কথা

#
“স্যার, বাইরে একজন মহিলা বসে আছেন। উনাকে কি ভেতরে আসতে বলব?” এই নিয়ে তিনবার তার বস, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহিদুল হাসানকে বলল । প্রায় দুই ঘণ্টা হয় প্রৌঢ়া মহিলাটি বসে আছেন। বস জাহিদুল হাসান ভাল মনের একজন মানুষ । গতানুগতিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের মত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউকে বসিয়ে রেখে নিজের পদের ভার বুঝানোর চেষ্টা করেন না। আজকে বসের রুমে কেউ নেই তারপরেও বস কেন যে মহিলাকে ভেতরে ডাকছেন না কে জানে। “পনের মিনিট পরে তাকে নিয়ে এস।” যাক তাও তো আনতে বলেছেন। বসের রুম থেকে বের হয় রফিক।
-এই যে খালাম্মা স্যার আর পনের মিনিট পর আপনাকে ভেতরে নিয়ে যেতে বলেছেন। আপনি আরও একটু বসেন।
-কি বল বাবা! আরও পনের মিনিট? তোমার স্যার কি খুব ব্যস্ত?
ছোট্ট মিথ্যাটা রফিকের গলা দিয়ে বের হয় না।“না স্যার ব্যস্ত না। এমনিতে স্যার কাউকে এভাবে ওয়েট করায় না। কিন্তু আজ মনে হয় কোন টেনশনে আছেন।”
-আমি জানি বাবা সে টেনশনে আছে। -আপন মনেই বলে উঠে মহিলা। সে কীভাবে জানে কিসের টেনশন এসব জানার কোন আগ্রহ রফিকের হয়না কেন জানি।
#
একটু আগে রফিক এসে তাকে খবর দিয়ে গেছে এক মহিলা তার সাথে দেখা করতে চায়। মহিলার নামটা দেখেই জাহিদুল হাসান সাহেবের অনেক কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠে। ঠিক চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জামালপুরের এহসানাউল্লাহ লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার টিন-শেড ঘরগুলো। শৈশব কিভাবে গেছে মনে নেই। বড় হয়ে দেখেছেন ছোট ছোট নতুন বাচ্চাগুলো অনেক কান্নাকাটি করে। দেখাশোনা করার আয়াগুলো তখন তাদের মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। বড় হুজুর শুনলে সমস্যা আছে। ছুটে এসে কাঁদতে থাকা বাচ্চার পাছায় নির্দয় ভাবে কয়েকটা চপেটাঘাত করেন। বাচ্চাটা আরও জোরে কেঁদে উঠে। তখন বড় হুজুর আরও জোরে মারেন। মারতেই থাকেন। একসময় অবুঝ শিশু বুঝে যায় কাঁদলে আরও মার খেতে হবে। থেমে যায়। এভাবেই হয়তো নিজের শৈশব কেটে গেছে ভাবেন জাহিদুল হাসান। আরও একটু বড় হলে দেখেন লিল্লাহ বোর্ডিংএ থাকা মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখতে তাদের বাবারা আসেন। সেখান থেকে তার খেয়াল হয় তার বাবা-মা কে কোথায় তারা?জানা হয়নি। দিনে দিনে মাথার মধ্যে কুরতে থাকে এই প্রশ্ন। কেউ না কেউ তো জানে। কয়েকদিনের মধ্যে এই প্রশ্নটাই যেন জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। কে জানে? কে জানতে পারে। বড় হুজুর। তিনি তো এখানকার সর্বেসর্বা। তিনি অবশ্যই জানেন। সাহস করে জিজ্ঞেস করে বসে বড় হুজুরকে বালক জাহিদুল হাসান। ফলাফল শখানেক বেতের বাড়ি আর কয়েকটা কথা এখনো কানে বাজে “কোথাকার সিলানের পোলা আইছে বাপ-মা’র খবর নিতে”- বালক জাহিদুল হাসান কথাটার মানে বুঝে নি। কিন্তু এটুকু বুঝেছিল তার মা’কে নিয়ে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করা হয়েছে।বেতের আঘাত না যতটা শরীরে লেগেছিল তার চেয়ে বেশী মনে লেগেছিল এই কথা। বাব-মা কে নিয়ে কেউ কোন খারাপ কথা বললে খুব কষ্ট হয় সেদিন সাত বছরের বালক জাহিদুল হাসান উপলব্ধি করেন। রাতে জ্বর আসে তার। করিমন খালা তার মাথার কাছে বসে থাকে। “ক্যান এই কথা জিগাইছিলি হুজুর সাব রে?”
-খুব জানতে মন চায় খালা।
-জানলে কি করবি?
-কিছু না। হুজুর সাহেব তো শিখাইছেন “রব্বীর হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সাগীরা” বলে দোয়া করতে। সেই লোকগুলা কারা জানতে ইচ্ছা করে।
-মা’র কাছে যাবি?
-যদি থাকতো তাইলে যাইতাম।
তারপর করিমন খালা যা শুনায় তা না শুনলেই হয়ত ভাল ছিল। অথবা শুনার পরে যা করেছিল বালক জাহিদুল শুধু সেই অংশটুকু ভুল ছিল। সাত বছর আগে করিমন বাড়ির রাস্তা ধরে যাচ্ছিল এতিমখানার রাতের খাবার রান্না করে দিয়ে। দেখে এক প্রৌঢ়া ডাস্টবিনে কি যেন ফেলে দিল। কাছে যেয়ে করিমন সদ্য নাড়ীকাটা এক নবজাতককে আবিষ্কার করে। করিমন বাচ্চাটা কোলে নিয়ে কিছু দূর এগিয়ে যাওয়া প্রৌঢ়ার পেছন পেছন যায়। রাস্তার ডান পাশে দুই তিনটা গলির প্যাঁচ পেরিয়ে একটা টিনের বাড়িতে ঢুকে মহিলা। “যা করছ।হুহ তোমার হুঁশ বুদ্ধু সামলাইতে পার নাই? এইজন্যে আমগোর এই অবস্থা।” কাউকে শাসাচ্ছেন মহিলা। “একবার তো বাচ্চাটা কে দেখতে দিতা” শোনা যায় এক যুবতীর গলা। “থাউক আর দেখনের কাম নাই। মায়া পইড়া যাইত।” ওই রাতে এটুকু শুনে করিমনের বুঝতে অসুবিধা হয় না বাচ্চাটা এদের আর এরা ইচ্ছাকৃতই বাচ্চাটা থেকে মুক্তি চায়। বাচ্চাটাকে এতিমখানায় দিয়ে আসে করিমন। কিন্তু তার অনুসন্ধানী মন কিছুদিনেই বের করে ফেলে শেখ শরফুদ্দিনের মেজ কন্যার গল্প। প্রেমিক তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে নিজের চিহ্ন। সেটা থেকেই মেয়েকে লোকচক্ষুর আড়ালে মুক্ত করল মেয়ের বুদ্ধিমতী ফুফু। এটুকুই জানে করিমন। আর জানে শেখ শরফুদ্দিনের বাড়ির ঠিকানা। অসুস্থ জাহিদুল হাসানকে শান্ত করতে সেটাও বলা হয়ে যায়।
শেখ শরফুদ্দিনের বাড়ির গেটে সুন্দর করে “শুভ বিবাহ” লিখা তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। জাহিদুল হাসান বাড়ির ভেতরে যায়। কেউ তাকে ডেকে উঠে “এই পিচ্চি, যা পানিটা অঈ কোনার টেবিলে দিয়া আয়।” কিছু না বলে পানি দিতে চলে যায় জাহিদুল হাসান। মা’কে দেখতে এসেছে যে। কিন্তু এখানে বিয়ে হচ্ছে। কিছু বুঝতে পারে না জাহিদুল হাসান। কোনার টেবিলের দিকে পানির জগ নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
“দিনার বিয়েটা ওই যে সেই ছেলেটার সাথেই হচ্ছে না?”
“হ্যাঁ, সাত বছর আগে মালয়েশিয়া চলে গিয়েছিল। এখন এসে আবার দীনাকেই বিয়ে করতে চায়।”
“এই পিচ্চি দাঁড়ায় দাঁড়ায় কি শুনিস?যা ভাগ।” পানি রেখে চলে আসে জাহিদুল হাসান। এই দীনাটা যে তার মা আর সে বুঝতে পারে যদিও তার বাবা কে সেটা বুঝতে তাকে আরও একটু বড় হতে হয়েছিল। জাহিদুল হাসান যখন দিনার মুখোমুখি হয় তখন সে তার মার মুখে দেখছিল মুগ্ধতা। সেই একটি মাত্র ভাল জিনিস যা জাহিদুল হাসান তার মা’র সম্পর্কে মনে রেখেছেন আজো। দীনা তার সন্তানকে কাছে পাবার পর কিন্তু বুকে টেনে নেয় নি মমতায়। ডেকে এনেছিল তার পরম বিশ্বাসভাজন সেই ফুফুকে। ফুফুর অনেক বুদ্ধি। এটা যে দিনার বিয়ের আগের ছেলে সেটা জানাজানি হলে মানসম্মান থাকবে না। সোহেল না হয় দীনা কে এখন বিয়ে করছে কিন্তু ও যদি বিশ্বাস না করে বাচ্চাটা ওর তখন কি হবে? আর এটাই যে সেই ছেলে তার কি প্রমাণ? কেউ নিশ্চয়ই এত দিনের ভাঙ্গা সম্পর্ক জোড়া লাগতে দেখে হিংসায় এই কাজ করেছে। চলে যেতে বলা হয় জাহিদুল ইসলামকে। যেতে চায় না সে। তারপর ফুফুর হাতে উঠে আসে ঝাঁটা। সেদিন জাহিদুল হাসান কাঁদেননি। চেয়েছিলেন তার মায়ের দিকে ।কত সুন্দর তার মা। কিন্তু সেখানে কোন মমতা নেই।
#
মারের দ্বিতীয় পর্ব বাকি ছিল। নতুন হুজুর শাহ আলম ক্লাসে দেখেন একটা ছেলে কম। বড় হুজুরের কাছে রিপোর্ট চলে যায়। খোঁজ খোঁজ লাগে চারিদিকে। নতুন হুজুর মানুষ ভালো। পোলাপানদের মারেন না। তার কাছেই যায় করিমন খালা।
“হুজুর জাহিদুল কই গেছে আমি জানি।” কোথায় গেছে কেন গেছে কিভাবে গেছে শিক্ষিত নতুন হুজুরের একের পর এক প্যাঁচানো প্রশ্নের উত্তরে করিমন খালা সবই উগরে দেন। নতুন হুজুর রওনা হন শেখ শরফুদ্দিনের বাড়ির দিকে। নতুন হুজুর বের হবার কিছুক্ষণ পরেই ফেরে জাহিদুল হাসান। সামনে পড়ে বড় হুজুর। সেদিন কি প্রশ্ন করেছিলেন বড় হুজুর কতটা মেরেছিলেন কিছু মনে নেই। একটা সময় প্রবল ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। ঘুম ভাঙে একটা অন্ধকার ঘরে দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দে। “ধাক্কাইও না শাহ আলম তাকে আমি রাতে বের করব না।” বড় হুজুরের গলা শোনা যায়।
-হুজুর আপনি বাচ্চাটাকে এভাবে আটকায় রাখতে পারেন না।
-আমি এখানকার বড় হুজুর। যা হয় সব আমার কথায় হয়।
-হুজুর এই জিনিসটা আপনার কথায় হবে না।–দরজা ভেঙে জাহিদুল হাসানকে বের করেছিলেন শাহ আলম। শেখ শরফুদ্দিনের বাড়িতে তিনিও কিছু শুনেছিলেন সেই ফুফুর কাছে। কি শুনেছিলেন তা জাহিদুল হাসান কোনদিন জানতে চাননি।শুধু এটুকু হিসাব করেন সেইদিন থেকে এই মহান মানুষটার কাছে তিনি ঋণী হতে শুরু করেন। এতিমখানার চাকরি ছেড়ে জাহিদুল হাসানকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন শাহ আলম।
#
জাহিদুল হাসান বোর্ড স্ট্যান্ড করে পাস করেছে। এই খুশিতে দুইশ রাকাত শোকরানা নফল পড়েছেন শাহ আলম। পরিষ্কার মনের মেয়ে না পাওয়ায় চিরকুমারই থেকে গেলেন বেচারা। জাহিদ হাসানের সাথে একসাথে নামায পড়ে বলেন বাবা দোয়া কর “রাব্বানা আতিনা……” সে দোয়া করে। আবার বলেন বাবা এবার দোয়া কর “রব্বীর হাম হুমা ……” জাহিদ হাসান বলে “চাচা এই দোয়া করব না।” কোন দিনও জাহিদ হাসান কে দিয়ে তিনি এই দোয়া করাতে পারেন নাই। জাহিদ হাসান এখন ঢাকায় যাবে পড়তে তার থেকে দূরে ভেবে শাহ আলমের বুকটা কষ্টে ভরে যায়। নিজের সন্তানকেও মনে হয় এর থেকে কিছুটা কম ভালবাসতেন শাহ আলম তিনি জাহিদুল হাসানকে এতটাই ভালবাসেন।
#
জাহিদুল হাসান এখন সহকারী সচিব। অফিসে আজকে দুইজন লোক এসেছিল । একজন সরকারী চাকরী করে। আরেকজন তার আত্মীয় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতা। চাকরিজীবীর বদলি আটকাতে হবে। এজন্য অবশ্য তারা জাহিদুল হাসানকে পঞ্চাশ হাজার টাকা উপহার দিতে চান। তিনি শাহ আলমের কাছে নৈতিকতা বিসর্জন দেয়া শিখেন নি। সুতরাং না। নেতা এবার মুখ খোলেন
“স্যার নতুন জয়েন করেছেন তো তাই হয়ত বুঝতে পারছেন না”
-কি বলার চেষ্টা করছেন আপনি?
-নাহ তেমন কিছু না। এই যে আপনি চাকরি করছেন। এখন না হয় একা দুইদিন পর তো আর থাকবেন না। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আপনি। বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করবেন। বৌয়ের অনেক চাহিদা থাকবে।সরকারের এই কয়েক টাকার বেতনে তো আর সেসব চাহিদা পূরণ হবে না। আবার এই কয়েক টাকায় বাড়ি গাড়ী কিই বা করতে পাড়বেন আপনি? – কথাগুলো বাস্তবিক মনে হয় জাহিদুল হাসানের। টাকাগুলো নিয়ে নেন। শাহ আলম সেদিন তাকে বলেছিলেন “বাবা প্রথমবার করলা তাই ভুল বলে ধরে নিলাম। এরপর যদি কোনদিন কর তাহলে তুমি আমার কবরে মাটি দিও না।”
তারপর থেকে আর উপহার নেননি জাহিদুল হাসান। নেতার বলা কথাগুলোও সত্যি হয় নি। শাহ আলম তার বিয়ে দিয়েছেন নিজের এক বন্ধু কন্যার সাথে যার অনেক চাহিদা নেই। কিন্তু বাড়ি গাড়ী করতে পারবেন না জাহিদুল হাসান একথাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। জাহিদুল হাসানের কর্মদক্ষতার কারণেই তিনি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার অনেক প্রজেক্টে কাজ করেছেন। সেখান থেকেই এসেছে টাকা। হালাল টাকা।
#
শাহ আলম তার মৃত্যুশয্যায় জাহিদুল হাসানকে বলে গিয়েছিলেন “বাবা তোমার বাবা-মা’র কাছে যেও। বুঝায় বইলো। বাবা-মা ই তো দূরে সরায় রাখবে কেমনে বল? তারা যদি কোনদিন তোমার কাছে আসে ফিরায় দিও না। যে সন্তান বাবা-মা থাকতেও খেদমত করতে পারলো না তার মত হতভাগা আর নাই। নামাযে বাবা-মার জন্যে এই দোয়া করবা “রব্বীর হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সাগীরা”। – বার বার শেখা দোয়াটা আবার শিখিয়ে দেন শাহ আলম। জীবনে শাহ আলমের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনেছেন জাহিদুল হাসান। কিন্তু এই কথাটা শুনবেন না। আজো শুনেন নি।
#
পনের মিনিট আগে রফিক এসে একবার মহিলার কথা বলে গেছে। দরজায় নক।কাঁপা কাঁপা গলায় জাহিদুল ইসলাম বলেন “আসুন”।
ভেতরে ঢুকলেন মহিলা। ৪২ বছরের জীবনে এটি তার সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। মুখের চামড়া ঢিলা হয়ে গেছে। ভাঁজ পড়ে গেছে। কিন্তু তাকে এখনো সুন্দর মনে হয় জাহিদুল হাসানের। হাঁটার সময় খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। নিশ্চয়ই তার হাঁটার সময় অনেক ব্যথা লাগে। আহা কতই না কষ্ট হয়েছে উনার দোতলায় উঠতে। আগে জানলে……………ভাবতে ভাবতে মহিলা টেবিলের কাছে চলে এসেছেন। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান জাহিদুল হাসান যা তিনি তার সাথে দেখা করতে আসা লোকদের সাথে করেন না। “বসুন”
-বড় আশা নিয়ে তোমার কাছে এসেছি বাবা। আমার বিশ্বাস তুমি ফিরাবে না।
মনে মনে আশাবাদী হয়ে উঠেন জাহিদুল ইসলাম। মহিলা নিশ্চয়ই তার মাতৃত্বের দাবি জানাবেন।
-আমার মেজ ছেলে রাশিদ। সাব-ইন্সপেক্টর। কে বা কারা ওকে দুর্নীতির দায়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বাবা।ও নির্দোষ ওকে একটু বাঁচাও বাবা।
উনি মাতৃত্বের দাবি নিয়ে আসেন নি। এসেছেন স্বার্থের দাবি নিয়ে। শাহ আলমের শেষ কথা গুলো জাহিদুল হাসানের কানে বাজতে থাকে “বাবা-মা তো বাবা-মাই……”
-ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখছি আপনি চিন্তা করবেন না।– জাহিদুল হাসানের আশ্বাস । মহিলার মুখে মুগ্ধতা খেলে গেল। ঠিক সেই সাত বছর বয়সে দেখা সেই মুগ্ধতা।
-আমি বাবা এখন তাহলে আসি।
-যাবেন?দুপুরের খাবারটা খেয়ে যান”
দুপুরে আর খাওয়া হয় না জাহিদুল হাসানের। সারাক্ষণ মহিলার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। মহিলা বেশ ক্ষুধার্ত ছিলেন খেয়াল করেন নি তা। জাহিদুল হাসান তাকিয়ে থাকেন । এই মুখটা দেখার সুযোগ খুব কমই হয়েছে।
চলে যাবার জন্যে দাঁড়ান মহিলা। “একটু দাঁড়ান”
“আমার পিএ কে বলে দিয়েছি যাবার সময় লিফট দিয়ে নামবেন।আমার ড্রাইভার আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিবে। আর এই যে এই কার্ডটা নেন এই ডাক্তার আমার বন্ধু। আমি ফোন করে দিয়েছি বাসায় যাবার পথে এর কাছে পা দেখিয়ে যাবেন।” আবার মুগ্ধ হন মহিলা। জাহিদুল হাসান তাকিয়ে থাকেন সেই মুগ্ধ মুখের দিকে। কত সুন্দর তার মা।
#
আসরের নামায পড়া শেষ। নামাযটা অফিসেই পড়লেন জাহিদুল হাসান। আজকে নামায শেষে হাত দুটো আপনা আপনি উঠে গেল “রব্বীর হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সাগীরা” শাহ আলমের শেষ কথাটাও রাখলেন জাহিদুল হাসান।

৭ টি মন্তব্য : “কথা”

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।