৩৬ দিনের দেশ

সাত দিনের এক্সকারশনের নতুন রূপ পেলাম ভার্সিটিতে উঠে। ঢুকেই শুনলাম এখানে নাকি ইন্ডিয়া ট্যুর হয়। মন বলল, ভালই তো।
ট্যুরের টাকা জমাচ্ছিলাম বহু আগে থেকেই, তীরে এসে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে হলো, যাবো না। তরী ডুবার ঠিক আগ মোমেন্টে আবার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন।
তাই একসময় বোচকা বুচকি নিয়ে রওনাও হয়ে গেলাম।

৩৬ দিনের চিরুনী অভিযানের প্রতিটা দিনে আমি নিজের দেশকে আবিষ্কার করেছি নিত্য নতুন ভাবে, যদিও অভিযানটা ছিল আরেক দেশ, ভারতে। তবে কলেজে গেলে যেমন আব্বাআম্মা কেমন এইটা বুঝা যায়, অন্য দেশে গেলেও বুঝা যায় নিজের দেশটা কেমন। ‘৩৬ দিনের দেশ’-এর এই দেশটা তাই আমার নিজেরই দেশ। কেউ আবার ভুল বুঝেন না।

প্রথম দিন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এতো মন খারাপ লাগতেসিল। মনে হচ্ছিল গাড়ি থেকে নেমে থেকে যাই। যাই হোক, জীবন তো আর সিনেমা না, তাই আমিও নেমে গেলাম না। বড়াপুকে ছাড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল না, জানালায় গাল ঠেকায় বড়াপুকে দেখতে দেখতে গাড়ি রওনা দিল।
গাড়িতে সবার সিট আছে, কিন্তু কেউ বসতে চায় না, কি ঝামেলা। সবাই শুধু গান গায় আর গান গায়, লাফায় আর চিল্লায়।
তারপর অনেক্ষন গেলাম গেলাম গেলাম। দুপাশ ভর্তি বড় বড় বিল, আলোয় ভেসে যাচ্ছে, সেদিন পূর্ণিমা ছিলনা, কিন্তু চাঁদটা এত গাধা…এত বেশি আলো দিচ্ছিল। একসময় ফেরী পার করতে হলো। পদ্মা, বিশাল পদ্মা নদী পার হলাম আমরা। যার একপাশে মাণিকগঞ্জ, আরেকপাশে রাজবাড়ি। এপারে পাটুরিয়া, ওপারে দৌলদিয়া নামের ঘাট। তারপর আবার বাসের দৌড়…তারপর একসময় আসল বর্ডার।

এপাশে সব কিছু শেষ হলো, ওপাশে ঢুকলাম। আমাদের এদিকটা ওদের তুলনায় স্বর্গ বলা চলে। ওদের ওখানে যেতে হয় নানা খানা খন্দক পেরিয়ে, তার উপর বিষ্টি হচ্ছিল, আমরা আমাদের ভারী ভারী ব্যাগ গুলা টেনে টুনে কোনমতে নিয়ে গেলাম। বিষ্টির পানি জমে কাদা টাদা হয়ে একসা হয়ে আছে। বেনাপোল এর এই পয়েন্টটা দিয়ে প্রতিদিন বলে ৪০০০ প্যাসেঞ্জার পাস হয়, ওরা যে কেন এইরকম বস্তি করে রাখসে জায়গাটা আল্লাহ পাক জানে।
ওদের বিএসএফকে দেখে প্রতি মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছিল, এরা বিনা কারণে আমাদের মানুষজনকে মেরে ফেলে, এরা আমাদের করিমগঞ্জ জকিগঞ্জ দখল করে রেখেছে, এরা আমাদের সীমান্তে রাতের অন্ধকারে চোরের মত পুশইন করে…তারপর হঠাৎ মনে হল, এরা আসলে খুব সাধারণ মানুষ, আমাদেরই মত সাধারণ, এদেরকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে আসলে লাভ নেই। বরঞ্চ বিএসএফের সেই লোকগুলো, যারা ঢাকায় বসে মিটিং করতে থাকে সমঝোতার জন্য, আর ঠিক সে মুহুর্তেই তাদেরই আদেশে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মারা যায় কৃষক, তাদের দেখে দাঁত কিড়মিড় করা উচিৎ।
এবারে ওপাশের বাস, রওনা হলাম। এখনও দুপাশের ল্যান্ডস্কেপ দেখে বোঝা যায় না অন্য দেশে আসছি। একইরকম। একটু দোকানপাট শুরু হল, হালকা বাড়িঘর…আমার চোখটা হঠাৎ একটা সাইন বোর্ডে আটকে গেল…যশোর রোড! যশোর রোড ধরে যাচ্ছি আমরা! এলেন্স গীনসবার্গ, সুনীলের যশোর রোড, মৌসুমী ভৌমিকের যশোর রোড, কোটি রিফিউজির যশোর রোড।

৭,৯৭১ বার দেখা হয়েছে

১০০ টি মন্তব্য : “৩৬ দিনের দেশ”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    ক্যাম্নে কি ???
    ১ম দিনও তো শেষ হয় নাই.... x-(
    মাঝখানে আইসা হঠাৎ নাই হইয়া গেল x-(
    এমনে হবে না...৩৬ দিনের ৭২ পর্ব চাই :duel:
    লেখা জব্বর, ইস্পিশাল্লি লাস্ট লাইন :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    তাই একসময় বোচকা বুচকি নিয়ে রওনাও হয়ে গেলাম।

    এরা কারা? ভাইবোন? নাকি স্বামী বউ? তোমার সংগে টাক খাইলো কেমন?

    কিছুই বুঝলাম না


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. সারাদিন শেষে যখন শিরোনাম আর তার লেখকের নাম দেখলাম, তখন আঁটঘাঁট বেঁধে পড়তে বসলাম... 🙂

    কিন্তু একি! এতো তাড়াতাড়ি শেষ! 🙁 🙁 রিদম পেলাম পড়ার ঠিক তখনই শেষ......

    আরো আরো আরো লেখা চাই... অনেক বড়ো করে 🙂
    ঠিক যেমন তারপর অনেক্ষন গেলাম গেলাম গেলাম টাইপ এক্সপ্রেশন দিয়ে অনেকদূর যাবার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলা 😛

    ৫ তারা ......

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    বাহ! নিজের প্রথমবার ভারত ভ্রমনের স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে।

    বেনাপোল বর্ডার পার হয়ে উপারে গিয়ে আর বাসে উঠিনি। যশোর রোড থেকে রিক্সা নিয়ে বনগাঁ রেলস্টেশন গিয়েছিলাম। সেখান থেকে একটা লোকাল ট্রেন ধরে শিয়ালদহ। ওই জার্নিটা আমার এখনো মনে আছে। দারুণ । দূর্গাপুজার সপ্তমীর দিন গিয়েছিলাম। চারপাশে মাইকে কিশোর কুমারের গান বাজছিল 'আমার পুজার ফুল...।'

    এটা তো সিরিজ শুরু হল। শেষ হতে অনেক পর্ব লাগবে নিশ্চয়ই। 🙂


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. সারাদিন শেষে যখন শিরোনাম আর তার লেখকের নাম দেখলাম, তখন আঁটঘাঁট বেঁধে পড়তে বসলাম… 🙂

    কিন্তু একি! এতো তাড়াতাড়ি শেষ! 🙁 🙁 রিদম পেলাম পড়ার ঠিক তখনই শেষ……

    আরো আরো আরো লেখা চাই… অনেক বড়ো করে 🙂
    ঠিক যেমন তারপর অনেক্ষন গেলাম গেলাম গেলাম টাইপ এক্সপ্রেশন দিয়ে অনেকদূর যাবার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলা 😛

    ৫ তারা ……

    জবাব দিন
  6. রকিব (০১-০৭)

    শত শত চোখ আকাশটা দেখে
    শত শত শত মানুষের দল
    যশোর রোডের দু-ধারে বসত
    বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল।

    দারুণ সুন্দর করে লিখছেন আপু, অনেকটা যেন নিজের চোখেই দেখছি।
    অফটপিকঃ কইলকাইত্যা গিয়েচিলেন নাকি? আকাশদার সাথে দেখা হয়েচে বুঝি? ;))


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  7. রহমান (৯২-৯৮)
    কলেজে গেলে যেমন আব্বাআম্মা কেমন এইটা বুঝা যায়, অন্য দেশে গেলেও বুঝা যায় নিজের দেশটা কেমন

    একমত :thumbup:

    সিরিজ আকারে ৩৬ পর্বে ৩৬ দিনের বর্ণনা আশা করছি 🙂

    জবাব দিন
  8. আন্দালিব (৯৬-০২)

    দেশের বাইরে গেলে আসলেই নিজের দেশ কেমন অনুভব করা যায়। এটা আমি ছয়দিনের বিদেশ ভ্রমণে বুঝছি গতমাসে।

    এই ট্যুরটা মনে হয় আর্কি পুরা বাধ্যতামূলক বানায়ে ফেলছে। আমার বোন এখন থেকে টাকা জমাইতেছে! 😕

    লেখা ভালো লাগছে, যশোর রোড দেখে আর রোডের পাশের মানুষ ঘরবাড়ি দেখে আমার বাংলাদেশের আরিচা রোডের মতই লেগেছে অনেকটা।

    লেখাটা এত ছোট কেনে? 🙁

    জবাব দিন
  9. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    নাহ, শুরু হওয়ার আগেই দেখি শেষ। তাড়াতাড়ি বাকিটা দাও। আর কষ্ট কমানোর জন্য একটা টাইপিস্ট ঠিক করেই দিছি ;;;


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  10. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    পুরাই ফাঁকিবাজি! ফয়েজরেও ফেল মারছে!! (দেখুন, ইসসিরে!!) পড়া শুরু করতে না করতেই খতম!! :duel: :duel: :duel:

    অনেকদিন কাউরে পাঙ্গা দিই না। স্যাম ১৯ তারিখ :frontroll: দিতে দিতে এবিসি অফিসে আইস্যা রং চা খাইয়া যাইও। ;;;

    আহ্, যশোর রোড। ইমোশোনাল হইয়া গেলাম (কপিরাইট : কালা কুর্তা)। তবে গেছ তো বাসে, টের পাও নাই। টেক্সিতে গেলে দেখতা এক কিলোমিটার পরপর চাঁদাবাজরা খাড়াইয়া রইছে। ওদের চাঁদা তোলার অজুহাত শেষ হয় না!! আর এখন তো পুজার মৌসুম। :guitar:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  11. আশহাব (২০০২-০৮)

    আপু পড়ে খুবই ভাল লাগলো 🙂
    এলেন্স গীনসবার্গ, সুনীলের যশোর রোড, মৌসুমী ভৌমিকের যশোর রোড, কোটি রিফিউজির যশোর রোড। :clap:
    আপু আপ্নেতো দেখি সাহিত্যিক হয়ে গেছেন :boss: :boss: :boss:


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  12. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    ভারত ভ্রমন কপালে হয় নাই এখনো ...... ট্রাই দিতাসি সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে যাওয়া যায় কিনা ।..... 🙂 🙂 🙂
    তারপর সামিয়া, ভ্রমন কাহিনী এইটুকু লিখলে তো হবে না ...... আরো লেখা চাই ...

    জবাব দিন
  13. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    তোমার ভ্রমন কাহিনী ভালো লেগেছে। তোমার পর্যবেক্ষনগুলো আরো ভালো করে লেখো। কি দেখলে ভারত, কেমন সেখানকার মানুষেরা, কিভাবে তারা একজন বাঙ্গালী থেকে ভিন্ন, তাদের কালচার এবং অবশ্যই তাদের জিওগ্রাফি। অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  14. আহমদ (৮৮-৯৪)

    সামিয়া,
    তোমার লেখার হাত ভাল। পাঠককে ধরে রাখার জাদু তোমার লেখায় আছে। তবে এত পিচ্চি সাইজের লেখা কেন? ৩৬দিন-এর মধ্যে ২৪ঘ্ন্টাও তো বোধহয় কাভার করনি।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  15. সাব্বির (৯৫-০১)

    ঝ্যাং
    তোমার লেখার হাত ভাল। পাঠককে ধরে রাখার জাদু তোমার লেখায় আছে। তবে এত পিচ্চি সাইজের লেখা কেন? ৩৬দিন-এর মধ্যে ২৪ঘ্ন্টাও তো বোধহয় কাভার করনি।
    😀

    জবাব দিন
  16. তানভীর (৯৪-০০)

    ধুর! টুপ করেই পর্বটা শেষ হয়ে গেল! 🙁
    এই মেয়ে, পরের পর্বগুলা আরও বড় করে লিখবা।

    বেনাপোল বর্ডারের ওপাশের রাস্তা বেশ খারাপ, আর যেই বাসটা দেয় সেটাও খুব একটা সুবিধার ছিল না আমি যখন গিয়েছিলাম। সারারাত জার্নি করে সকালে আসলে রাস্তার চারপাশ দেখার মুড ছিল না, ঝিমাতে ঝিমাতেই কলকাতা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।

    যশোর রোড নামটা দেখার পর অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়, ঠিক এই পর্বের শেষ লাইনটার মত। 🙂

    জবাব দিন
  17. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    ৩৬ দিনের চিরুনী অভিযানের প্রতিটা দিনে আমি নিজের দেশকে আবিষ্কার করেছি নিত্য নতুন ভাবে, যদিও অভিযানটা ছিল আরেক দেশ, ভারতে।

    বাইরে গেলে সবারই বোধহয় এটা হয়, সবকিছুতেই তুলনা চলে আসে।
    ভাল লাগল পড়ে, পরের পর্বের অপেক্ষায়।
    ছবি দিলে আরও ভাল লাগত, ছবি দিস। সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। 🙂

    জবাব দিন
  18. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    শ্যাম্পু,
    যশোর রোডের আশপাশের মানুষ আমাদের আর বেশি দিন থাকতে দেবে না মনে হয়...এত জনরে দুই তিন মাস ধইরা এইখানে আটকায়া রাখলা কেন??? :((


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।