অন্তর যন্তর অথবা জাদুর শহর

অদ্ভুত জাদুগন্ধময় এক পরাবাস্তব উৎসব ছিল তার শৈশবের ঈদ।

স্কুল কমিটির ফান্ড ক্রাইসিস, বেতনের এরিয়ার আর সোনালী ব্যাংক এর চেক এর চক্কর কে আম্মা কেমন করে যেন চান রাতে বানিয়ে ফেলতেন চকচকে বাটার জুতো অথবা বাচ্চামিয়া কাপুড়িয়ার দোকান থেকে কেনা নতুন নতুন “বাশনা-আলা” শার্ট। ইব্রাহীম খাঁ এর পুটূ গল্পের মত প্রতি বছরই নিজের সন্তানতুল্য পোষা খাসি কুরবানী দিয়ে সারাদিন কাঁদতেন বড় মা।

কোন এক সোনার কাঠি রুপোর কাঠির বলে তার সাম্যবাদী বাবা আর ধর্মবাদী বড় চাচা খেতে বসতেন একসাথে ওই এক দিনই। সোলায়মান বাদ্শার মত পৃথিবীর সমস্ত আনন্দের আর বিলাসের রসদ সে কিনতে পারত দাদিমার সালামীর দেয়া বহুদিন সিন্দুকবাসী পুরনো দুই টাকার নোটে।

জাদুর প্রাণভোমরা নিয়ে স্বর্গে চলে গেছেন মর্তের জাদুকরেরা। বড় মাও চলে গেছেন গত বছর। যান্ত্রিক শহরের নিদাঘ দুপুর এ অফিস এর অসহ্য মিটিং এর “ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে চলে যাই” মুহুর্তে আর কেউ ফোন করে বলবেনা “বাবা এইবার ঈদত বাড়ি আসবু না?” গলার স্বরেই জাদুকর বুঝে যাবে জেনেও আর মিথ্যে বলতে হবে না “ছুটি বেশী নাই, ছাওয়ার স্কুলত পরীক্ষা, পরের ঈদত আসমো মা”।

ঈদের দিন গভীর রাতে তার মন খারাপ হয়ে যাবে জাদুর শহরের জন্যে, আর ফিরে না আসা জাদুকরদের জন্যে – যদি জাদু মন্ত্রবলে ফিরিয়ে আনা যেত তাদের। ঘুম না এলে তার হঠাৎ তার মনে পড়বে ঘুমপাড়ানি গল্পের ছলে আম্মার বলে যাওয়া আপাতঃ-অবাস্তব নীতিকথা “মিথ্যের মাঝে  যাদু বেচে থাকে না। অন্তর না বাজলে যন্তর বাজে না”

 

১৭ ১০ ১৪

১,২১৬ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “অন্তর যন্তর অথবা জাদুর শহর”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    ব্লগে স্বাগতম শামিম ভাই। কিছুটা মন খারাপ করা লিখা দিয়েই শুরু করলেন ব্লগ যাত্রা। আহ শৈশব। 😕 লিখা চালিয়ে যান।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।