প্রথম পোষ্টে প্রথম প্রেমের গল্প

ক্যাডেট কলেজ ব্লগে আমার আগমন খুবই খারাপ সময়ে।এসেছিলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে খবর পেয়ে, কিন্তু এসেই দেখি সব খারাপ সংবাদ। লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু এই দুঃসময়ে কি লিখব ভেবে পেলাম না। তাই কিছু কমেন্ট দিয়েই বাংলা লেখাটা প্র্যাকটিস করতে থাকলাম। কিন্তু পরশু দিন দেখি রাহাত ভাই কিছুটা ভিন্ন সুরে ওনার প্রথম পোষ্ট দিলেন তাই ওনারটা দেখে সাহস করে আমিও একটা লিখে ফেলছি।

গল্পটি বেশ পুরান, গতকাল বন্ধুদের সাথে চ্যাট করার সময় সবাই ধরল যে প্রথম প্রেমের অভিজ্ঞতা বলতে হবে, আর তখনই এই সুখ(!) স্মৃতি মনে করতে বাধ্য হলাম, আর একবার যখন মনে করলামই তাই ভাবছি যে প্রথম পোষ্ট সেটা দিয়েই শুরু করি। সেজন্য আমার প্রথম পোষ্টে আমার প্রথম প্রেমের (এবং শেষ ???) গল্প।

তখন আমি ইলাভেনে পরি, একটু ছ্যাবলা স্বভাবের হওয়ার কারনে তখনো কোন গার্লফ্রেন্ড হয়ে উঠেনি, আসলে মেয়েদের একটু ভয়ই পেতাম। অনেককেই পছন্দ হত কিন্তু কখনই সাহস করে কিছু বলতে পারিনি। তো কোরবানি ঈদের ছুটিতে আমি তখন বাসায়, একদিন আমার এক খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছি, ওখানে হঠাৎ একটি মেয়ের উপর চোখ আটকে গেলো। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দর, ভাবলাম কথা বলবো, কিন্তু সেই পুরান ভয় পেয়ে বসলো, ওনেকখন নিজের সাথে যুদ্ধ করলাম যে ব্যাটা কিছু বল এ সুযোগ আর পাবি না। শেষে এক বুদ্ধি বের করলাম। আমার কাজিনকে জিঙ্গেস করে জানলাম যে মেয়েটি তার বান্ধবি, তাই তাকে বললাম আমকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। আমার কাজিনটা বেশ চটপটে সে ঠিকই পরিচয় করিয়ে দিল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতেই হবে কিছুক্ষনের মধ্যেই মেয়েটির সাথে আমার বেশ গল্প জমে গেল। আমার কিছু বস্তা পঁচা জোক্‌সে তাকে হাসতে দেখে বুকের ভেতর ধকধক করে উঠছিল, আর তার হাসিগুলোও ছিল চমৎকার যাকে বলে ভুবন ভুলান। এরমধ্যে হঠাৎ দেখি যাবার সময় হয়ে গেছে, মনটা খারাপ হয়ে গেল, হায় আমার স্বপ্নের মেয়েটির কি আর দেখা পাবোনা? শেষে সাহস করে তার ফোন নাম্বার চেয়ে বসলাম। এরপরই ভয় পেয়ে গেলাম, এত অল্প সময়ের পরিচয়ে ফোন নাম্বার চাচ্ছি চড়টড় না মেরে বসে, কিন্তু না, সে দেখি হাসিমুখেই তার নাম্বার দিয়ে দিল। আমিতো মহাখুশি, প্রায় নাচতে নাচতে বাসায় আসলাম।

রাত ১২ টায়, মোবাইল নিয়ে বসেছি। জীবনের প্রথম ফোন প্রেম করবো, কিছুটা উত্তেজিত, ভয়ে ভয়ে মেয়েটির নাম্বার টিপলাম, ২টি রিং হতেই মোহনীয় কন্ঠে শুনতে পেলাম- “হ্যালো” । খুশি হয়ে গেলাম, আমার ফোনের জন্যই সে অপেক্ষা করছিল এই ভেবে। শুরু হল আমাদের প্রেমালাপ। ঘড়িতে ১২টা থেকে ১টা বাজে, ২টা গরিয়ে ৩টা । কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, কি ব্যাপার ফোন রাখেনা কেন? আমি আবার একটু কিপ্টা স্বভাবের, আর সেদিনি মাত্র ফোনে ৫০০ টাকা ভরেছি, এক রাতের মধ্যে খরচ করতে ইচ্ছা করছিলনা। শেষে পরের দিন তাকে সিনেমা দেখাবার আর লান্ঞ্চ খাওয়াবার কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।

যদিও লান্ঞ্চ, ভাবলাম স্লিম মেয়ে, ডায়েট করে নিশ্চই, বেশি খাবেনা, ফুচকা চটপটি দিয়ে চালিয়ে দিব, এই বলে কিপ্টা মনকে শান্ত করে তাকে নিয়ে গেলাম বসুন্ধরায়, আমার প্রথম ডেটে। সিনেমা দেখা শেষে বসলাম ফুড কোর্টে। এরপরি দেখি মেয়ে অরডার দেয়া শুরু করেছে। বিশাল লিস্ট। একটু ভয় পেলাম ১৫০০ টাকা এনেছি, শেষে পকেটে টান না পরে। আমি ভয়ে আমার জন্য কিছু অরডার দিলামনা। দেখি একজনেই বিল এসেছে ১৪২৫ টাকা, কিছুটা আশস্ত হলাম যাক খালি পেটে অন্তত হেটে বাসায় যেতে হবে না। তার খাওয়া শেষে উঠছি এসময় পিছন থেকে ওয়েটার ডাক দিল- “সার, বকসিস?” আমিতো অবাক! বললাম- “খাওয়াতো আমি আনসি তাহলে বকসিস কিসের?” বলে- “ঈদের টাইম সার, সবাই দেয়”। শেষে ২০ টাকা বের করে দিলাম, কিন্তু ওয়েটার বলে- “সার ১০০ টাকা দেন”। আমিতো মহা ফ্যসাদে, এর মধ্যে দেখি মেয়ে কেমন কেমন করে আমার দিকে তাকায়, ভাবলাম ছ্যচ্‌রা ভাবছে, তাই আরও ৩০ টাকা বের করে ওয়েটারকে দিয়ে দিলাম। এরপর বসুন্ধরা থেকে বের হব হঠাৎ মেয়ের আবদার, তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসতে হবে। আমিতো মহাবিপদে, মেয়ের বাসা উত্তরা, ওখানে গেলে আমার আর আজকে বাসায় যাওয়া লাগবেনা। তাই ফোন ধরার ভান করে বললাম যে বাসায় সমস্যা হয়েছে তাই আজকে যেতে পারব না। বলেই কেটে পরলাম।

ন্যাড়া নাকি দুবার বেল তলায় যায়না। হায় যদি তা বুঝতাম! দুদিন পর হঠাৎ রাতে মেয়েটির ফোন আসলো। আবার সেই মোহনীয় কন্ঠের- “হ্যালো”। বললো- “তোমার সাথে সেই দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন, তোমাকে আমার খুউব ভালো লেগেছে”। এই এক বাক্যেই আমিতো গলে পুরা তরল। আগের বারের অভিজ্ঞতা আমার মাথা থেকে তখন বেমালুম হাওয়া। কেন ফোন করিনি এই নিয়ে কিছুটা ঝাড়ি খাবার পর কথা হল যে আগের যায়গায় তাকে আবার লান্ঞ্চ খাওয়াব।

আম্মার কাছ থেকে কোচিং-এর কথা বলে ২৫০০ টাকা নিয়ে বেস ফিটফাট হয়ে বাসা থেকে বের হলাম। বসুন্ধরায় এস্কেলেটর দিয়ে উঠছি আর ভাবছি যে যাক, আজকে আর টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলায় পরতে হবে না। ওঠার পর আগের দিনের টেবিল খুজছি কারন তার ওখানেই বসার কথা। কিন্তু একটু দূর থেকে টেবিলের দিকে তাকিয়েই আমিতো পুরা থ। দেখি সে একা নয়, সাথে আরো দুজন, এবং মাশাল্লাহ তাদের সাইজ! এটা দেখেই আমি ওখানেই উল্টা ঘুর, দৌড়ে চল, সোজা বাসায়।

এরপর থেকে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যে জীবনে আর কোন দিন কোন মেয়েকে খাওয়াতে নিয়ে যাবনা, এমনকি সে যদি ঐশর্য্য-ও হয় তাও না।

(প্রথম পোষ্ট হিসেবে মনে হয় একটু বড় হয়ে গেল। বাংলা লেখায় এখনো অতটা চালু হয়ে উঠতে পারিনি। বানান-টানান ভুল হয়ে থাকলে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন।)

৭,৭৭৫ বার দেখা হয়েছে

৮৫ টি মন্তব্য : “প্রথম পোষ্টে প্রথম প্রেমের গল্প”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    আহারে, সাজিদ!
    ব্যাপার না, এইরকম তো হয়ই! জ্ঞানীরা বলে গেছেন, একবার না পারিলে দেখ শতবার। এত সহজে হাল ছাড়লে তো হবে না!

    =)) =)) নাহ্‌! হাসি থামাইতে পারলাম না! =)) =))

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    আমি আমার প্রেমিকার টাকায় খাইতাম, নিজের পকেটে টাকা থাকতো না। মেয়েরা তো মায়াবতী, তাই খাইতে না চাইলেও খাওয়াইত। নিজেরে এই বইলা সান্ত্বনা দিতাম যে, বিয়া করলে তো আমিই রোজগার করুম। সুতরাং তখন কাটাকাটি হয়ে যাবে। :grr:

    জবাব দিন
  3. বন্য (৯৯-০৫)
    যে জীবনে আর কোন দিন কোন মেয়েকে খাওয়াতে নিয়ে যাবনা, এমনকি সে যদি ঐশর্য্য-ও হয় তাও না

    ঐশ্বর্য আমার কাছে খাইতে চাইলে আমি গায়ের রক্ত বেইচা হইলেও তারে খাওয়ামু.... :grr: :grr: :grr:

    জবাব দিন
  4. আর সেদিনি মাত্র ফোনে ৫০০ টাকা ভরেছি
    একটু ভয় পেলাম ১৫০০ টাকা এনেছি,
    ২৫০০ টাকা নিয়ে বেস ফিটফাট হয়ে বাসা থেকে বের হলাম।

    😮 😮 😮
    কুন্দুকানের্চাইল্খাও বাবা?

    জবাব দিন
  5. মাইয়ারে ভাল কৈরা সিল দিয়া পুষাইয়া নিস।

    এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ আছে পিসিসির রাব্বি ভাই। রাব্বি ভাই, পুলাডা অনেক বেশি সিল খাইয়া গেছে। আপনি একটু দীক্ষা দিয়া দিয়েন বস।

    জবাব দিন
  6. গল্পের নায়কের জাগায় আমি থাকলে উল্টা ঘটনা ঘটত...
    আমি আমার লাইফে যেই কয়টা মাইয়ার লগে খাইতে গেসি, বেশীর ভাগের বিল ওরা দিসে; কারণ খাইবার গরজ হেগো আছিলো। আমি ক্যান পেইন নিতে যাইতাম???!!!
    বেল্লাসেএএএএএএএ??????????????????????????

    জবাব দিন
  7. জাবীর রিজভী (৯৯-০৫)

    স্বাগতম...
    তয় আমি একটা কতা বুজতে পারতেছি না।

    খুশি হয়ে গেলাম, আমার ফোনের জন্যই সে অপেক্ষা করছিল এই ভেবে। শুরু হল আমাদের প্রেমালাপ।

    একদিন দেইখা ফার্স্ট টাইম ফোন দিয়া "প্রেমালাপ" শুরু করলি ক্যামনে...

    চালায়া যা।এই লাইনে উজ্জ্বল নক্ষত্র.....

    জবাব দিন
  8. জিহাদ (৯৯-০৫)

    শেখার কোন শেষ নাই। বহুত কিসু শিখলাম 😀

    তাকে হাসতে দেখে বুকের ভেতর ধকধক করে উঠছিল, আর তার হাসিগুলোও ছিল চমৎকার যাকে বলে ভুবন ভুলান। এরমধ্যে হঠাৎ দেখি যাবার সময় হয়ে গেছে, মনটা খারাপ হয়ে গেল, হায় আমার স্বপ্নের মেয়েটির কি আর দেখা পাবোনা?

    ছুড বেলার কথা মনে করায় দিলা 🙁


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  9. নাসির (৯৮-০৪)

    মেয়েদের আমিও বেশ লিজ্জা পাইতাম :shy: কথা বলতে গেলে আমার বাম হাত কা্ঁপতো।বুঝতাম না এত কিছু থাকতে বাম হাত কেন?আজো বুঝলাম না। আর হাসির কিছু এত বেশি বলে ফেলতাম যে, বয়ফ্র্যান্ড হবার জায়গায় জোকার হয়ে যেতাম।খুব প্যাথেটিক 🙁
    এনিওয়ে, লিখার স্টাইল এবং বর্ণনাভংগী সুন্দর।
    আরো বেশি বেশি লিখ..............১স্টেই তো মাৎ করে দিছ।

    জবাব দিন
  10. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    আর সেদিনি মাত্র ফোনে ৫০০ টাকা ভরেছি

    একটু ভয় পেলাম ১৫০০ টাকা এনেছি,

    ২৫০০ টাকা নিয়ে বেস ফিটফাট হয়ে বাসা থেকে বের হলাম।

    তুমি ত মিয়া পোলাদের ইজ্জতের ফালুদা বানাইয়া দিলা।ফার্স্ট ডেটে এত কুরবানী :duel: আর রাক্ষসের মত খাওয়া ! এইটা কি রিয়াল নাকি বানানো গল্প ? বাপের টাকা হলেও গায়ে লাগা উচিৎ আর নিজের হলে ত কথাই নেই।১ম ফোনেই ঘন্টার পর ঘন্টা কথা 😮 আর আর তখনকার যে কলরেট ৫০০ টাকা সারারাত কথা বললেও ফুরাবেনা।এইসব মাইয়ার বেল আমার কাছে কোনদিনই ছিলনা। :frontroll: :goragori:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তুহিন (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।