ওরা আমাকে এত মারে কেন

আশি, নব্বই আর হালের দশকে এ দেশের কিশোর -তরুণ সমাজের কাছে কিছু ডায়ালগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। জনমত জরিপ হয়েছে কিনা জানিনা, তবে তিনটা ডায়ালগ আমি বলব টপ চার্টে থাকবে। এক হচ্ছে, “তুই রাজাকার”, আরেকটা হচ্ছে, “ছিল্লা কাইটটা লবণ লাগাইয়া দিমু” আর “ওরা আমাকে এত মারে কেন”? হুমায়ূন আহমেদ এর জনপ্রিয় নাটক “বহুব্রীহি” তে প্রথম “তুই রাজাকার” ডায়ালগ টি ব্যবহার করা হয়। বিটিভি এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “ইত্যাদি” এর কোন এক পর্বে “ছিল্লা কাইটটা লবণ লাগাইয়া দিমু” ডায়ালগটিকে, লোকাল ট্রেনে শসা বিক্রেতার শসা বিক্রির নতুন কৌশল হিসেবে দেখানো হয়। এই দুই ডায়ালগ জনপ্রিয় হবার মাঝের সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় যে ডায়ালগ টি তা হচ্ছে, “ওরা আমাকে এত মারে কেন”? “তুই রাজাকার” আর “ছিল্লা কাইটটা লবণ লাগাইয়া দিমু” ডায়ালগ দুটো টেলি মিডিয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলেও, “ওরা আমাকে এত মারে কেন” ডায়ালগটি জনপ্রিয়তা পায়, প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে। প্রথম দুটো ডায়ালগ, কাউকে নির্দিষ্ট করে না বুঝালেও এবং যে কোন জায়াগায় ব্যবহার করা গেলেও, “ওরা আমাকে এত মারে কেন” ডায়ালগটি এক নিমিষে আমাদের একজনের কথাই তখনো মনে করিয়ে দিত, এখনো দেয়। আর তিনি হচ্ছেন, ম্যারাডোনা…

ম্যারাডোনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় সম্ভবত ক্লাস টু অথবা থ্রী এর স্কুলের C.W. আর H.W. এর খাতা কিনতে গিয়ে। আমাদের এ.জি.বি. কলোনীর সামনেই কমলাপুর রেল স্টেশনের দিকে যেতেই ছিল “জনতা বই বিতান”। সেই সময় এমন কিছু ছিলনা যা সেখানে পাওয়া যেত যেত না। স্কুলের জন্য খাতা তখন কয়েক প্রকারের পাওয়া যেত। নাইট রাইডার্স খাতা, ম্যারাডোনা খাতা আর সাধারণ খাতা। নাইট রাইডার্স খাতা তে নায়ক ডেভিড হ্যাসেলহফ তার গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে আর ম্যারাডোনা খাতায় ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। লাল, নীল, সবুজ আর হলুদ এই চার রংয়ের হার্ড বাইন্ডিং-এ সে খাতা পাওয়া যেত। সাধারণ খাতার চেয়ে দাম একটু বেশী হওয়াতে, আমার আর ঐ খাতা কেনা হয়নি। বন্ধুদের কাছে সেই খাতা দেখেই সুখ লাভ করি। আর এক জায়াগায় ছিল ম্যারাডোনার ছবি। ৮৬ এর বিশ্বকাপ জয় করার পর ট্রফি হাতে তার সেই ছবির ভিউকার্ড পাওয়া যেত। বন্ধু আর পাড়ার বড় ভাইদের কাছে ছিল সেই ভিউ কার্ড আর পোস্টার।

৮৮ এর বন্যাতে দেশ ভেসে গেল। জায়গা জায়গায় রিলিফ ওয়ার্ক হচ্ছে। পানি নামতে নামতে অনেক সময় লাগলো। আমরা টিভি তে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রিলিফ ওয়ার্ক দেখি আর তার গান শুনি। বিনোদন বলতে তখন বিটিভির যত অনুষ্ঠান। অনুপল পলে, পল বিপলে, বিপল দন্ডে, দন্ড প্রহরে, প্রহর দিনে, দিন সপ্তাহে, সপ্তাহ মাসে, মাস গড়িয়ে বছর চলে যেতে থাকে। চলে আসে ১৯৯০ সাল। স্বৈরাচার আন্দোলন আর ইটালি এর ৯০ বিশ্বকাপ এই দু মিলে সেই বছরটা অনেক ঘটনা বহুল ছিল।

বিশ্বকাপ শুরু হবার আগেই বিশ্বকাপ জ্বরে সারা ঢাকা শহর আক্রান্ত। সেই জ্বরে আমাদের এ.জি.বি. কলোনীতেও বেশ ভাল ভাবে লাগলো। জায়গায় জায়গায় আর্জেন্টিনার পতাকা। দু’’একটা ব্রাজিল এর পতাকা দেখা যায়। পাড়ার ছেলে, কিশোর, তরুণ, যুবক, আপুরা খালারা সবাই আর্জেন্টিনা। বয়স্কদের মধ্যে অনেকেই ব্রাজিল। হুজুগ উঠল প্রিয় দলের জার্সি কেনার। সবাই জার্সি কেনে। আমি বাদ যাই কেন? মাকে বলে ৫০ টাকা পাওয়া গেল। স্টেডিয়াম যাওয়া সেই বয়সে দস্যিপনা ব্যাপার। বন্ধু রকেট কি দিলাম টাকাটা আমার জন্য ব্রাজিল এর জার্সি কেনার জন্য। রকেট ওর পাড়ার বড় ভাইদের সাথে গেল জার্সি আনতে। নিয়ে আসলো ৪০ টাকা দামের আর্জেন্টিনার জার্সি। আমি বললাম, এটা কি? দোস্ত বলল, ব্রাজিলের জার্সি নাই, তাই এটাই পর। আমি তাতেই খুশী। জার্সি ত পাওয়া গেল। সেই জার্সি পরতেই গা এর এদিকে চুলকায়, ত ওদিকে কামড় দেয়। কি কাপড় দিয়ে তৈরী ছিল জানিনা, চুলকাতে চুলকাতে পিঠ আর বুক লাল করে ফেললাম। প্রতিদিন ঐ জার্সি পরে নীচে নামি ফুটবল খেলতে।

মে মাসের শেষের দিকে। বিশ্বকাপ শুরু হয় হয় অবস্থা। পাড়ায় পাড়ার ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে। শীল্ড, কাপ, মেডেল দেয়া টুর্ণামেন্ট। সবাই আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি পরা। গোলকিপার থেকে শুরু করে, স্ট্রাইকার সবাই ম্যারাডোনা, সবার দাবি সবাই ম্যারাডোনা। ঠেলা সামলানো মুশকিল হয়ে যায় রেফারীর দায়িত্বে থাকা বড় ভাইয়ের। টুর্নামেন্ট চলে, আর পোস্টার, ভিউ কার্ড নিয়ে সবাই রেডী প্রিয় দলকে সাপোর্ট করার জন্য।

বিটিভি তে তখন সব খেলা দেখাত না। ৮ ই জুন, ১৯৯০ সাল। প্রথম খেলা। গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সাথে নতুন দল ক্যামেরুন। সবাই আর্জেন্টিনার সার্পোটার। কিন্তু খেলা শুরু হবার পর ক্যামেরুনের প্লেয়ার দের ফাউলের জালায় আর্জেন্টিনার প্লেয়াররা খেলতেই পারলনা। যদিও ২টা লাল কার্ড পেয়ে ক্যামেরুন ৯ জন নিয়ে খেললো, তারপরও ০-১ গোলে আর্জেন্টিনা হেরে গেল। রজার মিলা’র খেলা দেখল ফুটবল বিশ্ব। পাড়ার সবার মন খারাপ। টুর্নামেন্ট এগিয়ে যায়। আর্জেন্টিনা কোতাতে কোতাতে ফাইনালে যায়। প্রতি খেলাতেই ম্যারাডোনা ফাউলের স্বীকার। বিশ্বকাপ চলতে চলতেই বাজারে নতুন ভিউ কার্ড আসে “ওরা আমাকে এত মারে কেন”। সেই ভিউ কার্ড আর পোস্টারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, ম্যারাডোনা ফাউল খেয়ে পরে যাচ্ছে বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের মাঝে। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় সেই পোস্টার আর ভিউ কার্ড। ১ টাকার ভিউকার্ড ২ টাকা থেকে ৫ টাকাতেও বিক্রি হয়। মানুষ টিভিতে আর্জেন্টিনার খেলা দেখে আর খেলা শেষে দেখে ম্যারাডোনার “ওরা আমাকে মারে কেন” ভিউকার্ড।

গোটা জাতি তখন ম্যারাডোনা জ্বরে আক্রান্ত। সে বল নিয়ে আগালে, জাতি বল নিয়ে আগায়; সে পরে গেলে, জাতি পরে যায়; সে কান্না করলে, জাতি কান্না করে। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চলে আসলো ৯০ এর বিশ্বকাপ ফাইনাল। ৮ ই জুলাই, ১৯৯০। সবাই টিভি সেটের সামনে বসে আছে ফাইনাল দেখার জন্য। সবাই ধরে নিয়েছে ৮৬ এর বিশ্বকাপ এর মত ম্যারাডোনা জাদুতে আবারো তারা বিশ্বকাপ জিতে যাবে। কিন্তু জার্মানরা তাদের রুখে দেয়। জার্মান দলের নেগেটিভ খেলা আর রেফারীর বাজে কিছু সিদ্ধান্ত আর্জেন্টিনাকে জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে দেয়। ম্যারাডোনা কাঁদে, বাঙ্গালী কাঁদে।

বিশ্বকাপ শেষ হলেও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ শেষ হয় না। নতুন করে শুরু হয়। বাজারে যাই কিনতে যাই, ম্যারাডোনা। খাতা, স্কেল, কলম, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, টিফিন বক্স, পানির বোতল, বাজারের ব্যাগ, বিস্কুট, বসার টুল, প্লাস্টিকের ঢাকনা, বাটি সব কিছুই ম্যারাডোনার নামে। জীবন তখন ম্যারাডোনাময়। যাই বের করে সুপার হীট। আমার এক বন্ধুর একটা স্কেল ছিল, সোজা করে ধরলে ম্যারাডোনা বল নিয়ে আগায়, একটু কাত করলে ম্যারাডোনা ল্যাং খেয়ে পরে যায়। চমৎকার সে স্কেল। ২০০৩-০৪ সালে ঢাকা শহরে যখন শাহী জিলাপীর কেজি ৬০ টাকা তখন “প্রথম আলো” পত্রিকা একটা প্রতিবেদন ছাপিয়ে ছিল যে, রমজানে ৪০-৫০ কোটি টাকার জিলাপী বেচা-কেনা হয়। এখান থেকে একটা ব্যাক ট্রেন্ড করে দেখা যেতে পারে ৯০-৯১ সালে ম্যারাডোনা জাতীয় জিনিস বাংলাদেশে কত টাকার বেচাকেনা হয়েছে।

ফিলিপ কোটলার থেকে হালের অনেক নামী-দামী মার্কেটিং গুরু এখন বাংলাদেশে এসে পণ্য বিপণনের অনেক নতুন কৌশল, নতুন তত্ব, জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে। আমার ত মনে হয় ওদের কে না এনে, আজাদ প্রোডাক্টেসর ঐ লোককে হারিকেন দিয়ে খোঁজা দরকার, যে সেই কিংবদন্তী তুল্য “ওরা আমাকে মারে কেন” ডায়ালগ টা ভিউ কার্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল। আজাদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে দেখা দরকার কে ছিল এর নেপথ্যে। “ওরা আমাকে মারে কেন” দিয়ে অসংখ্য বাঙ্গালীর হৃদয় কে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল আর তৈরী করতে পেরেছিল ম্যারাডোনার প্রতি অতুলনীয় অনুরাগ।

কেন ম্যারাডোনা এত জনপ্রিয়। শুধু ওর খেলার জন্য। এটা একটা ফ্যাক্টর হতে পারে আমার ধারণা, ম্যারাডোনার মাঝে বাঙ্গালী নিজের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পায়। বাঙ্গালী অভিমানী, ম্যারাডোনাও অভিমানী। বাঙ্গালী যে কোন ভাবে জীবনে টিকে থাকতে চায়, ম্যারাডোনাও যে কোন ভাবে গোল দিতে চায়। বাঙ্গালী আকারে ছোট তাই ইউরোপের লম্বা প্লেয়ারদের চেয়ে ম্যারাডোনাকেই নিজেদের কাছের মনে হয়। বাঙ্গালী মনে করে, আমি ভাল সব খারাপ; ম্যারাডোনাও ভাবে, আমি সেরা, বাকিরা আমার পিছনে। বাঙ্গালী কথায় কথায় কান্না করে, ম্যারাডোনাও কান্না করে। বাঙ্গালীর লাইফে ডিসিপ্লিন নাই, ম্যারাডোনার লাইফেও ডিসিপ্লিন নাই। সব মিলিয়ে বাঙ্গালী আর ম্যারাডোনা একাকার।

আমাদের গরীব দেশ। গবেষণা খুব একটা হয়না। সমাজ বিজ্ঞান আর বিপণনে ত আরো হয়না। উন্নত দেশ হলে “ওরা আমাকে মারে কেন” এই ডায়ালগটা আমাদের বাঙ্গালী সমাজে এত জনপ্রিয় হল কেন এবং এর ব্র্যান্ড ইফেক্ট এত বেশী কেন এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হত। আমাদের দুর্ভাগ্য, তা হয়নি। আসলে এই একটা বাক্যের মধ্যে আছে বাংলা ভাষার যত অনুভুতি সংশ্লিষ্ট বিশেষণ। রাগ, দুঃখ, হতাশা, কান্না, বেদনা, আনন্দ, অহংকার, গৌরব আর যা কিছু আছে সব, যা বলে শেষ করা যাবেনা। তাই কিশোর ছেলে মা-বাবার কাছে বদমায়েশি করে মার খেলে ওর মনে হয়, “ওরা আমাকে মারে কেন”। কমলাপুর অথবা ফার্মগেটে পকেটমার ধরা খেয়ে মার খেতে খেতে দেয়ালের দিকে তাকাতেই দেখে চিকা মারা, “ওরা আমাকে মারে কেন-ম্যারাডোনা”। সে আবার সাহস পায়, পকেটমারার। তারও মনে হয়, ম্যারাডোনাও মার খায়, আমিও মার খাই, কোন সমস্যা নাই। পাড়ার সুন্দরী আপুরা, বড় ভাইদের থেকে চিঠি পেয়ে বিরক্ত হয়ে বলে, “ওরা আমাকে মারে (পড়ুন “চিঠি দেয়”) কেন”। এই ডায়ালগ যেন আমাদের সবার জীবনের এক প্রতিচ্ছবি বিভিন্ন দৃশ্যপটের।

তবে এই ডায়ালগ ম্যারাডোনা কখনো বলেছে কিনা আমার ডাউট আছে। একটাই দুঃখ, ম্যারাডোনা কখনো জানলো না যে, হাজার হাজার মাইল দূরে এক অভিমানী জাতির কাছে তিনি কত জনপ্রিয়। আর জনপ্রিয় তার “ওরা আমাকে মারে কেন” ডায়ালগ।

প্রতি বিশ্বকাপই আমাদের দারুণ দারুণ কিছু ফুটবলারদের খেলা দেখার সুযোগ করে দেয়, ৯০ এর বিশ্বকাপে সিলাচ্চী, ক্যারেকা, ক্লিন্সম্যান, লুথার ম্যাথেউস, রুটগুলিট, ক্যানিজিয়া, গ্যারি লিনেকার, রজার মিলা, ব্যাজ্জিও, ভালদেরামা, সহ অনেক নামই এখনো মানুষ মনে রেখেছ।
৯০, ৯৪, ৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০-সহ ৬ টা বিশ্বকাপ শেষ। ২০১৪ এর বিশ্বকাপও শেষ হবার পথে। রোমারিও, বাতিস্তুতা, রোনালদো, জিনেদিন জিদান, লুইস ফিগো, ডেভিড ব্যেকহ্যাম, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোস, মাইকেল বালাক, থমাস মুলার, ক্রিশ্চায়নো রোনালদো, কাকা সহ আরো কত ভাল ভাল খেলোয়াড়ের খেলা আমরা দেখেছি। এই ২০১৪ এর বিশ্বকাপেও মেসি, নেইমার, রুদ্রিগেজ, সানচেজ, রোবেনের নাম অনেক দিন মানুষ মনে রাখবে। এই সব ভাল খেলোয়াড়দের মধ্যে জিদানের কন্ট্রিবিউশন আর ম্যারাডোনার কন্ট্রিবিউশন নিজ দেশের জন্য বিশ্বকাপ জেতানোর পাল্লায় সমপর্যায়ের বা সমতুল্য, খেলতোও দুজন অসাধারণ। তারপরও ম্যারাডোনার কাছের মানের প্লেয়ার হিসেবে বাঙ্গালী জিদান বা অন্য কাউকে কখনো স্বীকার করবেনা।

যদিও ম্যারাডোনা তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ড্রাগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিপদজনক জীবনযাপন করেছিল, জন্ম দিয়েছিল অনেক বির্তকের। তারপরও বাঙ্গালীর ম্যারাডোনার প্রতি ভালবাসা এতটুকু কমেনি। এর কারণ আমাদের সমাজ দর্শন, যা ম্যারাডোনার মাঝে মানুষ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছে। আর, ৯০ এর প্রেক্ষাপটে আমাদের সমাজের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক আবেগ, হতাশার প্রচ্ছন্ন প্রকাশ প্রিন্ট মিডিয়া ম্যারাডোনার মুখ দিয়ে বের করে এনেছে, “ওরা আমাকে এত মারে কেন” এর মত কিংবদন্তী তুল্য ডায়ালগ।

আরো অনেক বিশ্বকাপ আসবে, আরও দারুণ খেলোয়াড়দের খেলা হয়ত আমরা দেখব। কিন্তু আমাদের সমাজে আর কেউ ম্যারাডোনা হবেনা।

১,৯৩৮ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “ওরা আমাকে এত মারে কেন”

  1. :boss: ম্যারাডোনা এক আবেগের নাম । জিনিয়াস খেলোয়ারের ডোপ বিতর্কে মানুষ আবেগে ভেসে যাবে এইটাই স্বাভাবিক । বাবার পিঠে চড়ে ম্যারাডোনা - র খেলে দেখা । ভুলি কি করে ?? অবুঝ ভালোবাসা!! :)) :)) :))

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    হা হা। ভাল বলেছেন সাইফুল ভাই। 'ওরা আমাকে মারে কেন?' বহুদিন জ্বালিয়েছিল। ম্যারাডোনার উড়ন্ত ঐ ছবিসহ ভিউকার্ড, পোস্টারে একেবারে ছেঁয়ে গেছিল তখন। তবে বিশ্বকাপের পর আরেকটা পোস্টারও ব্যাপক হিট করেছিল- ম্যারাডোনার কান্না ছবি, ক্যাপশনে লেখা 'রেফারির কালো হাত জিততে দিলো না আমাদের'!

    আরো লেখা চাই। 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আবারো। কৈশোরের কত দুরন্ত স্মৃতি ফিরে এলো এ লেখাটা পড়ে!
    ৮৬ তে ঘুমঘুম চোখে গভীর রাতে ঘুমঘুম চোখে দেখেছিলাম ইংল্যাণ্ড-ম্যারাডোনা ম্যাচটা দেখেছিলাম। চোখের সামনে ইতিহাস কি করে সৃষ্টি হয় সেটা অনুভব করতে পেরেছিলাম সে রাতে। পরে বারবার ফিরে ফিরে দেখেছি এই গোল --- মুগ্ধতা প্রতিবারই একটু একটু করে বেড়ে যায়। মাঠের ক্যানভাসে কি অপূর্ব ছবিই না এঁকে গেছে দুরন্ত পায়ে! আর হাতের কারুকাজটা তৎক্ষণাত বুঝতে পারিনি তো বটেই -- পরের দিন সংবাদপত্রের শিরোনাম দেখেও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। বিশ্বাস হচ্ছিলোনা আক্ষরিক অর্থেই ভরা মাঠে এমন কাজ কেউ করতে পারে, করে সাফল্যের সাথে পারও পেয়ে যেতে পারে। ম্যারাডোনা আসলে প্রতিভা আর ইমোশনের সাথে আনুষঙ্গিক বৈপরীত্যের অদ্ভুত মিশেল। তোমার বিশ্লেষণের সাথে আমি শতভাগ সহমত পোষণ করি। এটি একটি মেধাবী বিশ্লেষণ ছিলো। ::salute::

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।