দি লিটল প্রিন্স

প্রথম যখন আমার এক বন্ধু আমাকে এই বইটা পড়তে বলেছিল আমি আগ্রহ ভরে সেটা সংগ্রহ করে পড়া শুরু করেছিলাম এবং আশাহত হয়েছিলাম – এটা কি বাচ্চাদের বই সে আমাকে পড়তে বলেছে।

পরে বড় হয়ে আবার যখন এই বইটা পড়তে গেছি তখন ক্রমে ক্রমে বুঝতে পেরেছি কতটা গভীর অর্থ লেখা এই বই-এর গল্পগুলিতে। ফরাসী লেখক Antoine Saint-Exupéry এই বইটি প্রথম লেখেন ১৯৪৩ সালে। এ পর্যন্ত ১৯০টি ভাষাতে অনুদিত হয়েছে বইটি এবং ৮ কোটির বেশী বই বিক্রি হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা বিক্রি হওয়া বই এটি।

এখানে এক রাজার গল্প আছে। সর্ব ‘ক্ষমতাময়’ এই রাজা আকাশের তারকাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে – তবে সে শুধু এমন আদেশ দেয় যেটা তারকারা এমনিতেই করতো। এই কথাটা সে তার প্রজাদের ব্যাপারে এই ভাবে বলে -“সাধারণ প্রজাদের কর্তব্য হচ্ছে রাজার আদেশ মানা, শুধু যদি সেই আদেশ ন্যায্য হয়।”

এই গল্পটা আজ মনে পড়ল সাম্প্রতিক সিলেট ক্যাডেট কলেজের ঘটনা থেকে। এ ব্যাপারে আমার মন্তব্যটা এখানে উপযুক্ত ভেবে আবার উদ্ধৃতি দিলামঃ

“৫০ বছর আগে যখন প্রথম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ সৃষ্টি করা হয়, তখন হয়তো উদ্দেশ্য ছিল – কি করে এক ধরণের যুবকদের গড়ে তোলা যাবে যারা কোন প্রশ্ন না করেই কতৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলবে।

এর মধ্যে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। তার সাথে সাথে আমরা যদি ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার দর্শন বদলে বর্তমানের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারি – তা হলে গরীব দেশের জনগনের এত টাকা খরচের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাখার কোন মানে হয়না।

আমার উপরের লেখাটা অনেকের কাছে কঠিন মনে হবে। সত্য অনেক সময় অপ্রিয় হয়।

শারিরীক ভাবে কাউকে আঘাত করা অপরাধ, কারণ যাই হোক। সেই আঘাত করা হয়েছে যদি প্রমান হয়, তবে কোর্ট কেস করে হোক বা কোর্ট-মার্শাল করে হোক অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কম করে হলেও চাকরীচ্যুত করা উচিত অপরাধীকে।

ক্যাডেট কলেজের ক্লাশ ১২-এর ছাত্ররা যতেষ্ট দায়িত্ববান। তারা সবাই মিলে যখন একটা ব্যাপারে এক মত হয়ে কাজ করেছে, তখন তাদের কাজের বিচার শুধু প্রচলিত আইন-শৃংখলার দোহাই দিয়ে দেখলে চলবে না।

এ ধরনের ঘটনা এক দিনে ঘটেনা। কলেজ কতৃপক্ষ, বিশেষ করে প্রিন্সিপাল সাহেবের দায়িত্ব এসে পড়ে এখানে।

আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এক্স-ক্যাডেটরা গভীর উৎবেগের সাথে এই ঘটনা অবলোকন করছি।”

১,০২৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “দি লিটল প্রিন্স”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    এর মধ্যে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। তার সাথে সাথে আমরা যদি ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার দর্শন বদলে বর্তমানের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারি – তা হলে গরীব দেশের জনগনের এত টাকা খরচের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাখার কোন মানে হয়না।

    সহমত ভাইয়া।
    তবে আমার কাছে মনে হয়েছে ক্যাডেট কলেজ পরিবর্তিত শিক্ষা দর্শনের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম। যে ব্যাপারগুলো আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে সেটা হলো ক্যাডেট কলেজ গুলো থেকে আমরা কী চাই? সেটার চাওয়াটা অভিভাবকভেদে রকমফের হবে। আমি জানি না ওখানে কী ঘটেছে , যাই হোক না কেন এমন ঘটনা কোন একদিনের দৈব ঘটনা নয়। বরং ক্রমাগত পরিবর্তিত সিস্টেমের ত্রুটি থেকেই এই দিকে ধাবিত হয়েছে।

    শারিরীক ভাবে কাউকে আঘাত করা অপরাধ, কারণ যাই হোক। সেই আঘাত করা হয়েছে যদি প্রমান হয়, তবে কোর্ট কেস করে হোক বা কোর্ট-মার্শাল করে হোক অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কম করে হলেও চাকরীচ্যুত করা উচিত অপরাধীকে

    সহমত। আমি মনে করি সুনির্দিষ্ট তদন্তের মাধ্যমে পূর্ণ সত্য বেরিয়ে আসা উচিত। যদিও এসব ক্ষেত্রে ক্যাডেটদের উপরই খড়গ নেমে আসে। তবে ভাইয়া আমার মনে হয় আগে থেকে প্রশানকে প্রভাবিত করাটা ঠিক হচ্ছে না। ঐ পোস্টের ব্যাপারে আমি কথা বলা থেকে বিরত থেকেছি মূলত এই কারণে।

    ক্যাডেট কলেজের ক্লাশ ১২-এর ছাত্ররা যতেষ্ট দায়িত্ববান। তারা সবাই মিলে যখন একটা ব্যাপারে এক মত হয়ে কাজ করেছে, তখন তাদের কাজের বিচার শুধু প্রচলিত আইন-শৃংখলার দোহাই দিয়ে দেখলে চলবে না

    আমার কাছেও তাই মনে হয়।

    ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম নিয়ে বেশ আগে করা আমার একটা পোস্টের লিংক দিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে আমার পোস্টের কথাগুলো এবং তার মন্তব্যে উঠে আসা বিষয়গুলো এখন বিবেচনায় আনা জরুরি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্যও ঐ পোস্টটাই প্রতিনিধিত্ব করে।

    সব এক্স ক্যাডেটদের মত আমিও উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছি। এ ধরণের ঘটনা আমাদের ক্যাডেট কলেজের জন্য অনভিপ্রেত।এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা আশা করছি।

    ব্যাক্তিগতভাবে এক্স ক্যাডেট হিসাবে আমার সিম্প্যাথি ক্যাডেটদের জন্যই। তবে তারপরেও সবার প্রতি অনুরোধ কোন ব্যাক্তিগত সোর্সে পাওয়া খবর উম্মুক্ত জায়গায় আলোচনা না করতে। কেননা তার ঘানি আমাদের মতই কোন এক ক্যাডেটকেই টানতে হবে।

    আমার পোস্টের লিংক

    জবাব দিন
  2. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    এর মধ্যে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে।

    কিন্তু ক্যাডেট কলেজের প্যারেন্টিং এর দায়িত্বে যারা, সেই আর্মি মনে হয় সেই তুলনায় বদলায়নি। হয়ত অস্ত্র-শস্ত্র বদলেছে, কিন্তু মানসিকতা বদলায়নি। জানি না, হয়ত আর্মির জন্য এই মানসিকতা না বদলানোটাই ঠিক আছে। কিন্তু একই কথা যে ক্যাডেট কলেজের বেলায় খাটে না, সেটা আর্মিকে বুঝতে হবে। আর এই বোঝানোর ব্যাপারে এক্স-ক্যাডেটরা বিশেষ করে আর্মিতে থাকা এক্স-ক্যাডেটরা এগিয়ে আসতে পারেন। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, করতে হবে। তা নাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে...

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বইটা পড়িনি। তবে একটা বাচ্চাছেলেকে উপহার দিয়েছিলাম। কখনো পড়বো বলে ভেবে রেখছি আর 'পড়তেই হবে'-র লিস্টে আরেকটি বই যোগ করেছি। এবার পড়ে ফেলবো ঠিক।
    তবে সাইফ ভাই, এমনধারা ঘটনা ক্যাডেট কলেজে তো ঘটেই আছে। আমার মনে হয় আমাদের খোলামেলা আলোচনা করা উচিত একটু বড় পরিসরে। ক্যাডেট কলেজ প্রশাসনে ঠিক হস্তক্ষেপ করতে চেয়ে নয় বরং ক্যাডেট কলেজকে আরো গতিশীল আর যুগোপযোগী দেখতে চেয়ে।
    ক্যাডেট কলেজে যে একেবারে পরিবর্তন আসেনি তা নয়। যেমন: ইদানিং ক্যাডেটরা প্রায়ই ( ফ্রিকোয়েন্সি জানিনা, কেউ হয়তো যোগ করে দেবে) কলেজের বাইরে/শহরে বেড়িয়ে আসতে পারে কলেজ বাসে করে। আমি মনে করি এটা একটা খুব ভালো পরিবর্তন। [আমরা যখন আরো ছোট ছিলাম (সবে বেরিয়েছি কলেজ থেকে) তখন এ কাহিনী শুনে হায় হায় করেছিলাম ট্র‍্যাডিশন গেলো গেলো বলে, হা হা]।
    এখন ক্যাডেটরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে। লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ক্যাডেট কলেজগুলো এখন আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। যা পাল্টায়নি (পাল্টাবেওনা) তা হচ্ছে এরা সব প্রচণ্ড সম্ভাবনাময় একদল কিশোর। এদের গড়ে তোলা কি আর চাট্টিখানি কথা? এটা কি শুধু ডিসিপ্লিন আর পিটি প্যারেডের ব্যাপার?

    একটা ছোট্ট অবজারভেশন: সিসিবিতে এতগুলো স্মৃতচারণ পোস্ট পড়লাম। বারেবারে, ভিন্ন ভিন্ন প্রসংগে (পজিটিভ নেগেটিভ দুই অর্থেই) শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নাম উল্লেখ করেছে অনেকেই। এ্যাডজুটেন্টদের কথা ক'জন বলেছে? কেন বলেনা? কোন সম্পর্ক তৈরী হয়নি বলে কি? কি জানি...

    জবাব দিন
  4. সেনাবাহিনীর ইউনিট চাকরিরত পূর্ণবয়স্ক সৈনিক এর মানসিকতা আর কিশোর বয়সী কিছু মেধাবী,সম্ভবনাময়,দুরন্ত ছেলেদের মানসিকতায় বিস্তর ফারাক....দুঃখের বাপার হচ্ছে সব কলেজ এর এ্যাডজুটেন্ট ই ex ক্যাডেট কিন্তু,মাঝে মাঝে ক্যাডেটদের সাথে কেউ কেউ সেনাবাহিনীর ইউনিট এর এ্যাডজুটেন্ট এর মত আচরণ করে,যা খুব ই দুঃখজনক... এই মানসিকতার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ধন্যবাদ সাইফ ভাই বিষয়টাকে নতুনভাবে দেখার জন্য। আমি ভাবি, আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে বাবার দূরত্বটা যেমন ছিল সেটা কি আজ আমার সঙ্গে আমার ছেলের আছে? এটাও তো তিন-চার দশকেরই ফারাক। বাবা আমাদের শাসন করতে লাঠি-বেতও ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আমার ১৫ বছর বয়েসি ছেলের গায়ে সর্বশেষ আমি হাত তুলেছি তাও ৭/৮ বছর হয়ে গেছে। ছেলের অনেক বেয়াদবিকে ছেলেমানুষি মনে করে ক্ষমা করে দিই। অথচ একই কারণে ২৫ বা ৩০ বছর বয়সি ছোট ভাইকে হয়তো চড়-থাপ্পরও মেরেছি। ছেলে বড় হওয়ার পর বাস্তবতাই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

    আমাদের কতো ধারণা পাল্টে গেছে সময়ের সঙ্গে। আমার ছেলের স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এখন সচেতন যে কাউকে মারা যাবে না। শারিরীক আঘাত দেওয়ার মতো শাস্তি তো নয়ই। শাস্তি দেওয়ার আরো অনেক পথ তো আছে। শিক্ষকরা এখন শিক্ষার্থীর সমস্যা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। সমাধানের পথ খোঁজেন।

    আমাদের সময়ে দেখেছি, এখনো বোধহয় সেই অবস্থাই চলছে- একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেনীর একজন ক্যাডেটকে প্রিন্সিপাল, অ্যাডজুটেন্ট বা শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে চান না। ওই বয়সির একটা ছেলে বা মেয়ের আত্মমর্যাদাবোধ কতো প্রখর এবং কতো স্পর্শকাতর হয়, সেটা কেমন করে বড়রা ভুলে যান। অথচ নিজেরাই ওই বয়সটা পেরিয়ে এসেছেন! জন্মের পর থেকে একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের দল বেধে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিটি ক্যাডেট কলেজেই ঘটে চলেছে। তবুও এ থেকে কেউ শিক্ষা নিচ্ছে না!

    সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ক্যাডেট কলেজ শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু সামরিক বাহিনী নয়, আগামীর বাংলাদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী মেধা তৈরির দিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    সবাইকে,

    দুঃখিত যে সবাইকে ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সুন্দর সুন্দর মন্তবের জবাব দিতে পারছি না এই মুহূর্তে। ক্যাডেট কলেজের ভবিষ্যত আমাদের সবার কাছে একটি অতি প্রিয় বিষয়। এর সাথে দেশের ভবিষ্যতও জড়িত। মোটামুটি ভাবে লেখাপড়ায় ভাল ছাত্ররা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পায়, ফলে এই ছাত্ররা যে পরীক্ষায় ভাল ফল করবে এটাই স্বাভাবিক।

    লেখাপড়ার বাইরে যে জিনিসগুলি ক্যাডেট কলেজের ছাত্রদের ভবিষ্যত জীবনে বেশী প্রভাব বিস্তার করবে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কি ভাবে তাদের স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা গড়ে উঠছে এবং তাদের সৃজনী শক্তি কি ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে।

    অতিরিক্ত শাস্তি বা অতিরিক্ত শাষন - কোনটিই এ ব্যাপারে সাহায্য করে না। আর সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে - কতৃপক্ষের হাতে ক্যাডেটদেরকে দেবার জন্যে অনেক ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ও সুযোগ আছে। শারিরীক ভাবে আঘাত করা শুধু অন্যায় নয় - এটি একটি অপরাধ।

    কেউ কি জানে এ ব্যাপারে এখন কি অবস্থা।

    সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা রইল।

    তোমাদের সাইফ ভাই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।