রোমান্টিকতা নিয়ে লেখা

অনেকে বলে, অনেকে ভাব নেয় বা অনেকে cool সাজার চেষ্টা করে আর বলে “ আমার Love Story ভাল লাগে না”। আমি শুনলে হাসি মনে মনে আর ভাল বন্ধুরা বললে সামনাসামনি ই হাসি আর বলি চাপা মেরে লাভ নেই।
যে যত যাইই বলুক না কেন। আমরা এই মানব জাতির সকলেই লাভ স্টোরি কম বেশি ভালবাসি। মানে আমাদের ভাল লাগে আর কি। দেখা যায় কেও কেও সেটা স্বীকার করতে লজ্জা পায়। তারা সবার সাথে বসে কোন রোমান্টিক সিনেমা দেখলে বা কোন আড্ডায় কথা উঠলে নিজের strong personality কে প্রতিষ্ঠা করতে তা অস্বীকার করে বসে অকপটে। আবার অনেকে হয় দিল খোলা, বলে ফেলে রোমান্টিকতায় তার অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভুতির কথা। বলতে দ্বিধা করে না মোটেই। আমরা ফ্রেন্ড রা সাধারনত এই ধরনের প্রকাশ্য রোমান্টিক নায়কদের টিটকারি মারি, সোজা ভাষায় পচিয়ে সাত আসমান উদ্ধার করি। এই পচানো, তুচ্ছতা কিন্তু মোটেই সেই প্রকাশ্য নায়কের প্রহসন নয়। বরং আমরা যারা আমাদের এই ভাললাগা সহজ সরল ভাবে প্রকাশ করতে নারাজ, এই টিটকারি আমাদের সেই উপলব্ধিগত জটিলতার উপর চাদর ফেলে দেয়া মাত্র।
কলেজে থাকতে কোন একটা কবিতায় পড়েছিলাম, সম্ভবত কবিতাটার নাম ছিল “Ode to Skylark”। সেখানে একটা লাইন ছিল। আমার পুরোটা মনে নেই, শুধুমাত্র মনে আছে একটা অংশ “sad and sadeity”. ক্লাস তো ভাল মত করতামই না। বরং কি কি যে ভাবতে বসে যেতাম তার ঠিক নেই। কিন্তু এই ক্লাস টা করেছিলাম। স্যার এর কথা গুলো আমার ভাল লেগেছিল। সেখানে স্যার বলেছিলেন যে দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল প্রকাশনা গুলো মানুসের দুঃখ নিয়ে লেখা। মানে সেটা কবিতা হোক গল্প হোক বা নাটক-সিনেমা। আমরা দুখের অনুভুতি গুলোকে ভাল মত উপলব্ধি করি, মানে আমাদের ভাল লাগার মধ্যে স্থান দি। এই কথা গুলো এই প্রেম ভালবাসার আর রোমান্টিকতার মধ্যে কেন আনলাম তা পরে বলছি।
এখন আসি রোমান্টিকতা মানে আমাদের যা ভাল লাগে তা নিয়ে। একটু ভেবে দেখি, একটু মনে করার চেষ্টা করে দেখি যে, একটা লাভ স্টোরির আমাদের কি কি জিনিস ভাল লাগে। দুই জন মানুসের একজন আর একজনের প্রতি যে ফিলিংস বা যে ভাললাগার অনুভুতি গুলো! বা দুজন দুজনের কাছে থাকা! কিম্বা একজন আর একজনকে তার অনুভুতি গুলোকে না বলতে পারার যে অপরিসীম দুঃখ সেই দুঃখকে আমাদের ভাললাগে। সেটা গল্পে হোক, কবিতার যাদু ছরির ভাষায় হোক বা কোন নাটক-সিনেমার ক্লাইমেক্স এ হোক না কেন। সেই অনুভুতি গুলো আমাদের জীবনেরই অনেক পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ-বেদনার মধ্যে মিশে একাকার হয়ে যায়। তখন সেই না বলতে পারার দুঃখে মন খারাপ করতে ভাল লাগে, বুক ভারি হয়ে যায়। বা অনেক সময় দুজন মানুসের এক হয়ে যাওয়ার গল্পের সাথে নিজেকে মেলে ধরে সেই আনন্দে সুখি হতে ভাল লাগে। আবার দুজনের মিল না হওয়ার বেদনায় আমাদের মনের আকাশও মেঘলা হয়ে ওঠে।
এবার আসা যাক, সেই Ode to Skylark বা Sad and sadeity কে কেন আমি এখানে আনলাম সেই প্রসঙ্গে। আবার যে কোন লাভ স্টোরি তে ফিরে যাই, রোমান্টিকতা কিন্তু কেন জানিনা সেই পর্যন্তই থাকে যতক্ষণ একজন আর একজনকে তার অনুভূতিগুলোকে জানাতে পারে না ততক্ষন। কাহিনীর শেষ হয় দুজনের মিল হয়ে যায় তখন, কখনও চুড়ান্ত বিচ্ছেদে। আবার কখন মিলের কাছাকাছিও যায় না। লাভ স্টোরি শেষ হয়ে যায় এই সব প্রান্তেই। ভালবাসার অনুভুতি প্রকাশ করতে পারার পজিটিভ বা নেগেটিভ ফলাফল এর মধ্যেই বেশিরভাগ। আবার যে সব কাহিনীতে শুরুই হয় দুজনের মিল থেকে কাহিনিটা কেন যেন চলতে থাকে তাদের শত দুঃখের সময় পার করার পর তা উতড়ে আসার সাফল্যকে ঘিরে। আমার Ode to Skylark এর ঐ লাইন্টার সাথে রোমান্টিকতার মিল এখানেই, ঐ যে বললাম! সব দুঃখ বেদনার কাহিনী আমাদের মনে দাগ কেটে যায়, আমাদের ভাল লাগে। দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল প্রকাশনা গুলো মানুসের দুঃখ নিয়ে লেখা! এখানেই রোমান্টিকতা আর ট্রাজেডি এক নদীর জল। রোমান্টিকতা ততক্ষন ই থাকে যতক্ষণ দুজন মানুসের একজন আর একজন এর প্রতি আবেগ অপ্রকাশ্য থাকে, বেদনাময় সমাপ্তি ঘটে বা আনন্দের সুর বেজে ঘটনার শেষ হয়। অনেকে বলবে হয়ত যে, কই আনন্দ র কাহিনীও তো থাকে। আমি বলি তা থাকে ঠিকই কিন্তু সেই মুহুরতেই আমাদের জীবনের প্রহসন গুলো এসে বাসা বাধে। কারও না পাওয়ার প্রহসন বা কারও পেয়েও সেই সৃতি রোমন্থন এর যে বেদনা তার প্রহসন। এই সব ধরনের দুঃখ বেদনা আর আনন্দের মধ্যে আমরা সকলেই লাভ স্টোরি কম বেশি ভালবাসি।
যারা অকপটে স্বীকার করি বন্ধুদের কাছে টিটকারি খাই আর যারা অস্বীকার করি টিটকারি দেবার মাধ্যমে তারা লুকিয়ে লুকিয়ে পছন্দ করি।

৪ টি মন্তব্য : “রোমান্টিকতা নিয়ে লেখা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    রোমান্টিকতা খারাপ লাগে না। তবে রোমান্টিক সিনেমার ক্ষেত্রে সমস্যা একটাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুরে ফিরে একই কাহিনি, আর কাকতালীয় ঘটনার ছড়াছড়ি, ব্যতিক্রম খুব কম।

    কোন এক গায়কের সাক্ষাৎকারে শুনেছিলাম, হিট গায়ক হবার শর্টকাট উপায় হচ্ছে নিয়মিত ছ্যাঁকা খাওয়ার গান গাওয়া। কারন ছ্যাকা পরবর্তী সময়ে সবাই মানসিকভাবে বেশ দূর্বল থাকে, আর তার অবসর সময়ও বেশি থাকে। সে সময় তার মনের অনুভূতির সাথে মোটামোটি মিলে যাওয়া কোন বিরহের গান শুনলেই মন পুরা উথাল পাথাল করে ওঠে, ফলাফল ওই গান তার কাছে হিট।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।