শুধু তোমারই জন্য হে শওকত ( সবাই পড়তে পারে)

আমার এই পোষ্টটা শওকতের পোষ্টের জবাবে। তাই এর নাম দেয়া যায় শওকতের জবাব বা ঐ জাতীয় কিছু একটা। একটুও মনঃকষ্ট নয়, আমার এই অদ্ভুত বিষয়টা সবাইকে জানানোর জন্য আমি এই পোস্টটা লিখছি। আমি কোন ঘটনা চাক্ষুশ দেখলে কখনো মন থেকে এই চিত্র মুছে ফেলতে পারিনা। সামরিক বাহিনীতে চাকুরি করলেও আমার কিছু দুর্বলতা আছে। যেমন আমি কোন বিভৎস দূর্ঘটনা বা কারো লাশ ইচছা করে দেখিনা। আমি কোন বিভৎস হরর মুভি দেখিনা। কেন জানিনা ওই ছবি মন থেকে মুছতে পারিনা।

আমার মা মারা যাবার আগে মাঝে মাঝে খুব আশ্চর্য হতেন আমি অত ছোট বেলার কথা কিভাবে মনে করতে পারি। আমার অবশ্য আমার বাবা মা’র বিয়ের আগের ঘটনা বা মা’য়ের পেটে থাকার ঘটনা মনে নাই।

কিন্তু সত্যিই বলছি আমি যখন হাটতে পারতামনা বা হয়তো হাটতে শিখেছি তখনকার একটা কথা আমার মনে আছে। আমি পাবনাতে শিবরামপূরে বা সালগাড়িয়ায় আমার প্রথম ২/৩ বছর কাটিয়েছি। তখন শাহানা বুজি (পাড়াত আপা) আমকে কোলে করে পা নাচাতেন আর পড়তেন। আমি ২০০২ সালে রাজশাহীতে গিয়ে উনাকে কথায় কথায় এটা জিজ্ঞাসা করতে উনি সত্যিই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।

আমার বয়স যখন ৫ এর মতো ( স্বাধীনতার পর) তখন পাবনাতে আমদের ঐ বাসায় মিলাদ দেয়া হয়েছিল বাসায় নতুন করে উঠার জন্য। আমার বাবা মিলাদের মিস্টি না কিনে বাসায় ময়রা এনে মিস্টি বানিয়েছিল। মিস্টি খাওয়ার লোভে আমি সম্পূর্ন সময় ওখানে (ময়রার পাশে) বসে ছিলাম। আমার এখনো মনে আছে কিভাবে উনি (ময়রা) খেজুরে সন্দেশ বানিয়েছিল। আমি ২০০৫ সালে ঐ স্মৃতি থেকে তা একবার বানিয়েছিলাম, সবাই খুব ভাল হয়েছে বলেছিল। এমনকি মিলাদের আগে নান্নু চাচার ( পাড়াত চাচা) সাথে আব্বার কি কি কথা হয়েছিল তাও মনে আছে।

আমার সবচেয়ে ছোট বোন আমার ৭ বছরের ছোট। ও যখন পাবনা সদর হাসপাতালে জন্ম নিয়েছিল তখন হাসপাতালে আমার মা ও বোনকে দেখতে এসে তার এক বান্ধবী কি বলেছিল তা মনে আছে (এখানে বলতে পারছিনা) । হাসপাতালে কি কি রোগী দেখেছিলাম( যেমন একজন লোকের মুখে নল দিয়ে খাওয়া দেয়া হচ্ছিল) তাদের কথা ছবির মতো মনে আছে।

এবার আসি ক্যাডেট কলেজের ঘটনা। আমার ক্যাডেট কলেজের ঘটনা প্রায় সবই মনে আছে ছবির মতো। কিন্তু কোন ঘটনা কোন সালের বা কোন ক্লাশের, কোনটা আগে কোনটা পরের তা গুব্লেট করে ফেলি। এখানে আমি একটা টেকনিক ফলো করি। সেটা আবার ক্যাডেট কলেজ থেকেই শেখা। সূজা হায়দার স্যার আমদের আর্টস এ্যান্ড ক্রাফটসের ছবি অঙ্কন শেখানোর সময় পরিপ্রেক্ষিত (perspective) বা ঐ জাতীয় একটা জিনিষ শিখিয়েছিলেন। আমি এই জ্ঞানটা দিয়ে আমার স্মৃতি থেকে কিছু আনুসাঙ্গিক বিষয় সার্চ করি। এখানে একটা উদাহরন দিচ্ছি।

হঠাৎ ক্যাডেট কলেজের একটা ঘটনা মনে পড়লো কিন্তু কখন বা কোন ক্লাশে তা মনে করতে পারছিনা। আমি মনে করার চেষ্টা করি ঐ সময় আর কে কে আমার সাথে ছিল। আমদের কয় ব্যাচ জুনিয়র এবং সিনিয়র তখন কলেজে ছিল। তখন কোন মনে রাখার মতো ইভেন্ট ছিল কি না। তখন আমি কোন রুমে থাকতাম, তখন টিচাররা কে কে ছিলেন, হাউস মাস্টার, ফর্ম মাষ্টার, এডজুটেন্ড, প্রিন্সিপ্যাল কে কে ছিলেন ইত্যাদি মিলিয়ে ঘটনাকে সাজায়। এখন যেমন আমি “ক্যডেট কলেজের দিনগুলি” তে ক্লাশ সেভেন থেকে বের হতে পারছিনা। আমার কিছু ডাটা দরকার যেমন প্রথম ব্যাচ কয তারিখে কলেজে যোগদান করলো, আমদের ফাইনাল পরীক্ষা কোন মাসে হতো এবং আরো কিছু ডাটা । এগুলো না পাবার জন্য ঘটনা সাজাতে পারছিনা তাই ক্লাশ এইটের ঘটনায় আর উঠতেই পারছিনা।

আবার যদি কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার কথা ধরি আমি তা সারা জীবন ভুলবোনা। আমার লিখা জবানবন্দি দেখে আমার এক কলিগ আমাকে একই রকম মন্তব্য করেছিল। আমি শুধু ঘটনার পর্যায়ক্রম গুলো মনে রেখেছিলাম। যাত্রা শুরুর সময় এবং ফেরত আসার সময় আর দুরত্ব হিসেব করে এটাকে সাজিয়েছিলাম। মোবাইল করার টাইম দেখে হিসেব কষে দুর্ঘটনার সময় বের করেছিলাম।

আমার ধারনা ছোটবেলা ঘটনা ঘটার পর বাবা মা অথবা অন্য কারো কাছে গল্প শু্নে এগুলো ছবির মত মনে গেঁথে গেছে। আমি কিন্তু কোন কিছুই মুখস্ত করতে পারিনা। আমি পড়ার বিষয়টার ছবিও মনের পর্দায় নিয়ে নি। তারপর মন থেকে লিখি। আমার ডিজিটাল মেমরি বলতে গেলে শুন্য। আমি মোবাইল নাম্বার, টেলিফোন নাম্বার মনে রাখতে পারিনা। বাজারে মাছ, মাংশ, ডিম, তরিতরকারী আনার পরপরই তার দাম ভুলে যায়। বাসায় এসে হিসেব মিলাতে পারিনা। এন্টিবায়োটিক খেতে হলে বারবার প্রেস্কিপ্সন দেখতে হয় কয় ঘন্টা পর পর খেতে হবে। আমি পরিচিত কাউকে দেখলে নাম মনে করতে পারিনা। এমনো প্রায়ই হয় আমার বার্ন ইউনিট অফিসারের নাম মনে না করার জন্য তার এপয়েন্টমেন্ট ধরে ডাকি। মেজর সাফি ( মির্জাপুরের ওবাইদুল্লাহ) এর স্বাক্ষী।

আমার আর একটা মজার কথা বলি। আমার কল্পনার জগতটা বলতে গেলে শুন্য। কল্পনা করতে গেলে ঘুরে ফিরে জানা বা পড়া ঘটনা চলে আসে তা আমি আগেও বলেছি। যেমন ছোট বেলা স্বপ্নে আমি প্রায়ই রুপকথার কোন সাহসী রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করতাম। পরীক্ষার আগের রাতের স্বপ্নে পাওয়া প্রশ্ন মনে থাকলেও পরেরদিন তা কখনও কমন পড়েনি।

আমি যা ভাবি তা প্রায়শঃ স্বপ্ন দেখি। আমার ঘুমের স্বপ্নের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ আমার পরিচিত জগত নিয়ে বা চিন্তার বিষয়বস্তু। আমি একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। হঠাত টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলো। আমি টয়লেট থেকে এসে স্বপ্নের বাকি অংশ দেখি। আমার এক বান্ধবি ছিল আমি যখন ক্লাশ এইটে পড়ি। সে প্রতি রাতে সিরিজ স্বপ্ন দেখতো। এরকম অনেক ঘটনা আছে যা হুমায়ন আহমেদের মিসির আলি গল্পের মত যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষন করা দুরুহ কাজ। কিন্তু ঘটনা গুলু সত্যি। আমার স্বপ্ন গুলো সবসময় আমার বর্তমান জায়গা থেকে শুরু হলেও তার বেশিরভাগই শেষ হয় পাবনার আমদের ঐ বাসাতে যেখানে আমার ছেলে বেলা ফেলে এসেছি। দেখা গেল, স্বপ্ন দেখছি লাইবেরিয়াতে, একটা কুকুর আমাকে তাড়া করেছে, আমি দৌড়াতে দৌড়াতে আমদের পাবনার বাসায় চলে গেলাম। কুকুরটা থেমে গেল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। যারা সাইকলোজির তারা হয়তো এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে।

৩৯ টি মন্তব্য : “শুধু তোমারই জন্য হে শওকত ( সবাই পড়তে পারে)”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    স্বপ্ন দেখছি লাইবেরিয়াতে, একটা কুকুর আমাকে তাড়া করেছে, আমি দৌড়াতে দৌড়াতে আমদের পাবনার বাসায় চলে গেলাম। কুকুরটা থেমে গেল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

    স্মৃতি নিয়ে স্মৃতিচারণ খুবই রোমাঞ্চকর লাগলো এডিসন ভাই :clap: :clap: :boss: :boss:

    আমি একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। হঠাত টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলো। আমি টয়লেট থেকে এসে স্বপ্নের বাকি অংশ দেখি।

    ইশ এরকম যদি স্বপ্নের লাগাম টেনে পজ করে রাখতে পারতাম আপনার মতোন, তাহলে আমি বোধহয় ঘুমিয়েই থাকতাম সব সময় :boss: :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    দূর ভাই আমি পুরা আপনার উলটা, পাশের টেবিলের কলিগের নাম ভুলে যাই, আম্মা যখন বেচে ছিলেন খুব বিব্রত হতেন আমাকে নিয়ে, আমি কোন আত্নীয়ের নাম আর চেহারা মনে রাখতে পারতাম না, নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হত। এখন এই কাজটা করে আমার বউ।

    বন্ধুদের নাম তো বটেই, মাঝে মাঝে নিজের মেয়ের নাম পর্যন্ত ভুলে যাই।

    আপনার পানিপড়া খেতে হবে আমাকে। বুড়া হবার আগেই এই, শেষ বয়সে (যদি বাচি) না জানি কি হবে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    স্বপ্ন দেখছি লাইবেরিয়াতে, একটা কুকুর আমাকে তাড়া করেছে,

    লাইবেরিয়ান কুকুরের ব্যান চাই :grr:


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  4. অনুরক্ত (৮৩-৮৯)
    আমি একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। হঠাত টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলো। আমি টয়লেট থেকে এসে স্বপ্নের বাকি অংশ দেখি। আমার এক বান্ধবি ছিল আমি যখন ক্লাশ এইটে পড়ি। সে প্রতি রাতে সিরিজ স্বপ্ন দেখতো।

    😮 😮 :dreamy: :dreamy:

    জবাব দিন
  5. শওকত (৭৯-৮৫)

    ১. তোমার আগের দুইটা পোস্ট পড়ে আরো সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯) মন্তব্য করেছিল

    ভাই,
    আপনার আসলেই পুরা ফটোগ্রাফিক মেমরি… :boss:

    কলেজের ঘটনাগুলা যেইভাবে এতোদিন পরেও প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ(বানান ঠিক হইল?) ভাবে বর্ণনা দেন, তাতেই পুরা টাশকি খায়া যাই…
    আর এখন তো দেখি আরো গেন্দাকালের ঘটনাও আপনার মনে আসে…

    আমি তখন এই মন্তব্য পড়ে একই ধরেণর কথা বলে বলেছিলাম স্বরণশক্তি নিয়া আমার একটা ভাল কৌতুক জানা আছে। কামরুল উৎসাহ দেওয়ায় কৌতুকটা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দেই।
    ২. তুমি আমার ব্যাচমেট বলেই উৎসর্গ হিসেবে তোমার নাম দিয়ে দেই। কোন মনকষ্ট দেওয়ার জন্য না।
    ৩. মনে কষ্ট পেলে আমি ঐ পোস্টটা বরং মুছে দেই।
    ৪. এই পোস্টটা পড়ে আমি আবারো টাসকি খাইছি। এভাবে কেউ মনে রাখতে পারে আমার জানা নেই।
    ৫. মনে কষ্ট পেলে সত্যি আমি দুঃখিত।

    জবাব দিন
    • সাইফ (৯৪-০০)

      শওকত ভাই, এর ব্যান চাই.........হৌক অন্য কলেজের তাতে কি.........ক্লাস্মেটকে তুমি বলার জন্য......।।শওকত ভাই কে এই কমেন্ট পড়া প র্যন্ত যেটুকুন সময় লাগে,সেই সময়ের জন্য ব্যান চাই............
      ক্যাডেট ক্যাডেট ক্লাস্মেট কে কক্ষনি তুমি বলে সম্বোধন করা উচিত না...............হা হা হা =)) =)) =)) =))
      এডিসন ভাঈ,মনে ক ষ্ট নেয়ার মত কিছু নাই,আমি জানি আপনি মনে ক ষ্ট নেন অ নাই।কারণ,শওকত ভাই,স র্বদা সরল প্রানে কৌতুক করেন......
      আর শওকত ভাই,আপনিও খামাকা দ্বিধায় ভুগছে ন যে ,না জানি এডিসন ভাই মাইন্ড খাইয়া বইস্যা আছে............।।

      জবাব দিন
  6. জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

    শওকত, আমি এই লিখার শুরুতে বলেছি কোন মন কষ্টনা আমার বিষয়টি সবাইকে শেয়ার করার জন্য এই পোষ্ট। তোমার পোষ্ট মুছার চিন্তাও মাথায় আনো না। সবার মতো আমিও তোমার লিখার কঠিন ফ্যান।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।