স্মৃতি ভান্ডার-১

কলেজের অ্যানুয়াল এথলেটিক্স। কি পরিমান উত্তেজনা বিরাজ করে তা বোধহয় লিখে বলা যাবে না। তো ঐ সময়ের একটা ঘটনা প্রায়ই মনে উকি দেয়। ২০০০ সাল, আমরা তখন ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে। আমি খুবই উত্তেজিত, কারন অবশেষে একটা সময় আসছে যেখানে বেশ ভাল একটা ঝলক দেখানো যাবে। কিন্তু বিপত্তি ছিল শামসকে নিয়ে। ওকে হারিয়ে একা একা বেস্ট এথলেট হবার কোন পথই নাই। তো, অগত্তা সমঝোতা। আমাদের ইভেন্ট আলাদা করে নিলাম।

শামস- ১০০, ২০০ মি এবং হপস্টেপ , আমি- ৪০০ মি, লং জাম্প আর জ্যাভলিন।

সেবার আমাদের ইভেন্টগুলোতে আমাদের টক্কর দেবার মত কেউ নাই, তাই অনায়েসেই যে যার ইভেন্টএ ১ম।খুব আশা করে আছি যে এবার একটা ক্রেস্ট আর কে ঠেকায়। কারন সাধারনত ৩ ইভেন্টে ১ম হলে শিউর ধরে নেয়া যায় যে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিপত্তি বাধলো সিনিয়র গ্রুপে্। কেউই নাই যে ৩ ইভেন্টেই ১ম। তারপর আবার একই পয়েন্টে ৪ জন। এখন ৪ জনকে তো আর প্রাইজ দেয়া যায় না। অথরিটি ঠিক করলো এইটার মিমাংসা হবে রীলে দিয়ে। মেজাজটা সরইরকম খারাপ হয়ে গেল। কারন ১০০ মি রীলে জিতছে গোমতি আর ৪০০ মি তিতাস। আমরা মেঘনা দুইটাতেই ২য়, যার কোন খানা নাই।

তারপরও শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম যদি সিদ্ধান্ত চেন্জ হয়, কিন্তু তা আর হবার ছিল না।

প্রাইজ দেবার পর হাউসে আসলাম। রেলিঙএ উদাস মনে বসে আছি। মনে মনে রাগ দু:খ কুরে কুরে খাচ্ছে। রাগের চোটে শেষমেষ সব সার্টিফিকেট ছিড়ে টুকটুকরো করে ফেলে দিলাম তিন তলা থেকে, মেডেলগুলো ছুড়ে ফেলে দিলাম দুরে। বসে থাকলাম প্রায় ১ ঘন্টা। সময় সবথেকে বড় মলম। ১ ঘন্টা পরে আবার খারাপ লাগা শুরু হল। কেন ঐগুলা ফেলে দিলাম। কষ্ট করেই তো পেয়েছি। আস্তে আস্তে চলে গেলাম নিচে, কেউ যেন না দেখে। মেডেল তিনটাই পড়ছিল যেয়ে ড্রেনে। তুলে আনলাম। ধুইলাম আর সযত্নে রেখে দিলাম। সার্টিফিকেট গুলা তো আর পাওয়া যাবে না।

এখনও বাসায় মেডেলগুলো দেখলে ঐদিনের আমার চেহারার কথা মনে পড়ে। কি সব দিনই না পার করছি।

১,০৩৯ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “স্মৃতি ভান্ডার-১”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    ১ম ! :tuski:
    আহ ! এথলেটিক্স ! কত কাহিনী মনে পরে গেল ! মির্জাপুরে এথলেটিক্স নিয়ে বলতে গেলে যুদ্ধ হয় ! বেস্ট এথলেট রা তো পুরাই সুপারহিরো স্টাইলের মর্যাদা পায়... এ নিয়ে অনেক গোপন পলিটিক্স ও হয়.. একবার তো এক ক্যাডেট কে ডায়নিং হলে খাবারের সাথে মিশিয়ে জামাল গোটা পর্যন্ত খাইয়ে দেওয়া হয়.. পরদিন ওই ক্যাডেট ইভেন্ট টিভেন্ট রেখে সারাদিন বাথরুমেই পরে ছিল.. :khekz:
    যাই হোক , এই ব্যাপারটা নিয়ে পরে সবাই অনেক অনুতপ্ত বোধ করেছে। একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল কাজটা।

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    :clap: ভাল্লাগছে।
    ক্রেস্ট মেডেল পাওয়ার মত কিছুই করতে পারি নাই কখনো। ক্লাস টুয়েলভে ভলিবল খেলায় একটা মেডেলই আমার কলেজের সব চেয়ে বড় অর্জন।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    উফ ভাই কি মনে করায় দিলেন। জীবনে ৫ম-৬ষ্ঠ এর উপরে উঠতে পারি নাই এ্যাথলেটিক্স গ্রাউন্ডে কিন্তু ট্র্যাকে যে একবার দৌড়াইসে সে জানে ইহার মর্ম কি! 🙂

    লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ! 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।