স্বপ্নভঙ্গের কথন

অনেকক্ষন একনাগারে ঝিম মেরে বসে থাকার পর মাথা তুলল ছেলেটি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাড়ালো সে। ডানে বামে তাকিয়ে একবার তাকিয়ে দেখে নিল। পার্কটিতে এই সাত সকালেই মানুষজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। আরেকটি দীর্ঘ ক্লান্তিকর দিনের শুরু হল। পাশের বেঞ্চটিতে বুড়োমতন একটি লোক তার নাতিকে নিয়ে বসে বাদাম খাচ্ছে। সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ছেলেটা, কি যেন চিন্তা করল, তারপর জ্বলে ধুসর বিবর্ন হয়ে যাওয়া জিন্সটাকে একটা ঝারা দিয়ে ধীরে ধীরে হাটা শুরু করল সে। পার্ক থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকল। গন্তব্য ঠিক করছে। বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছে সে এই দিনটার জন্য,প্রস্তুতি নিতে পার করে ফেলেছে প্রায় দুই মাস। আজ তার সেই বিশেষ দিন। আপনমনে হাটা শুরু করল রাস্তা ধরে। অনেক্ষন হাটার পর রাস্তার পাশে একটি ফোনের দোকানের পাশে দাড়াল। একবার কি যেন ভাবল, তারপর আপনমনেই আবার মাথা নেড়ে হাটা ধরল। কেমন এক ঘোরে ধরা মানুষের মত হাটা। আশেপাশের কোনকিছুর উপর দৃষ্টি নেই। মাথা নিচু করে হেটে চলেছে সে।
হাটতে হাটতে একসময় রেলওয়ে স্টেশনের কাছে এসে পরল। একটা ফাকা দেখে চায়ের দোকানে বসল সে। চায়ের সাথে একটা বেনসন সিগারেটও ধরাল, তারপর তৃপ্তি নিয়ে টান্তে থাকল। আশেপাশে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেপিলে ঘোরাঘুরি করছিল, বোধহয় এই পাশের বস্তির হবে। সিগারেটের শেষ টান টা দিয়ে উঠে দাড়াল, পকেটের এক কোনা থেকে খুজে খুজে একটা ছেড়া ময়লা ১০ টাকার নোট বের করে দোকানিকে দিল, তারপর ফেরত পাওয়া টাকাটা বাচ্চাগুলোকে ডেকে দিয়ে দিল। তারপর আবার হাটা শুরু করল, এবার রেল লাইন ধরে।

আশেপাশের বস্তিগুলো থেকে দুই একটা কৌতুহলি চোখ উকিঝুকি মারছে, কয়েকটা মেয়ে আবার তার পাশে দৌড়ে এল আর ওড়নার নিচ দিয়ে গাঁজার কয়েকটা পুটলি বের করে দেখাল। কিন্তু এগুলোর দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়েগুলো ফিরে যায় আবার তাদের ছোট্ট ঘরগুলোর দিকে। হাটতে হাটতে একসময় শহর ছাড়িয়ে আসে ছেলেটি, এখন আর শহরের গাড়িঘোড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, কলকারখানার শব্দ নেই, মানুষের হইচই আর কোলাহল এখানে অনেক নীরব। আরও কিছুদুর হেটে গিয়ে রেললাইনের একপাশে বসে পরল সে। ভোরের অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতিকে দেখতে লাগল সে, এখনও কুয়াশা ঠিকমত কাটে নি, আজকাল ১১ টার আগে ঠিকমত কুয়াশা কাটেও না। একটু একটু বাতাসও বইছে। হাটু ভাজ করে বুকের কাছে নিয়ে এসে জবুথবু হয়ে বসল ছেলেটা। কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে থেকে আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করল। প্রায় মিনিট বিশেক হাটার পর আবার থামল সে, একবার আশেপাশে দেখ নিল, নাহ কাউকেই দেখা যাচ্ছে না, জায়গাটা পছন্দও হল তার। একেবারে গাছপালায় ঢাকা, মানুষজনও নেই, আর দূরে কেউ থেকে থাকলেও এখানে আসতে হলে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগবে, ততক্ষনে সব শেষ হয়ে যাবে।

আবারো বসে পড়ল সে, এবার একদম রেল লাইনের মাঝখানে কাঠের পাটাতন গুলোর উপর। সময়টা জানতে পারলে ভাল হত,ভাবল। তারপর আবার আপনমনেই অপ্রকৃতস্থ মানুষের মত হেসে উঠল, নাহ সময় জেনে কি হবে। এরচেয়ে যতটুকু সময় হাতে আছে বসে বসে জীবনের হিসাবটা করে ফেললে খুব একটা খারাপ হয় না।

ফ্ল্যাশব্যাক – চলবে

২,৫৮৯ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “স্বপ্নভঙ্গের কথন”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    রেজোয়ান ভাই আছেন কেমন? ভালা নি? গল্পতো ভালাই লিখছেন :clap: :clap: :clap:
    আরে ভাইরা মেলা দিন ছিলামনা। এখনতো ব্লগের আগা মাথা কিছু খুঁইজা পাইতেছি না :bash: :bash: :bash: লাখ লাখ লেখা। কোনটা রাইখা যে কোনটা পরমু বুঝতাছি না। ~x( ~x( ~x( কেউ প্লিজ সাহায্য করেন 🙁 🙁 🙁


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
    • রেজওয়ান (৯৯-০৫)

      আল্লাহর কসম, আমি মনে করছিলাম আপনি আমার উপর কোন কারনে ক্ষেইপা আছেন......... 😕
      যাউক, ভয়ডা ভাইঙ্গা গেল 😀 😀 😀
      আমি গত ৫ দিন সাভার ছিলাম, কিন্তু ঢাকা যাওয়া হয় নাই 🙁
      আর আপনারে নক করছিলাম,কিন্তু রেসপন্স না পাইয়া ভয় পাইছিলাম 😛

      জবাব দিন
      • কামরুল হাসান (৯৪-০০)

        :)) :))
        দিনকাল খারাপ যাইতেছে। খুব চাপের মইধ্যে আছি 🙁
        ১৭ তারিখ ঢাকা আইসা পর, আড্ডা দিমুনে।


        ---------------------------------------------------------------------------
        বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
        ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

        জবাব দিন
        • রেজওয়ান (৯৯-০৫)

          দেখি বস, কিছুক্ষন আগে ল্যান্ড করলাম রংপুর, রুমে আইতে না আইতেই খবর আইয়া পরছে আমারে কুড়িগ্রাম পাঠাইয়া দিবে, যদিও অইখানে মজা , কাম নাই, কিন্তু আমি বাসে বইসা চিন্তা করতেসিলাম যে, এইবার ইনশাল্লাহ ডজ মাইরা চইলা যাব একদিনের জন্য, কিন্তু কেমনে কি 🙁

          জবাব দিন
  2. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এ তো পুরা বাংলাদেশের এখনকার সিরিয়াল শুরু হওয়ার আগেই এড চইলা আসল। আরেকটু লেখলে ভাল হইত না?
    ভাল লাগছে। যেমন করে হঠাৎ করে শুরু হল মনে হচ্ছে অনেক বড় কাহিনী হবে। অপেক্ষা করছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজওয়ান (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।