আচ্ছা, একটু বকর বকর করি?

##
কয়েকদিন ধরে অনেক চাপের মধ্যে আছি। পড়াশোনার বিশাল চাপ, সাথে একটু একটু মানসিক চাপ। এক মাসের মত ভার্সিটি বন্ধ থাকার পর ক্লাস খুলেছে এবং আরও এক মাস ক্লাস হয়েছে। সেশন জটের প্যাঁচে পড়ে আমরা মাত্র থার্ড ইয়ারে উঠেছি, অন্য ভার্সিটিতে আমার বন্ধুরা সবাই ফাইনাল ইয়ারে। এইসব জিনিস চিন্তা করলে মাঝে মাঝে একটু খারাপ লাগে, মনের মধ্যে অস্বস্তি লাগে। তবু খুব বেশি পাত্তা দেই না আমি। ছাত্রজীবন যতদিন উপভোগ করা যায়, ততই ভাল। এখন যখন খুশি খাই-দাই, ঘুড়ি-ফিরি ইচ্ছামত; নিজে ছাড়া দুনিয়ার অন্য কাউকে নিয়ে টেনশন করতে হয় না। পাশ করে বের হলেই চাকরি খুঁজতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক ঘাপলা। তার চেয়ে এই ভাল।
টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাই। টাকা থাকলে কয়েকদিন খুব খাওয়া দাওয়া, মজা করি। না থাকলেও কীভাবে চালিয়ে নিতে হয়, শিখে গেছি। দিন থেমে থাকে না; একভাবে চলে যায়।
সেদিন টাকা পয়সা নিয়ে কথা হচ্ছিল ক্লাসে। এক বন্ধু হঠাৎ বলে- “তুই তো ব্লগিং করিস, টাকা পাস না?” আমি কী জবাব দিবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে বললাম- “নারে, ওইটা করে টাকা পাইলে তো পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে খালি লেখালেখিই করতাম”।

##
কয়েকদিন আগে বইমেলায় গিয়েছিলাম। সাথে টাকা নিয়ে যাইনি। খুব হতাশ লাগছিল। এত বই!! অথচ এর কয়টাই বা আমি কিনতে পারবো? আর কয়টাই বা পড়তে পারবো? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলের সামনে দিয়ে লোভীর মত ঘুরাঘুরি করলাম কিছুক্ষণ। বই দেখলাম, ক্যাটালগ নিয়ে আসলাম। বেছে বেছে কিছু বই কিনতে হবে ওখান থেকে। অবশ্য ক্যাটালগ পড়ারও একটা মজা আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “পয়লা নম্বর” গল্পে লিখেছিলেন-
“যাদের বেড়াবার সখ বেশি অথচ পাথেয়ের অভাব, তারা যেমন ক’রে টাইম্‌টেব্‌ল্‌ পড়ে, অল্প বয়সে আর্থিক অসদ্ভাবের দিনে আমি তেমনি ক’রে বইয়ের ক্যাটালগ পড়তুম”।

বই পড়ার নেশা আমারো আছে। এখনো সময় পেলে পুরাতন লেখকদের বড়সড় একটা উপন্যাস নিয়ে বসে যাই। শেষ করার আগে আর অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে না।
এবার বইমেলা থেকে ভাবছি ক্যাডেট ভাই বোনদের কিছু বই কিনবো।

##
ছাত্রদের আন্দোলনের শক্তি দেখলাম সেদিন।
পলাশীর মোড়ে প্রতিদিনই কয়েকবার করে যাওয়া হয়। এই জায়গাটা আমাদের ভার্সিটির সব ছাত্র ছাত্রীর সবচেয়ে দরকারী জায়গা। খাতা, কলম কাগজ পত্র, খাবার-দাবার থেকে শুরু করে যত কিছু লাগে তার প্রায় সবই পাওয়া যায় এখানে। তাই সারাদিনই ভিড় লেগে থাকে।

সপ্তাহখানেক আগে একটা দুর্ঘটনা হয়েছে পলাশীতে। এক আপু রিকশা করে যাচ্ছিলেন, পিছন থেকে একটা মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, ঠেলতে ঠেলতে অনেকদূর নিয়ে যায় রিকশাটিকে। উনার কোমর আর কাঁধে অনেক বড় আঘাত লাগে। উনি মারাও যেতে পারতেন। এরপর সম্ভবত চালক সহ ধরা পড়ে মাইক্রোবাসটি। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত ছাত্ররা মাইক্রোবাসের কিছু অংশ ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারপর বসে পড়ে রাস্তায়।

এর আগেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে পলাশীতে। আমাদের আগের ব্যাচের এক ভাই ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার দুই/তিন দিনের মাথায় আজিমপুরে দুর্ঘটনায় মারা যান। মাস খানেক আগে আমাদের ব্যাচের একটা মেয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল, পিছন থেকে একটা লেগুনা এসে ধাক্কা দিলে তার হাত ভেঙ্গে যায়।
এরকম আরও অনেক অঘটন ঘটলেও কর্তৃপক্ষ সহজে কোন ব্যবস্থা নিতে চায় না। সেদিন ছাত্ররা বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছিল। দাবী ছিল পলাশীর মোড়ে পর্যাপ্ত ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা, কয়েকটা স্পিড ব্রেকার এবং একটা গোল চত্বর স্থাপন না করলে কেউ ওখান থেকে উঠবে না।

বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ওইদিনই একটা অস্থায়ী গোল চত্বর বানানো হয়েছে। স্পিড ব্রেকার হয়েছে দুইটা আর পুলিশও থাকে এখন সবসময়।

একটা জিনিস শিখলাম সেদিন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা অনেক নিরীহ থাকি। কিন্তু একবার যদি মরিয়া হয়ে যাই, তখন আমাদের চেয়ে দৃঢ়সংকল্প আর ক্ষ্যাপা জাতি পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

##
একটা সফটওয়্যারের খুব অভাব বোধ করছি। “Bangla speech to text converter” নামের একটা সফটওয়্যার দরকার। আমার মত টাইপিং এ আইলসা লোকদের জন্য ভাল কাজে দিবে। শুধু মুখে বলে দিবো কী লিখতে হবে, আর লেখা হয়ে যাবে। প্রোগ্রামার এক বন্ধুকে বলেছিলাম বানিয়ে দিতে। আমি নিজেও অনেক ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করেছি। খুঁজে পাইনি। কুয়েটের(KUET) কয়েকজন শিক্ষক মিলে এই সফটওয়্যারের উপর একটা রিসার্চ পেপার লিখেছেন ২ বছর আগে। অথচ এখনো তাঁরা ওটা তৈরী করেননি। এরকম পেপার লিখে লাভ কী তাহলে, যদি সেটা কারো উপকারে নাই বা লাগে?
অনেক গুলো গল্প ঘুরছে মাথার মধ্যে বহুদিন ধরে। লিখতে বসেছি কয়েকবার। কিন্তু একটু লেখার পরই পছন্দ হয়না লেখা। মনে হয় আরও বেশি চিন্তা ভাবনা করে লিখতে হবে। এই ভেবে রেখে দেই। আবার বসি হয়তোবা, আবার একটু লিখি। গল্পগুলো শেষ হয়না।
আমি শরীর ও মনে এত আইলসা হলাম কেন কে জানে।

##
আজকে ছিল পহেলা ফাল্গুন। ঢাকার রাস্তায় আজ হলুদ সবুজের ছড়াছড়ি। আমার অবশ্য এসব দিনটিন সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহ নেই। না এগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ কিনা সে বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। আমার ভিড়, হইচই এগুলো খুব অপছন্দের। এইসব দিনগুলোতে রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় হয়, জ্যাম লাগে। তাই পারতপক্ষে আমি বের হই না।

তবে আজকে গিয়েছিলাম সোনারগাঁতে। পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে নয়। এমনি আজকে অনেক দিন পর উইকেন্ড ফাঁকা পেলাম। তিন বন্ধু মিলে সকালে বের হয়ে পড়লাম। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার হওয়ার কারণে এখন নারায়ণগঞ্জ যেতে অনেক কম সময় লাগে।

ক্লাস ইলেভেনের সাতদিনের শিক্ষাসফরে সোনারগাঁ যাওয়া হয়েছিল। তবে তাড়াহুড়ো করে কোনকিছু ভাল করে দেখা হয়নি। আজকে অবশ্য পানাম নগর দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল বেশি। দেখলাম, তবে একটু হতাশ হয়েছি। আমি আরও বড় কিছু আশা করেছিলাম; তবু একদম খারাপ না জায়গাটা।

সোনারগাঁতে গিয়ে দেখি কী একটা সিনেমার শুটিং হচ্ছে। নায়ককে দেখলাম না কোন, অচেনা একটা নায়িকা দেখলাম অর্ধ নগ্ন হয়ে নাচানাচি করছে। পড়নে খুবই ছোট পোশাক, তাও আবার সাদা রঙের প্রায় স্বচ্ছ। আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়। তার মধ্যে অনেক বাচ্চা কাচ্চা ছিল। বাবা-মায়ের হাত ধরে অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছিল।

বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম- “এত ছোট জামা কাপড় পড়ে মানুষ কীভাবে এত মানুষের মাঝে নাচানাচি করে? একটু লজ্জাও করে না?” বন্ধু জবাব দিল- “আরে মামা এইটা হল প্রফেশনালিজম। পেশার জন্য মানুষ সবই করে”।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- “তুই হলে এরকম করতি?” ও বলল- “ধুর ব্যাটা, আমি করমু ক্যান?”

আমাদের এক ক্যাডেট আপা নাকি নায়িকা হয়েছে। আশা করি উনি নিশ্চয়ই অশ্লীলতাকে হ্যাঁ বলবেন না। উনার সিনেমাটা দেখতে যেতে হবে একদিন।

২,১৮৮ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “আচ্ছা, একটু বকর বকর করি?”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কয়েকদিন আগে এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে পড়েছিলাম, "বাঙালীর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ায় আর তখন পেট ঠেকে।" 😀 😀

    ছোটবেলায় চাচার হাত ধরে পহেলা ফাল্গুণে ঢাবি এলাকায় ও বই মেলায় ঘুরতে যাবার স্মৃতি এখনো মনে করে ভাল লাগে। ক্লাশ থ্রীতে থাকতে মধুর ক্যান্টিনের সামনে বেশ কয়েকজন আপুর গাল টানাটানির শিকার হয়েছিলাম। ভীড় তখনো ছিল। তবে এখন যে সেটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কার্জন হল থেকে টিএসসি আসতেই নাকি ঠেলা বের হয়ে যায় ইদানিং!


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার তাও ভাগ্য ভালো - ১০এ পাশ করে ১৪এর শুরুতে ৩য় বর্ষে। আমরা ৯১এ পাশ করে ৯৮তে বেড়িয়েছিলাম। উচ্চাশা আর অনেক স্বপ্ন থাকলে বিষয়টা জীবনের গতি শ্লথ করে দেয়।
    ড্রাগন ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে না। এখন পর্যন্ত লেখার যে মজা সেটা কথা বলে পাওয়া যায় না। তবে জেনারেশন বদলাচ্ছে।
    ট্রাফিক কন্ট্রওল সুসংবাদ।
    ক্যাডেট আপার বই কেনার ইচ্ছা থাকলে আমার একটা বই বিক্রির সম্ভাবনা থাকে। তবে পারলে মেলায় আমি থাকতে থাকতে কিন। বিফলে মূল্য ফেরত।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তোমার যেদিন অনেক অনেক বই কিনে ফেলার সামর্থ্য হবে, সেদিন আর শেলফ কেনা লাগবেনা। একটা বিশাল পাঠাগার আজকাল হাতের মুঠোয় বানিয়ে ফেলা যায়!
    বকর বকর ভালো লাগছে -- সিরিজ করার কথা ভাবো। ছাত্রজীবনের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিউল(২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।