আমার ক্যাডেটীয় দিনলিপি-১

বহুদিন ধরে সিসিবি তে ব্লগ পড়ছি। কখনও লিখব ভাবিনি। এটাই আমার প্রথম লেখা।
———————–
কলেজে এক্সট্রা ড্রিল খাবার ব্যাপারে আমার একটা ঐতিহ্য ছিল। আমি ছিলাম আমার ব্যাচের ১ম ইডি খাওয়া পাবলিক। এমন`কি ৭ম শ্রেণীতে থাকাকালীন আমার আগে কেউ কখনো ইডি খায়নি পরেও মনে হয় কেউ খায়নি। আমার অবস্থা এমন ছিল যে এডজুট্যান্ট এর সামনে পড়লে আমার ইডি খাওয়া নিশ্চিত। হয়ত সকালে একটা ইস্যু হত তো বিকেলে একটা। দলবেধেঁ ইডি খেতে খুব খারাপ লাগত না।

আমার জীবনের ভয়াবহ ইডি খেলাম ৮ম শ্রেণীতে। মাগরিবের নামাজের সময়ে সামনে বসা সিনিয়র ভাইদের পাঞ্জাবীতে লাইন ধরে গিট্টু দিয়ে। যখন নামাজের জন্য জামাত শুরু হয়, সবাই তো আর একসংগে দাড়ায় না, কেউ আগে কেউ পরে। ফলে দেখা গেল যারা আগে দাড়ানোর জন্য উঠেছে তাদের টানে বসা ২/১ জনের পাঞ্জাবী ফড়াৎ করে ছিড়ে গিয়েছে; অথবা দাড়ানো কারো কারো পাঞ্জাবির এককোনা ছিড়ে ঝুলছে। আমার ঠিক পিছনেই বসা ছিলেন প্রিন্সিপাল স্যার, ফলে একটা ইডি ইস্যু হয়ে গেল। স্টাফদের কাছে শোনা গেল কর্তৃপক্ষ জনমের শিক্ষা দেবার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছে। আর যেহেতু প্রায় নতুন ক্যাডেট তাই এখনি আউট করা হবে না। স্টাফরা তো ভয়াবহ খুশি। এমন শিক্ষা দেবার সৌভাগ্য তাদের সবসময় আসে না। যা হোক রাস্তার পাথর কুঁচির মধ্যে হেডডাউন হয়ে মাথা কয়েক জায়গায় ফুলে গেল। হাউসে গিয়ে বাথরুমে শাওয়ারের নিচে দাড়ানোর সাথে সাথে লাফ দিয়ে সরে গেলাম। মাথায় পানির ছিটা লাগলেই ব্যাথা লাগে। ফলে মাথার উপর হাত দিয়ে গোসল সারলাম।

ক্লাস নাইনে উঠার আগেই আমার ইডি খাওয়ায় কলেজ রেকর্ড হয়ে গেল। শেষে এমন হল যে আমি দূর দিয়ে হেটে গেলেও এডজুট্যান্ট আমার নামে ইডি ইস্যু করত। কারণ সে মনে করত আমার দোষ থাকবেই। কলেজ লাইফের শুরুতেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী হলে যা হয়। শনিবার প্রিন্সিপ্যাল প্যারেড মানেই আমার ইডি নিশ্চিত। শেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে প্রিন্সিপ্যাল প্যারেড হলে আমি আর গ্রাউন্ডে নামবই না। কারণ আমি বহুদিন ধরে লক্ষ করেছি যে ঐদিন শুধু টার্ণআউট চেক করা হয়, কিন্তু ক্যাডেট দের গোণা হয় না। ঐদিন কেউ অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি অবিশ্বাস্য। এ সুযোগটিই আমি কাজে লাগাতাম। এবং পাঠকবৃন্দ অবাক হবেন যে ৯ম শ্রেণির পরে আমি কোনদিন প্রিন্সিপ্যাল প্যারেড করিনি।
————-
পরবর্তীতে ৭ম শ্রেণিতে প্রেপে বসে সিগারেট (ক্লাস ১২ এর বাথরুম থেকে চুরি করা) খাওয়ার বিষয়টি লিখব বলে আশা করছি।

১,৬৬০ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “আমার ক্যাডেটীয় দিনলিপি-১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম সাকলাইন ভাই। আপনি ওস্তাদ মানুষ, আপনার দিনলিপি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকার কথা, নিয়মিত লিখতে থাকুন। 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. "কারণ সে মনে করত আমার দোষ থাকবেই"
    দোস্ত সাকলায়েন,
    এডজুট্যান্ট রে দোষ দিয়া লাভ নাই , তোর এক কালের রুমমেট হিসেবে আমি নিশ্চিত যে তোর কিছু না কিছু দোষ থাকতোই
    -আতিউর

    জবাব দিন
  3. সামীউর (৯৭-০৩)
    কারণ আমি বহুদিন ধরে লক্ষ করেছি যে ঐদিন শুধু টার্ণআউট চেক করা হয়, কিন্তু ক্যাডেট দের গোণা হয় না। ঐদিন কেউ অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি অবিশ্বাস্য।

    এই বুদ্ধিটা কলেজে থাকতে কেন যে আসে নাই!

    জবাব দিন
  4. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    গুরু ::salute:: ::salute:: ::salute::
    অটঃ ইয়ে ভাইয়ের চেয়ে সিনিয়র কেউ কি নাই নাকি 😮
    প্রথম ব্লগ দিলে কি জানি একটা নিয়ম ছিল না :-/
    আমি লুকডাউন হইয়া আছি 😕


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তোর ১ম এক্সট্রা ড্রিল কোনটা?
    পিনাকীরে ছুরি মারছিলি না খারাপ বই নিয়া ধরা খাইছিলি?
    কে খ্যায়াল নাই কিন্তু সেভেন না এইটে এক্সট্রা ড্রিল খাওয়ার সময় কোন এক স্যার স্টাফরে কইতেছিল, এই ছেলে খারাপ বই নিয়া ধরা খাইছে, এরে ভালো কইরা পানিশমেন্ট দ্যান।
    তুই না তো!!!


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • সাকলায়েন (১৯৯২-১৯৯৮)

      আমার ১ম ইডি ছিল আমার বন্ধু পিনাকীকে ছুরি মেরে। আমার রুমমেট হায়দার একটা নতুন ছুরি এনেছিল, আর আমি তা দেখছিলাম। হঠাৎ পিনাকী কোথা থেকে দৌড়ে এসে ছুরির মাথায় চেপে ধরে বলল আমাকে দেখতে দে। ততক্ষণে ওর হাত কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হল। হায়দার আমাকে বলল এটা তুই কি করলি। আমি বললাম তুই চিন্তা করিস না। স্যাররা জিজ্ঞেস করলে বলব আমার ছুরি। পরে তাই হয়েছিল। প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আর আমি বললাম যে ছুরিটা আমার। ইডি ছিল আসলে ছুরি কলেজে আনার জন্য।

      জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ঐ সাক্লায়েন পোলাপান কি কইতেছে দেখো না?
    ২০টা দিয়া দাও।
    কি দিবা?
    :frontroll:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  7. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    আমিও আমার ব্যাচে সবার প্রথম ইডি খাইছিলাম, এইটা একটা গর্বের বিষয়।
    শুভ ব্লগিং। সুন্দর একটা লেখা পড়লাম,পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। :guitar: :party:


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  8. হায়দার (৯২-৯৮)

    সাকলায়েন,
    সরি দোস্ত। আমার জন্যই তুই ফার্স্ট ইডি খাইছিলি। অবশ্য তুই যেই ছুরির কথা বললি, লোকজন না আবার কি ভেবে বসে? স্পেসিকালি বলতে গেলে, ওটা ছিল 'পেপার কাটার'। আর ওই ঘটনার পর থেকে আমি আর কোনোদিন 'পেপার কাটার' কলেজে নিয়ে যাইনি। এবং এখনও 'পেপার কাটার' ব্যবহার করার সময় সাবধানে ব্যবহার করি।

    তোর লেখা পড়ে আরেকটা জিনিস মনে পড়লো।
    কলেজে থাকতে শুনেছিলাম, গার্লস ক্যাডেটদেরকে নাকি ইডি দেয়া হয়না। 😮
    তখন মনে হত, "ধুর, যারা ইডি খায়নি তারা কোনো জাতের ক্যাডেট না।" 😛 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  9. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    শেষে এমন হল যে আমি দূর দিয়ে হেটে গেলেও এডজুট্যান্ট আমার নামে ইডি ইস্যু করত। কারণ সে মনে করত আমার দোষ থাকবেই।

    এইটা যেমন সত্য তেমনি আপনি দূর দিয়ে হেটে গেলেও স্যাররা ভয়ে থাকতেন। কারণ তারা মনে করত আপিন তিছু একটা করবেনই ...

    :khekz: :khekz: :boss: :boss:

    সাকলয়েন ভাই ব্লগে স্বাগতম :hug: :hug: :hug:
    ব্লগটা আবার জমবে মনে হচ্ছে 🙂


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।