিলো। এদের মাঝে ডাকলাম কয়জনকে। আবার এক হওয়া। আবার আড্ডাবাজি। প্রায় প্রতি বৃহঃবারই আড্ডার আসর। কখনো এস এম হলের মাঠে আড্ডা। কখনও শ্যাওড়া পাড়ার বাসায়। আবার কখনও উত্তরার এসি রুমে একসাথে মুভি দেখা আর সেই ক্যাডেট কলেজ জীবনের পুরোনো প্যাচাল। আড্ডার কয়েকজন কমন ব্যক্তির মাঝে ছিলাম আমি, ফরিদ, রেজা, হাসনাত। মাঝে মাঝে যোগ দিতো তানভীর ও বদরুল।

কিন্তু ঐ যে, কপালে এতো মজা বিধাতার সহ্য হয়না। হঠাৎ একজনের বিদেশ যাত্রা– হাসনাত। অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলো পড়তে যাওয়ার। সিটিসেল এর ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। ভাবলাম চাকরী ছেড়ে এতটা হয়তো করবেনা। হায় কপাল- চেষ্টা করল আগামী বছরের জন্য কিন্তু হয়ে গেলো এই বছরই। তাও আবার প্রেমিকা সমেত। অতঃপর তাড়াতাড়ি বিয়ে। আর ৩টা সপ্তাহের ভিতর সব আয়োজন শেষ।

হাসনাত @ বিয়ের দিনে বরের সাজে

হাসনাত ও নিপা (হাসনাতের বধূ মানে আমাদের ভাবী)

আজ ওর ফ্লাইট। ২৫ আগষ্ট, ২০১০ সকাল ৮ ঘটিকা। আমরা কেউ মেনে নিতে পারছিনা এতো তাড়াতাড়ি আমাদের আড্ডার আসরটা ভেঙ্গে যাবে। আমরা কেউ মেনে নিতে পারছিনা যে হাসনাতকে আর ডাকা মাত্রই পাওয়া যাবেনা কোন আড্ডার আসরে। আড্ডার আসর হয়ই কেনা কে জানে। মেনে নিতে পারছিনা যে আমরা আর বলতে পারবোনা- “দোস্ত, আর কতদূর?” তারপরও দোয়া করি ওরা দুজন যেনো ভালোয় ভালোয় সব শেষ করে দেশে ফিরে আসে। তখন আমরা আবার আড্ডা বসাবো। আবার ফিরে যাবো কলেজের সেই দারুণ সব সৃতির টানে।

ভালো থাক দোস্ত……..ভালো থাক….

১,৭৮০ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “ভালো থাক হাসনাত……ভালো থাক দোস্ত……..”

  1. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    ধুর মিয়া...!
    এইডা কি আর যাওয়া না কি?

    সিসিবি-র কল্যাণে... বাংলাদেশ...লেবানন...তুরষ্ক...কানাডা...আম্রিকা (ইচ্ছে করেই লিখলাম)...মালয়েশিয়া...বিদেশ...সব-ই এখন খুব কাছে!
    জয়তু সিসিবি... :salute: :salute: :thumbup: :thumbup:


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  2. তানভীর (১৯৯৫-২০০১)

    শাওন, তোর উচিত ব্যাচের প্রতিটা বিয়ের পরে এধরনের একটা করে আর্টিকেল লিখা। আজকাল বিদেশ গেলে পোলাপানের সাথে যোগাযোগ থাকে, কিন্তু বিয়ে করলে আর যোগাযোগ থাকে না। :(( :(( :((

    জবাব দিন
  3. শাওন (৯৫-০১)

    @ তানভীর,
    একদম ঠিক কথা বলছিস। একদম ঠিক। তা তোকে নিয়ে কবে লিখব দোস্ত? 😀


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  4. শাওন (৯৫-০১)

    @ সামিয়া,
    যা বলছ ভাইয়া. :dreamy: ...তাইলে হইছে....... :((


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  5. খুব ভাল লেগেছে লিখা।হাসনাত নীপা আমার দেখা versity life এর সুন্দর জুটি।তাদের নতুন জীবন সুন্দর হবার প্রত্তাশা করি।আর আমিও দোয়া করছি যেন ওরা ২জন গেছে আর কমপক্ষে ৩ জন ফিরে আসে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।