মন কি যে চায় বলো…………

১। কিছু মনোজাগতিক ব্যাপার আছে যার কোন ব্যাখ্যা মনোবিজ্ঞানেও নেই।এরকম কিছু ঘটনা প্রতিটি মানুষের জীবনেই কম বেশী ঘটে থাকে। যারা এই ঘটনাগুলোকে সহজভাবে নেন না, আমার ধারণা তাদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটে নাই। যে সময়টাতে মায়ের আচলের নিরাপদ ছায়ায়, বাবার কড়া শাসন, বড়ো ভাই বোনদের স্নেহ ভালবাসায় বড়ো হওয়ার কথা, সে সময়টা আমরা পার করেছি ক্যাডেট কলেজ়ের কঠিন অনুশাসনের মধ্যে। এই সময়টাতে সুন্দরী , অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ম্যাডামদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ক্যাডেটদের মনে প্রেম জাগাবে এইটাই খুব স্বাভাবিক।

২।আমরা ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন। আমাদের কলেজে যে কয়জন ম্যাডাম ছিলেন সবাই ছিলেন আমাদের মায়ের বয়সী। দেখতেও সুন্দরী ছিলেন না কেউ। তাদের কড়া শাসনে প্রেমের ভূত সব সময় কলেজের চৌহদ্দির বাইরে থাকতো। অবশেষে হঠাৎ কলেজের বুক আলো করে বায়োলোজির এক ম্যাডাম আসলেন।আমদের A ফর্ম এ ক্লাস নিতেন।বি ফর্ম এর ছেলেদের এই নিয়ে খুব মন খারাপ ছিল। হাইট,ফীগার,মুখাবয়ব,গায়ের রং………সব দিক থেকেই ম্যাডাম ছিলেন মনোলোভা। অনেক টা “ক্যাথেরিন জেটা জোনস” এর মতো। ম্যাডাম আমাদের পরাগায়ণ পড়াতেন। ভ্রমর বা প্রজাপতি কিভাবে পরাগায়ণ ঘটায় তা আমরা যত না মনোযোগ দিয়ে শুনতাম তার চেয়ে মনযোগী ছিলাম ম্যাডাম এর অপরুপ মুখখানার দিকে। মনে মনে ভাবতাম আমার একটা প্রেম হবে। আমার প্রেমিকাও ম্যাডামের মত হবে। প্রেপ টাইম এ ঘুমুতে থাকলে ম্যাডাম অন্যদের মত ধমক বা শাস্তি না দিয়ে কোমল হাতের স্পর্শে একটা স্মিত হাসি দিয়ে জাগিয়ে দিতেন। অন্যরকম একটা অনুভূতি…এ কি ভালবাসা না প্রেম বুঝতাম না। দুষ্টুমিও খেলত মাথায় অনেক। তাই পুং রেণু কিভাবে স্ত্রী রেণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক ঘটায়,এই ব্যাপারটি বুঝেও ম্যাডাম এর কাছে বার বার যেতাম আর বলতাম, ম্যাডাম,পরাগায়ণ? ম্যাডাম স্মিত হাস্যে অনেক ধৈর্য্য নিয়ে আবার বুঝাতেন আর শেষে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা হাসি দিতেন। ততক্ষণে ছেলেদের লাইন পড়ে যেতো ক্লাস এর বাইরে জবা গাছের নিচে। সবাই দুই তিনটা জবা ফুল ছিড়ে হাতে নিয়ে ঘুরত। কি প্রেপ টাইম কি ক্লাস টাইম, এমন কী একটু ব্রেক পেলে কেউ কেউ ডিপার্টমেন্টে ছুটে যেতো। এর পিছনে যত না নিষেক প্রক্রিয়ার রহস্য ছিল,তার চেয়ে বেশি কাজ করত কিশোর মনের ভালবাসা, প্রেম শুধু ম্যাডামকে এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু বিধি বাম, আমাদের এই ভালবাসা ভাল লাগার পর্ব এক মাসও স্থায়ী হল না। ম্যাডামের প্রতি আমার ভাল লাগা এত তুঙ্গে পৌঁছেছিল যে খাওয়ার টেবিলে ক্লাস ইলেভেন টুয়েল্ভ এর ভাইয়ারা কেউ কিছু মন্তব্য করলে মাইর দিতে ইচ্ছে হত। ম্যাডাম চলে যাচ্ছে…আকস্মিক এই খবর আমাদের সবার বুকে শেলসম বিধলো। বিশ্বাস হল না। সেদিন ছিল আমাদের সাথে ম্যাডামের শেষ ক্লাস। কিন্তু ম্যাডাম চলে যাচ্ছেন এই কথা আমাদের কাউকে বললেন না। আমরাও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। সবার মুখের উপর সেদিন অন্ধকার একটা ছায়া নেমে এলো। সবার অন্তরে যেনো একটা চাপা কাণ্ণা অস্ফুটস্বরে বলতে চাইছিল…চলেই যদি যাবে তবে এসেছিলে কেন? আমার অনেক বেশি খারাপ লাগছিল। কি এক অজুহাতে ম্যাডাম এর সাথে দেখা করার জন্য দু তলায় গেলাম,ম্যাডাম বাইরে এসে হাসি দিয়ে বল্লেন- কি ব্যাপার,মন খারাপ কেন? আমি বল্লাম- ম্যাডাম,আপনি কি সত্যি চলে যাচ্ছেন? ম্যাডাম একটা মলিন হাসি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- ভালমত পড়াশুনা করো…………… আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। পরে হাউস এ গিয়ে কেঁদেছিলাম সত্যি সত্যি। অনেকগুলি শিশুমনে একটা অসহয়াত্বের ছবি একে দিয়ে সত্যি সত্যি ম্যাডাম চলে গেলেন………। পরে শুনলাম সিনিয়র ক্লাসের ভাইয়ারা নাকি অভিযোগ করেছিলেন ম্যাডাম ভালো পড়াতে পারেন না। ক্লাস ইলেভেন টূয়েলভ এর ভাইয়াদের দেখলেই কেন জানি মাইর দিতে ইচ্ছে হত।

এই ঘটনাটি পড়ে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করবেন জানি। তাদের উদ্দেশ্যে রবি ঠাকুর এর উক্তি রইল……………

আমি সমাজ ভাঙ্গিতে আসি নাই। সমাজে নতুন নীতি প্রচার করিতে চাহি না। কিন্তু মানব মনে যে সকল ভাবের উদয় হয় তাহার সবই কি বিবেচনা সংগত?

…………চলবে………।।

২,২৮৪ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “মন কি যে চায় বলো…………”

মওন্তব্য করুন : সাইফ

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।