তাঁর শেষ কবিতা

 

ফিক নওশাদ স্যারকে খুব মিস করছি। ক্লাশ সেভেন থেকে তিনি ছিলেন অভিভাবকের মত। আমার শিক্ষক, আমার গুরু । কবি ছিলেন, টেলিভিসনে উপস্থাপনা করতেন। সে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে ক্যাডেট কলেজে চলে এলেন। তাঁর পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি শরীরের চেয়ে তাঁর সাহস ছিল তিন গুন বেশি, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার আগে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেও অনেক বিরুদ্ধ স্রোতের মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাঁর সাথে কলেজে আমার সম্পর্ক ছিল ভালো মন্দে মেশানো। লেখালেখিতে আমি তাঁর জোগাড়ে। তাঁর সম্পাদনায় কলেজ আলেখ্য বের হয়, কলেজে বাঘা বাঘা শিল্পি থাকতে, ড্রইং এ মেরেকেটে চল্লিশ পাওয়া আমি তাতে নকশা আঁকি। স্টেন্সিল কাটি। প্রতি টার্মের শেষে স্যারের প্রতিবেদনে অন্য অনেক কিছুতে আউটস্ট্যান্ডিং পাই (A), শ্রৃংখলা পরায়নতায় পাই (E), এর চেয়ে নীচে গেলে কলেজ থেকে বের করে দেবার কথা।

স্যারের কারণে ড্রামা সোসাইটিতে জয়েন করেছিলাম। খানিকটা নাটক শিখলাম। একেবারে বেসিক সেসব জিনিষ। এর পর বাংলা লিটারেচার সোসাইটি হল, স্যারের পিছে পিছে সেখানে চলে এলাম। বন্ধুরা কেউ ফটোগ্রাফি শেখে, কেউ মিউজিক, কেউ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যে মিঃ এবারুদ্দিনের স্ক্র্যাপবুক সোসাইটতে। আমি বাংলা লিটারেচার সোসাইটিতে গল্প, কবিতার নির্মান শিখতে গিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। মাত্রা বৃত্ত, অক্ষর বৃত্ত, স্বর বৃত্ত, অনুপ্রাস, রুপক, শব্দগুলি শুধু কানের কাছে ঘোরাঘুরি করে। ছন্দ বুঝিনা, বানান বুঝিনা। রফিক নওশাদ স্যার একদিন বললেন, তোমার জন্যে ওসব দরকার নেই। কানের উপর ভরসা রাখবে, আর বানানে সন্দেহ হলে ডিকশনারি দেখে কনফার্ম করবে। তোমার নিয়ম শিখে কাজ নেই। তোমার লেখার নিয়ম তুমি নিজেই বের কর।

একদিন একটা ছড়া লিখে নিয়ে গেলাম। মূল কাহিনী তিনজন মানুষ কিভাবে ট্রেনের টিটিকে ফাঁকি দিয়ে, টিকেট ছাড়াই ট্রেনে ঘোরে। রফিক নওশাদ উচ্ছসিত প্রসংশা করলেন। তারপর গম্ভীর হয়ে বললেন, এই ছড়াটার একটা সমস্যা আছে, কী বলতো!
আমি চুপ করে আছি, বললেন, শিশুরা ছড়া পড়ে, শিশুদের মাথায় এই বাজে ব্যপারটা ঢুকে যাবে, এই যে ফাঁকি দেবার ব্যপারটা। আমি অবাক হলাম, কি অসাধারণ নৈতিকতা।
আমি এখন পর্যন্ত বিষয়টা মনে রেখেছি, পারত পক্ষে এমন কিছু লিখিনা যাতে অসাধুতা থাকে।

ক্লাশ টেনে থাকতেই মুক্তি যুদ্ধের একটা গল্প লিখলাম। লক্ষী সংবাদ। স্যার বললেন গল্পটা পত্রিকায় দাও। পত্রিকা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না। বাংলা একাডেমির শিশু পত্রিকায় একটা ছড়া পাঠিয়েছিলাম। ছাপাও হল, ভুল করে মোসাদ্দেকুল ইসলাম নামে। স্যারকে কিছু বললাম না।
আমি আর্মিতে যাবো স্যার বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বললাম স্যার যাই, কিছু না হোক অনেক ধরণের মানুষ তো দেখব। এর পর যোগাযোগ নেই। ডাক পড়লো বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণীর সময়। সম্ভবত স্যারের জোরাজুরিতে আমাকে সে বছরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সার্বিক ভাবে সেরা বিবেচনা করা হয়েছে। তার জন্যে কলেজ ব্লু ।

ইন্টারমিডিয়েটের ছুটিতে বড়দের পাতায় প্রথমগল্প ছাপা হল আমার। সে সময় মোবাইল নেই, বাসায় বাসায় ফোনও নেই। স্যার চিঠি লিখলেন, তোমার ‘বৈপরিত্য’ পড়েছি এত সহজ করে লিখলে কিভাবে বলত! লক্ষী সংবাদে তো একটা ভাবগম্ভীর ভাষা ছিল। এখানে তো তার কিছু নেই। আমি স্যারের এ কথার মানে বুঝলাম না। চিঠির উত্তরও দিলাম না। বিএমএ থেকে পাসিং আউটের পর কুমিল্লায় পোষ্টিং, হঠাত স্যারের পার্শেল পেলাম। স্যার সাপ্তাহিক রোববারে লক্ষী সংবাদ পাঠিয়েছিলেন। ছাপা হয়েছে।

এর পরের প্রায় এগারো বছর বলতে গেলে কিছু লিখিনি। ১৯৯৫ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পোষ্টিং হল আমার। ক’দিন পর রফিক নওশাদ স্যার এলেন অন্য কোন ক্যাডেট কলেজ থেকে। বাসা পেলেন একই বিল্ডিং এ আমার পাশের ফ্ল্যাটে। স্যারের বাড়ি ভর্তি বই। আমাকে বললেন আর্মিতে যাবার আগে তো বলেছিলে, নানান রকম মানুষের সাথে দেখা হবে, কোথাও তো তার প্রমাণ দেখিনা। বললাম স্যার, আগে ইউনিটে বিভিন্ন ভিআইপিদের বক্তৃতা লিখে দিতাম, এখন মাঝে মধ্যে প্রিন্সিপ্যালের বক্তৃতা লিখে দেই।

স্যার হাসতে হাসতে, সৈয়দ শামসুল হকের গল্পের কলকব্জা হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন এটা পড়। আবার শুরু কর।

গল্পের কলকব্জা পড়তে গিয়ে মনে হল, এতদিন যা লিখেছি তা কোন লেখাই নয়। গল্পের কলকব্জার পাতায় পাতায় লেখালেখির নিয়ম কানুন।
সপ্তাহ তিনেক পর প্রিন্সিপ্যালের বক্তৃতা লেখার কাজ পড়ল। আমার কিছু বাক্য গঠণ নিয়ে স্যারের মনে সন্দেহ ছিল। তিনি রফিক নওশাদ স্যারকে পড়তে দিলেন। স্যার পড়ে বললেন, লেখাটাতো সাইদুলের মনে হচ্ছে, এখানে ভুল থাকার কথা নয়। প্রিন্সপ্যাল হাসতে হাসতে বললেন ছাত্রের উপর এত কনফিডেন্স!
স্যার বললেন, অনেকদিন ধরে দেখছি তো।

প্রিন্সপ্যালের অফিস থেকে বেরিয়ে জিগ্যেস করলেন, তুমি কি লেখা ধরেছো!
বললাম, স্যার সৈয়দ হক লিখতে দিচ্ছেন না। এত নিয়ম থাকে গল্পের!
স্যার বললেন, তোমাকে ওই বই পড়ে কে লিখতে বলেছে? লিটারেচার সোসাইটিতে তোমাকে বলেছিলেম না, তোমার নিয়ম তুমি বানাবে!
কলেজ ম্যাগাজিন বের হবার সময় চলে এলো।স্যার প্রায়ই জিগ্যেস করেন লিখেছো? আমি বলি লিখছি। আসলে কলমই ধরিনি। শেষমেষ স্যার বললেন তোমার অনেক পুরনো একটা গল্প আমার কাছে আছে ওইটা দিয়ে দি। আমি অবাক, আমার পুরনো লেখা আমার কাছেই নেই। স্যার বললেন ওইযে তরাঘাটে নৌকা ডুবি নিয়ে লিখেছিলে, . ‘সকাল’ ওইটা। আমি বললাম, সেটাতো ক্লাশ ইলেভেনে লিখেছিলাম। আপনি এতদিন রেখে দিয়েছেন। উনি বললেন দূর বোকা, ঝিনাইদার ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিলনা? কাল কাগজ পত্র ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে পেয়েছি। তুমি লেখা শুরু কর। এর পরে কিন্তু পুরনো লেখা দিতে পারবোনা।
এরপর আমার বদলী হয়ে গেলো। স্যারের সাথে তেমন যোগাযোগ রইলো না। ২০০৫ সালে এমআইএসটিতে (মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি) স্যারের ফোন পেলাম। বললেন, তোমার নাম্বার জোগাড় করতে অনেক যন্ত্রণা করতে হয়েছে, আমি একটি মুঠো ফোনের মালিক হয়েছি , নাম্বারটা সেইভ করে রাখো। স্যারের সাথে আবার যোগাযোগ শুরু হল। স্যার কালে ভদ্রে ফোন করেন। আমি ফোন করি দরকারে যেমনঃ, স্যার, সংলাপ কি ইনভার্টেড কমার মধ্যে দেবো?
– স্যার ধীবর ছাড়া জেলের আর কোন বাংলা আছে নাকি ?
– স্যার প্রহরের সাথে কোন শব্দ মিলাতে পারছিনা। সহজ …
স্যার বিরক্ত হননা। সময় নিয়ে আমার সমস্যার সমাধান করেন। আমার বউ বাচ্চার খবর নেন। আমি ততদিনে একটু একটু করে লেখালেখিতে ফিরে আসছি। দুই একটা লেখা পত্রিকায় যাচ্ছে। স্যার একদিন ফোন করে বললেন, তোমার লেখা দেখলাম যায় যায় দিনে। বললাম, স্যার আর্মিতে থেকে লেখালেখি করা এক ঝামেলা। সেনাসদরের অনুমতি নিতে হবে। লেখা পাঠালেইতো হবে না! পত্রিকা ছাপাবে কি ছাপাবে না এতো তাদের ব্যাপার।
উনি বললেন, প্রত্যাবর্তন কখনোই সহজ নয়। রোববারে তোমার লেখা ছাপা হয়েছে চুরাশিতে। সেই সময় থেকে যদি যোগাযোগটা রাখতে বিষয়টা কঠিন হতনা। পত্রিকা অফিসে প্রতিদিন অসংখ্য খ্যাতিলোভি সাহিত্য শ্রমিক লেখা পাঠায় সেখান থেকে খুঁজে বের করে লেখা ছাপানো তো সহয নয়। বললাম ভালো বললেন তো, সাহিত্য শ্রমিক। স্যার বললেন, তা ছাড়া কি?
২০০৯ সালে আবার ঢাকায় বদলী হল আমার । ততদিনে ক্যাডেট কলেজের চাকরি শেষ করে রিটায়ারমেন্টে এসেছেন রফিক নওশাদ। যুগান্তরে ছোটদের একটা গল্প বেরিয়েছিল আমার। স্যারকে পড়ানোর জন্যে একটা কপি নিয়ে গিয়েছিলাম। স্যার বললেন, এনে ভালো করেছো কে যেন বলল তোমার গল্প বেরিয়েছে। তারপর আমি গিয়ে আমাদের পাড়ার দোকানে পত্রিকা আনতে গিয়ে দেখি যুগান্তর শেষ। বললাম, স্যার এই সামান্য একটা গল্প এর জন্যে আপনি পত্রিকা খুঁজতে গেলেন? উনি বললেন হাঁটাহাঁটিও হল মন্দ কি?
শুনলাম শব্দরূপ প্রকাশণী নামে স্যার একটি প্রকাশনা খুলেছেন। আমাকে বললেন, তুমি আমাকে এইটা ছাড়াও আরও ছয়টা গল্প দেবে। সব বাচ্চাদের। এর পর আমি নানা কারণে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। স্যারকে আর গল্প দেওয়া হয়নি।
অচেনা চীনে হাতে পাবার পর স্যারের উচ্ছ্বাস দেখে আমি অবাক। ২০১৫ তে স্যারকে গোলাপের রঙ দিতে যাব, হঠাত শুনি তিনি চিকিৎসার জন্যে সিংগাপুরে। তাহের ভাই মেরিনার, সিংগাপুরে থাকেন। তার সাথে যোগাযোগের পর তিনি জানালেন, স্যারের ক্যান্সার হয়েছে জিহ্বায়। শোনার পর আমার চেয়ে মন খারাপ হল দীপার। বলল, কথা বলতে পারবেন তো? পৃথিবীতে একটি মাত্র লোক আমাকে বউমা বলে ডাকেন। হিসেব করে দেখলাম তাই। আমার বাড়ি কিম্বা আত্মীয়স্বজনরা ওকে নাম ধরেই ডাকে। ম্যাডামও ডাকতেন নাম ধরে শুধু স্যার ছিলেন ব্যতিক্রম।
সিঙ্গাপুর থেকে ভালো হয়ে ফিরলেন স্যার।
এর ওর মুখে শুনি স্যারের জিহ্বায় অপারেশন হয়েছে। ঠিকমত কথা বলতে পারেন না। স্যার আগে থেকেই ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন, চিকিৎসার পর আরও বেশি সময় দিতে লাগলেন। ফেসবুকে দুই একদিন না পেলেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠতো। মাঝে মাঝে মনে হত, যে মানুষ কথা বলতে পছন্দ করেন, যার কথা শোনার জন্যে অন্যক্লাশের ছেলেরা ক্লাশে এসে বসে থাকে, আল্লাহ তার এ কি পরীক্ষা নিচ্ছেন। স্যার কথা বলতে পারবেন কি পারবেন না ভেবে ফোন করবো কি করবোনা ভাবতে ভাবতে একদিন অন্যমনস্ক হয়ে ফোন করে ফেললাম। স্যারের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল অনেক কষ্ট করে কথা বলছেন। কিন্তু ফোন ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। আমি মনে মনে ফোনের ওপারে স্যারের উচ্ছ্বাসমাখা মুখটা দেখতে পারছিলাম।
সেদিনই স্যারের সাথে দেখা করতে ছুটলাম। স্যার বললেন ১৯৭১টা আমি কি দেখে যেতে পারবো? তাড়াতাড়ি করনা কেন? বললাম স্যার অনেক বছর ধরে একটু একটু করে লিখেছি,তথ্য জোগাড় করেছি। এখন আর তাড়াতড়ি করতে ইচ্ছে করেনা। দেরি হোক, কিন্তু ভুল কম হোক, আর আপনাকে দেখে তো দিব্যি সুস্থ লাগছে। আগের চেয়ে স্বাস্থ্য একটু কমেছে, তাতে আরও মেদহীন টান টান লাগছে, ক্লাশ সেভেনের ফর্ম মাষ্টারের মত।
স্যার, ‘এই ছেলে এক চড়ে দাঁত ফেলে দেবো’, বলতে বলতে হেসে ফেললেন। তাহের ভাইয়ের অনেক সুনাম করলেন। সিঙ্গাপুরে নাকি দিনরাত স্যারের জন্যে সময় দিয়েছেন। ফরিদের কথা বললেন, ফরিদ (Alam Fardeen) অনেক খোঁজ খবর নিয়েছে বললেন।
আমি ক্যানাডা চলে যাবো শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো। বললেন, যেতেই হবে? কী করবে তুমি ওখানে গিয়ে? বউমা রাজি হয়েছে?
বললাম স্যার ভিসা তো এখনও আসেনি। ভিসা এলে না যাব! স্যার বললেন, দু আ করি, ভিসা যেন না আসে।
আগষ্টে ভিসা পাবার পর স্যারকে জানালাম। বললেন তোমাকে তো আর আটকে রাখা গেলোনা, তুমি ছবিঘরের(Chabi Ghar) সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে যেও। ওর লেখার মধ্যে একটা আকর্ষনি ব্যাপার আছে । টানে।
আমার বন্ধু ভাগ্য বরাবর ভালো। ঢাকার বন্ধুরা আমায় ঘটা করে বিদায় দিল, আনন্দ রেস্তোরায়। আমাদের দু’জন ফর্ম মাষ্টার রফিক নওশাদ আর আবু সাইদ বিশ্বাসও এলেন সেই আড্ডায়। স্যারের সাথে সেই আমার শেষ দেখা।
এরপর শেষবারের মত যশোর গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেসবুকে দেয়া একটা সট্যাটাসের জবাব দিলেন তিনি কবিতায়।
————————————————————————————–
তুমি চলে যাবে তাই –
ফাল্গুন যা|য় নাই…!
চৈত্র আসার আগেই এসেছে গ্রীষ্ম
স্বদেশ দেখবে সহসা শ্রাবণ দৃশ্য!
ঝাঁঝালো গ্রীস্ম চাপা বেদনায় কাঁপে,
ঘরদোর ভিটে কেঁদে মরে অনুতাপে!
স্বদেশের মাটি মায়ের আঁচল ছেড়ে,
কিসের যাচ্ঞা অন্তরে ওঠে বেড়ে!
ছাদের বাগান শ্রীহীন হবে আরো,
টবের কমলা,মল্লিকা, জবা বেদনায় হবে গাঢ়!
ঝরে যাবে ফুল, আমের মুকুল, পঞ্চেটিয়ার ঝাড়
প্রবাসের সুখ তবু ডাকে বারবার!
তুমি চলে যাবে! তাই–
স্বদেশের মাটি, আঙিনা, উঠান গড়বে কি গড়খাই…?
ভালো থেকো সব সময়
ফি আমানিল্লাহ
——————————————————————————–
স্যার চিকিৎসার জন্যে ইন্ডিয়া যাবার আগে আমি ক্যানাডায় চলে এলাম। উনি মেসেঞ্জারে জানতে চাইলেন কোন হোটেলে থাকবেন। আমি হাউসেজ ফর্টি থ্রির কথা বলেছিলাম। সেখানে উঠেছিলেন কিনা জানিনা। স্যারের সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। আমাদের সবাইকে ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছেন পরপারে।
তুমি চলে যাবে তাই স্যারের শেষ কবিতা। স্যারের মত একজন কবি আমার জন্যে কবিতা লিখেছেন। বিষয়টি আমার জন্যে হওয়ার কথা অত্যন্ত
শ্লাঘার। কিন্তু কবিতাটি পড়লে আমার কেন যেন মনে হয় ব্যাপারটি খানিকটা শ্লেষের। আমি চলে এসেছি বলে আমার মায়ের কাছে ছাড়া কোথাও কোন শুণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়না। বরং কবিতাটি সারাক্ষণ স্যারের কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে হয় সারাজীবন স্যার আমাকে দিয়েই গেলেন, আমি কিছু দিতে পারলাম না ।স্যারের শেষ দু’টি লাইন একটু ঘুরিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয়ঃ
তুমি চলে গেলে! তাই–
স্বদেশের মাটি, আঙিনা, উঠান গড়েছে কি গড়খাই…?

৬ টি মন্তব্য : “তাঁর শেষ কবিতা”

  1. ধন্যবাদ ভাইয়া। অত্যন্ত মর্মস্পর্ষী লেখা। স্যার আমাদেরও হাউস মাস্টার ছিলেন, শের ই বাংলা হাউস, বকক। আপনার মত স্যারের নৈকট্য পাইনি যদিও।
    সম্ভবত কক এর শিক্ষকেরা এদেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার (শিক্ষাব্যবসা ব্যবস্থার) শেষ সৎ, নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শ শিক্ষকমন্ডলী । অবশ্যই তাদের ভুল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু তাদের পরিশ্রম, আন্তরিকতা আর অল্পেতুষ্টি বর্তমান সময়ে অভাবনীয়। আমার দু:ক্ষ, না বুঝে তাদের কত কষ্ট দিয়েছি।
    আজ বাইরের শিক্ষকদের সাথে তুলনা করে এটা প্রকটভাবে অনুভব করি।
    আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন স্যারকে উত্তম প্রতিদান দান করুন

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইদুল (৭৬-৮২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।