এভারেস্ট ও স্বপ্নযাত্রা

কয়েকদিন আগে (২১ শে মে, ২০১১) দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এম এ মুহিত মাউন্ট এভারেস্ট জয় করল। গত বছর প্রায় একই সময়ে ( ২৩ শে মে, ২০১০) মুসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিল। আমাদের দৈনন্দিন অনেক দুঃখ-কষ্ট, কাল্পনিক কুজ্ঝটিকার ভয়, হতাশা-গ্লানির মাঝেও এ ধরনের ভাল খবর এগিয়ে যাবার জন্য, জীবন যুদ্ধের মাঠে টিকে থাকার ও যুদ্ধ চালিয়ে যাবার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আবার নতুন করে দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শিখায়। মাউন্ট এভারেস্ট জয় অবশ্যই জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন। বিশেষ করে পর পর দু’বছর দুজন বাংলাদেশীর এভারেস্ট পর্বত শিখর জয় কোন মামুলি ব্যাপার নয়। ভবিষ্যতে আরো অনেকে এভারেস্ট জয় করবে, আরো অনেক দুঃসাহসিক কাজ করে দেশকে, দেশের মানুষের জন্য বিরল সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর বুকে, অন্য জাতির মানুষের কাছে বাঙ্গালী জাতি নিজেকে অন্য পরিচয়ে (দুঃসাহসী বীর) পরিচিত করবে, এটা এখন আর কবির কবিতার লাইন নয় বরং বাস্তবতা, কোন সান্ত্বনা নয় বরং ক্ষণের অপেক্ষা। এই বিষয়টাকে নিয়েই আমার আজকের ব্লগ।

শুরুর গল্পঃ হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম যে মাউন্ট এভারেস্ট আর তার উচ্চতা যে ৮,৮৪৮ মিটার; এটাই যে ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কিংবা তেঞ্জিং-হিলারী জুটি যে সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালের ২৯ শে মে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করছিল তা ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সময় শিখেছিলাম আর আজ অবধি তা ভুলিনি। নবম-দশম শ্রেণীতে এসে ভূ-গোলের আরো অনেক কিছু জেনেছিলাম কিন্তু কালের স্রোতে তার অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছি। কিন্তু কখনই মাউন্ট এভারেস্টের কথা ভুলতে পারিনি। তাই যখন গত বছর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করল, সেখানে বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরল, তখন দেশের থেকে অনেক দূরে বসেও দেশের মানুষের সেই বিরাট অর্জনের অংশীদার নিজেকে মনে হয়েছে।

কলকাতার এক বাংলা পত্রিকা থেকে জানলাম, “রাঁধানাথ সিকদার” নামক বাঙ্গালী একজন গণিতজ্ঞ ১৮৫২ সালে এভারেস্টের উচ্চতা ২৯,০০০ ফুট মেপে বলে দিয়েছিল, এটাই ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। ১৬০ বছর আগে জিপিএস বা ট্কেনিক্যাল কোন সাপোর্ট ছাড়া এইভাবে হিসেব করে বের করা চারটি খানি কথা নয়। ভদ্রলোক নিশ্চয় ত্রিকোণমিতিতে সেরকম ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের কারণে হয়ত সেই বাঙ্গালী গণিতজ্ঞ সেরকম নাম করতে পারেনি ।

গত বছর (২০১০) মে-জুন মাসে মুসা ইব্রাহীম কে নিয়ে যখন দেশের পত্রিকা গুলো ফিচার করছিল, তখন “প্রথম আলোর” কোন এক সংখ্যায় দেখেছিলাম, ওপার বাংলার লোকজন আরো আগে হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিল। ইন্টারনেট ঘেঁটেও সে সংখ্যাটা বের করতে পারলাম না। যা বলছিলাম, সেটা হয়ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক্সপিডিশন ছিল‌ আর তার মধ্যে হয়ত বাঙ্গালীরাও (পশ্চিম বাংলার) ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এরকম অনেক গুলো মাউন্টেনিয়ারিং ডিভিশন আছে, যেখানে নিয়মিত পর্বত আহরণের বিভিন্ন এক্সসারসাইজ হয়ে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম গত বছর প্রায় সমসাময়িক সময়ে (১৭-ই মে, ২০১০) বসন্ত সিংহ রায় আর দেবব্রত বিশ্বাস নামক দুজন সিভিলিয়ান বাঙ্গালী (পশ্চিম বাংলার) এভারেস্ট জয় করে। তারা দুজনেই ছিলেন মাউন্টেনিয়ার্স এসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর (এম এ কে) –এর সদস্য। এখানে বলে রাখছি, আমার জানার ভুল থাকতে পারে। যে কারণে ঘটনা গুলো উল্লেখ করলাম, দু’বাংলাতেই হয়ত আলাদা সময়ে এভারেস্ট এক্সপিডিশন শুরু করেছিল কিন্তু সাফল্য প্রায় একই সাথে পেয়েছে।

স্ক্যান্ডেনেভিয়ান ভাইকিং, কিংবা আরো পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লোকজন নতুন দুনিয়ার খোঁজে, অজানাকে জানার জন্য, রোমাঞ্চিত হবার নেশায় যেভাবে দ্বাদশ শতাব্দীর শুরু থেকে বের হয়েছিল এবং তা এখন পর্যন্ত সেই ধারা চালু আছে। অজানাকে জানাই মনে হয় তাদের অনেকের কাছে সবচেয়ে লোভনীয় ব্যাপার ছিল। সে তুলনায় বাঙ্গালীর দুঃসাহসিক অভিযান বা এক্সপিডিশনের ইতিহাস হয়ত খুব বেশীদিনের নয়। চলুন একটু দেখি আসি, দুঃসাহসিক কাজ বা এক্সপিডিশনের সাথে আমাদের ইতিহাসটা।

সাহসিকতা ও বাঙ্গালীঃ ইতিহাস তেমন জানিনা, সত্যিকথা বলতে স্কুলের বাইরে আর কখনো আগ্রহ ভরে ইতিহাস পড়িনি তবে যতটুকু জানি, বাঙ্গালী নাকি ঘর কুনো, কুয়োর ব্যাঙ। দু’বেলা ভাত খেতে পারলে নাকি আর অন্য কিছু চিন্তা করে না। আমার জানা ইতিহাস বলে, কারো ঘরে বা অন্য দেশে গিয়ে নাক গলানোর জাতি আমরা ছিলাম না। বরং আমাদের এই সোনার বাংলায় অন্য লোকজন নাকি নাক গলাতে আসত। মোগল আমলে, দিল্লি থেকে আকবরের সেনাপতি মান সিংহ এসেছিল, সোনারগাঁ এর ঈশা খাঁ কে পরাজিত করে বাংলা দখল করতে। পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল বেচারাকে। আরো পরে, ইংরেজরা যখন আসল এবং নাক গলানো শুরু করল সিরাজ-উদ-দ্দৌলা তাদেরকে বাংলার মাটিতে স্থান দিতে চান নাই। কিন্তু মীরজাফরের বিশ্বাস ঘাতকতায়, সেই ইতিহাস কই এসে ঠেকেছে, আমরা সবাই জানি। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে, ইংরেজরা এসে একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। সাধারণ মানুষের চোখ-কান খুলেছে। অনেক ভাল কিছুই হয়ত ইংরেজদের শাসনের জন্য আমরা পেয়েছি। কিন্তু আসল খারাপ কাজটা তারা ভাল ভাবেই ঢুঁকিয়ে দিয়ে গেছে আমদের সমাজে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি তাদেরই অবদান।

ইংরেজরা যখন পুরোপুরি শাসন শুরু করে দিয়েছিল, তখন অনেক বাঙ্গালী প্রথম ঘর ছেড়ে বের হওয়া শুরু করে। তবে তা জীবিকার তাগিদে। অনেকই তখন বিলেত যেত,পড়াশোনা বা চাকুরী করতে। দুঃসাহসিক কাজ বা এক্সপিডিশনের জন্য নয়। একাদশ শতাব্দী থেকে যদি মুসলমানরা বাংলাদেশে বা বাংলায় থেকে থাকে, তবে হয়ত অনেক অবস্থা সম্পন্ন বাঙ্গালী মুসলমান সে সময় থেকে হয়ত হজ্বে যেয়ে থাকতে পারে। তবে তা ছিল হয়ত ধর্মীয় আচার, কোন এক্সপিডিশন নয়। তবে সেই যুগে যোগাযোগের যে ব্যবস্থা ছিল তাকে এক্সপিডিশন বলাটা কোন অংশে কম হবেনা।

ইংরেজ আমলেই আমি বলব, বাঙ্গালীর এই এক্সপিডিশন এর যাত্রা। অনেক কবিদের মাঝে বাঙ্গালীর এই ঘর কুনো স্বভাবটা ভাল লাগেনি। তাই তাঁরা কবিতায় এই নিয়ে আক্ষেপও করেছে। কবি জীবনানন্দ দাসের মা আরেকজন খ্যাতিমান কবি কুসুম কুমারী দাস লিখেছেন, “আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে”। আবার রবি ঠাকুর কি দুঃখ পেয়ে লিখেছেন আমি জানি না, “সাত কোটি বাঙ্গালীর হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গাল করে মানুষ করনি”। প্রাসঙ্গিক দেখে, লাইনটা জুড়ে দিলাম (কোটেশন দেবার অভ্যাস এখনো যায়নি)।

তবে কবিদের অভিমান কমানোর জন্য নিশ্চয় নয়, দুঃসাহস আর অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হয়ত ব্রজেন দাস প্রথম এশিয়ান হিসেবে ১৯৫৮ সালে প্রথম বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন এবং তাঁর জীবনে একবার নয়, সর্বমোট ৬ বার তিনি তা করে দেখিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ তাড়ানো আন্দোলনে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বা মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমান এর সাহসী ভূমিকা, আর ৩০ লক্ষ বাঙ্গালীর আত্মত্যাগ বাঙ্গালীকে বীর বাঙ্গালী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ঠিকই, তবে অবশ্যই তা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, এক্সপিডিশন বা দুঃসাহসিক কাজ করার জন্য নয়।

বাংলাদেশীদের এভারেস্ট এক্সপিডিশন এর ইতিহাস হয়ত খুব বেশী দিনের নয়। গত বছর যখন মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করল, তখন “সচলায়তন” ব্লগে একজন ব্লগার “নেভারেস্ট” সিরিয়ালে কিছু ব্লগ লিখেছিল। অনেক অনুসন্ধানী, তথ্য সংবলিত এবং ইন্টারেস্টিং ব্লগ ছিল । তবে সেখান থেকে যা জানতে পারি, প্রথম এভারেস্ট এক্সপিডিশন বাংলাদেশ অংশ থেকে শুরু করেন ১৯৬৯ সালে জামালপুরের ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ,পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে প্রবাসী ইন্তেসার হায়দার ও ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের সুমন সম্পদ বণিক বিচ্ছিন্নভাবে এভারেস্ট অভিযাত্রায় শরিক হয়েছিলেন। আরো অনেক খুঁটিনাটি হয়ত আছে, তবে সেগুলো আমার জানা নেই।

এখন যারা (মুসা ইব্রাহীম এবং এম এ মুহিত) মাউন্ট এভারেস্ট জয় করল, তাদের মধ্যে কি এমন বিশেষণ আছে, যা তাদেরকে এই দুঃসাহসিক কাজের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও। তাদের বায়োগ্রাফীটা একটু দেখে নিই…

এভারেস্ট জয়ী বাঙ্গালীদের বায়োগ্রাফীঃ উইকিপিডিয়া থেকে জানলাম (সামিটারস অফ মাউন্ট এভারেস্ট), এই পর্যন্ত ৮৩ জন (এমএ মুহিতকে বাদ দিয়ে) এভারেস্ট জয় করেছে। আরেক জায়গায় দেখলাম, গত ২৯শে মে, ২০১১; তৃতীয় “আন্তর্জাতিক এভারেস্ট দিবস” উপলক্ষে বিশ্বের ১০০ জনের বেশি এভারেস্ট জয়ীকে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়, নেপালের পর্বতারোহণ সংস্থা। তবে ৮৩ না ১০০ এর বেশী এভারেস্ট জয়ী আছে, সঠিক তথ্য কেবল মাত্র গবেষক, অথবা পর্বতারোহণের সাথে জড়িত কোন সংস্থা দিতে পারবে। তার মধ্যে যে, দুজন বাংলাদেশী আছে তা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতেই পারি।

মুসা ইব্রাহীমঃ

যা জানলামঃ ভদ্রলোক এর বয়স ৩১/৩২ বছর। বিবাহিত। পেশায় সাংবাদিক। পড়াশোনা করেছেন ঠাকুরগাঁও সুগার মিল স্কুলে এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। “নর্থ আলপাইন ক্লাব” বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক।

যা বুঝলামঃ সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েও বা অন্য দশটা মানুষের মত সাধারণ জীবনযাপন করেও ভদ্র লোক এই দুঃসাহসিক কাজ করতে পেরেছিলেন কেবল মাত্র স্বপ্ন ছিল আর ইচ্ছা শক্তির জোরে। ভাগ্য অবশ্যই সহায় ছিল তার সাথে।

এম এ মুহিতঃ

যা জানলামঃ এম কম পাস ৩৯ বছর বয়সী মুহিত চাকরি করেন বেসরকারি কোম্পানি প্যারাগনের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে। অবিবাহিত। পড়াশোনা করেছেন নটরডেম ও ঢাকা সিটি কলেজে। “বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব” এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা।

যা বুঝলামঃ মার্কেটিং ম্যানেজার হয়েও এভারেস্ট জয় করা যায়, ছোট বেলায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং না পেয়েও; কেবল মাত্র ইচ্ছা শক্তির জোরে। যদিও তিনি, মুসা ইব্রাহীম-এর আগে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার ভাগ্য মুসা ইব্রাহীম এর মত ভাল ছিল না। গত বছর শুরু করেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফেরত আস্তে বাধ্য হয়। হাল ছাড়েননি ভদ্র লোক, তাই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এই বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন, যদিও মিডিয়া এম এ মুহিতকে নিয়ে খুব একটা মাতামাতি করেনি, যতটুকু মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে করেছিল।

আমার এই জানার ও বুঝার ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। এইমাত্র আমি আমার মূল বক্তব্যে আসলাম। একটু ধৈর্য্য নিয়ে বাকিটুকু পড়বেন আশা করি।

ক্যাডেট কলেজ ও মাউন্ট এভারেস্টঃ পাঠক নিশ্চয় ভাবতে শুরু করেছেন, ব্লগারের মাথা গেছে। কোথায় ক্যাডেট কলেজ আর কোথায় মাউন্ট এভারেস্ট? আমি পাঠক হলেও আমারও এরকম ভাবনা হত। তবে আমি আমার কিছু ভাবনা তুলে ধরলাম। ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা খেলাধূলা আর সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করে থাকি, যাতে আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের সুকুমার গুণ গুলো পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হয়। তার মধ্যে ক্রস কান্ট্রি ও অবস্টেকল কোর্স ছিল অন্যতম। বছরের এক বার করে এই ক্রস কান্ট্রি ও অবস্টেকল কোর্সে সকলকে অংশগ্রহণ করতে হত, শারীরিক দক্ষতার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে। এখন দেখা যাক, এই ক্রস কান্ট্রি ও অবস্টেকল কোর্স এর মত দুটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক দক্ষতা যাচাই এর বিষয় গুলো আমাদেরকে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল, তার ইফেক্ট পরবর্তী জীবনে কতটুকু রয়ে গেছে।

ক্রস কান্ট্রি ও অবস্টেকল কোর্সঃ বছরের শুরুতে ক্রস কান্ট্রি আর শেষের দিকে অবস্টেকল কোর্স, এই ছিল আমাদের সময়ে ফৌজদারহাটের রুটিন। আন্তঃ হাউস প্রতিযোগীতা’র জন্য ৪ পয়েন্ট করে ছিল দুটো ইভেন্টে। ক্রস কান্ট্রি ও অবস্টেকল কোর্সের আগে দু’তিন দিন প্র্যাকটিস করেই মূল প্রতিযোগিতা শুরু হত।

ক্লাস টুয়েলভ এর কাছে সেটা ছিল হাউস ক্মপিটিশিন এর ব্যাপার। তাই যারা শারীরিক ভাবে একটু দুর্বল ছিল, তাঁরা আগে হাসপাতালে ভর্তি হত বা এক্সকিউজ নিয়ে রাখত। অনেক সময় সিনিয়র-রাই সে উপদেশই দিত। আর যারা খারাপ করত, তারা হাউসে আসলে খেত ধোলাই। অনেক সিনিয়র ছিল এক কাঠি সরেস। ভাল করলে পুরুষ্কার ( ক্যান্টিন কুপন) দিবে এই আশা দিয়ে পরবর্তীতে পুরুষ্কার তো দিতই না, আবার পরে অন্য ইভেন্টের জন্য মারও খেতে হত। তারা অবশ্য হাতে-গোনা ছিল।

শিক্ষকদের দায় ছিল, ক্মপিটিশিনের ইভেন্টটা কোন রকমে শেষ করা পর্যন্ত। আর যারা ভাল করত, তাদের মেডেল দেয়া পর্যন্তই কলেজের দায়িত্ব শেষ। এই থেকে আসলে ছেলে-মেয়েরা কি শিক্ষা নিল, বা পরবর্তী জীবনে যে ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স এর মত আরো অনেক রূপক ধর্মী ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স দিতে হবে, জীবনে টিকে থাকার জন্য তা কখনই বলতে শুনিনি। মূলত কতৃপক্ষের কাছে ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স ছিল একটা ইভেন্ট, আর তাই ছেলে-মেয়েরাও কলেজ থেকে পাশ করে কলেজে, করে আর শিখে আসা ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স, কেবল মাত্র কলেজের ইভেন্ট হিসেবেই স্মৃতিতে থেকে যায়।

শুধু মাত্র ইভেন্টঃ আমার মতে, কোন একটা কাজ যখন শুধু মাত্র একটা ইভেন্ট হিসেবে সম্পন্ন করা হয়, তখন এর থেকে আসলে কোন শিক্ষা ঐ মুহূর্তে হয় না। পরবর্তী জীবনে হয়ত বয়সের কারণে রিয়েলাইজেশন আসে, আরে কলেজে তো ঐটা করতাম। ঐটা তো করতাম এই কারণে…, তবে তা অনেক দেরীতে। এখন বুঝি, ফৌজদারহাটের ঐ পাহাড়ে সবার আগে উঠা-নামা শুধু হাউসকে চ্যাম্পিয়ন করতে নয়, জীবন যুদ্ধে ও যে এরকম অনেক পাহাড় ডিঙ্গাতে হচ্ছে লক্ষ্যে পৌঁছানর জন্য। কলেজে থাকলে কেউ সেটা বললে বা বুঝিয়ে দিলে তো ভাবনা গুলো ঐ বয়সে আরো সমৃদ্ধ হত।
খুব কম শিক্ষক ছিলেন বা আদৌ ছিলেন কিনা, যারা কলেজের এই ইভেন্ট গুলো কে এই পরিণত বয়সের মত ব্যাখ্যা করতে পারতেন বা করতেন, আমার জানা নেই।

শিক্ষকদের গতানুগতিক কথা ও বক্তৃতাঃ ক্যাডেট কলেজের বেশীর ভাগ শিক্ষক এর সাথে ছেলে-মেয়েদের সম্পর্ক ছিল প্রতিপক্ষের মত। চোর-পুলিশ, কিংবা হালের টম এন্ড জেরির মত। শিক্ষকরা যেমন লেগে থাকত ক্যাডেটদের পিছনে, ক্যাডেটরাও কম ছাড়ত না। ফলাফল শূন্য। কারো কোন লাভ হতনা, শুধু যাবার সময় তিক্ততা বাড়ত। আবার একটা সময় এসে সেই তিক্ততা ভুলে যেত সবাই। কিছু হয়ত থেকে যেত মনে, যা কখনোই ভোলার মত নয়।

বেশীরভাগ শিক্ষকরাই শুধু বলত, “কলেজ থেকে যাবার সময় শুধু দুইটা সার্টিফিকেট নিয়ে যাবে, আর কিছুই যাবেনা”। তাদের কাছে ভাল ভাবে বিকশিত হবার চেয়ে ভাল ছাত্র হবার কদর ছিল বেশী। অলরাউন্ডার তৈরি করাতে তাদের কোন আগ্রহ ছিল কিনা জানি না। কোন ইভেন্ট এর বক্তৃতাতে যা বলত, “যারা ভাল করেছে এই বছর তাদের শুভেচ্ছা, আর যারা ভাল করনি, তারা আশা করি সামনের বছর ভাল করবে”। ইভেন্ট থেকে দীর্ঘ জীবনে কি শিক্ষা নিয়ে যাবে, তা কখনো বলতে শুনিনি। কিছু ব্যতিক্রমী শিক্ষক অবশ্যই ছিলেন, সেসব শিক্ষকের বলা কথা গুলো আজও মনের ভিতরে গেঁথে আছে।

কোন ছেলেকে বলা হতনা, সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে একদিন প্রফেশনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিবে; ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স এ ভাল করে মাউন্ট এভারেস্ট একদিন জয় করবে সেই স্বপ্ন তাকে দেখানো হত না। অ্যাথলেটিক্স এ ভাল করে পরবর্তীতে সেই ধারা অব্যাহত রেখে জাতীয় রেকর্ড করবে, তাও বলা হত না। কিংবা দাবায় যে ভাল ছিল, কিংবা হকিতে, সে জাতীয় দলের হয়ে খেলে যাবে তার প্রফেশনের পাশাপাশি, তাও তার মধ্যে গেঁথে দেয়া হতনা।

অথচ কেবল মাত্র শিক্ষকদের মোটিভেশনই পারত এই কিশোর মেধাবীদেরকে প্রকৃত অলরাউন্ডার হবার শিক্ষা দিতে।

দরকার শুধু মোটিভেশনঃ শিক্ষকদের সাথে চোর-পুলিশের সম্পর্কের বদলে প্লেটো আর অ্যারিস্টটলের কিংবা কম করে হলেও বাবা-ছেলের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। মনটা ব্যথিত হয়, তা হয়নি দেখে ক্যাডেট কলেজগুলোতে। অথচ শিক্ষকদের প্রকৃত কাউন্সেলিং, মোটিভেশন আর সঠিক শিক্ষাই ছেলে-মেয়েদেরকে প্রকৃত অলরাউন্ডার হবার শিক্ষা দিতে পারত।

তাহলে হয়ত মুসা ইব্রাহীমের মত জার্নালিস্ট হয়েও কিংবা এম এ মুহিতে মত মার্কেটিং ম্যানেজার হয়েও কোন ক্যাডেট এভারেস্ট জয় করার স্বপ্ন দেখত। হয়ত তাদের আগেই তা জয় করতে পারত।

অলরাউন্ডার ভাবনা ও বাস্তবতাঃ আমরা বেশীরভাগ ক্যাডেট নিজেদের বলে থাকি, আমরা অলরাউন্ডার বা ক্যাডেট কলেজ গুলো ভাল ছাত্র নয় বরং অলরাউন্ডার তৈরি করে থাকে। আসলে দেখি কি হচ্ছে?

অলরাউন্ডার বলে আজকের দুনিয়াতে কোন প্রফেশন আছে কিনা আমার জানা নেই। এটা থাকলে বা সম্ভব হলে সবাই অলরাউন্ডারকেই নিয়োগ দিত।

ক্যাডেট কলেজ গুলোতে আসলে যে কারণে অলরাউন্ডার এর কনসেপ্টটা চালু তা হচ্ছে; লেখা-পড়া, মঞ্চ প্রতিযোগীতা আর খেলাধূলা এই তিনটা দিকে যে সমান পারদর্শী ও ভাল তাকেই অলরাউন্ডার বলা হয়ে থাকে। আমার অভিজ্ঞতা বলে এরকম ক্যাডেট আমি আমার ক্যাডেট লাইফে দেখিনি। এটা হয়ত স্বপ্নে পাওয়া বা রেফারেন্স ক্যাডেট হতে পারে। আমি যা দেখেছি বা বাস্তবতা হল, যে ভাল ছাত্র সে হয়ত খেলাধূলায় ভাল অথবা মঞ্চ প্রতিযোগীতায়, আবার যে মঞ্চ প্রতিযোগীতায় ভাল সে হয়ত খেলাধূলায় মোটামুটি। আবার যে খেলাধুলায় ভাল সে ছাত্র হিসেবে মোটামুটি। অর্থাৎ একজনের পক্ষে লেখা-পড়া, মঞ্চ প্রতিযোগীতা আর খেলাধুলা এই তিনটা দিকে সমান পারদর্শী ও খুব ভাল হওয়াটা ডিফিকাল্ট; যেটা হয় যে কোন দু বিষয়ে পারদর্শী থাকে, ক্যাডেট কলেজ সময়ে।

আর ক্যাডেট পরবর্তী জীবনের বাস্তবতা হচ্ছে, প্রফেশনের কারণে সেকেন্ড যে বিষয়ে সে কলেজে থাকতে পারদর্শী ছিল সে বিষয়ে ক্যাডেট আর সময় দিতে পারেনা বা তার আর কোন মোটিভেশন থাকেনা। তারপরও অনেকে ডাক্তার হয়েও বা অন্য প্রফেশনে থেকেও লেখা-লিখি করছে টুক-টাক, তবে সেটা আর সেকেন্ড প্রফেশন থাকছেনা। শখের কাজ হয়ে যায়। খেলাধূলায় এই শখটাও আরও কদাচিৎ দেখা যায়। তাই আসলে আমরা ক্যাডেটরা অলরাউন্ডার হিসেবে সমাজে আছি নাকি সিঙ্গেল সাইডেড প্রফেশনাল হয়ে আছি তা ভাবনার অবকাশ রাখে।

ক্যাডেট কলেজ এক্সপিডিশন ক্লাবঃ আমাদের একটা এক্সপিডিশন ক্লাব থাকলে কিন্তু খারাপ হতনা। আমাদের ব্লগ আছে, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব আছে, এক্স ক্যাডেট এসোসিয়েশন আছে, অনলাইনে ফোরাম আছে। আমাদের “নর্থ আলপাইন ক্লাব” কিংবা “বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব” এর মত “ক্যাডেট কলেজ এক্সপিডিশন ক্লাব” থাকলে হয়ত আমরা অনেকই অনেক রকম এক্সপিডিশন এ যেতে পারতাম। অবশ্যই সেখানে শুধু ক্যাডেটরা থাকত। ছোট থেকে শুরু করে অনেক বড় রকমের এক্সপিডিশন এর আয়োজন করা যেত ক্লাব এর মাধ্যমে। মাউন্টেনিং, হাইকিং, সুইমিং, রোয়িং, গ্লাইডিং সহ আরো অনেক রকম অ্যাক্টিভিটিস আমরা সারা বছর ধরে চালু রাখতে পারতাম। এতে করে কয়েক রকম লাভ হতে পারতঃ

১। যারা আমরা সশস্র বাহিনীতে যোগদান করিনি, তাদের পক্ষে ক্যাডেট কলেজে ফেলে আসা অনেক অ্যাক্টিভিটিস এ ইনভল্ভ থাকা সম্ভব হত, এতে শারীরিক ভাবে ফিট থাকার একটা অনুপ্রেরণা থাকত।
২। ১২ ক্যাডেট কলেজের ছেলে-মেয়েদের, সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে যোগাযোগটা আরো বাড়ত।
৩। এর মাধ্যমে বের হয়ে আসত কেউ একজন যে এভারেস্ট জয় করতে, কিংবা নৌকা বা দেশী জাহাজ নিয়ে পৃথিবী ঘুরে আসার প্ল্যান করত বা মেরুতে যাবার প্ল্যান করত।
৪। বর্তমান ক্যাডেটদের কে উদ্বুদ্ধ করা যেত, আরো বড় স্বপ্ন নিয়ে বেরে উঠতে সাহায্য করত।
৫। বিভিন্ন রকম ট্রেনিং এর আয়োজন করা যেত।
৬। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এক সাথে বা দল করে এক্সপিডিশন-এ যাওয়া যেত। সম্ভব হলে সেইসব দেশে এই ক্লাবের শাখা খোলা যেত।
৭। বছরে যে সময়টা আমরা ছুটি কাঁটাই তা আরো উপভোগ করা যেত, এই ক্লাব এর সাহায্যে, বিভিন্ন এক্সপিডিশনে যোগদান করে।
৮। যারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র হিসেবে আছে, তারা তাদের বন্ধটাও সব ক্যাডেট কলেজের ছেলে-মেয়েরা মিলে এই ক্লাবের সাহায্যে ভাল ভাবে কাটাতে পারে।
৯। সামাজ ও জাতি আমাদের অলরাউন্ড পারফরমেন্স থেকে হয়ত একসময় উপকার পাওয়া শুরু করত।

আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। কলেজ থেকে বের হবার ৬ বছর পর একবার বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম বগালেক যাব, হাইকিং করতে। সেটা ছিল ২০০৪ সাল। গিয়েছিলাম, মজাও হয়েছিল, কিন্ত কলেজের সেই ফিটনেস আর ছিল না। অনেকের আরো কষ্ট হয়েছিল। এখন আমাদের সাথে কেউ মজা করলে তাকে বগালেকে যাবার ভয় দেখাই। অভিজ্ঞতা বলছে, বয়স আরো যত বাড়বে, তত আরো আনফিট হতে থাকব শারীরিক ভাবে। অথচ শারীরিক ভাবে ফিট থাকা যে আজকের দুনিয়ায় প্রফেশনাল সাকসেস এর অন্যতম চাবিকাঠি তা আমরা সবাই জানি।

আবার আমাদের এটাও খেয়াল রাখা দরকার যে, ক্লাবটা যাতে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে প্রমোদ ভ্রমণের ক্লাব বা আয়োজক না হয়ে যায়।

এক্স ক্যাডেটদের ভূমিকাঃ আমরা যারা এক্স ক্যাডেট আছি, তারা এই ব্যাপারে ইনেশিয়েটিভ নিতে পারি। যারা মাত্র বের হয়েছে তারা নিলে আরো ভাল হয়। তাদের ফিটনেস আমাদের যে কারো চেয়ে বেশী তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা একটা উদ্যোগ হিসেবেও কেউ দেখতে পারে। স্পন্সরশীপ সহ আরো অনেক অফিসিয়াল কাজে বড় ভাইরা সাহায্য ও মোটিভেট করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে এটা আমার বিশ্বাস আছে। হয়ত এরকম কিছু থাকতেও পারে, যেটা আমার জানা নেই। সদস্যের তো কোন অভাব হবে না তা বলা বাহুল্য। আমরা যারা এক্স ক্যাডেট আছি তারা যদি প্রফেশনের পাশাপাশি তাদের কলেজে থাকতে বিকশিত ভাল কোন সুকুমার গুণের চর্চা করে যাই তবে কিন্তু দেশ অনেক কিছুতেই লাভবান হবে।

স্বপ্ন যাত্রাঃ আমি স্বপ্ন দেখি, একসময় আমাদের কোন ক্যাডেট হোক না সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি আফিসার, জার্নালিস্ট কিংবা যে কোন প্রফেশনেরই, সাহস করে বের হবে একা অথবা দল বেঁধে, এভারেস্ট জয় করতে বা সাত সাগর তের নদী পার হবে ছোট নৌকা করে, অথবা মেরুতে যাবে কিংবা হেঁটে-হেঁটে বা সাইকেলে সারা দুনিয়া ঘুরে আসবে। হয়ত তখন ক্যাডেট কলেজ গুলো আরো অনেক বেশী সার্থক হবে। তখন হয়ত মুসা ইব্রাহীম কিংবা এম এ মুহিতের চেয়ে আরো বড় মাপের এক্সপিডেটর ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে, আরো বেশী কিছু করার অভিলাষ রাখবে। পৃথিবীর বুকে নতুন করে, নতুন পরিচয়ে বাংলাদেশের মানুষকে চিনাতে সাহায্য করবে। মুসা ইব্রাহীম কিংবা এম এ মুহিতে যদি ক্যাডেট না হয়ে, কৈশোরে ক্রস কান্ট্রি আর অবস্টেকল কোর্স না করেও অলরাউন্ড পারফরমেন্স দেখাতে পারে, এভারেস্ট জয় করতে পারে, তবে আমরা ক্যাডেটরা কেন পারবনা? আমি বিশ্বাস করি, আমরাও পারব। আমি সেই স্বপ্ন যাত্রার অপেক্ষায় থাকলাম।

১,৯৩৫ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “এভারেস্ট ও স্বপ্নযাত্রা”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার লেখার পয়েন্টগুলোর সাথে একমত। তোমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে এবং সেসব নিয়ে ্লিখছো - ব্যাপারটা খুব ভাল লাগছে। নিজে স্বপ্ন দেখছো এবং স্বপ্ন দেখার রোগটা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিচ্ছ। আমাদের দেশে খুব খুব এমন মানুষদের দরকার।

    অঃটঃ আমার মনে হয়েছে তোমার লেখার ধরনে একটু পরিবর্তন আনলে আরো তা বেশি করে কমিউনিকেট করতে পারবে। পড়তে পড়তে আমার মাঝে মধ্যে একটু স্কিপ করতে হয়েছে। আশা করি কিছু মনে করবে না। তোমার চিন্তাভাবনাগুলো আমার খুব ভাল লাগছে বলে কথাগুলো লিখলাম।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাইটা ইটা ফালায়া গেলাম। পরে বিস্তারিত বলে যাবো। আপাতত এটুকু বলে যাই আপনার লেখা মনে করিয়ে দিল কোন এক কালে ক্রস কান্ট্রি অবসটেকলে হালকা পাতলা ভালো করতাম ( যদিও আমারে এখন দেখলে কেউই বিশ্বাস করবে না।)।
    সময় নিয়ে আরো কথা বলে যাবো।
    আপাতত পোস্টের প্রতি ভালো লাগা জানিয়ে পাঁচতারা দাগিয়ে গেলাম।

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ক্রসকান্ট্রি বা অবস্টেকল কোর্সের মতো বাধ্যতামূলক ইভেন্টগুলোতে আমি খুব চাপের মধ্যে থাকতাম। কায়িক পরিশ্রমে খুব ভালো কখনো ছিলামনা বলে এই ইভেন্টগুলো আমার কাছে obstacle হয়েই থাকতো। কিন্তু একটু একটু করে, সমস্ত মনোযোগ একীভূত করে কি করে সেই যাত্রাটুকুতে সেবারের মতো উতরে যাওয়া যায় সেটুকু শিক্ষা পেয়েছিলাম ইভেন্টগুলো থেকে। আজো, খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেলে, আমি ওই মোডে চলে যেতে পারি। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবার এ শিক্ষাটা, হাল ছেড়ে দিয়ে পথ থেকে সরে না গিয়ে, আমার জীবনে অন্তত অনেক কাজে দিয়েছে।

    তোমার লেখার বিষয়বস্তুর সংগে চমৎকার প্রকাশভঙ্গি আর উপস্থাপনা মিলে মিশে গেছে। পুরো লেখাটা খুব উপভোগ করলাম।

    জবাব দিন
    • সাইফুল (৯২-৯৮)

      নূপুর ভাই,

      কিন্তু একটু একটু করে, সমস্ত মনোযোগ একীভূত করে কি করে সেই যাত্রাটুকুতে সেবারের মতো উতরে যাওয়া যায় সেটুকু শিক্ষা পেয়েছিলাম ইভেন্টগুলো থেকে। আজো, খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেলে, আমি ওই মোডে চলে যেতে পারি।

      অসাধারণ বলেছেন। আপানার এ কথাটা আমাদের সবার মনে রাখা উচিৎ। জীবনের অনেক কিছু সহজ করে দিবে নিশ্চিত।

      আপনার প্রশংসা পেলে ভাল লাগে অনেক। :shy:

      (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  4. আছিব (২০০০-২০০৬)

    অসাধারণ এবং সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা দিয়ে বিষয়টাকে সহজাভাবে আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন বস। সাধুবাদ রইল। :boss:

    এম, এ, মুহিত মিডিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকলে প্রচার বেশি পেতেন। তার কৃতিত্ব মুসা ভাই এর চেয়ে মোটেও কম নয়। তাকে ::salute::

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    সাইফুল ভাই,ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনি যেভাবে ভাবেন সেটি শুধু মুগ্ধ করার মত বললে কম বলা হবে।আপনার দুটিমাত্র ব্লগে এই জিনিসটা খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।আসলেই,১২-১৩বছরের ছেলেমেয়েরা মাইল টেস্ট,অবস্টাকল কোর্স ক্রস কান্ট্রির মন ইভেন্ট করেও পরবর্তীতে আর বড় কিছু করছেনা-এটা দুঃখজনক।আপনার লেখাটা খুব,খুব,খুব বেশি ভালো লেগেছে-এডভেঞ্চার ক্লাবের আইডিয়াটাও আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি এবং এটি বাস্তবায়িত হলে অবশ্যই আমি এতে যোগ দেব।

    অফ টপিক-ইয়ে,ভাইয়া ২০০৪ সালে ভারতীয় নেভীর বাঙ্গালি অফিসার কমান্ডার সত্যব্রত দাম এভারেস্ট জয় করেন প্রথম বাঙ্গালি হিসেবে।২০০৮ সালে তিনি প্রথম বাঙ্গালি হিসেবে নর্থ পোল,সাউথ পোল এবং এভারেস্ট এই তিনটি একত্রে জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ইস, কবে যে আমরাও... 🙁

    ২) ভাইয়া আপনার ফেসবুক আইডি(যদি থাকে) দেয় যাবে কি?

    জবাব দিন
    • সাইফুল (৯২-৯৮)

      মাসরুফ,

      তোমার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

      অফটপিক ইনফরমেশনটা আমার জানা ছিল না। সেজন্য আবার ধন্যবাদ। হ্যাঁ, আমরাও একদিন...

      ফেসবুকে (Md. Saiful Islam) নামে সার্চ দিয়ে দেখ। ইমেইল আইডিটা উপরে দিয়ে রেখেছি।

      ভাল থেকো।

      জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    নিন্দুকেরা আমার নামে বলে আমি নাকি ব্লগে ব্লগে গিয়ে পরে বলে যাবো বলে এসে আর কিছু বলি না। সেটি যে সত্যি না এই কমেন্টেই প্রমাণ হয়ে যাবে।

    যাহোক অনটপিক বলি। ক্রস কান্ট্রি অবসট্যাকল নিয়ে আপনার ভাবনা আর প্রস্তাবনা গুলো খুবই পছন্দ হয়েছে। এবং এ জাতীয় যে কোন কিছু উদ্যোগ নেয়া হলে আমি যে তাতে প্রথমভাগেই যোগ দিবো এ কথা নিঃসন্দেহে। তবে ক্যাডেট কলেজের কিছু অদৃশ্য ইনপুট আছে ক্যাডেটদের ভিতরে। সেই অদৃশ্য ইনপুট গুলোর জন্য অন্যতম উৎস হিসাবে কাজ করে ক্রস কান্ট্রি আর অবট্যাকল। এটা সত্যি এ ইভেন্টগুলোতে খুব ভালো করতে ন্যাচারাল এথলেটিসিজম এবং ফিটনেস লাগতো কিন্তু শুধু সেটাই কিন্তু এর শেষ কথা নয়। বরং এই কম্পিটিশন গুলোতে সাফল্য লাভ করতে মেন্টালি টাফ হওয়া অনেক জরুরী। আর মেন্টালি টাফ হওয়ার এই ইনপুট এটা কিন্তু ক্যাডেটদের জন্য অনেক প্রাপ্তি। কারণ ক্রস কান্ট্রি অবসট্যাকল হয়তো পরে অনেকেই করবে না কিন্তু লাইফের বাঁধা গুলোতে ক্রস কান্ট্রি কিংবা অবসট্যাকল জয়ের টাফনেস থাকলে নিঃসন্দেহে তা যে কোন ক্যাডেটকে একটা নন ক্যাডেটের চেয়ে এগিয়ে রাখে। আরেকটা ব্যাপার ছিলো টিম ওয়ার্ক। এই জিনিসের ও একটা চমৎকার শিক্ষা আমরা অবসট্যাকলে পাই।
    আসলে ক্যাডেট কলেজ থেকে প্রাপ্তির হিসাবে এগুলোকে আমি সামান্য ভাবি না। বরং এই জিনিসগুলো নিজের মাঝে ধরে রাখলেই যে কোন ক্ষেত্রেই সাফল্য আসবে।
    শেষে আবারও বলছি আপনার এই প্রস্তাবনা গুলোতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গেলাম। আপনার ব্লগ গুলো ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পরিষদ আর এক্স ক্যাডেট এসোসিয়েসন গুলোর কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে কিছু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করবো।
    আর মুহিতের ক্রেডিট টা আমি মুসার চেয়ে বেশি দেবো। যদিও মিডিয়াতে সে প্রচারণা পায় নাই। অবশ্য মিডিয়ায় আণ্ডাররেটেড লোকদের আমার বরাবরই ভালো লাগে।

    জবাব দিন
    • সাইফুল (৯২-৯৮)

      আমিন,

      অনেকদিন পর জবাব দিতে বসলাম। আলসেমী করে আসলে বসা হয়ে উঠে না। তোমার বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত বিশেষ করে,

      আর মেন্টালি টাফ হওয়ার এই ইনপুট এটা কিন্তু ক্যাডেটদের জন্য অনেক প্রাপ্তি।

      আমাদের যে কোন কাজে আসলে প্রপারলি রিসার্চ হয় না আসলে কাজ গুলো থেকে কি কি ধরনের আউটপুট আমরা পাব বা আর কি কি করা যায় টাইপ, কিংবা হয়ে থাকলেও এন্ড ইউসাররা তা জানতে পারেনা। সেটা জানা থাকলে কিংবা ঐ কাজটা করার সময় ইউসারদের জানানো গেলে আরও বেশী উপকৃত হত সমাজ।

      আমারও তোমার মত

      মিডিয়ায় আণ্ডাররেটেড

      লোকদের ভাল লাগে...

      কোথায় আছ তুমি এখন? আশা করি ভাল আছ... (সম্পাদিত)

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আমিন (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।