মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গল এবং নীলকন্ঠ টি কেবিন !!! (ছবি ব্লগ)

রমজান মাস চলছে…সবাই এখন কাজের চাপ থেকে একটু হলেও হালকা থাকে, কিন্তু আমাদের কপাল বড়ই খারাপ। এই রোজার মধ্যেও এক্সারসাইজ করে এক্কেবারে জান প্রান শেষ। ৪ দিনের পাঙ্গা শেষ করে গত শুক্রবার ফিরে এলাম। আর তারপর শুক্রবার সারাদিন শুধু ঘুম আর ঘুম। শনিবার সকাল থেকেই প্ল্যান করছিলাম যে কি করা যায়…… :dreamy:

হঠাৎ মাথায় এল যে একটা জায়গায় যাওয়া এখনো বাকি আছে, তাই যেই ভাবা সেই কাজ। ২ ঘন্টার মধ্যেই ৬ টা বাইকে ১৩ জন বেড়িয়ে পড়লাম মাধবকুন্ডের উদ্দ্যেশ্যে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তা, সেখান থেকে শ্রীমঙ্গল যাবো তাও আরও ৫০ কিলো, তারপরও ভাবলাম এটাই হয়ত শেষ হলি ডে যেটাতে ফ্রী আছি, তাই আল্লাহর নামে রওনা করলাম। :thumbup:

যাবার রাস্তাটা বেশ ভাল, শুধু সমস্যা একটাই ছিল, তা হল সবাই রোজা থাকায় পথে থেমে থেমে চা সিগারেটের ব্রেকটা হল না। থেমেছিলাম ২/৩ বার, ফ্রেশ হবার জন্য। যাই হোক, ১০ টায় রওয়ানা দিয়ে আমরা ১১.৩০ এ কুলাউড়া পৌছালাম, তারপর ছোট্ট একটা বিরতি নিয়ে মাধবকুন্ড গিয়ে পৌছালাম ১২.৩০ এ। :goragori:

আসলেই চমৎকার একটা ঘোরার জায়গা। দেশে এত্ত সুন্দর সুন্দর জায়গা যে আছে তা সিলেট না এলে বোঝাই হত না। ঝর্ণাটা চমৎকার, শুধু একটা ঝামেলা, ঝাপাঝাপি করতে পারলাম না……বেশ কয়েকটা প্রান নাকি হারিয়েছে এখানে গোসল করতে গিয়ে, তাই মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। তবে একটু পরেই পেয়ে গেলাম একটা পিচ্চি গাইড। যে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে গেল আমাদেরকে আরেকটি ছোট্ট ঝরনায়, সেখানেই মন ভরে গোসল করলাম আমরা। লাফালাফি কম হল না। প্রায় ৩ টা পর্যন্ত হই হুল্লোড় করে আমরা বের হয়ে পরলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। :tuski:

শ্রীমঙ্গল যাবার রাস্তাটা ছিল অদ্ভুত সুন্দর, পাহাড় আর বনের মাঝ দিয়ে আকাঁবাকাঁ রাস্তা, দু পাশে বিশাল গাছের সারি, মনে হচ্ছিল কোনো বিদেশী রেইন ফরেস্টের মাঝ দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এরপর এসে গেল চা বাগান। দুই দিকে যতদূর তাকাই শুধু চা বাগান। দারুন লাগছিল প্রতিটা পরিবেশ। চা বাগানে ঘোরাঘুরি করে আমরা চলে গেলাম শহরে, ইফতারির উদ্দেশ্যে। একটা ভাল দেখে রেস্টুরেন্টে হানা দিলাম সবাই, সেই কলেজের মত মুড়ি মাখানো হল একসাথে ১৩ জনের, বিশাল এক গামলাতে, আর আযানের সাথে সাথেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সবাই। সারাদিনের পরিশ্রম, তাও রোজ়া রেখে……যে খাওয়াটা দিলাম……আহহহ। :awesome:

যাই হোক, ইফতারি পর্ব শেষ করে আমরা বের হলাম আসল জিনিসের খোঁজে। নীলকন্ঠের ৭ রঙের চা। অনেক আগে থেকেই নাম শুনছিলাম এটার, তাই সেই লোভে সবাই বাইক ছোটালাম রামনগরের দিকে। শহর থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা, চা বাগানের পাশে গ্রামের মত একটা জায়গায় নীলকন্ঠ টি কেবিন। ইফতারির পর মাত্র খুলেছে তখন। ভালই চমক খেলাম আমরা, ভদ্রলোক এক বিশাল রেসিপি বের করেছেন, এক কাপেই ৭ লেয়ারের চা, এবং অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটা লেয়ারে ভিন্ন স্বাদ, দেখলাম অনেকগুলো পোস্টার, টিভিতে তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে, এমনকি বিদেশেও তার এই চায়ের খবর পৌছে গেছে। আমাদের সাথে দেখলাম ঢাকা থেকেও এক পার্টি এসেছে চা খেতে। ২০ মিনিট বসে থাকার পর এল সেই চা। আজিব জিনিস……আমরা ৭ লেয়ার পাই নি, ওইদিন শুধু ৫ লেয়ারের চা দেয়া হচ্ছিল। এক এক কাপ ৫০ টাকা, প্রতিটা লেয়ারের জন্য ১০ টাকা করে, ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত চা আছে, আর শুধু চা’ই পাওয়া যায় এখানে। আমরা মন ভরে চা খেলাম সেখানে। বেশ চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা হল এইদিনটায়। :teacup:

বহুদূরের পথ, রাতের অন্ধকার, ঘরে ফেরার পালা। সবাই ক্লান্ত, তাই সাবধানে আমরা রওয়ানা হলাম সিলেট এর পথে, হাইওয়ের রাস্তা ধরে, এবং রাত প্রায় ১২ টার দিকে আমরা মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে কোনরকম বিপত্তি ছাড়াই পৌছে গেলাম ক্যান্টনমেণ্টে। সিলেট এর সব জায়গা ঘোরা হয়ে গেল। আমার প্রথম ভিজিট হিসেবে এই ৪ মাস ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহুর্ত। এতদিন চট্টগ্রাম ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর, কিন্তু এখন মনে হয় সিলেট কে এই জায়গাটা না দিয়ে আর পারা যাবে না। ~x(

সবার জন্য বলছি, যারা এখনও এই সিলেট এ আসেন নি, লাগেজ প্যাক করে ঈদের পরই চলে আসুন এখানে, না হলে মিস করবেন………আর থাকা খাওয়া নিয়ে বিশেষ চিন্তা ভাবনার কিছু নাই, আমাদের আহসান ভাই আছেন না ?????
আর এবারে দিয়ে দিলাম কিছু ছবি…… B-)

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত


ঝর্ণার আরেকটা ছবি...

ঝর্ণার আরেকটা ছবি...


একটু ভাব...

একটু ভাব...


পানি বয়ে যাবার পথ

পানি বয়ে যাবার পথ


এইখানেও হালকা পার্ট :D

এইখানেও হালকা পার্ট 😀


ক্লান্ত রাহী (সিলেট ৯৯-০৫)

ক্লান্ত রাহী (সিলেট ৯৯-০৫)


ঝর্ণার পথে......

ঝর্ণার পথে......


আসলটার মিনি ভার্সন

আসলটার মিনি ভার্সন


এইটাতেই খুশী

এইটাতেই খুশী


লাফালাফি ঝাপাঝাপি

লাফালাফি ঝাপাঝাপি


মাউন্টেন ক্লাইম্বিং

মাউন্টেন ক্লাইম্বিং


রেডী ফর শ্রীমঙ্গল

রেডী ফর শ্রীমঙ্গল


বন্যপ্রানী অভয়ারন্য

বন্যপ্রানী অভয়ারন্য


লাউয়াছড়া পার্ক

লাউয়াছড়া পার্ক


ফিনলে'র চা বাগান

ফিনলে'র চা বাগান


চা বাগানে কিছুক্ষন

চা বাগানে কিছুক্ষন


সাত রঙ এর চা

সাত রঙ এর চা


চা পান পর্ব

চা পান পর্ব


চিয়ার্স !!!!

চিয়ার্স !!!!

৫,৬৭৯ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গল এবং নীলকন্ঠ টি কেবিন !!! (ছবি ব্লগ)”

  1. রকিব (০১-০৭)

    ভাবতাছি, সিসিবি টি স্টলেও ১২-১৪ রঙের চা চালু করতে হবে। সঙ্গে পুরি (সিলোটি ফুরি না)।
    রেজওয়ান ভাই, ফুরি দেখলেন কেমন? :shy:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    ভাবতাছি, সিসিবি টি স্টলেও ১২-১৪ রঙের চা চালু করতে হবে। সঙ্গে পুরি (সিলোটি ফুরি না)।
    রেজওয়ান ভাই, ফুরি দেখলেন কেমন? :shy:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মাস্তিতেই আছস দেখা যাচ্ছে... ৭ রঙ্গা চা'স কথা আগে শুনি নাই, নেক্সট টাইম...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. তানভীর (৯৪-০০)

    ঐ মিয়া, তোমার ছবিতে দেখি ৫ লেয়ারের চা, বর্ণনাতেও বললা ৫ লেয়ারের চা খাইছ- ক্যাপশনে কেন ৭ রঙের চা???

    মাধবকুন্ড বেশ ভালো লেগেছে। ঝর্ণার উপরের অংশটা বেশ সুন্দর।

    শ্রীমঙ্গলের রাস্তাটা দারুণ! আমার খুব ভালো লেগেছে। আর লাউয়াছড়া ফরেস্টের ভিতরের জায়গাটা তো খুব সুন্দর! মাঝখান দিয়ে রেললাইন চলে গেছে, খুব ভালো লেগেছিল ওটার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে।

    পাঁচ লেয়ারের চা খেয়েছিলাম, স্বাদে খুব একটা ভিন্নতা পাইনি, তবে দেখতে দারুণ! 🙂

    জবাব দিন
  5. টুম্পা (অতিথি)

    মাধবকুন্ড নিঃসন্দেহে দারুণ...ছোট ঝর্ণাটার কথা শুনছি কিন্তু যাওয়া হয়নি। সারি নদী তে নৌকা ভ্রমন করনাই? অসাধারন জায়গা...
    ৫ লেয়ারের চা তে আমি ও খুব একটা ভিন্ন স্বাদ পাইনাই। তবে দোকানীর কান্ড-কারখানা দেখে মজা পাইছি..সব অর্ডার নিয়ে গুপ্ত ঘরে দরজা বন্ধ করে চা বানায়!! 😛

    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘুরে এলাম এই যায়গাগুলো থেকে। এই ৭ রঙের চা আমার কোনভাবেই পছন্দ হয় নাই। শেষ লেয়ারটাকে ঘন চিনির মিশ্রন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই। তবে মাধবকুণ্ড অসাধারন যায়গা। আর ড্রাইভ করার জন্য শ্রীমঙ্গল পছন্দ হইছে।

    জবাব দিন
  7. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    ঝাপাঝাপি করতে পারলাম না……বেশ কয়েকটা প্রান নাকি হারিয়েছে এখানে গোসল করতে গিয়ে,

    কলেজ লাইফের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ১১ এর এক্সকারশনে সব সিসি আমাদের এফসিসি আসে আমরা যাই সিলেট।তাই সিলেট মোটামোটি ম্যাক্স জায়গা ভিজিট হয়েছে।জাফলং মাধবকুন্ড টি স্টেট রিয়েলী নাইস।এই ঝরনার ঠিক নিচে চলে গিয়েছিলাম।আমার মাথার উপর সরাসরি পানি পড়ছিল।দারুন এডভেঞ্চার :goragori: :grr: ।কিন্তু এইটা যে ডেঞ্জার জোন ঝান্থাম না।নিরাপদে ফিরে এসেছি। :awesome: :tuski:

    জবাব দিন
  8. নাজমুল (০২-০৮)

    হুম্মম্ম সিলেট জায়গাটা অসাধারণ। বিশেষ করে কিছু বিশেষ জায়গা খুব ইচ্ছা একবার ওখানে যাবার 🙁
    রেজয়ান ভাই আমি আপনার অনুরোধ রাখতে ইদের পর যামু থাকার ব্যাবসথা কইরা দিয়েন তাহলেই হবে

    জবাব দিন
  9. রাফি (২০০২-২০০৮)

    ভাই আমাদের সবচেয়ে মজার এক্সকারসনের(7 days বাদে) কথা মনে করাইয়া দিলেন।
    সেই ক্লাস এইটে গিয়েছিলাম।এখন মনে আছে। ঈদের পরে আবার যাব ইনশাল্লাহ্‌।সাত রঙের চা কি মজা না?শ্রীমঙ্গল দেখতে কেমন।কখনও যাওয়া হয় নাই।


    R@fee

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।