যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ডায়েরীর পাতা: কেন লিখছি কি লিখছি

 

ডায়েরী লেখার অভ্যাস প্রথম হয় ক্যাডেট কলেজে গিয়ে। কেমন জানি একটা নিয়ম ছিল সব ক্যাডেটকে বাধ্যতামূলক ডায়েরী লেখা লাগবে। এতো তেল সব ক্যাডেটের থাকত না। দেখা যেত হাউজ ইন্সপেকশনের দিন সব গোছানো শেষে কয়েক সপ্তাহের ডায়েরী একবারে লিখে ফেলতো। আমার আবার শরীরে তেল চর্বি না থাকলেও এইসব হাবিজাবি কাজে ভালই তেল ছিল। ক্লাস এইট থেকে মোটামুটি নিয়মিত ডায়েরী লিখছি। এমনো হইছে দুইটা ডায়েরী লেখা হইছে। একটা ইন্সপেকশনের জন্যে আরেকটা নিজের জন্যে। বললাম না, তেলের অভাব ছিল না। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আরো অনেক ভাল অভ্যাসের মত এইটা বন্ধ হয়ে গেল। এরপর থেকে অনেকবারই ঠিক করছি ডায়েরী লিখবো। কিন্তু কোনবারই লিখা হয় নাই বিভিন্ন কারনে। যেমন অনেকবার ব্লগে নিয়মিত লেখা শুরু করব করব করেও করা হয় নাই।

বলা হয় যে পৃথিবীর তাবৎ ভাল আর উদ্ভট সব আইডিয়া আসছে যখন মানুষ টয়লেটে ছিল কিংবা ঘুমানোর জন্যে শুয়ে ছিল। আমারো তেমন লাইট বাল্ব মোমেন্ট  নিয়মিত আসে ঘুমানোর সময়। তেমনই একটা হলো ব্লগে কেন ডায়েরী লিখা শুরু করছি না? ব্লগের মত খুব ফরমালি লিখা লাগবে না। আবার নিজের চিন্তাভাবনা গুলাও এক জায়গায় থাকবে। দ্বিতীয়টার জন্যেই বিশেষ করে। একটা মানুষের চিন্তাভাবনা কিভাবে ডেভেলপ করছে তার ট্র্যাক রাখার জন্যে ডায়েরীর জুড়ি নেই। এইটা বুঝতে পারি যখন জানতে পারি কলেজের ক্লাস নাইন বা টেনে লিখা একটা ডায়েরী আমি কলেজে ফেলে আসছি ভুলে। কলেজ থেকে বের হবার দুই বছর পরে এক ওভারঅলে গিয়ে শুনি ওই ডায়েরী নাকি তৎকালীন ক্লাস নাইনের একটা হাউজে অবশ্যপাঠ্য হয়ে গেছে। সেটা নাকি  একজন ক্যাডেটের জীবনের পারফেক্ট রিফ্লেকশন। কি লিখছিলাম কিছুই মনে নাই। যতদূর মনে পরে আমি ডেইলি লাইফ রুটিন টাইপ ডায়েরী লিখতাম না। আবার খুব পারসোনাল কথাবার্তাও লিখতাম না। ডায়েরীটা ফেরত চাইলে ওরা খুবই রিকুয়েস্ট করে রেখে দেয়ার জন্যে। কারন কয়েকজন নাকি তখনও পড়ে নাই!!! বলে যে ভ্যাকেশনে এসে রাফের কাছে দিয়ে যাবে। পরে কি মনে করে যেন আর নেই নাই। রাফের কাছে দিয়েও যায় নাই ভ্যাকেশনে। রাফে আমাকে বলছে নিয়ে নিজে পড়বে তারপর আমার কাছে পাঠাবো। খুব সম্ভবত কাজের চাপে ভুলে গেছে। ভুলে গেছিস? আমি জানি পড়তেছিস তুই এটা।

অনেক বেশী আমি আমি করতেছি মনে হয়। কিন্তু ডায়েরীতো নিজের চিন্তাভাবনা। আমি আমি একটু এসেই পরবে। বাস্তব জীবনে যতদূর পারি চেষ্টা করি নার্সিসিস্ট চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা থেকে দূরে থাকার। এইখানে জানি না কতদূর পারবো। তাই বেশী আমি আমি হয়ে গেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই আশা করি। বানান ভুল হচ্ছে মনে হয়, সেগুলা ধরায়ে দিলে খুশী হবো। আমি খুবই ক্যাজুয়াল স্টাইলে লিখব এবং লিখছি। যার কারনে অনেক ইংরেজী শব্দ আসতেছে। যতদূর পারি চেষ্টা করছি ইংরেজী শব্দ না লিখার। কিন্তু অনেক দিনের বাংলা লিখার অভ্যাসের অনুপস্থিতির কারনে সেটা আমার জন্যে খুব কঠিন হচ্ছে। এটাও এই লেখা শুরু করার একটা কারন, ভুলে যেতে বসা নিজের ভাষাটার সৌন্দর্য অন্বেষণ করা। আমি খুব সাহিত্যিক গদ্য ধরনের কিছু লিখবো না। তাই অমন কিছুর আশায় পড়ে আশাহত হলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রশ্ন আসতে পারে ফেসবুকে কেন লিখছি না, ওইটায় বেশী অডিয়েন্স পাবে আর মানুষ বেশী একটিভও থাকে। আসলে কি ফেসবুকের উপর একটা কেমন যেন বিতৃষ্ণা চলে আসছে অনেকদিন থেকে। কি কি কারনে আসছে সেটা নিয়ে একদিন লিখবো অবশ্যই তবে একটা কারন এখন বলি ফেসবুকের মত ডাম্ব আর নার্সিসিস্ট অডিয়েন্সের প্লাটফর্মে পারসোনাল চিন্তাভাবনা লিখা আমার কাছে বোকামী মনে হয়। যেখানে যৌক্তিক সমালোচনার আশা করাটা অনেকটা ছাগলের কাছে চিত্র সমালোচনা চাওয়ার মত, যাই দেখানো হোক একই “ম্যা” রিএকশন দিবে। কিন্তু খাবার দেখালে দৌড়ায়ে আসবে, এই ক্ষেত্রে মেয়েদের ছবি কিংবা মুসলিম ভাইয়ের জন্যে কয়টি লাইক জাতীয় পোস্ট।

অনেক গ্যাজ দিলাম যাতে নিন্দুকরা সমালোচনা করতে আসলে তাতে পানি ঢেলে দিতে পারি। আশা করি এতে কেউ দমে না গিয়ে ভুলত্রুটি ধরায়ে দিবেন। এবং খুব দ্রুত যেন পরের ব্লগটি লিখি তার জন্যে দোয়া করবেন। দেখা হবে শীঘ্রই। লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করে সাথে থাকুন। এক শেয়ার = এক “ব্লগের জগৎ নতুন নক্ষত্রের আগমন”, এক কমেন্ট = এক নতুন লেখার প্রেরণা।

৪,৮১৮ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ডায়েরীর পাতা: কেন লিখছি কি লিখছি”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভূমিকা ভাল হয়েছে।
    ব্লগ কে পড়লো, কে পড়লো না - এটা ভেবে বসে না থেকে নিশ্চিন্তে লিখে যাও মনের কথা, মনের আনন্দে।
    যার দরকার, সে ঠিকই পড়ে নেবে।
    মনে রাখবা শত শত উলটে দেখা পাঠকের চেয়ে একজন সিরিয়াস পাঠক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
    ফেসবুকে লিখা নিয়ে তোমার সাথে সম্পুর্ন একমত।
    ওখানে লিখা আর উলুবনে মুক্ত ছড়ানো প্রায় কাছাকাছি ব্যাপার।
    আরো বেশি যেটা দুঃখজনক, তা হলো, কোন আনরিলেটেড করনে যখন কেউ ফেবু ছেড়ে যায়, তার যাবতিয় লিখালিখি তাকেসহ তার সব পাঠকের নাগালের বাইরে চলে যায়।
    এটা ঘোর অনাচার লেখক ও পাঠক উভয়েরর জন্যই।
    কি, ঠিক না? (সম্পাদিত)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এইবার একটু আড্ডা হোক...

    এক ব্লগেস্ফেয়ারে এক ব্লগারের লিখা এক পাঠকের পছন্দ হয়ে গেল।
    সে তা পড়ে, কমেন্ট করে, উত্তর পায় - এভাবে চলতে চলতেই একসময়ে ফেবু ফ্রেন্ড লিস্টেও অন্তর্ভুক্তি হয় দুজনার...
    কি এক কারনে ব্লগার একসময় ব্লগে লিখালিখি কমিয়ে দিলেও ফেবু পোস্টিং চালিয়ে যাচ্ছিল।
    পাঠক দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেই ওগুলো পড়ে আর লাইক-কমেন্ট করে চালিয়ে যায়।
    এরমধ্যে আবার কি একটা ঘটে যে জন্য একদিন লেখক ঐ পাঠককে দেয় ফেসবুকে ব্লক করে।
    পাঠকের আর কোনো উপায় থাকে না প্রিয় লেখকের নতুন কোনো লিখা পড়ার...
    অগত্যা, কি আর করার, পাঠক ব্লগে ফিরে লেখকের পুরানা লিখাগুলাই বের করে করে ঘুরে ফিরে পড়ে। এবার আর দুধের স্বাদ ঘোলে না হলেও, বাসি দৈ-এ মেটায় আর কি।
    ততদিনে লেখক ব্লগ থেকে পুরোই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
    তাই পুরানা লিখা পড়েই পাঠকের দিন কাটতে থাকে।
    হঠাৎ একদিন পাঠক আবিষ্কার করেন, লেখক তাকে আনব্লক করেছেন, তবে সে আর তাঁর ফ্রেন্ড লিস্টে নাই।
    প্রিয় লেখকের পাবলিক পোস্ট তিনি কেবল পড়তে পারেন, লাইক/কমেন্ট করতে পারেন না।
    আর ফ্রেন্ডস অনলি গুলোতে যদি কোনো মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ট্যাগড থাকেন, সেগুলা পড়তে শুধু না, লাইক/কমেন্টও করতে পারেন।
    কিন্তু ততদিনে পাঠকেরও মনে ভয় ভর করে।
    সে ওগুলো লাইক/কমেন্ট করতে পারলেও আর তা করে না, পাছে আবার ব্লক খেতে হয়।
    সে ভাবে, "হোক না অল্প-স্বল্প লিখা, তবুও যে পড়া যাচ্ছে - সেটাই বা মন্দ কি? আবার ব্লক খেলে সেটাও তো আর পড়া যাবে না, তাই না?"
    দুধের স্বাদ রেস্ট্রিকটেড দৈ দিয়ে মিটিয়ে এভাবে কাটে আরও কিছু দিন...
    এরপর একদিন হঠাৎ দেখা যায় লেখক তাঁর ফেবু একাউন্ট ডি-এক্টিভ করে গায়েব হয়ে যায় কোথায় যেন!!!
    সাথে গায়েব হয়ে যায় ওখানে পোস্ট করা তাঁর যাবতিয় লিখালিখিগুলা......

    পাঠক আবার ফিরে যায় ব্লগে থাকা পুরনো লিখা পাঠের অভ্যাসে।

    গল্পটা বলার উদ্দেশ্য, ব্লগের জয়গান করা।
    ফেবু-তে ব্লক করে, ডি-এক্টিভেট করে পাঠকের জন্য নানা প্রতিকুলতা তৈরী করা সম্ভব।
    সে তুলনায় ব্লগ অনেক বেশি পাঠক বান্ধব.........
    কী, ঠিক না???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করে সাথে থাকুন। এক শেয়ার = এক “ব্লগের জগৎ নতুন নক্ষত্রের আগমন”, এক কমেন্ট = এক নতুন লেখার প্রেরণা।

    ভালো ছিলো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    লেখার জন্য লেখা মানেই লেখার ভাবনায় সন্তরণ। লেখার উৎকর্ষ সাধন।
    আর হ্যা মানুষ মাত্রেই নার্সিসিস্ট। ইনসেইন না হলে এ তালিকার বাইরে কেউ যাবে না। গেলে সেটা ভান। তবে কথা হলো সভ্য সমাজে সামাজিক ভব্যতা বজায় রাখতে সবাই সমান পারঙ্গম নয়। আর ফেবুতে লেভেল অফ ইন্টারাকশানের বদৌলতে তা সহজেই এক্সপোজড। বাংলায় বললে মিথস্ক্রিয়ার স্তরটি খুব সহজেই ব্যাপারটাকে নাঙা করে দ্যায়।
    সত্যিকারের মিনোভাবটা কিন্তু আমরা সচরাচর উন্মোচিত কিরিনা। যা করি তা হলো সুগার কোটেড ফ্লার্টিং ওয়ার্ডস। মিষ্টি মোড়কে মোড়ানো তঞ্চক কথকতা।
    এ ফোরামে কিঞ্চিৎ অন্যথা হয়। এর বেশী কিছু নয়।
    এর মধ্যেই পাঠক প্রতিক্রিয়া তুলে নিতে হবে আপন মূল্যায়ন বিচার-ভাবনাকে।
    সারমর্ম হইলো গিয়া এই যে, লিখিবার জাগিলে সাধ লিখে যাও অগাধ। গতি তার আপনাতেই পৌঁছে দেবে আপন গন্তব্যে।
    হ্যাপি ব্লগিং। চিয়ার্স !

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।