আমার সিসিবিতে আগমন এবং আগামী দিনগুলির ভাবনা

আমি প্রথম সিসিবির সন্ধান পাই বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ক্যাপ্টেন সিরাজের কাছে প্রায় ২/৩ মাস আগে। ও তখনো জানতো না আমি এক্স ক্যাডেট কি না। ও আমাকে এটা ওটা শেখানোর সময় হঠাত বললো,” ক্যাডেট কলেজের জন্য একটা ব্লগ সাইট আছে- সিসিবি” ওইদিন একজনের ব্লগও আমাকে দেখাল। ওটা ছিল কৌতুক টাইপের,” তোমাদের ম্যাডাম খুব ভাল ফাক ( পাক বা রান্না) করে” এরকম কিছু একটা। আমি আবার কৌতুক বা রম্য রচনার ভীষন ভক্ত। সেদিন জাষ্ট কৌতুক হিসেবে পরেছিলাম যা ফেসবুক বা অন্য কোন সাইটের কৌতুকের মতো মনে হয়েছিল। এতে কোন আবেগ ছিলনা।

ব্লগ বলতে আমি বুঝতাম দেবনির ব্লগ বা ঐ জাতীয় প্রাপ্ত বয়স্ক জাতীয় সাইট। এটা যে এত গঠনমুলক একটা সাইট তা একেবারেই জানতাম না।

এরপর মির্জাপুরের মেজর সাফি ( ওবাইদুল্লাহ) আর আমি লাইবেরিয়াতে এক ক্যম্পে থাকার সুযোগ পেলাম। সাফিকে আমি এমনিই খুব পছন্দ করতাম কারন ও খুব পজেটিভ মাইন্ডেড। আমার আর একটা দুর্বলতা আছে যারা খুব বেশি পজেটিভ মনের তাদের আমি এম্নিতে অনেক বেশি পছন্দ করি। সেদিন ছিল জানুয়ারী মাসের ১০/১২তারিখ। আমি ২/১ দিন চেষ্টা করে সিসিবির মেম্বার হতে পারলামনা। সাফি আমকে শিখিয়ে দিল কিভাবে সিক রিপোর্টে সমস্যা জানাতে হয়। মির্জাপুরের জিহাদ আমাকে অন লাইনে সব করে দিল। আমি হয়ে গেলাম সদস্য। একই সাথে আমাকে সামহয়ারইন ব্লগের ঠিকানাও দিল সাফি। আমি ২/১ দিন ধরে নভিশেস ড্রিল, সিক রিপোর্ট জাতীয় বিষয় চর্চা করতে থাকলাম। ব্লগ দুটু আমকে এমনভাবে পেয়ে বসলো যে রাত দুটার সময় সাফিকে আমি ঘুম থেকে তুলে সমস্যা সমাধান করে দিতে বলতাম।

এরপর আমরা দুজনে একসাথে নতুন ক্যাম্পে গেলাম। ওখানে ১৭ই জানুয়ারী প্রথম লিখা দিলাম,” সহজ কথা কয়তে আমায় কহজে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে” এটা আমার ব্লগ জীবনের প্রথম লিখা। আমি লিখাটা শুরু করেছিলাম একটা ফান করার জন্য। কিন্তু ধরা খেয়ে গেলাম যখন সবার মন্তব্য পেলাম। আমি খুবই ইমোশনাল হয়ে গেলাম, হয়তো শেকড়ের সন্ধান পেলাম তাই। আমি এতই উতসাহিত হলাম আগে যে সমস্ত সাইট নিয়ে পরে থাকতাম তা সম্পুর্ন রুপে জলাঞ্জলি দিলাম। এখন আমার একমাত্র সংগি তিনটা সাইট,” সিসিবি, সামহোয়ার আর ফেসবুক” একসময় ফেসবুকে অনেক আজানা আচেনা ফটো সুন্দরি মেয়েদের এ্যড করে আমার তালিকা ১০০ এর উপরে করেছিলাম। সিসিবিতে এসে এখন মনে হচ্ছে সবি ছিল ভূয়া। আমি আস্তে আস্তে অচেনা সবায় কে মুছে ফেলছি আর জগতটাকে বড় করছি চেনা মানুষ দিয়ে যার ৮০% ক্যাডেট কলেজ সঙ্ক্রান্ত ব্যাক্তি। একটা কথা না বলেই থাকতে পারলামনা তা হলো আমার এই দুর্ঘটনার জন্যই ২৩ ব্যাচের শরীফকে মন্তব্যদাতা কারী থেকে ব্লগার বানাতে পারলাম। এজন্য সিসিবি নিঃশ্চয় আমকে একটা প্লাস দিবে।

আমার লিখার ক্ষমতা সম্পর্কে আগেভাগে বলে নিচ্ছি। আমি কখনো কোন লিখার সাথে তেমনভাবে জড়িত ছিলামনা। আমার যতদুর মনে পড়ে ক্যাডেট কলেজে দেয়াল পত্রিকায় ক্লাশ নাইনে একটা লিখার কথা। এটা ছিল ফিসিক্সের একটা ফর্মূলার হুবুহূ প্যারোডি, তাতেই অনেক বাহবা পেয়েছিলাম কারন তখন মুক্ত চিন্তার তেমন কোন ক্যাডেট ছিলনা। এর পর একুশ নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম যা বাংলার সাইফুল ইসলাম স্যার অনেক চেষ্টা করেও কলেজ বার্ষিকীতে স্থান দিতে পারেন নাই।

তারপর আর লিখা হয়নি। এরপর আমার যখন চাকুরী শুরু। তার ২/১ বছরের মধ্যে ঢাকা ভার্সিটির এক ইয়ারমেটের প্রেমে পড়েছিলাম। তাকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম। গল্প না বলে ওটাকে ঘটনা প্রবাহ বললে ভাল হয়। এরপর আর এক মেয়েকে নিয়েও লিখেছিলাম। মোদ্দাকথা আমার লিখার বিষয়বস্তু সবসময় আমার পরিচিত জগত যেখানে আবেগ বিচরন করে। কবিতা লিখতে গেলেও আমি কোন ছন্দ খুজে পাইনা। আমার পড়া কবিতাগুলোর ছন্দেই আটকে থাকি। আমার কল্পনার জগত বলতে কিছু নেয়। আমার কল্পনা সামনের দিনগুলির সম্ভাবনার মধ্যে আটকে যায়। আর আগাতে পারিনা। ক্যাডেট কলেজের দিনগুলো যেহেতু বাস্তব তাই লিখতে পারছি স্মৃতি থেকে। তবে লিখতে আমার খুব ভাল লাগে। আর ব্লগে তো বটেই। কারন আমার বাংলা হাতের লিখা খুব খারাপ। কিন্তু এখানে হাতের লিখা খুব সুন্দর হয়, আক্তারুজ্জামান শামীম, এহতেসাম বা জাহাঙ্গীরের চেয়েও( আমাদের তিন ক্লাশমেট যাদের হাতের লিখা খুব সুন্দর ছিল) । আমি তাই এই লিখা চালাতে চাই। আর আমার বাইরের জীবনের ঘটনাও স্মৃতি থেকে লিখবো। এখন আমার অনেক সময়, কাটতেই চাইনা। শরীর না চললেও আঙ্গুল (আমি আবার আমার আঙ্গুল লিখা আর খাওয়া ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করে অভ্যস্ত না) চলে তাই লিখা চলবে আরও বেশী বেশী।

২,৫৮৬ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “আমার সিসিবিতে আগমন এবং আগামী দিনগুলির ভাবনা”

  1. শরিফ সাগর (৯৭-০৩)

    থ্যাঙ্কস ভাইয়া আমার ব্লগের হাতখড়ি ধরানোর জন্য :hatsoff: । ব্লগার হওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।তারপরেও ওই হাতখড়ি যে পরবর্তি ব্লগ লিখতে জ্বালানী হিসেবে কাজ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। থ্যাঙ্কস অ্যাগেইন। আল্লাহ আপ্ননাকে তাড়াতাড়ি পূর্ন সুস্থতা দান করুক।

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    পরপর তিনটা ব্লগ দিয়ে ফেলার ক্ষমতা দেখে তোমার সুস্থতা নায়ে কোনো সন্দেহ করছি না!! x-( x-( x-(

    ভালো লাগলো। লিখতে থাক। :clap:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    শরীর না চললেও আঙ্গুল (আমি আবার আমার আঙ্গুল লিখা আর খাওয়া ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করে অভ্যস্ত না) চলে তাই লিখা চলবে আরও বেশী বেশী।

    অপেক্ষায় থাকলাম-জুনায়েদ :-B


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বস লিখাটা পড়ে মজা পাইছি।
    সত্যি কথা কি নিজে মাতবরি নিয়ে দেয়াল পত্রিকায় লেখা ছাপানো ছাড়া আমিও জীবনে লএখা ছাপাই নাই ব্লগ ছাড়া।
    চলতে থাকুক লেখা।

    জবাব দিন
  5. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    স্যার,
    আপনার অযাচিত প্রশ্রয় এবং নির্ভেজাল অনুপ্রেরণাটুকু সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
    :salute:
    আপনার এবং বাকি সবার শুভ প্রত্যাবর্তনের দিন গুনছি।

    আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুন।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।