চাষী মোস্তফা আর যুক্তিবাদী স্যারের গল্প

ক্লাস নাইন বা টেনের কাহিনী।
আমাদের এ্যাডজ়ুটেন্ট তখন মেজর মইনুদ্দিন মাহমুদ স্যার, কমান্ডো। আমাদের মোস্তফা শীতকালে গেইমস টাইমে হাফ শার্ট পড়লে ভিতরে অনেক কিছু পরিস্কার করতে হয় না,এই ডাউটের সুযোগে অনেক যত্নে সে অনেক কিছু চাষবাষ করেছে কয়েক মাস ধরে। হঠাৎ একদিন কি কারনে এ্যাডজ়ুটেন্ট এর সন্দেহ হল সবার শার্ট খুলে ভিতরকার হাইজিন চেক করতে আরম্ভ করল। মোস্তফাকে যখন চেক করল, তখন দেখা গেল ৪ /৫ ইঞ্চি লম্বা কালো ঘাসে আর্মপিট ভর্তি। সবাই অকস্মাৎ একটা গর্জন শুনতে পেল । মইনুদ্দিন স্যার ক্ষেপে গেলে রাগে গড় গড় করতেন।কমান্ডো বলে কথা। পরের চিতকারে সবার কানে ভেসে আসলো,
আক্কাআআআআস, সেনিডা লইয়া আয়।
গ্রাঊন্ডস্ম্যান আক্কাস ভাই ঘাস কাটার সেনি মানে লম্বা দা নিয়া দৌড় আরম্ভ করল..এরপর থেকে মোস্তফার নাম হয়ে গেল বগল চাষী মোস্তফা।

আমাদের কলেজের ডাইনিং হল প্রিফেক্ট ছিলেন জাহিদ ভাই। জাহিদ ভাই ছিলেন ক্লাস মেট আর জুনিয়রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন লোক।প্রিন্সিপাল মাসুদ হাসান স্যার ছিলেন একটু অন্য ধাচের লোক।ক্যাডেটদের খেয়াল খুশিকে উনি অনেক শ্রদ্ধার সাথে মূল্যায়ন করতেন।আর তাই আমাদের কলজের রেজাল্ট এ একটা অভাবনিয় সাফল্য দেখা দেয় সব ক্ষেত্রে। ক্লাস টূয়েল্ভের ভোটে জাহিদ ভাইকে বানানো হয় কলেজ ডাইনিং হল প্রিফেক্ট।স্যারদের মাথায় রীতিমত বাজ পড়ল,ডাইনিং হল বেয়ারা আর বাটলার এর বুকে খবরটা শেলসম বিধল। যাই হউক সেই জাহিদ ভাই একদিন খেজুর এর রস খেতে গিয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ সাদিক এর কাছে ধরা পড়ল ।
অধ্যাপক মুহম্মদ সাদিক কে যারা চিনেন তার জানেন কি জিনিস। স্বাধীনতার পরে মির্জাপুর এর ক্যাডেট আর মেস অয়েটররা মিলে উনার স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানের জন্য উনাকে মেরে ফেলতে গিয়েছিল। কাহিনীটা একটা বইতেও আছে। স্পেশাল পারমিশনে তিনি সব সময় শেরওয়ানি পড়তেন। ক্যাডেট কলেজের ড্রেস রেগুলেশন মানতেন না। তাতে নাকি ধর্ম টিকে না। যুক্তি দিয়ে তিনি সব সময় কথা বলতেন।

তিনি জাহিদ ভাইকে গাছে দেখে বললেন, নিচে নামো বাবা নিচে নামো, কান ধর,কান ধর, বল আমি চুরি করেছি, অপরাধ করেছি। এরপর বললেন, উপরে আল্লাহ নিচে মাটি, বল বাবা তুমি চুরি করেছ।
জাহিদ ভাই একটা দুষ্ট আর মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, স্যার উপরে আল্লাহ নিচে মাটি আমি চুরি করি নাই ।
‌যুক্তিবাদি সাদিক স্যার কিছু না বলে চলে গেলেন, আর বিড় বিড় করতে থাকেলন। মিথ্যুক,মিথ্যুক,পৃথিবি ধ্বংস হয়ে যাবে,কেয়ামত আসন্ন।

২,২১২ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “চাষী মোস্তফা আর যুক্তিবাদী স্যারের গল্প”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)
    বগল চাষী মোস্তফা

    সাইখ সিরাজ কি এই ব্লগ পড়ে। পড়লে খুব খুশী হতেন। ব্যাতিক্রমধর্মী এই চাষীকে হয়তো তিনি তৃনমূল পর্যায় হোতে তুলে ঘৃণমূ্ল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতেন।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।