পাগলামি আর ধাওয়া খাওয়ার গল্প

৯ম শ্রেনী থেকে আমাদের এডজুট্যান্ট ছিলেন মেজর আলম স্যার। তো স্যার ছিলেন ভীষন কড়া। তার ভয়ে পুরা কলেজ এক ঘাটে পানি খেতো। তাই ১২য়ে উঠার ২ দিন আগে যখন শুনলাম স্যার চলে যাবে তখন আনন্দে কি যে করেছিলাম !! ১২য়ে উঠার কিছুদিন পর প্রিন্সিপাল স্যারও যখন চলে গেলেন, পুরা কলেজ তখন আমাদের নিয়ন্ত্রনে। স্যাররাও আমাদের কিছু বলে না। তাই ক্লাশ ১২এ উঠার পর আমরা নিজেরাই কলেজের রাজা হয়ে গেলাম। এ অবস্থায় আমাদের সকলের মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা দেখা দিল। এক একজন যা পাগলামি করা শুরু করল তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য না। ১২য়ে উঠে কলেজে আমরা যে কি পাগলামি টা করেছি তা ভাবলে এখনো হাসি পায়। সেরকমই পাগলামির একটা গল্প এখন বলব।

১২য়ে উঠে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম হাউজ়ে সময় কাটানোর জন্য বিশেষ কোন ব্যাবস্থা করা দরকার। তাই সবাই মিলে কলেজে DVD Player নিয়ে আসলাম। তারপর আর আমাদের পায় কে? সারাদিন সময় পেলেই কমনরুমে ইচ্ছেমত DVD Player দিয়ে বিভিন্ন সিনেমা ও গান দেখে আমাদের সময় কেটে যাচ্ছিল। অসুবিধা হচ্ছিল বেচারা জুনিয়র গুলোর। আমাদের বিভিন্ন কুকর্মের গার্ড থাকতে সারাদিন তাদের ব্যাস্ত থাকতে হোত। এবার আসল কথায় আসি।
একদিন কমনরুমে DVD Player এ অ্যামেরিকান পাই ৫ দেখছিলাম। ওই সিনেমায় নেকেড মাইল নামক একটা বিশেষ দৃশ্য আছে। যেখানে সকলে উলংগ হয়ে মাইল টেস্ট দেয়। তাই দেখে একজন প্রস্তাব রাখল আমাদেরও নেকেড মাইল দিতে হবে। নেকেড মাইল দেখার পর আমরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে আমাদেরও কলেজে একটি নেকেড মাইল দিতে হবে। কিন্তু দেখা গেল একেবারে নেকেড হয়ে দৌড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই ঠিক করলাম আন্ডি মাইল (শুধু মাত্র আন্ডি পরে) দিব। সেসময় অনেকে রাজি হলেও পরে আন্ডি মাইল দেবার জন্য অনেকেই রাজি হলো না। সবশেষে আমরা প্রায় ১৫ জনের মত আন্ডি মাইল দেবার জন্য প্রস্তুত হলাম। গভীর রাতে হাউজের সামনে সকলে মিলিত হলাম। আমদের হাউজের ৩৪ নম্বর রুম থেকে কলেজ ক্যাম্পাস কাছে। তাই ঠিক করলাম ৩৪ নং রুমের সামনে থেকে রেলিং টপকে ক্যাম্পাসের রাস্তায় নেমে এক দৌড়ে রাস্তা ঘুরে আবার হাউজে উঠবো। তাই সকলে ৩৪ নং রুমের সামনে জড়ো হলাম। এ পর্যায়ে সকলেই একটু ইতঃস্তত করতে লাগলাম। কেউ আর দৌড় শুরু করে না। আমাদের মোহাম্মদ এর উৎসাহ আবার একটু বেশি। ওই প্রথমে প্যান্ট খুলে শুধু মাত্র আন্ডি পরে বীরবীক্রমে রেলিং টপকে দৌড় শুরু করল। ওকে দেখা মাত্রই সকলের সকল দ্বিধা দূর হয়ে গেল। এরপর একের পর এক আন্ডি মাইল শুরু করে দিলাম।
কিন্তু রাস্তায় উঠার পরই কলেজের সকল কুকুর (কলেজ ডায়নিং হলের খাবার খেয়ে এক একটার যা সাইজ মাশাল্লাহ) মিলে কি মনে করে যেন আমাদের ধাওয়া করা শুরু করল। :(( :(( :(( ধাওয়া খেয়ে আমাদের অবস্থাতো খারাপ। আন্ডি মাইল দূরে থাক তখন জান বাঁচানোর জন্য সকলে হাউজের দিকে জীবন বাজি রেখে দৌড় শুরু করলাম। এ অবস্থায় কুকুরের চিল্লাপাল্লা শুনে গার্ড বাবাজি শুরু করল বাঁশি বাজানো। আমাদের ও অবস্থায় দেখে বেচারা গার্ড এর না জানি কি অবস্থা হয়েছিল। 😛 😛 😛 এরপর এক এক জন দৌড়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বহুত কষ্টে হাউজে ফেরত এসেছিলাম। এরপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এ জীবনে আর আন্ডি মাইল না।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন- আন্ডি মাইল দেবার পুর্বে কুকুর সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।

৫,৩৮২ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “পাগলামি আর ধাওয়া খাওয়ার গল্প”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আচ্ছা, যেই মুভি দেইখা তোমরা ইন্সপায়ার্ড হইছো সেইটা কি "অ্যামেরিকান পাই - ৬" 😉 😉 ?

    আন্ডি মাইলের সময়ও জুনিয়রদের গার্ড রাখলে ভালো হইতো না 😀 😛 😀 ?


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    আমার কর্মক্ষেত্রে এক সিনিয়র সেদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন ... staff job should be smooth ..... I want to be comfortable in the office ...
    আমার উত্তর ছিল ... অফিসে comfortable হইতে চাইলে স্যার নীচে 'আন্ডি' পড়া বাদ দিয়া দেন। smooth staff work ছাড়াই comfortable feel করবেন। এইটাকে বলে 'আন্ডিউ-প্রিভিলিজ' :-B 😉


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  3. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    ডিজুস জেনারেশনের ক্যাডেটদের ডিজুজ পাগলামী...ভালৈ। শালা আমাদের সময় আমাদের সময় ডিভিডি প্লেয়ার নেয়ার কথা মাথাতেও আসতোনা...আমরা সিডি প্লেয়ার নিতাম আর সুশীল মানুষের মতো চুরি করে খালি গান শুনতাম। 🙁

    মুসতাকীম লেখা ভালো হইছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।