ফ্লাইট এএ৪১৬৩

কানের মধ্যে চাপ বাড়ার সাথে সাথে হাসানের ঘুমটা ভেঙে গেল। সাথে সাথে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টের লাউড স্পীকারে ভেসে আসা কন্ঠে ইংরেজীতে স্পষ্ট উচ্চারণে শুনতে পেল, “আর দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের ফ্লাইট লেক্সিংটন ব্ল গ্রাস এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করবে”। পুরো দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটে প্রায় পুরোটা সময় গভীর ঘুমে আছন্ন ছিল প্রফেসর হাসান। শিকাগো থেকে টেক অফ করার পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। ক্লান্তির কাছে মাথা পেতে চোখ বুঝতেই সব অন্ধকার হয়ে যায়। এখন আর ঘুমানো যাবে না। সীট বেল্টটা লাগানোই ছিল। আশে পাশের সব যাত্রী সাদা আমেরিকান। দু’একজনের সাথে চোখাচোখি হতেই মিষ্টি করে হাসি বিনিময় করে। হাসানের আমেরিকানদের এই সামাজিক সৌজন্যটা বেশ ভাল লাগে। চিনেনা জানেনা তারপরও একটুকরো হাসি মনটা ভাল করে দেয়। নিজেকে অপরিচিতদের কাছে ভালভাবে উপস্থাপন করতে মোটিভেশন দেয়। অথচ নিজের দেশে সবাই কেমন কেমন জানি। শুধু পরিচিত হলেই কথা বলে। সালাম দিতে হবে ছোটদের। মুরুব্বীরা একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করবে। আদব-কায়দা মানার সব দায়িত্ব কনিষ্ঠদের।

প্লেনটা নামতে শুরু করেছে আরও আধ ঘণ্টা আগে। লেক্সিংটন শহরের হলুদ বাতি গুলো স্পষ্ট হচ্ছে। বছর তিনেক আগেও এই শহরে একবার এসেছিল একমাসের জন্য। তাই উপর থেকে ডাউন টাউনের বড় বড় দালান গুলোকে বেশ চেনা যাচ্ছে। ফিফথ-থার্ড ব্যাংক এর উঁচু ভবনটা দেখা যাচ্ছে। প্লেনটা ডাউন টাউন চক্কর দিয়েই অবশেষে ছুটতে থাকে রান ওয়ের দিকে। চল্লিশ সীটের ছোট প্লেনটা মাটি ছুঁতেই স্পীডটা টের পাওয়া যায়। পাইলট বেশ হুট করেই স্পীড কন্ট্রোল করাতে সবাই সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। ধীরে ধীরে গতি জড়তার সাথে সবাই এ্যাডজাস্ট করে নেয়। ছোট এয়ারপোর্ট এ ভীড়তে দু’তিন মিনিটের বেশী লাগে না। প্লেন থেকে সবাই নামা শুরু করেছে। হাসানের পর আরো দুজন যাত্রী আছে। নামার আগে এয়ারহোস্টেস এর সারাদিনের ক্লান্তি মাখা মুখে “হ্যাভ আ নাইস স্টে অ্যান্ড এঞ্জয় এউর টাইম” শুনে হালকা হেসে “গুডনাইট” বলে বের হয়ে আসে ছোট এয়ারপোর্ট এ।
… … … … … … … … … … … … … … … … … … … …

চৈতীর মনটা আজ সকাল থেকেই বেশ ভাল। সাধারণত সে নিজে থেকে খুব একটা মনের অবস্থা আচার-আচরণে প্রকাশ করেনা। এখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল বেলা। বাসার সব কাজ মোটামুটি শেষ। এখন মে এর শুরু। অলরেডি ডে লাইট সেইভিংস টাইম শুরু হয়ে গেছে। সামারের এই সময় টায় দিন বেশ বড়। বাসায় সে আর তার তিন বছরের মেয়ে এ্যাডেলিয়া। মেয়েটা সাধারণত দিনের এই সময়টা ঘুমায় না। হয় টিভিতে রাইমস দেখে অথবা তার সাথে বসে গল্পের বই দেখতে থাকে। আর শুধু প্রশ্ন করতে থাকে। মেয়ের প্রশ্নের জ্বালায় তার দিশেহারা অবস্থা। কিন্তু আজ মেয়েটা ঘুম দিয়েছে। চৈতীর তাই হাতে অনেক সময়। সে চিন্তা করতে থাকে আজ সারাদিন কি কি করলো। সকালে সাব্বির স্কুলে যাবার পর বাংলাদেশে মায়ের সাথে কথা হয়েছে। একদিন পর পর মায়ের সাথে কথা বলে আধ ঘন্টার জন্য। শ্বশুড় বাড়ীতেও সাব্বির এর মা-বাবার সাথে কথা বলেছে। তার একমাত্র বোন মাশা’র সাথেও কথা হয়েছে। বুবু অস্ট্রেলিয়া তে থাকে। পুরো চৌদ্দ ঘন্টার সময়ের ব্যবধান। খুব ব্যস্ত থাকে। তাই খুব কমই কথা হয়। অথচ একটা সময় ছিল যখন বুবুর সাথে দিনে দু’ তিন ঘণ্টা কথা না বললে পেটের ভাত হজম হতনা। কত বকা খেয়েছে মায়ের যখন রাত জেগে জেগে তারা দুবোন গল্প করত। ভার্সিটি লাইফের সেই সময়টা খুব মিস করে। এখন আর তার মোটামুটি আটপৌড়ে জীবন। বর আর মেয়েকে নিয়ে তার টোনাটুনির সংসার।

সাব্বির তার ব্যাচমেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা একসাথে ফিজিক্স এ পড়ত। প্রেমের বিয়ে কিনা সে এখনো কনফিউসড। কারণ তারা একসাথে পাঁচ বছর একই ডিপার্টমেন্ট এ পড়লেও প্রেম বলতে যেটা বুঝায় সেটা করা হয়নি। সাব্বির সবার সাথেই কথা বলত। মজা করত। সবাইকে তুই ত কারী করে সম্বোধন করত। তার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল সারাক্ষণ মুখে খিস্তি-খেউড় লেগে থাকে। অনেকে পছন্দ না করলেও তার এই ব্যাপারটা বেশ ভাল লাগে। ছেলেটা রেগে গেলে কখনো গালি দেয় না। তখন একদম ঠান্ডা হয়ে যায়। মন ভাল থাকলেই গালি-গালাজ করে। আর একটা ব্যাপার সে ফিজিক্স কে ভালবাসে। মানে লিটারেলি ফিজিক্স তার প্রথম প্রেম টাইপ ব্যাপার। তাদের ক্লাসের সেকেন্ড বয়। গ্রাজুয়েশেন এর কিছুদিন আগে একদিন সকাল এগারটার দিকে তার কাছে এসে বলে, চৈতী, তোরে হাসান স্যার দেখা করতে বলছে। একা যাইস স্যার এর রুমে। তার দিনটা এখনো মনে আছে। ২০০৯ সালের ১১ই জুন। দশ মিনিট পর স্যারের রুমে যাবার পর সালাম দেবার পর স্যার সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এই চৈতী, তোর কোন পছন্দ আছে নাকি? কেন বলেন ত স্যার? না মানে কেউ না থাকলে সাব্বির কথা ভাবতে পারিস। ও মনে হয় তোকে পছন্দ করে। স্যারের উপর মেজাজ খারাপ করবে কিনা বুঝতেছে না। এমনি স্যার ছাত্রদের ভীষণ স্নেহ করে। বেশীর ভাগ ছাত্রদের তুই করে বলে। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বেশ জোর গলায় বললো, স্যার এই কথা কি আপনার মনে হয়েছে নাকি সাব্বির আপনাকে বলে গিয়েছে? না আমার কিছু মনে হয়নি। সাব্বির আমাকে বলল তোকে বলতে, ওর নাকি সাহসে কুলায় না তোকে এই কথা বলার, অনেক বার চেষ্টা করছে বলার কিন্তু পারেনি। ঠিক আছে স্যার , আমি আসি। স্যার এর রুম থেকে বের হতেই দেখে সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে আগাতেই সে উল্টা ঘুরে দৌড়। “এই বীরপুরুষ দাঁড়া” বলে চিৎকার করে ডাকতেই ও থামে। কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বুঝার চেষ্টা করি সাব্বির এর মনে কি চলতেছে। ও ঠিকমত তাকাতেই পারছিল না আমার দিকে। অস্বস্তি না বাড়িয়ে বলি, রাতে ফোন দিস। আবার স্যার এর নম্বর থেকে ফোন দিসনা। কোন প্রতি উত্তর আশা না করেই সাব্বির এর সামনে থেকে চলে আসি। তারপর দু’তিন সপ্তাহ রাতে কথা বলে একদিন হুট করেই সাব্বির এর সাথে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের সময় কাছের কিছু লোক ছাড়াও হাসান স্যারও উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর বুয়েটের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট এর লেকচেরার পোস্ট এ চাকরী করতে করতেই ওর আমেরিকায় পি এইচ ডি এর অফার আসে। একদিন সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে আসি আমেরিকার কেন্টাকির এই লেক্সিংটন শহরে। দেখতে দেখতে বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে।

আজ সেই হাসান স্যার তাদের এই ছোট শহরে আসছে। সাব্বির আর সে মহা খুশী। স্যার প্রায় সামারের পুরোটা সময় থাকবে। তাদের দুজনের ই বাক-বাকুম বাক-বাকুম অবস্থা। স্যার এক মাস আগে কনফার্ম করেছে। এই একমাস ধরে তারা দুজনে মিলে প্ল্যান করেছে কি কি করবে। তাদের কথা বার্তা শুনে তাদের মেয়ে এ্যাডেলিয়া একটা হাবিজাবি ছবি একেছে প্রফেসর হাসানের। ফেসবুকে স্যার এর ছবি দেখে। এই ছবিটা সে স্যারকে দিবে । আজকে সবাই মিলে স্যারকে রিসভ করতে যাবে । স্যারের সাথে সাব্বির কথা বলে রেখেছিল। তাই ভারী কোন খাবার তৈরী করেনি। সাদা ভাত, পাঁচ ফোড়ন দিয়ে ডাল, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি, কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি আর সালাদ এই হচ্ছে আজকের রাতের ম্যেনু। ডিম ভাজিটা খাবার আগে ভেজে নিবে। আর সবকিছু তৈরী। এই ছোট শহরে দেশী মাছ পাওয়া খুব সমস্যা।

“সাগর ইন্ডিয়া” নামে এক গুজরাটির দোকানে বাংলাদেশী মাছ পাওয়া যায়। ভদ্রলোক নিরামিষাশী। শুধু মাত্র বাংলাদেশী আর পশ্চিম বঙ্গের বাঙ্গালীদের জন্য দেশী মাছ আনে মিশিগান বা নিউইয়র্ক থেকে। যা হবার বাঙ্গালী সাপ্লাইয়ার সবচেয়ে বাজে ব্যাচের মাছটা দীপক আগরওয়ালের দোকানে পাঠায়। বেচারা নিজে খায়না দেখে সাপ্লাইয়ারদের কিছু বলতে পারেনা। কাস্টমাররা কমপ্লেন করলে তখন বেশ কয়েক মাস ভাল সাপ্লাই থাকে। চৈতী ড্রাইভিং শেখার পর নিজেই গ্রসারী করে। সাব্বিরকে খুব একটা এটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। তারও ভাল লাগে। একা একা অনেক ক্ষণ সময় নিয়ে বাজার করা যায়। দু’দিন আগে ভারতীয় এই গ্রসারী স্টোরে এসে কাঁচকি মাছ কিনে নিয়ে আসে। আজ সকালে রান্না করতে গিয়ে দেখে এবারের মাছ গুলো অনেক ভাল। এর আগে একবার এই কাঁচকি মাছ এনে রান্না করতে গিয়ে দেখে মাছ সব গোলাপী হয়ে গিয়েছে। কি আরা করা। সব ফেলে দিতে হয়েছে সেই বার। তার নিজের কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি খুব ভাল লাগে। খাবারের যে পদ গুলো তার ভাল লাগে, তার প্রিয়জনদের তা রান্না করে খাওয়াতে খুব পছন্দ করে।

এ্যাডেলিয়া কখন যে ঘুম থেকে উঠে তার পাশে এসে বসে আছে টের পায়নি। এমনিতে ও আস্তে আস্তে সাপের মত নিঃশব্দে চলাফেরা করে। কথা না বললে বুঝা যায় না আশেপাশে আছে কিনা। কার থেকে এই স্বভাব পেয়েছে আল্লাহ জানে। সাব্বির আবার চলাফেরা করার সময় আশেপাশের কয়েকটা জিনিস না ফেললে চলে না। এখন সে এ্যাডেলিয়া কে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাবে। বিকেলের এই সময়টা প্রতিদিন মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। অনেক সময় অনেক বাঙ্গালী মেয়েদের সাথে দেখা হয়। কিছুক্ষণ কথা হয়। ভাল লাগে। তবে এই সময় সে সবচেয়ে বেশী উপভোগ করে তার মেয়ের যত আজগুবী প্রশ্ন। তাকে একদিন জিজ্ঞেস করে দিনে সূর্য দেখা যায় রাতে দেখা যায় না কেন? এত ছোট মেয়েকে কি বলবে বুঝতে পারেনা। শুধু বলে দিনে সূর্য আরে রাতে চাঁদ দেখা যায়। জানে কথাটা পুরোটা সত্য নয়। দিনেও আকাশে চাঁদ থাকে। কিন্তু এত ছোট মেয়েকে এত ডিটেইলস এ্যাস্ট্রনমি বুঝানোর কোন প্রয়োজন বোধ করেনা।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। প্রায় রাত সাড়ে আটটা বাজে। সাব্বির এখনো আসে নাই। বলে গিয়েছিল সাতটার মধ্যে চলে আসবে। এখনো আসছে না। সকালেই চৈতী গাড়ী নিয়ে ক্রগার গ্রসারী স্টোরে গিয়ে স্যার এর জন্য ফুল নিয়ে এসেছে। ফোনটা বেজে উঠে। সাব্বির ফোন দিয়েছে। ধরতেই বলে, আমি এখন হেঁটে বাসায় আসতে আরো চল্লিশ মিনিট লেগে যাবে। অনেক দেরী হয়ে যাবে স্যারকে আনতে। তুমি বরং আমাকে ল্যাব থেকে তুলে নিয়ে যাও। এমনিতে ও খুব একটা সাজে না। বাইরে যাবার সময় হালকা করে কাজল আর একটু লিপিস্টিক দেয়। আজো তাই। চৈতী রেডী হয়েছিল। এ্যাডেলিয়াকে নিয়ে গাড়ীতে উঠেই সাব্বির এর স্কুলের দিকে যেতে লাগলো।

প্রায় বিশ মিনিট ধরে ক্যারোসাল থেকে তেইশ ইঞ্চি দুটো ব্যাগ রিসিভ করে এয়ারপোর্ট এর ভিতর হাসান বসে আছে। তার ছাত্র সাব্বির এর আসার কথা তাকে রিসিভ করতে। হয়ত কোথাও আটকে আছে। নিশ্চয় আসবে। এয়ারপোর্ট এ তেমন লোকজন নাই। দুটো রেন্ট এ কারের কাউন্টারে দু’জন আছে। সব যাত্রী বের হয়ে গিয়েছে। অথচ আমাদের ঢাকাএয়ারপোর্ট মনে হয় চিড়িয়াখানা। একজন যাত্রীর সাথে দশ-বার জন লোক আসবে। প্রতিদিন মনে হয় যাত্রী থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশী থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছে কিন্তু কোন জায়গাতেই ঢাকার মত এয়ারপোর্ট পরিস্থিতি দেখে নাই। আমরা এরকম উদ্ভট কেন কিছুতেই বুঝতে পারেনা হাসান। এই এয়ারপোর্টটা আমাদের চিটাগাং শাহ আমানত এয়ারপোর্ট থেকেও ছোট। ডিস্প্লেতে কোন ইন্টারনেশন্যাল ফ্লাইট এর কোন ইনফরমেশন ও নাই। তার পরও ইন্টারনেশন্যাল এয়ারপোর্ট। মেইনলি শিকাগো, হিউস্টন, মিশিগান, নিইউর্ক এর মত বড় বড় শহর থেকে ফ্লাইট আসে। আজকে আরো দুটো ফ্লাইট আসবে রাত এগারোটার দিকে। একটা নীল রঙের ঘোড়ার ম্যানিকিন দেখতে পাচ্ছে। এর আগের বার যখন আসছিল তখন এটা ছিল না। সম্ভবত ছবি তোলার জন্য এটা করেছে। ঘোড়ার ম্যানিকেন এর সামনে একটা ফটোফ্রেমও আছে।

হটাৎ করেই সাব্বির এর গলা শুনতে পেল। পিছনে চৈতী আর তার কোলে তাদের বেবীকেও দেখা যাচ্ছে। কাছে এসেই দু’জনে তাকে সালাম দিল। উত্তর দেবার আগেই সাব্বির বলে উঠল, আর স্যার বইলেন না, “চোদনার রিসার্চ হোগা মাইরা দিসে” এই জন্যেই বিশ মিনিট লেট হইছে আসতে। হাসান, চৈতী একসাথে সাব্বির এর দিকে তাকায়। হাসান বলে, তুই এখনো আগের মত আছিস। তার মেয়েটা বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা, হোগা কি? চৈতী বুঝতেছে না সাব্বির কি বলবে। সাব্বির খবু সুন্দর করে বলে, মা, হোগা হচ্ছে একটা গর্ত। মানুষ টেনশনে থাকলে ওইটা টাইট হয়ে যায়। চৈতী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে, স্যার ও হচ্ছে আমাদের মেয়ে এ্যাডেলিয়া। স্যার কে সালাম দাও মা। হাসান মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়। হ্যালো স্যার বলে মেয়েটা তার দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ায়। মেয়েটা মায়ের মত অনেক মায়াবী হয়েছে। সাব্বির বলে স্যার মানুষ কি বদলায়? বদলায় না। চলেন আগাই। ব্যাগ গুলো বনেটে ভরে হাসান পিছনের সীটে বসে এ্যাডেলিয়ার পাশে। এই দেশে বাবুদের জন্য কার সীট আছে। ছোটবেলা থেকেই ওদের কে স্পেশাল প্রটেকশন দেয়া হয় সেইফটির জন্য। চৈতী গাড়ী চালাচ্ছে। দেখে ভাল লাগছে। তার পাশের সীটে সাব্বির। আমাদের দেশেই আজকাল মেয়েরা গাড়ী চালায়। এখানে সবাই গাড়ী চালাতে পাড়ে। আমাদের দেশে গাড়ীর জন্য আলাদা করে ড্রাইভার রাখা হয়। শ্রমের কি বাজে ব্যবহার। বাকীটা রাস্তায় আর কথা হয়না। ক্লান্তি তে চোখ লেগে আসে হাসানের।

সাব্বির এর বাসায় এসে দেখে ওর জন্য একটা রুম খালী করে রেখেছে। বিছানার উপর নতুন টাওয়েল, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, শাওয়ার জেল রাখা। নতুন বিছানার চাদর ও বিছানো। চট করে গোছল টা সেরে খেতে বসে সাব্বির দের সাথে। চৈতীর হাতের রান্না এর আগেও খেয়েছে। মেয়েটা বেশ ভাল রান্না করে। তিনদিন পর ডাল ভাত খেতে পেরে খুব ভাল লাগছে হাসানের। খুব বেশী কথা হয়না খাওয়ার সময়। খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে আসে। স্লিপিং ড্রেস পরেই বিছানায় চলে যায়। ক্লান্ত শরীর। এখন আর আগের মত ধকল সইতে পারেনা। মাথার মধ্যে অনেক কিছু একসাথে আসতে থাকে ঢাকা থেকে এই পর্যন্ত আসার মাঝে কি কি হয়েছে। রহমান নামে দোহা এয়ারপোর্টএ বাংলাদেশী ছেলেটার মুখটা ভেসে আসে। আবার অন্য কিছু। আবার প্লেনের ভিতেরর দৃশ্য। কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে গভীর ঘুমে চলে যায় টের পায়না হাসান।

(চলবে…)

৫,৫৯৫ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “ফ্লাইট এএ৪১৬৩”

মওন্তব্য করুন : তৌহিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।