এলোমেলো স্মৃতিগুলো

১. দৈনন্দিন অফিসিয়াল অনেক চিঠিপত্রের ভিড়ে একটা চিঠি নজর কাড়লো। বাচ্চার অসুস্থতার জন্য মাহবুব ভাই (মেজর মাহবুব, বকক, ৪র্থ ব্যাচ) মিশনের টেনিউরের আড়াই মাস বাকি থাকতেই দেশে ফেরত চলে যাচ্ছেন। দুদিন বাদেই তার সাথে দেখা হল। মনরোভিয়ার এক সুপারস্টোরে কর্মরত জাকির ভাইয়ের একটা চিঠি তার পরিবারের কাছে পৌঁছাতে হবে বলে অনুরোধ করতেই সানন্দে রাজী হলেন। জাকির ভাই মাহবুব ভাইয়ের বাচ্চাদের জন্য প্রমাণ সাইজের কয়েক প্যাকেট চকলেটও দিয়ে দিলেন। সেই চকলেট ভাগ্যে জুটল আমার আর আমার সতীর্থদের। যাবার আগের রাতে আমার রুমে বসে আড্ডা মারলেন, জোর করে নোটবুকে লিখালেন mahbub3043@gmail.com – বললেন, কলেজের সবার সাথে যোগাযোগ রাখাটা জরুরী। আমিও তাকে মনে করিয়ে দিলাম মার্চের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য “বেক্সকা নাইট” এর কথা।

সেই দেখাই শেষ দেখা – সেই কথাই শেষ কথা। ঐ জি-মেইলে আমার আর কমিউনিকেট করা হলো না। তার পরিবর্তে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে মুহাম্মদের পোস্টে যোগ করার জন্য নিখোঁজ হিসেবে তার নাম টাইপ করতে হলো।

২. আমার এক বন্ধুর বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। বন্ধুর বাসায় গেলেই আঙ্কেলের সাথে দেখা হওয়া, কথা বলা ছিল একটা অবধারিত ব্যাপার। একদিন খেয়াল করলাম ডাইনিং টেবিলের স্বচ্ছ কভারের নিচে একটা কাগজে তার সমস্ত কোর্সমেটের নাম, ঠিকানা, কন্ট্যাক্ট নম্বর টাইপ করে রাখা। কিছু কিছু কোর্সমেটের নামের পাশে জায়গাটা সাদা – কিছুই লেখা নেই। কিন্তু নামের আগে Late শব্দটায় চোখ পড়তেই বুঝতে পারলাম আসলে তাদের কন্ট্যাক্ট নম্বর থাকার প্রয়োজনও নেই।

আমার কোর্সমেটদের নামের পাশে কন্ট্যাক্ট নম্বরের জায়গায় এরকম সাদা অংশ রাখা আর নামের আগে Late শব্দটি জুড়ে দেয়া শুরু হয়ে গেল। আহসান ওর ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছে, “was there with him in BMA drain but left him alone in PILKHANA drain…..“. বড় অকালে চলে গেল বন্ধু ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার (ককক, ১৯৯২-১৯৯৮)।

৩. আমার যদি ভুল না হয় তবে সিসিবি’র ইতিহাসে গত কয়েকদিনে ভিজিটর সংখ্যা এবং বেশিরভাগ পোস্টে হিট + মন্তব্য সংখ্যা সর্বাধিক। এমন কি সদ্যপ্রয়াত বন্ধুকে নিয়ে আমার পোস্টটাতেও হিট সংখ্যা চব্বিশ ঘন্টা না পেরুতেই তিনশতের কোঠা ছুঁই ছুঁই করছে।

অল্প সময়ে অধিক হিট বা মন্তব্য পাওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু ব্যাপারটা যে এভাবে আসবে বুঝিনি ….এভাবে চাইনি – কখনোই এভাবে চাইনি।

৪. ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বেনিন বিমান দূর্ঘটনায় নিহতদের সামরিক মর্যাদায় কিভাবে সমাহিত করতে হবে সেটা বের করতে বেশ কিছু নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছিল। নিহতের সম পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গই কেবল কফিন বহন করতে পারেন যাদেরকে বলা হয় “পল বেয়ারার”

তখনই ব্যাপারটা মাথায় খেলে গিয়েছিল – আজ না হয় লিখেই রাখি, “আর কেউ থাকুক বা না থাকুক শামীম, সরোয়ার, মুশফিক, আতিক তোরা চারজন আমার পল বেয়ারার অবশ্যই থাকিস”।

১৬ টি মন্তব্য : “এলোমেলো স্মৃতিগুলো”

  1. লাইবেরিয়া ছেড়ে যাবার আগে মেজর মাহবুব আমাদের ইউনিটে ছিলেন। Unit level Badminton competition এ আমার পার্টনার ছিলেন। 1st game 04-15 এ হেরে যাবার পর স্যার ওয়াক ওভার দিয়ে দিতে বললেন। স্বপ্নেও কি ভেবেছিলাম সবাই কে ওয়াক ওভার দিয়ে তিনি চলে যাবেন।

    ফাইনালি যাবার আগে মেসের সামনে স্যারকে ‍বলছিলাম, বাংলাদেশে গিয়ে কিভাবে বেশী দিন ছুটি manage করবেন। তিনি হাসছিলেন আর অন্য কাকে যেন বললেন, দিন বদলাইছে- জুনিয়ররা সিনিয়রদের gap মারা শেখাচ্ছে। স্যার, আর একটা দিন ছু্টি manage করতে পারলেন না......

    জবাব দিন
  2. চাপ চাপ কষ্টে বুকটা ভার হয়ে আছে এখনো। একেকটা লাশ উদ্ধার হয় কষ্টের বোঝা যেন বাড়তে থাকে। আমার বন্ধু মেজর মাহবুব রক্ষা পেয়েছে, কিন্তু আরেকজন মাহবুব চলে গেল।

    জবাব দিন
  3. আমার পক্ষে লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর মৃতদের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই করার নেই ।
    '' আফসোস………
    মেজর মাহবুব মাত্র একদিন আগেই বিডিআর এ যোগদান করেছিলেন। ''-----এটা পড়ে আমি খুবই চমকে গেছি । শহীদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।