ক্যাডেট কলেজের চিঠি

প্রিয় দেবী,

প্রথমেই বলি তুই তুই করে লিখতে পারবো না। মনে হয় পাশের বেডের মুকতাসিদের সাথে ঝগড়া করে চিঠি পাস করছি। কেমন আছো তুমি? যেমনই থাক, এই চিঠি পড়ার পর খুব ভাল থাকবা। ধরে নিচ্ছি স্যার পড়ার আগেই হাউজ বেয়ারাকে ম্যানেজ করে চিঠি নিয়ে এসেছো।

তোমার চিঠি পেলাম দুইদিন হলো। আচ্ছা তোমরা কি কলেজে মোবাইল নিবা না? আর কতদিন বাংলা রচনায় পড়বে প্রযুক্তির ব্যাবহার। এবার একটু বাস্তব প্রয়োগ করো না। যাই হোক, মোবাইল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মনে আসলো আতিফ মোবাইল নিয়ে ধরা খাইছে। হ্যা, আবার। ও কে বলা হইছে ব্যাপার না, জীবনে এমন সময় আসতেই থাকবে। কিন্তু হাউজের ডিসিপ্লিনের খাতায় এই সপ্তাহে বাঁশ দিয়ে দিছে। যদিও তাতে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো থার্ড টার্ম ফার্স্ট ফেজেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। তোমরা কি এবারো থার্ড হচ্ছো? কীভাবে পারো বলো তো? নাজিয়াকে বইলো কলেজ গেমস প্রিফেক্ট হিসেবে ইন্টার গার্লজ ক্যাডেট কলেজ স্পোর্টস মিটে তোমাদের কলেজ থার্ড হওয়ায় ওকে আমি অভিনন্দন জানাইছি। আমরা তো আইসিসি ফুটবলে রানার আপ হইছি শুনছই তবে আমাদেরটা কিন্তু নয় কলেজের মধ্যে। ধ্রুব সব ম্যাচে প্রথম গোলটা করছিল। কিন্তু ফাইনালে দিতে পারে নাই বরং একটা মিস করে আসছে। দুঃখের কথা বললে তো শেষ হবে না। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সাথে ফাইনালটা দেখে রুমে এসে কাঁদছি। তুমিও নিশ্চয়ই মন খারাপ করে ছিলা? তবে আমি বললাম দেইখো বাংলাদেশ এই পাকিস্তান কে হারায়েই ওয়ার্ল্ডকাপ জিতবে একসময়। ও মজার কথা তো বলা হয় নাই। আহমেদের গার্লফ্রেন্ড ওকে একটা গোলাপ ফুল দিছিল ভ্যাকেশনে। ও ডায়েরীর মধ্যে রেখে প্রতিদিন পাপড়ি গুলার গন্ধ নেয়। সেদিন তানভীর বলতেছিল ও শুকে দেখছে ডায়েরীটা। গোলাপের গন্ধ পায় নাই। আহমেদের নাকের গন্ধ পাইছে। তবে আহমেদের নাকের গন্ধ কেমন ও কিভাবে জানে এইটার উত্তর দিতে পারে নাই।

আমরা সেদিন রাতে কলেজের বাইরে গেছিলাম। হাউজে গ্রীল দেয়ার পর লাস্ট ৩ বছর কেউ বের হইতে পারে নাই। কলেজের বাইরে থেকে ঘুরে এসে পোলাপানের কাছে কম এডভ্যাঞ্চার হইছে মনে হওয়ায় তারা কলেজ ঘুরতে বের হয়। এবং এক পর্যায়ে আবিষ্কার করে নাজমুল হারায়ে গেছে। সে আরেক ব্যাপক কাহিনী। সামনাসামনি কথা হলে বলবো। আমার রুমমেট মুকতাসিদটার উপর এর জন্যে খুব মেজাজ খারাপ। সে ফার্মের মুরগী ভয় পায় তাই আমারে যাইতে দেয় নাই। ও এখনো প্রতিদিন নিয়ম করে লাঞ্চের সময় আনিসের সাথে ঝগড়া করে এসে মন খারাপ করে ঘুমায়ে পরে। লাস্ট শুক্রবারে ওর রাতে সকালে এবং দুপুরে তিনবার বেড কভার চ্যাঞ্জ করা লাগছে। কেন লাগছে বলে দিব না। আর হ্যা ডিভিডি তে আমরা “পচা” কিছু দেখি নাই।

ইশরাক একটা কলেজ রেকর্ড করছে। জোড় করে ইডি খেয়ে। কিভাবে পারে? তাই না? আমাদের হাউজে নতুন করে আবার রুম ক্রিকেটের উকুন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। সেদিন খেলতেছিলাম আমার রুমে, রাত মে বি ৩ টা। ওইসময় নীচের রুমের ইয়াসীন এসে থ্রেট দিয়ে গেছে আমাদের একটারেও আর ঘুমাইতে দিবে না। আমরা ভয়ে হেসে দিছি। ওইদিনই প্রথম লাইটস অফের পর ওকে সজাগ দেখছি। আমরা যখন ক্রিকেট খেলি শিব্বিরও আমাদের সাথে থাকে। করিডরে চেয়ারটেবিল নিয়ে পড়ে। স্যাররা আসলে ওয়ার্নিং দেয়। ওরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। রাফে তানভীরকে খুব পচাচ্ছি এই কয়দিন চেলসি নিয়ে, লীগে ওরা সিক্সথ। কিন্তু মনে মনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিয়া টেনশনও কম হয় না। যেবার ফার্গুসন যাবে আমরা শেষ। ওইদিন রাফে কে এডজুট্যান্ট ডাকছিল। কারন আমরা সেদিন গেমসের পর বৃষ্টির মধ্যে কলেজের কন্ট্রাক্ট দেয়া গাছের ১০০ টার মত কাঁঠাল খেয়ে ফেলছি। বিশ্বাস হচ্ছে না? কাঠালের ব্যাপারী যে ছিল ওকে জিজ্ঞাসা করে দেইখো।

অনেকতো আমার কথা বললাম। তোমার কথা শুনবো। তোমাদের কলেজে কি হচ্ছে জানাইয়ো। আমাদের মত মজা করতে ট্রাই করো। না পারলে মন খারাপ কইরো না। এটাই স্বাভাবিক। অনুপমা কেমন আছে? ওকে বলবা নিজে বেশী খাইতে তোমাকেও খাওয়াইতে। নিহার আঁকা একটা কার্টুন দেখলাম সেদিন কম্পিউটার ক্লাশে, ফেসবুকে। বইলো সুন্দর হইছে। তোমাদের কলেজের একটা ম্যাগাজিন আসছে আমাদের কলেজে। ওইখানে তোমার কোন ছবি নাই শুনে আর দেখি নাই। তবে অনুপমার ছবি অনেকেই বাগানোর চেষ্টা করতেছে দেখলাম। আমাদের কলেজের ম্যাগাজিনে আমার লিখা গল্পটা দেখে তোমাদের অনেক দেহে এবং মনে আলোড়নের সঞ্চার হইছে শুনে ভালো লাগছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে গল্পে তেমন আলোড়নের উপাদান দিতে পারি নাই ভাবছিলাম।

অনেক লিখে ফেলছি। আর তুমি কিনা বলো আমি কম লিখি। ঘুমাইতে যাই এখন। কালকে পিটি আছে। সকালে উঠায়ে দেয়ার জন্যে তো আর তুমি থাকবা না। ভাল থাইকো। তোমার প্যারেন্টসডে তে কল দিব আমি। তখন কথা হবে। যাই তাইলে? টাটা, বাইবাই।

  ইতি,

                                                                                                                                                                                                       তোমার দীপ

 

 

 

[বি.দ্র. ১: উপরোক্ত চিঠির সকল চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবের কোন মানুষের সাথে নামের কিংবা কাজের মিল পেলে এর সম্পুর্ন দোষ যিনি মিল খুঁজবেন তার। লেখকের দিকে কোনো প্রকার ইট ছোঁড়ার চেষ্টাকে যথোপযুক্ত পাটকেলের সহিত মোকাবিলা করা হবে।

বি.দ্র. ২: এই চিঠির সময়কাল ধরা হইছে ২০১১ এর মাঝামাঝি একটা সময়কে

বি.দ্র. ৩: বাস্তবে এমন কোন চিঠি লিখা হয় নি। ]

৩,৬৯৯ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কলেজের চিঠি”

  1. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)
    তোমার চিঠি পেলাম দুইদিন হলো। আচ্ছা তোমরা কি কলেজে মোবাইল নিবা না? আর কতদিন বাংলা রচনায় পড়বে প্রযুক্তির ব্যাবহার।

    অনেক কথা মনে পড়ে গেল। কারেন্ট এফেয়ার্স ডিসপ্লে এর জন্য সকল তথ্য সগ্রহ করতাম দুই তিন মাস পুরানো টাইম ম্যাগাজিন থেকে।
    উপস্থিত বক্তৃতায় প্রযুক্তির ব্যবহার বলে বলে ফাটায়ে দিতাম, অথচ অইদিকে প্রযুক্তির নাম গন্ধও নাই।

    লেখা ভালু হইসে, প্লাস প্লাস। 🙂


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
    • শাহরিয়ার (০৬-১২)

      আমরা সব রিয়েল টাইম ইনফোরমেশনই ইউজ করতে পারতাম ইন্টারনেটের সুবাদে। তাও মাঝে মাঝে এক কম্পিউটারে তিন হাউজ ইউজ করা লাগতো নেট। আর স্পিডের যেই ছিড়ি। আর কোন ফেসবুক পাগল স্যার আসলে তো কথাই নাই। ওইদিন আর কোন হাউজই পারতো না। যাই হোক ধন্যবাদ 🙂


      • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

      জবাব দিন
  2. তানভীর (২০০৬-২০১২)
    সেদিন তানভীর বলতেছিল ও শুকে দেখছে ডায়েরীটা। গোলাপের গন্ধ পায় নাই। আহমেদের নাকের গন্ধ পাইছে। তবে আহমেদের নাকের গন্ধ কেমন ও কিভাবে জানে এইটার উত্তর দিতে পারে নাই।

    মনে মনে যথোপযুক্ত খিস্তিসমূহের পৌনঃপুনিক প্রয়োগসাপেক্ষে বলছি, উক্ত "তানভীর"কে আমি ইহজিন্দেগীতে দেখি নাই, এর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই।

    তবে, হ্যাঁ, বাকি সমস্ত কিছুই বেশ জীবন্ত লাগছে। :clap: (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভাল লেগেছে।
    অনেক কিছুই দেখছি এতটুকুও বদলায় নাই...
    😛 😛 😛
    অথচ মাঝখানে কেটে গেছে কুড়ি কুড়ি বছর!!!

    ব্লগের মজাই কিন্তু এটা। একটা লিখা ভাল লাগলে, অন্যগুলা খুলে দেখতে ইচ্ছা হয়।
    আর তা দেখাও খুব সহজ।
    তাই না???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শাহরিয়ার (২০০৬-২০১২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।