স্মৃতির নুড়ি পাথর

একাডেমিক ব্যাপারে আমার স্মৃতি শক্তি খুব ই খারাপ। আমার এখনকার জীবন থেকে আমার ছেলেবেলা, ক্যাডেট কলেজ লাইফ এই দুটোকে আমি একেবারেই আলাদা করে দেখি। আমার এখনকার এই একঘেয়ে যান্ত্রিক,বিষাদদ্ময় জীবনের সাথে যখন সেই সময়কার জীবনের তুলনা করি তখন আমার মনে হয় আমার একবার জন্ম হয় নি ,আমি আগেও একবার জন্ম নিয়েছিলাম। ভীষন্রকম অতীত চারিতায় আমি মগ্ন হই। সেই অতীতচারিতা আমকে কোন বেদনা দেয় না,কেবলি মুগ্ধতা আরা মোহাবিষ্টতায় আমি আচ্ছন্ন হই সেই জীবনের কথা মনে করে। প্রতিটি মুহূর্ত,উপলক্ষ্য আমি অনেক উপভোগ করি। যতবার ই আমি মনে করি সেই দিঙ্গুলার কথা ততবার ই মনে হয় আমি নতুন করে জন্ম নেই। নিজেকে জাতিস্মর মনে হয়। অনেকদিন ধরে সিসিবি তে কিছু লিখা হয় না। কামরুল কে ফোন দিলেই বলে তুই লিখিস না কেন। এতসব সিদ্ধহস্ত লেখকদের ভিড়ে ,এত সুন্দর সুন্দর লেখার মাঝে কি ই বা লিখব,হাত থেমে আসে আঙ্গুল চলতে চায় না। তাই নীরব পাঠক হিসেবেই বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি।

১।
আমরা তখন ক্লাস ইলাভেন এ পড়ি।ইংরেজির শফিক স্যার ক্রিস্টোফার মার্লোর দি প্যাশনেট শেফার্ড পড়াতেন।প্যাশনেট শব্দের অর্থ নিয়ে অনেকের মাঝেই অনেক দ্বিধা ছিল।জিন্নাত একদিন দাঁড়িয়ে বল্ল স্যার প্যাশনেট মানে কি? উত্তরো ওর কাছে জানা ছিল। স্যার অনেকভাবে প্যাশনেটের অনেকগুলো প্রতিশব্দ বললেন ,কিন্তু জিন্নাতের আর মন ভরে না ।শেষ মেষ ও বলেই ফেল্ল, স্যার এইখাননে কি প্য্যাশনেট মানে কামুক অর্থে ব্যব হার করা হয়েছে? পুরো ক্লাস হেসে উঠল। স্যার আবার খুব প্যশনেটলি এই কবিতাটা পড়াতেন।কাজেই তিনি অবাক না হয়ে কিংবা এতটুকু বিচলিত,বিরত না হয়ে বল্লেন,হ্যা ঠিক ঈ বলেছ।স্যার খুব আবেগ দিয়ে পড়াচ্ছেন ,প্রেমিক শেফার্ড তার প্রেমিকা কে নিয়ে এই করবে,অই করবে,তাকে এই দিবে সেই দিবে,স্যার এর গলার স্বরটাও ছিল খুব প্যাশ্অনে ভরা।ভরাট জড়াণো কন্ঠে স্যার বলে চল্লেন,ত কপোত কপোতি মিলে একসাথে পাহাড়েড় চূড়ায় পাথরের উপর বসবে,কপোত তার কপোতিকে পৃথিবির সবচেয়ে সুন্দর ,নরম আরামদায়ক উল দিয়ে গাউন বানিয়ে পরাবে,গোলাপ দিয়ে তাদের শয্যা সুশোভিত করে সাজাবে,তার নাচবে ,গাইবে ফুর্তি করবে আরো কত কি?স্লিপার বানিয়ে দিবে,কোমরের বিছা বানিয়ে দিবে এই সেই আরো কত কি?হঠাত করে আমাদের আদনান হাত তুল্ল।স্যার থেমে যেতেই আদনান দাঁড়িয়ে বল্ল,আচ্ছা স্যার এই ব্যাটা অই মহিলাকে পাওয়ার জন্য এতসব দিতে চাইছে ,অই মহিলা কি এতই ফকির তার পড়নের কিছু নাই?
বাকী দৃশ্য সহজেই অনুমেয়।

২।
ক্লাস সেভেন এর তৃতিয় অথবা চতুর্থ দিন।মাগ্রিবের নামাজে ।সবাই প্রথম রাকাতে তাহ্রিমা বেধেছে ,হঠাত দেখলাম জিন্নাত ইশ্তিয়াকের চোখের সামনে আঙ্গুল ধরে শুরশুরি দেবার ভঙ্গিতে আঙ্গুল নাড়ছে।অতি সাব্ধানি ইশ্তিয়াক ফিসফিসিয়ে বলে,অই পাগল কি করিস,ভাইয়ার কাছে কম্পলেইন দিমু,জিন্নাত থামার ছেলে নয়,ওর হাত সরিয়ে দিতে গেলে ,জিন্নাত চোখ বড় বড় করে বলে,তোর ঈমান টেস্ট করি,তোর ত নামাজ হইব না।

৩।শাহরিয়ার ভাই না কে যেন, পরিক্ষার আগে দিয়ে হাউসে ছুটির দিনে ঘুমাচ্ছে।হাউস বেয়ারা ইউনুছ ভাই তাকে জাগিয়ে তুলতে ডাকছে …শাওহ্ রিয়ার শাওহ্অরিয়ার উঠো,জাগো,দেখো,সুর্য উঠি গিএছে ,শহরিয়ার ঊঠো,এখন আলস্যি করবার সময় নয়।

৪।সোলাইমান খন্দকার আমাদের ইংরেজি পড়াতেন।প্রেপ আওয়ারে স্যার কোন্ দিন ই সু পরে আসতেন না।একদিন প্রিন্সিপাল এইজন্য তাকে ধরল।কিছুক্ষন ইয়েস স্যার,স্যরি স্যার বলে তিনি আমাদের ফর্মে ঢূক্লেন।উনার দিকে তাকাতেই একটা হাসি দিয়ে বল্লেন,আরে মিয়া প্রিস্নিপাল আমারে ধরে ,সু পরি নাই কেন,আমিও কইছি আমি ঢাকা কলেজের পোলা,আই ডাজ় নট কেয়ার এনিবডি।আমার আবার মোজ পড়লে শুটকির গন্ধ বের হয়।
৫।বাংলার রইস স্যার কে যারা চিনেন তারা জানেন স্যার কেমন।ক্লাস সেভেনে স্যার ছিলেন আমাদের ফর্ম মাস্টার।স্যার এর আবৃত্তি ছিল অসাধারণ।গলার ভয়েস,পড়ানোর স্টাইল,ব্যক্তিত্ব্ব সব মিলিয়ে স্যার ছিলেন আমাদের কাছে বাঘা রইস নামে খ্যাত।একদিন আমাদের লাদেন কে জ়ড়িয়ে ধরে আমাদের আশেক যাত্রার অভিনয় করছিলো,লাদেন কে ক্ষ্যাপানো ছিল সবচেয়ে সোজা।আর শরির দেইয়ে রক্ত সঞ্চালন দেখা যেত এতি ফর্সা ছিল,ক্লাস এঈটের কাহিনি।কে কারে ক্ষেপাইতে পারে এইপ্রতিযোগিতায় মগ্ন।লাদেঙ্কে জড়িয়ে আশেক বলছে,কাছে এসো সুন্দরি,তোমাকে ছাড়া আমি বাচব না,লাদেনের চোখ মুখ লজ্জায় লাল,এক পর্যায়ে বিবর্ন।এমন সময় রইস স্যারের আগমন,পুরা ক্লাস হাসছইল,শুন শান নিরবতা।লাদেন কান্না কান্না ভাবে স্যার এর সামনে দাড়াণো,স্যার মোটা ভারি গলায় জিজ্ঞেস করলেন,কি হয়েছে?লাদেন মিন মিনিয়ে বল্ল,স্যার ,আমাকে অশ্লিল কথা বলেছে,সুন্দরি বলেছে,স্যারের সুপ্রশ স্ত হাতের থাপ্পরে আশেক হাস পাতালে।
৬।মজিব একদিন কি মনে করে জণৈক আবুল ভাইকে ভোদি বানাবে।ওর রুম মেট ছিল সেই ভাইয়া।প্রিন্সিপাল প্যারেডের আগের রাতে মুজিব সুপার গ্লু দিয়ে ইউনিফর্মের প্যান্টের নিচের পা ঢুকানোর জায়গা একসাথে জোড়া লাগিয়ে দিলো,সকালে সেই ভাইয়া তড়ীঘড়ীকরে প্যান্ট প্অরতে যেয়ে মউসিবতে পড়ল,অবাক বিস্ময়ে বলতে শোনা গেল,এই মুজিব ,আরি,আইঠে লাইগ লে ক্যাম নে,ভাইয়ার চোখ ছিল বড়বড় আর এক্সপ্রেশন অ জ়টিল।
৭।রুহুল আমিন সিনহা স্যার একদিন পাপ সংক্রান্ত বিষয়ে ক্লাসে আলোচনা করছেন।কি করলে পাপ আর কি করলে পাপ হয় না।তিনি বলছিলেন যে যতক্ষন পর্যন্ত তোমার মাথায় পাপ চিন্তা কাজ করবে কিন্তু তুমি যতক্ষন না অই কাজটা করবে ততক্ষন পর্যন্ত সেইটা পাপ হবে না।কারণ তুমি যতক্ষন না করে থাকতে পারছো ততক্ষন তুমি জিহাদ করছ।তোমার আত্মার কু প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে।জিন্নাত দাঁড়িয়ে বল্ল,স্যার ,আমি না নামাজ পড়তে গেলে একটা সমস্যায় ভুগি।সেইটা হল আমার মাথায় খালি খারাপ চিন্তা আসে,আর খারাপ খারাপ ছবি ভাসে।সবাই হো হো করে হেসে উঠল।স্যার ও মৃদু হাসি দিয়ে বললেন সারদিন খারাপ ছবি,নগ্ন ছবি দেখলে আর মাথায় আমল করলে ত হবেই।স্ময় থাকতে এইগুলা বাদ দাও।

২,১৯৯ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “স্মৃতির নুড়ি পাথর”

  1. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    সাইফ,
    অনেক দিন পর তোমার লেখা পড়লাম।
    বরাবরের মতই ভাল লাগা নিয়ে অবশ্যই।

    সময় করে উঠতে পারি না।
    যখনই একটু সুযোগ হয়।
    এখানে আসি - হাতড়ে বেড়াই নিজের জাতিস্মর হওয়ার সম্ভাবনাটুকু।

    অনেক ভাল থেকো প্রিয়।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    দোস্ত...প্রত্যেকটা ঘটনা মনে কইরা অনেক্ষণ হাসলাম। =)) =))

    খন্দকার মো. সোলাইমান স্যার খুব মজার মানুষ ছিলেন। স্যারের ক্লাশ খুব মজা নিয়ে করতাম। স্যারের নেয়া প্রথম পাক্ষিকে ডুবন্ত অনেকজনের ভিড়ে যে কয়েকজন ভেসে থাকতে পেরেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। এজন্য মনে হয় স্যার আমাকে একটু পছন্দ করতেন। 😀

    রইস স্যারের মত বাংলার শিক্ষক খুব কমই পাওয়া যাবে। উনার ভরাট কন্ঠ এখনও ভুলিনি। একদিন স্যার ক্লাসে এসে বোর্ডে লিখেছিলেন, "কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে"। ঐদিন স্যার ক্লাসে কিছু পড়াননি 🙂

    ইউনুস ভাই প্রায়ই সাধু ভাষায় কথা বলতেন, বেশ মজা লাগত শুনে।

    লেখাটায় বেশ কিছু টাইপো আছে, পারলে ঠিক করে নিস্‌।

    জবাব দিন
  3. সাইফ (৯৪-০০)

    আরে এইগুলা ত সেরফ স্মৃতিচারণ,লোকজন যাতে চোখ বুলায় এইজন্য একটু ভারিক্কি নাম দিয়ে দিলাম।।হা হা হা।লেখালেখি আমার কাজ না মামা,অনেক পরিশ্রম এর কাজ।তবে আড্ডায় গল্প বলতে বললে আমি টানা সাত আট দিন চালাতে পারবো এক্টানা।তোদের ক্যাম্পাসের আড্ডা খুব মিস করি রে ;))

    জবাব দিন
  4. সাইফ (৯৪-০০)

    বস,আমার আরো দেড় বছর বাকি।তবে ডিসেম্বর এ দেশে আসবো।ফোন নাম্বার দিয়েন।এসে কল দিব ইনশাল্লাহ।আর ঢাকায় থাকলে দেখা হবে।আপনি ত একবারেই লেখা বন্ধ করে দিছেন।অনেক ব্যস্ত জানি।তারপরো লিখেন।

    জবাব দিন
  5. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    :))
    মামা তুই রেগুলার লিখ।
    ইউরোপ ট্যুর নিয়া লিখ।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  6. তারেক (৯৪ - ০০)

    রইস স্যারের থাপ্পড় খাইয়া আশেক তিন ডেস্ক উইড়া গিয়ে পেছনে পড়ছিলো মনে আছে।
    আর, আলদীন, একটা জায়গায় ভুল করছিস। শফিক স্যার গাউন বলেন নাই, বলছিলেন পেটিকোট। 😛


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  7. দোস্তো, কয়েকটা কাহিনি আগে শুনছিলাম মান্নার কাছে মনে হয়, আজকে পইড়া আবার বহুত মজা পাইলাম... :)) :)) ।যা একখান ট্রিপ মারলি দোস্তো ইউরোপে, মাক্ষী.........ট্রিপ তার উপর লিখ......

    অই মহিলা কি এতই ফকির

    :khekz: :khekz: ......আদনান-কে :boss: :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।