একদিন

আমাদের কলেজে যে কোন অসুখই কিভাবে কিভাবে যেন ছোয়াচে হয়ে যায়। একবার কার জানি appendicitis হল। তার পর থেকে একের পর এক সাত আট জনের ( ঠিক মনে নাই, তবে সংখ্যাটা আরো বেশি, কম না) এই appendix operation হয়ে গেল! ডেভিডসন দেখলে বলেই দিতেন যে appendicitis ছোয়াচে রোগ।
একবার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আমি লুলা হলাম। তারপর একের পর এক মানুষজন লুলা হতে থাকলো। আমার পর শৈলী, তারপর সুমি, আরও কে কে জানি, হঠাৎ একদিন রেস্ট ফল-ইন এ পাশে তাকায় দেখি একগাদা জুনিয়রও হাজির। যেহেতু আমি সবার আগে হইসি, তাই সবাই আমাকে লুলা পার্টির কমান্ডার ডাকে। আমিও খুব খুশি, এত বড় পদমর্যাদা পাওয়া তো কম কথা না!
আমার আর শৈলীর রেস্ট শেষ।একদিন রাতে, কি জানি মাথায় চাপলো, শৈলী আর আমি তিন হাউস অভিযানে বার হলাম (আমাদের তিনটা হাউস একই বিল্ডিং এ)। অনেক রাত। মোটামুটি সবাই ঘুমায় গেসে। যাদের সাহিত্যভাব জাগ্রত তারা শুধু জেগে। আমার কাছে ছিলো ব্ল্যাক গ্লিটার পেন। ওইটা দিয়ে খুব যত্ন করে সবার মোচ একে দিয়ে আসলাম। শৈলী ছিলো বিখ্যাত কারুশিল্পী, তাই ও এখানে অগ্রগণ্য। আর আমি ঝ্যাং painter, তাই আমিও কম যাই না।

ভাগ্য কারও প্রতি সদয় হয়, কারও প্রতি মুচকি হাসি মারে। আমাদের তো কোন দোষ নাই কলির ভাগ্যটা যদি এত বিটকেলে প্রজাতির হয়! কলি সিরিয়ালে সবার লাস্টে, ভাগ্যের ফেরে ওর মোচটা আঁকতে গিয়ে গ্লিটার পেন দিয়ে আর কালি বেরুচ্ছে না। কিন্তু মোচ তো আঁকতেই হবে। নাহলে discrimination হবে। আর ও কেন টেবিলের ওপর সবুজ সাইনপেন রাখবে? সেটাও কি আমাদের দোষ?? যাই হোক তৎক্ষণাৎ আর কিছু খুজে না পেয়ে ওরটা সবুজ সাইনপেন দিয়ে এঁকে দেয়া হলো। একপাশেরটা আঁকা হতেই ও ঘুমের মাঝে অন্য পাশ ফিরে গেলো। তাই অন্য পাশেরটা আর আঁকা গেলো না। যাই হোক, আমি আর শৈলী একরাশ আনন্দ নিয়ে ( আর কিছুটা ক্ষুদ্ধ মনে, বাকি আধাটার জন্য) রুমে ফিরে গেলাম।

পরের দিন সকালে উঠে মিশ্র প্রতিক্রিয়া! কারোরটা বালিশেই মুছে গেছে, কেউ কেউ দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে হতভম্ব। কিন্তু কে করসে এইটা কেউ ঐ মোমেন্টে বাইর করতে পারে নাই (উল্লেখ্যঃ আমরা দুইজন নিজেদেরটাও নিজেরা এঁকে নিয়েছিলাম, তবে অবশ্যই গ্লিটার দিয়ে। সাইনপেনে নয়।)

সবার কান্ড দেখতে দেখতে কলির কথা আমরা দুইজনেই ভুলে গেসি। গ্লিটার একটু ঘষাতেই উঠে যায়, কিন্তু সাইনপেন তো… আর সেইদিন সে উঠসে দেরীতে, নামসে সবার লাস্টে, সুতরাং হাউসমেটরাও কেউ ওকে দেখে নাই। মরার উপর খাড়ার ঘাঁ, ও নরমাল fall-in এ না, রেস্টের টাতে। ও ছাড়া আর কোন ক্লাস টুয়েল্ভ রেস্টে ছিল না।

…………………………………………………………………………………………………………

সেইদিন হাউসে আসার পর যে দৌড়ানিটা খাইসি!! অবশ্য ও ছাড়া আমরা সবাই বিমলানন্দ লাভ করসিলাম। ও পরে আমাদের ঘটনার বর্ণনা দিসলোঃ ও কোনোদিনও fall-in এ দাঁড়ায় থাকতে পারেনা। পেছনে হাত দিয়ে রাজা স্টাইলে হাটাহাটি করে! সেইদিনও…

জুনিয়ররা নাকি ড্যাব ড্যাব করে তাকায় ছিল, আর স্টাফ কি জানি একটা বলসিল-এত দিন পর ঠিক মনে পরতেসে না।

আল্লাহর অশেষ রহমত-সেদিন বিষ্টি হচ্ছিল। adjutente sir নামে নাই। নাইলে আমরা যে কি ধরাটা খাইতাম!!!

২,৫২৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “একদিন”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    ও কোনোদিনও fall-in এ দাঁড়ায় থাকতে পারেনা। পেছনে হাত দিয়ে রাজা স্টাইলে হাটাহাটি করে! সেইদিনও…

    এতদিন পরে পার্ফেক্ট হইছিল 😀 । মজা হইছে, অনেক হাসলাম :)) :)) ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    অনেক দিন পর ক্যাডেট কলেজের স্মৃতিচারণ পড়ে মজা পাইছি। ধন্যবাদ খেয়া। আরো বেশি বেশি করে স্মৃতিচারণ করো।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মশিউর (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।