আজ সিনেমার বড়দিন-১

আনেকদিন পর সিসিবি তে আসার সুযোগ হল। সিসিবির সবচেয়ে বেশি ক্যাডেটপ্রিয় মুখ মানে জনপ্রিয় মুখ বন্ধু কামরুলের সাথে কথা হচ্ছিল কাল রাতে। ওর সাথে কথা বলার একটাই বিপদ…খালি গালাগালি করে ব্লগ লিখি না কেন। কিন্তু লেখা লিখতে হলে তো রচনাশৈলি থাকা চাই। এই ব্যাপারটা ওকে কে বুঝাবে । ওর কথা একটাই । লেখা দে ।
কামরুলের সাথে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়।সবচেয়ে বেশি হয় ফিল্ম নিয়ে। তরুণ ফিল্মমেকার এর সাথে ফিল্ম নিয়ে কথা হবে এটাই স্বাভাবিক।ওকে বলছিলাম যে দোস্ত,স্মৃতিচারণ লিখতে গেলে ঘুরে ফিরে একই কথা আর কাহিনী চলে আসে। কি লিখুম ? আমি কাল EAGLE EYE দেখতে যাবো শুনেই ও বল্ল ,এক কাজ কর সিনেমা দেখে এসে একটা রিভিউ লিখে ফেল সিসিবিতে। এতে করে নতুন একটা বিষয় সিসিবিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। সিনেমার ব্যাপারে কম বেশি সবারই আগ্রহ আছে । অনেক নতুন নতুন জিনিস জানা যাবে আর ভাল মুভি সম্পর্কে আলোচনা হবে ।ওকে বললাম দোস্ত আইডিয়াটা চমতকার। কিন্তু আমার মত কূপমণ্ডূকের পক্ষে সিনেমা নিয়ে লিখা খুব রিস্কি ব্যাপার…গোটা সিসিবি আমার রিভিউ পড়ে পচা দিম ছুড়তে পারে। তখন কে সামলা বে। ও বল্ল আচ্ছা রিভিউ না হউক, তুই যে সিনেমা দেখছিস সেটা কেমন লাগলো তা সবাইকে লিখে জানা। আমি সাহস পেলাম। কেমন লাগলো সেটা জানাতে তো আর আপত্তি নেই।fractureআজকে যে সিনেমার কথা বলবো সেটা FRACTURE । পাঠককুলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ এই লেখার সমস্ত দায়ভার কামরুলের উপর রইল। পচা ডিম মারতে হয় ওকে মারুন।

ডেনিয়েল পাইন এবং গ্লেন গার্স এর কাহিনী কে অসাধারণভাবে চিত্রায়ন করেছেন পরিচালক গ্রেগরি হবিট। কাহিনী তেমন আহামরি মনে নাও হতে পারে। কিন্ত এন্থনি হপকিন্স আর রায়ান গসলিন এর অসাধারণ অভিনয় মুভিটিকে বিশেষত্ব এনে দিয়েছে। মূলত থ্রিলারধর্মী এই মুভিটিতে সংলাপ আর চমৎকার অভিনয়ের কারণে এক অসাধারণ নাটকীয়তা ফুটে উঠেছে।বিশেষ করে এন্থনি হপকিন্স এবং রায়ান গসলিন এর বিড়াল ও ইদুর মুখি অবস্থান এ ইদুর বিড়াল এর যে দৌড় দেখান হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার যে কেউ স্বীকার করবেন।

মুভিটিতে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ী এন্থনি হপকিন্স, Ted Crawford চরিত্রে একজন বিত্তবান ও প্রতাপশালি, ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ।তার সুন্দরী আবেদনময়ী স্ত্রী জেনিফার (Embeth Davidtz) নিজের একাকিত্ব ঘুচানোর জন্য Detective Rob Nunally (Billy Burke) এর সঙ্গে গোপণে প্রণয়ে মেতে ঊঠে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল jenifer তার প্রেমিক Detective Rob Nunally কে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানায় না, নিজকে শুধু mrs smith হিসেবে পরিচয় দেয়। স্মার্ট আর ব্যক্তিত্বে ভরপুরTed তার প্রতি স্ত্রীর এই প্রতারণার প্রতিশোধ নেবার সুযোগ খুজতে থাকে ।অবশেষে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় স্ত্রীর মাথায় পিস্তলের এক রাউন্ড বুলেট ঢুকিয়ে দেয়।. কর্তব্যরত থাকায় Detective Rob Nunally ঘটনার সামাল দিতে TED এর বাসায় force নিয়ে হাজির হয়।TED সহজ স্বাভাবিকভাবে তার স্ত্রীকে গুলি করারা কথা স্বীকার করে এবং লিখিতও দেয়। সৌভাগ্যক্রমে jenifer হাসপাতালে কোমাতে বেচে থাকে।
এদিকে Assistant District Attorney Willy Beachum (Ryan Gosling) তার ক্যারিয়ারের সব কটি কেইসে হেরে গিয়ে অন্য ভাল কোন law farm এ জায়গা করে নিতে যখন ব্যস্ত ঠিক তখুনি Ted Crawford এর কেইস তার ঘাড়ে এসে বর্তায়। ছেলেমানুষী স্বভাবের কৌতুকপ্রিয় Willy Beachum (Ryan Gosling) মনে করে যেখানে অপরাধি নিজেই দোষ স্বীকার করে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে সেখানে এই মামলা শেষ হতে একটার বেশি শুনানির দরকার হবে না। কিন্তু ধুরন্ধর OLD DOG,Ted Crawford ,OLD SPORT এ মেতে ওঠে Willy Beachum (Ryan Gosling) এর সাথে।শুরু হয় ইদুর বিড়ালের দৌড়।কে জিতে শেষ পর্যন্ত?

ছবিটির সংলাপ দারুন এবং বেশ বাছাই করা। এক একটি শব্দ কাহিনীর গভিরতায় সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলে আগে থেকেই।
হপকিন্স বরাবরের মতো দারুন অভিনয় করেছেন। গসলিং আর বাকিরাও চমৎকার। বেকগ্রাউন্ড মিউজিক মোটামুটি। তবে সব মিলিয়ে এক বসায় দেখার মতো ছবি। আশা করি ভাল লাগবে।

fracture : IMDb ডিটেইলস

২,৭৭৭ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “আজ সিনেমার বড়দিন-১”

  1. ১.
    অই বেডা ! কোন দুষ্ট সিন আছে কিনা কইলি না তো? 😉 😉 দুষ্টামি ছাড়া সিনেমা দেখতে আমার ভালো লাগে না। 😉
    ২.
    IMDb রেটিং তো দেখলাম ভালোই। হপকিন্স তো সব সময় হেভি অভিনয় করে। দেখি ডিভিডি পাই কিনা।

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    রায়ান গসলিন অসাধারণ অভিনয় করছে ফ্র্যাকচারে। এন্থনি হপকিন্স তার ইউজুয়াল অভিনয়, মানে বস আরকি। ছবিটা ভালো লাগছে। মুভি রিভিউ চলুক সাইফ ভাই। আপনি আবার ফৌজিয়ান ভাইয়ের মতো আখেরি কোন ইস্যু ছাইড়া দিয়েন নায়। যতদিন পৃথিবীতে মুভি বানানো হবে আপনার রিভিউ এর ও দাবি থাকবে।

    এখন বলেন ২ নম্বর লেখাটা কবে লিখবেন? 😀

    জবাব দিন
  3. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    সাইফ,
    তোমাকে অনেক দিন পর সিসিবি'তে দেখে ভালো লাগল।
    মুভি আমারও ভালো লাগে। একদিন কামরুলের সাথে এই নিয়ে চ্যাট হচ্ছিল। ওকে বলেছিলাম, "আমি খেতে খুবই পছন্দ করি কিন্তু রান্না করায় আমার বহুৎ অনীহা"। শুনে ওর হাসি আকর্ণবিস্তৃত হয়েছিল।

    প্রথম সুযোগেই "ফ্রাকচার" দেখব।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    সাইফ,
    অনেকদিন পরে তোমাকে দেখলাম ব্লগে। কেমন আছ? আমিও কিন্তু কামরুলের দলে। ব্লগে স্বীকৃত লেখকদের লেখা না দেখলে আমার ও ভালো লাগেনা। সুতরাং, লিখতেই থাকো...লখতেই থাকো...।।

    কামরুল,

    (অই বেডা ! কোন দুষ্ট সিন আছে কিনা কইলি না তো? দুষ্টামি ছাড়া সিনেমা দেখতে আমার ভালো লাগে না।)
    তুমি তো মহা দুষ্ট...।

    ##মন্তব্যের সমস্যা একটা শেষ না হইতেই দেখি আরেকটা শুরু...। "উদ্ধৃতি" অপশন গেলো কই????? 😮 ~x(

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ফ্র্যাকচার আমারও খুব ভাল লাগছিলো। অনেককেই বলতে শুনেছি "সাইল্যান্স অফ দ্য ল্যাম্ব্‌স" এর হ্যানিবাল চরিত্রকে অনুসরণ করেই গ্রেগরি হবলিট তার সিনেমার টেড ক্রফোর্ড চরিত্রটি বানিয়েছেন। সত্যিই কিন্তু, হ্যানিবালের পর ফ্র্যাকচারই অ্যান্থনি হপকিন্সের সেরা অভিনয়। খুব ভাল লেগেছে।
    এই সুযোগে গ্রেগরি হবলিটের আরেকটা সিনেমার কথা সবাইকে জানিয়ে দিই। আমার কাছে দুইটা সিনেমাই প্রায় সমান ভালো লাগছে।
    সিনেমাটার নাম "ফ্রিকোয়েন্সি" (frequency)

    ফ্র্যাকচার ২০০৭ সালের, আর ফ্রিকোয়েন্সি ২০০০ সালের। ফ্র্যাকচার থ্রিলার, আর ফ্রিকোয়েন্সি সায়েন্স ফিকশন। ফ্র্যাকচারের পাশাপাশি ফ্রিকোয়েন্সিটাও সবাই দেখতে পারেন। গ্যারান্টি দিচ্ছি, দুটাই খুব ভালো লাগবে।

    জবাব দিন
  6. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ওহ্‌হো, ফ্রিকোয়েন্সির লিংক দিতে ভুলে গেছিলাম। রটেন টম্যাটোস এর লিংক দিচ্ছি:
    http://www.rottentomatoes.com/m/frequency/
    আর উইকিপিডিয়া থেকেও দিচ্ছি:
    http://en.wikipedia.org/wiki/Frequency_(film)

    অফ টপিক: বাংলাদেশ-ব্রিটেনের যৌথ প্রযোজনায় গত হপ্তায় একটা ছবি মুক্তি পাইছে। সবাই জানেন নাকি? ছবির নাম "দ্য লাস্ট ঠাকুর"। এটা নিয়ে ব্লগে অনেক আলোচনাই হইতেছে। আগ্রহীরা সচলায়তনের এই পোস্টটা দেখতে পারেন:
    http://www.sachalayatan.com/dhrubo/19141

    জবাব দিন
  7. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ভুল আরও একটা হইছে।
    সাইফ ভাই, আপনারে ধন্যবাদই দেয়া হয় নাই, সিনেমা নিয়া এরকম একটা সিরিজ শুরু করার জন্য। বিভিন্ন ছবি দেইখা কেমন লাগলো সেটা জানাইতে থাকেন। আগ্রহ নিয়া প্রতিটা লেখা পড়ুম। সিনেমা দেখতে যত মজা লাগে সেটার খুটিনাটি নিয়া আলোচনা করতে তারচেয়ে বেশী ভাল লাগে। ক্যাডেট কলেজ ব্লগ এবার সে সুযোগও করে দিল।

    জবাব দিন
  8. তারেক (৯৪ - ০০)

    সাবাস আলদীন, খুব ভাল করছিস এটা শুরু করে। কন্টিনিউ কর।
    আমি এটা দেখি নাই, আর কাল তো ঈগল আই নিয়ে তোর সাথে কথাই হলো, ওটা নিয়েও লিখে ফেল।


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  9. সাইফ, দারুন লিখছো। আসলেই সিসিবি পুরোপুরি ব্লগ হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে :clap: :clap: পরেরটার আশায় আছি। সময় কইরা লেইখা ফালাইও 🙂

    আর দ্য লাস্ট ঠাকুর এর শ্যুট করার সময়কার কিছু কাহিনি শুনেছিলাম আগে। শুনেই বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো। এইচ ডি তে তখনো আমাদের এখানে কোনো কাজ হোতোনা। ইউ কে'র কেউ যদি দেখে এটা নিয়েও একটা রিভিউ দেয় তাহলে ফাটাফাটি হয় B-)

    জবাব দিন
  10. সুন্দর মাইয়ারা লাফায় লাফায় সুন্দর পোলার বুকের উপর লাফ না দিলে আমার আবার সিনেমা ভালো লাগে না। অই গুলা তো কিছু লিখলানা।

    কাহিনী শুইনা তো মনে হয় ঠাসা গল্প, সময় কইরা দেখি দেখুম্নে, মনে থাকলে হয়।

    জবাব দিন
  11. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    সাইফ ভাই, আমার দি এলিয়েন নিয়া লেখা ব্লগের ছবিটা আপনার ব্লগের কিছুটা অংশ নিয়া নিছে, হোম পেইজে। ভাবলাম এমনই থাক, দেখতে খারাপ লাগতাছে না। কি বলেন?

    জবাব দিন
  12. গ্রেগরি হবলিটের আরেকটা ছবি আমার বেশ মজা লেগেছিলো। "প্রাইমাল ফিয়ার"। যারা দেখেন নি, দেখতে পারেন। হেব্বি মজার একটা ডায়লগ আছে। "If you want justice, go to a whorehouse. If you wanna get f**ked, go to court."

    জবাব দিন
  13. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    প্রাইমাল ফিয়ারে এডোয়ার্ড নর্টনের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়া গেসি মামু,আর রিচার্ড গিয়ারের কথা কি কমু-যত বুড়া হইতেসে তত হ্যান্ডসাম হইতেসে বেটায়...শিল্পা শেঠিরে তো সেইদিন...... 😀

    জবাব দিন
  14. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    ক্যান বয়সের সাথে সাথে শিল্পা শেঠি কি কম গ্ল্যামারাস হইছে :-B ? কয়দিন আগে বাজীগরের একটা সিনে পুরনো শিল্পারে দেইখা বিশাল ভিড়মি খাইছি 😛 !!


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  15. @ফৌজিয়ান ভাই

    সায়েদ ভাই কইলো শিল্পা শেঠির কথা আর আপনের মনে পড়লো রাভিনারে 😉 !!!! কাহিনী কি? তাও আবার এক্কেরে ‘টিপ টিপ বারসা পানি’। বুঝছি। আপনারেও বিয়া দিতে হইবো। :grr: :grr:

    জবাব দিন
  16. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আপনারেও বিয়া দিতে হইবো।

    এহ্, আইছে, তুই আগে আমাগো মাসরুফের বিয়াটা দেয়ার ব্যবস্থা কর, তারপর দেখুমনে কত বড় ঘটক হইছোস। :grr: :grr:

    [কানে কানে, আছে নাকি কুনু সেইরকম কইন্যা :shy: :shy: ]


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  17. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কামরুল ভাই, আমারে ক্ষেপাইয়েন না কইলাম।আপনের ডকুমেন্টারি শুটিং এর ঘটনা নিয়া ব্লগ লিখা ফালাইলে(নাম, ইনট্রিকেট ডিটেইলস শুদ্ধা)তার জন্য কিন্তু কেউ দায়ী থাকবেনা x-(

    জবাব দিন
  18. সাইফ (৯৪-০০)

    @ ফৌজিয়ান ভাই,ধন্যবাদ........................।

    @কেম,“If you want justice, go to a whorehouse. If you wanna get f**ked, go to court.”সংলাপ্টা জটিল,শুন সিলাম,কিন্তু ভুলে গেসিলাম............।তোর মেমরি মামা.....।.........। :salute:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইফ (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।