আমাদের প্যাঁচালী

(আমার এই লেখাটি ৩১ আগস্ট ২০০২ সালে প্রথম আলোর ছুটির দিনে তে প্রকাশিত হয়েছিল। কপিরাইট আমার। তাই কপি মারায় দোষ কি? ওইটাই তুলে দিলাম।)বছর দুই আগের কথা। আমি তখন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের একাদশ শ্র্রেনীর ছাত্র। সদ্য স্কুল পেরোন সহপাঠীদের মধ্যে তখন অনেকেই নব প্রেমের জোয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা কজন সেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিরপেক্ষ ভ্যেনুর নিরপেক্ষ গ্যালারীতে বসে তা দেখছি। সে সময়ে দেবাশীষ বিশ্বাসের পথের প্যাচালী আমাদের মাঝে খুব জনপ্রিয় ছিল। আরো জনপ্রিয় ছিল প্যাঁচালি মদন বানানোর প্রক্রিয়া। আমরা আমাদের উর্বর মস্তিষ্কে নব প্রযুক্তির ব্যবহার করে যে যাকে পারছি মদন বানাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে এক বৃহস্পতিবার ক্লাস আওয়ারে আমার এ সহপাঠী আরেকজনকে একই কেসে পরপর তিনবার মদন বানানোর ফলে আক্রান্ত সহপাঠী আমার কাছে সাহায্য চাইল।বন্ধুতং সাহায্যং কর্তব্যং ভেবে আমিও রাজি হই।আমরা জানতাম, আমাদের সেই সহপাঠী একটি মেয়ের প্রতি বেশ দুর্বল ছিল। মেয়েটি “নামকরা” এক কলেজের “নামকরা” এক ছাত্রী। আমার সহপাঠীসহ বেশ কজন ওই মেয়ের সাথে কোচিং করত ছুটিতে। তো আমি আমার বন্ধু মর্তুজাকে বললাম ওই মেয়ের হয়ে একটা চিঠি লিখে দিতে। সে এ ধরনের চিঠি লিখার ও পাবার ব্যাপারে একজন বাস্তব এক্সপার্ট। ওর লেখা রাফ চিঠি আমি এক জুনিয়র ছেলেকে দিয়ে (সুন্দর হস্তলিপির জন্য…অন্যকিছু ভেবেন না) সুন্দর একপ্যাডের পাতায় লিখালাম। নীল খাম জোগার হল। সব শেষে আরো ১৩জন মিলে গঠিত হল ষড়যন্ত্র কমিটি।আমাদের চিঠি আসত রেস্ট আওয়ারে ২.৩০ এর দিকে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো আমরা ১০জন ওর রুমের সামনে পাকিস্তান-ভারত ক্রিকেট বিষয়ক তর্ক শুরু করলাম। সে ভারতের চরম সাপোর্টার। তর্ক থেকে ঝগড়া আর তা হাতাহাতিতে রুপান্তরিত হবার আগেই একজন এসে ওর হাতে চিঠি ধরিয়ে দিল। এমন নীল টাইপ খাম দেখে আমরা খুবই উৎসাহিত হয়ে ওকে বাধ্য করলাম আমাদের সামনে চিঠি পড়ার জন্য। চিঠি পড়ে আমার বন্ধুর তো বেসামাল অবস্থা। তখন আমাদের একজন চিঠিটা পড়ে শোনাল। সত্যিই অসাধারন চিঠি। এরকম চিঠি পেলে যে কেউ “কাইত” হতে বাধ্য। আমাদের প্রাথমিক পর্ব সফল হওয়ার পর আমরা ওখান থেকে কেটে পড়লাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পরদিন ওর কাছ থেকে কিছু আদায় করে আসল কথাটা বলব। কিন্তু একটু পর দেখা গেল অবস্থা বেগতিক। ওর রুুমমেট এসে খবর দিল যে সে নামায পড়তে গেছে। জোহরের সাথে ১০ রাকআত শোকরানার নামায!!! বুঝলাম তার অবস্থা শোচনীয়। কারো সাথে কথা বলেনা, শুয়ে শুয়ে একটু পর পর হেসে ওঠে। বিকেলের দিকে অবস্থার আরো অবনতি ঘটল যখন সে ওই মেয়েটাকে চিঠি লিখতে বসল। পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠল যে, সবাই দাবি করল এরপর দেরী করে সত্যটা জানালে মস্তিষ্ক বিকৃতি বা আত্নহত্যা (হায়রে উর্বর মস্তিষ্ক!) কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। পূর্ব-পরিকল্পনা পরিবর্তন করে রাতে সমাপনী অনুষ্ঠান করব বলে ঠিক হল।

রাতে ডিনারের পর একটা রুমে সবাই জড় হলাম। ওকে ডেকে আনা হল। সবার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হল যে, চিঠিটা আসলে ভুয়া। কিন্তু ও বিশ্বাস করলনা। বলল, ওকে নাকি আমরা মদন বানাতে চাচ্ছি। মহাযন্ত্রনা! যতই বলি, “তুই তো মদন হয়েই আছিস। নতুন করে কি বানাব!” ততই সে বলে, “আমাকে তোরা মদন বানাতে পারবি না। এটা ওই মেয়েরই লেখা। আমি চিনি না?” আমরা তো বেকুব। আরে, এখন দেখছি ওকে মদন বানাতে এসে নিজেরাই মদন হয়ে যাচ্ছি। এরপর, সুদীর্ঘ আধা ঘন্টা ধরে বিভিন্ন সাক্ষী প্রমাণ সাপেক্ষে ওকে যখন বোঝাতে পারলাম ও “মদন” তখন ওর চেহারা দেখার মতন। আমাদের দিকে তাকিয়ে শুষ্ক (হাসি) মারতে লাগল। তারপর ওর কাছে আমি সেই চিঠিটা ফেরত চাইলাম। ও দিতে রাজি হলনা। বলল, ওটা ও যত্ন করে রেখে বাসর রাতে বউরে দেখাবে। হায়রে, মদন আর কারে কয়?

[এই কাহিনীর সকল চরিত্রই বাস্তব। এর সাথে কারো চরিত্রের কোন অমিল পাওয়া গেলে ত হবে অনতিপ্রেভ কাকতাল মাত্র]

১,৬২৯ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “আমাদের প্যাঁচালী”

  1. লেখাটি কে লিখেছেন সে সম্বন্ধে কিছুই জানা গেল না। দয়া করে মন্তব্যে আপনার নাম এবং পরিচয় দিন। এরপর থেকে আর গেস্ট ক্যাডেট হিসেবে লিখতে হবে না। সেটা আমাদের ভুল ছিল। আপনি বব ব্লগে কনট্রিবিউটর হিসেবে যোগ দিয়ে নিজ নামে লেখা শুরু করে দিন।

    এই লেখাটিও আপনার নামে যুক্ত করে দেব পরে।

    জবাব দিন
  2. প্যাঁচালী মদন নিয়ে আমাদের ও একটা কাহিনি আছে। সেসময় দেবাশীষ এর প্যাচালী মদন পরে যেটা নন্দদুলাল বা নদু হয়ে গেল বেশ জনপ্রিয় ছিল আর ক্যাডেট কলেজে এটা বানানো খুবই সোজা ছিল। একটু ব্যস্ত আছি সময় করে সেই কাহিনি লিখে ফেলব।

    জবাব দিন
  3. চরম কাহিনী।
    সেইম একটা কাহিনী আমাদের কলেজেও ঘটছিলো। আমাদের ক্লাসমেট একজনকেই অন্য দুজন মিলে মদন বানিয়েছিলো। এমন নিখুঁত করে চিঠির খাম করা হইছিলো যে দেখার মতো। এমন কি, খামের উপর ডাকটিকেটও লাগানো হয়েছিল। টিকিটের উপর সিল না থাকলে আবার সন্দেহ করতে পারে।
    তাই অন্য ইউজ্‌ড চিঠি থধেকে সিল সহ ডাকটিকিট উঠিয়ে এনে লাগানো হয়েছিলো। মজা পেলাম এটা পড়ে।

    জবাব দিন
  4. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা,

    এখানে ১০০টি ব্লগ হয়ে গেছে। "আমাদের প্যাঁচালী" ছিল ১০০তম ব্লগ। সবাইকে শুভেচ্ছা। কিন্তু, যিনি ব্লগটি লিখেছেন তাকেই এখনও শুভেচ্ছা দিতে পারলাম না। নাম-ঠিকানাই তো এখনও জানি না।

    জবাব দিন
  5. thanks zihad.

    বাহ! চামে সেঞ্চুরী কইরা ফালাইলাম!!!! তপুরে ধন্যবাদ দিমু না কারন এইটা োর দায়িত্ব ছিল ব্লগটার নাম আমারে জানানোর। কিন্তু যারা এটা তৈরী করেছে তাদের ধন্যবাদ ও একটা কইরা কোক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : অতিথি লেখক

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।