মায়ের হাত

এতবড় গল্প মানুষ ব্লগে একটানা পড়তে চায়না। তাও দিলাম
———————————————–

পবন সোনার ঘুম ভাঙলো?
আজ না তোর ইন্টারভিউ, ওঠ!
মায়ের ডাকাডাকিতে চোখ মেলল পবন। কাল একটু বেশি রাতে ঘুমিয়েছে। অনেকদিন ধরেই চাকরির চেষ্টা করছে সে। মা চেয়েছিলো ছেলেটা লেখা পড়া শেষ করুক। তার বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলে বড় কিছু হবে। ডিগ্রী পাশ করার পর আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাইছিলো না পবন। মাকে বলেছিলো, ‘মা অনেক তো পড়লাম, সরকারি চাকরির জন্যে গ্রাজুয়েশনই যথেষ্ট। বিসিএসের জন্যে এর চেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই। আমাদের প্রেসিডেন্ট কী পাশ বলতো?’
– প্রেসিডেন্ট হচ্ছে প্রেসিডেন্ট, সে কী পাশ তা দিয়ে আমি কী করবো?
– মা, প্রসেসিডেন্ট হচ্ছেন আই এ পাশ, ম্যাট্রিক পাশ করে আর্মীতে চান্স পেয়েছিলেন, বেরিয়েছেন আই এ পাশ করে।মা অবাক হয়ে শুনছিলেন ছেলের কথা। বললেন,
– ও মা তাই নাকি? সে হোক, অত যার সাহস, এত বড় যার মন তার কিছু পাশ না হলেও চলে। বাদলের হাসি পেয়ে গেল। ‘মন বড় তোমাকে কে বলল?’
– কেন পরশু দিনের পেপার দেখ।
চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্যে মাস খানেক ধরে দৈনিক বাংলা রাখছে পবন। পরশু দিনের দৈনিক বাংলার শেষের পাতায় হেদায়েত হোসাইন মোর্শেদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি ফিচার লিখেছেন। কোথায় যেন খাল কাটা কর্মসূচী ছিলো। জিয়াউর রহমান গ্রামের এক বাড়ি ঢুকে এক বয়স্ক মহিলার কাছে পানি চেয়ে খেয়েছেন। কবে গরীব এক লোককে কম্বল দিয়েছিলেন এসব নিয়ে কাহিনী। মা রাজনীতির কিছু বোঝেন না। কাগজের সব কথা বিশ্বাস করে বসে থাকেন। মাকে এখন আরেকটু উসকে না দিলে তিনি আবার এম এ পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে কথা বলবেন। সে বলল,
– তোমার মত সাপোর্টার আছে বলেই জিয়া ৯৯ % হ্যা ভোট পায়।
শিরিন আখতার বুঝলেন, ছেলে কথা ঘুরাতে চাইছে। তিনি বললেন, ‘আমি যদি একটু লেখা পড়া জানতাম তাহলে তোর কী এত কষ্ট করতে হত?’
পবনএই প্রশ্নের জন্যে প্রস্তুত ছিলো না। বাবার কথা তার মনে নেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসেননি। যুদ্ধের পর প্রথম দু’তিন বছর তাদের অনেক কষ্টে কেটেছে । বাবার খোঁজে মায়ের সাথে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে তাকে। প্রতিবার আশাহত হতে হতে এক সময় মা-ছেলে অলিখিত একটা সমঝোতায় এসেছে । কেউ আর সরাসরি বাবার কথা বলে না। পবন জানে মা’র মনে এখনও ক্ষীণ একটা আশা আছে।আর কথা না বাড়িয়ে সে বলল, মা কত লোকই তো চাকরি করতে করতে পড়ে। চাকরিটা হতে দাও আমিও প্রাইভেটে পরীক্ষাটা দিয়ে দেব।
এরপর মা আরেকটা শর্ত দিয়েছেন।‘ ঠিক আছে চাকরিই যদি করিস। তাহলে তোকে বিয়েও করতে হবে, একা একা এতসব কাজ করতে আমার ভালো লাগে না’।

পবন সে কথার কোন উওর দেয়নি। সেই সময় বাবলির কথা মনে পড়েছে। মেয়েটার সাথে তার প্রেম ট্রেম কিছু নেই। গত দু’বছর ধরে বাবলির ছোট ভাইকে প্রাইভেট পড়াচ্ছে সে। বেশ কয়েকবার আলাপ হয়েছে মেয়েটার সাথে, ভাই এর পড়াশোনার খোঁজ খবর নেবার জন্যেই আলাপ করেছে বাবলি। দু’একবার ব্যক্তিগত আলাপচারিতা যে হয়নি তা নয়। তবে কী ভাবে আলাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় পবনের তা জানা নেই। এই মেয়েটিই ক’দিন আগে তাঁকে চাকরির একটি বিজ্ঞাপন খবরের কাগজ থেকে মার্ক করে দিয়েছে।


শিরিন আখতারের জীবনটি ঠিক এরকম ছিলো না। মফিজ সাহেবের সাথে তার পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল, ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে। মফিজ সাহেব চাকরি করতেন হাবিব ইনস্যুরেন্সে। শিরিনের বাবার পলিসি করাতে এসেই শিরিনকে তার পছন্দ হয়েগিয়েছিলো । অফিসের ম্যানেজারকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। শিরিনের বাবা প্রথমে রাজি ছিলেন না । প্রস্তাব শুনে বললেন, ‘এক চেহারা ছাড়া ছেলের তো আর কিছু নেই, মেসে থাকে শুনেছি। বউ নিয়ে উঠবে কোথায়?’
ম্যনেজার সাহেব মফিজকে পছন্দ করতেন। তিনি বললেন, ছেলেটার মধ্যে বিরাট সম্ভাবনা। এখন মেসে থাকে ঠিকই, কিন্ত মাদারটেকে জমি কেনা আছে। আমার মেয়ে থাকলে আমি এমন পাত্র হাত ছাড়া করতাম না।
শেষ পর্যন্ত শিরিনের আর পরীক্ষা দেওয়া হলনা। মফিজ সাহেব যদিও পরীক্ষা দিতে মানা করেননি। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় পবনের জন্ম হল। ছেলে, সংসার সামলাতে সামলাতে সামলাতে শিরিনের আর পরীক্ষার কথা মনে রইলো না। যুদ্ধের আগে মাদারটেকের জমিতে বাড়িও তুলে ফেললেন মফিজ সাহেব। বাড়ি মানে হাফ বিল্ডিং। ইটের দেয়াল আর টিনের চাল। শিরিনের তা নিয়ে কোন আক্ষেপ ছিলো না।

তিন শতক জমির উপর মাদারটেকের এই টিনের বাড়িটি ছাড়া তাদের আর কোন সম্পত্তি নেই। যুদ্ধের পর গ্রাম থেকে বড় ভাসুর এসেছিলেন তাকে নিয়ে যেতে । গ্রামে গিয়ে তাকে নতুন এক সমস্যায় পড়তে হল । প্রথমদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে পবন বলল, সে আর স্কুলে যাবে না। ইংলিশ স্যার নিজে ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারেন না । তার উচ্চারণ শুনে, তাকে বলেন ইংলিশ বয় । প্রতিভাবান সহপাঠীরা সেটিকেই আরেকটু পরিবর্তিত করে বলে ইবলিশ বয়।

শাশুড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো শিরিন আখতারের। একমাসের মাথায় শাশুড়িকে নিয়ে মাদারটেকের বাসায় ফিরে এলেন তিনি। টানা কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করলেন স্বামীর খোঁজে। মফিজ সাহেব যুদ্ধে যাবার সময় কোন টাকা পয়সা দিয়ে যেতে পারেননি। আত্মীয় স্বজন বলল, মফিজের অফিসে যেয়ে দেখ যদি কিছু … ,
যদি কিছুর পরের বাক্যটি কেঊ বলতে পারে না।
কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে শিরিন আখতার বুঝলেন এভাবে হবে না। হাবিব ইন্স্যরেন্স কোম্পানির অফিসটিই নেই। তখন মাঝে মাঝে রাগ হত নিজের উপর, নিখোঁজ স্বামীর উপর, বাবা মা’র উপর। অন্তত ম্যাট্রিকটা পাশ থাকলেও সম্মান জনক একটা চাকরি পাওয়া যেত।শেষ মেষ নিজের যে গহনাগাটি ছিলো, সে গুলি বেচে দুটি ঘর তুলে ভাড়া দিলেন।শাশুড়ি ভালো সেলাই জানতেন, তার কাছ থেকে কাজ শিখে সেলাই এর কাজও করলেন কিছুদিন । শাশুড়ি সাথে একটি গোপন বোঝাপড়া ছিলো তার। মুখে ছেলের কথা না বললেও, মফিজের মার দিন কাটতো ছেলের আশায় পথ চেয়ে। শিরিন আখতার ভাবতেন, স্বামী যদি কোনদিন ফিরে আসেন ছেলেকে দেখে যেন গর্বে তার বুক ভরে ওঠে। ছেলে ক্লাশ নাইনে ওঠার পর খরচ বেড়ে গেল। শিরিন আখতার একটি লন্ড্রি খুলে ফেললেন।

নিজেদের কাপড় চোপড়তো রোজই ধুতে হয়। এর সাথে অন্যদের কাপড় ধুয়ে যদি কয়েকটা পয়সা পাওয়া যায় ক্ষতি কী! খরচের ভয়ে কর্মচারি রাখলেন না । পবনের কাছে ব্যাপারটি ভালো লাগে নি। সারাক্ষন পানিতে ভিজতে হয় তার মাকে। শিরিন আখতার ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসেন। তোকে কিন্তু সবচেয়ে সেরা কলেজে পড়তে হবে।
এইচএসসি পাশের পর একদিন পবন মা’কে বলল, আমি একটি টিউশনি পেয়েছি, তুমি এবার লন্ড্রিতে একটা লোক রাখো তো! মা বললেন, খামোখা আর একটা খরচ বাড়িয়ে লাভ কী? আমার তো অসুবিধা হচ্ছে না। পবন বলল, মা আমিতো একটা টিউশনি পেয়েছিই।
– একটা টিউশনিতে কী হয়, তুই বড় হয়েছিস তোর কত রকম, হাত খরচ আছে না?
মাকে আর রাজী করাতে না পেরে পবন ডিগ্রী পাশের পর চাকরি খোঁজা শুরু করল । এক বছরে কম চাকরির ইন্টারভিউ দেয়নি সে।
বাবলি যখন তাকে অ্যাপ্লাই করতে বলল, সে বলেছিলো, এতো ম্যানেজারের চাকরি, আমাকে নেবে কেনো? বাবলি বলল, ঠিক মত পড়ে দেখেন, ‘ম্যানেজারের চাকরি না শিক্ষা নবীশ ম্যানেজার খুঁজছে ওরা’।


রইসুদ্দিন সাহেব ইন্টারভিঊ নিতে এসে খুব একটা খুব আরাম পাচ্ছিলেন না। ছোট থেকে বড় হয়েছেন তিনি, সম্পূর্ণ একা । যুদ্ধ থেকে ফিরে তার অনেক বন্ধু যখন নেতাদের লেজ ধরে পারমিট টারমিটের বানিজ্য শুরু করেছে, রেশনের ডিলারশিপ নিয়েছে । তিনি তখন পুরনো খবরের কাগজ কিনে ঠোঙ্গার ব্যাবসা শুরু করেছিলেন । আট বছরে এখন সেটা মোটামুটি একটি প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিতে পরিনত হয়েছে। ভেবেছিলেন ছেলেদের নিয়ে ব্যবসাটা বড় করবেন। ছেলেদের নিয়ে যাওয়া আসাও শুরু করলেন ফ্যাক্টরিতে। বড় ছেলে একদিন মা’কে বলল, ‘আমার আই টোয়েন্টি এসে গিয়েছে ওবারলিন কলেজ থেকে। ক’দিন পর ছোট ছেলেও একই পথ ধরলো, সে গেলো রাশিয়ায়।
রইসুদ্দিন সাহেব একা আর পারছিলেন না, একটি ভাল ছেলেকে নিজ হাতে গড়ে পিটে নেবেন ভেবে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। ক্যান্ডিডেটদের দেখে হতাশই হচ্ছিলেন তিনি। বাস্তব জীবন সম্পর্কে কারোর ধারণা নেই। ম্যানেজারিয়েল পোস্টের বিজ্ঞাপন দেখে সবাই টাই টুই লাগিয়ে এসেছে ভুল ভাল ইংরেজি বলার জন্যে। একটি ছেলে মন্দের ভালো। পারভেজ হাসান নামের এই ছেলেটির ইন্টারভিঊ খুব ভালো হলোনা। শেষের দিকে বসের চোখ পড়লো তার ট্রান্সকিপ্টে। ভালো কলেজে লেখা পড়া, রেজাল্টও ভালো তবে কথাবার্তায় খুব সপ্রতিভ নয়। রইসুদ্দিন ভাবলেন আর একটু ঝালিয়ে দেখা যাক।
– খুব ভাল কলেজে পড়াশুনা করেছেন, খরুচে কলেজ
– জী স্যার
– খরচ কে দিতেন, বাবা ?
– আমার বাবা নেই স্যার, মা।
– উনি কি করেন?
– আমাদের একটা লন্ড্রী আছে।
– আচ্ছা কর্মচারি ক’জন?
একটু চুপ করে থেকে ছেলেটি বলল, আমাদের কোন কর্মচারি নেই স্যার। আমার মা নিজেই কাপড় ধোন, দাদি ইস্তিরি করতে সাহায্য করেন।
– হুম, আপনার মাকে কাপড় ধোয়ায় সাহায্য করেছেন কখনো? আপনার হাতটা দেখি
– মা বলেন আমার চেয়ে উনি অনেক দ্রুত কাজ করতে পারেন, তাই আমার উচিত লেখাপড়াটা ঠিক মত করা
রইসুদ্দিন সাহেবের ছেলেটির উপর একটু মায়া পড়ে গেল। ছেলেটার হাতটি নেড়ে চেড়ে দেখলেন। কোমল হাত। বললেন, আপনার মা আপনাকে কি নামে ডাকেন?
– পবন
– পবন মানে জানেন? বাতাস। আপনি আজ বাতাসের বেগে বাসায় ফিরে গিয়ে গিয়ে আপনার মায়ের হাতটি একবার ধুইয়ে দেবেন। কাল আবার দেখা হবে আমাদের।
বাসায় ফেরার পথে টিউশনিটা সেরে গেল পবন। টিউশনিতে আজ না গেলেও হত। তবুও গেল পবন যদি বাবলির সাথে দেখা হয়! বাবলিই দরজা খুলে দিলো, ‘আমার মনে হচ্ছিল আপনি আসবেন
– কেন?
– এমনিই, মেয়েদের অনেক কিছু জানতে হয়।
– ও
– যাক ইন্টারভিঊ কেমন হল
– খুব ভালো না।
– ওনারা কী বললেন?
– মায়ের হাত ধুইয়ে দিতে বললেন।
– মানে?
পবন সবকিছু খুলে বলতে বলতে দেখলো, বাবলির চোখ ছলছল করছে। সে বলল, ‘আজ আর পড়ানোর দরকার নেই। আপনি বাসায় যান। কাল আবার যাচ্ছেন তো ইন্টারভিউ দিতে?’
পবন বাসায় ফিরে দেখলো মা জায়নামাজ থেকে উঠছেন। ছেলেকে দেখে বললেন ‘তোর মুখটা শুকনো লাগছে কেন বাবা? কেমন হয়েছে ইন্টারভিউ?
ছেলে সে কথার উত্তর না দিয়ে বললো ‘মা তোমার হাত টা একটু দেবে?’ ‘আমার এখন অনেক কাজ বলে মা বাইরে গেলেন কাপড় তুলতে। রাতের খাবারের পর দাদী বললেন, ‘এটাই তো আর শেষ পরীক্ষা না! তুই ঘুমা তোর মুখটা শুকনো লাগছে। পবন বলল, ‘দাদী মাকে বলতো হাতটা দিতে আজ আমি মা’র হাতটা ধোয়ায় দেই’।
– ও বাবা ছেলের আজ কী হল! ও বঊ দেওনা কেন তোমার হাতটা।

শাশুড়ি আর ছেলের জোরাজুরিতে হার মানতে হলো শিরিন আখতারকে। তাঁর হাতটি ধরে অবাক হয়ে গেল পবন। শীর্ণ দুটি হাত, চামড়া সর্বস্ব। হাতের তালু দেখে চোখ দুটি জলে ভরে গেল তার। অসংখ্য দাগ, কাটাকুটি, চামড়া ছড়ে যাওয়া হাত। পবনের মনে হলো প্রতিটি দাগ বা ক্ষত থেকে এক একটি পরীক্ষায় ভাল ফল হয়েছে তার। হাত ধোয়াবার সময় এক আধবার ব্যথায় কাতরেও ঊঠলেন শিরিন।
সেই রাতে তাঁকে কোন কাজ করতে দিলোনা পবন। রান্না ঘর গোছানো থেকে শুরু করে সব কাজই সে করলো। অনেকদিন পর রাত জেগে মায়ের সাথে গল্প করলো। বিছানায় গিয়েও ঠিক মত ঘুম হলো না। একটু পরপর জলে ভরে যেতে লাগলো চোখ। পর দিন আবার ইন্টারভিঊ।
এবারও বসের কোন প্রশ্নের ঠিক মত উত্তর দিতে পারলোনা পবন। কান্নায় বন্ধ হয়ে আসতে থাকলো গলা। বস বললেন মায়ের হাতটি কি ধুইয়ে দিতে পেরেছিলে?
পবন এর মধ্যেও লক্ষ করলো বস তাকে ‘তুমি’ করে বলছেন।অথচ গতকাল ‘আপনি’ করে বলেছিলেন।
চশমার ফাঁকদিয়ে তাঁর স্নেহার্দ চোখ দু’টিতে কৌতুক খেলে যাচ্ছে এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না পবন। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার। আমার চাকরি হোক আর না হোক আমার মায়ের হাত ধোয়াতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি’। বস বললেন ম্যানেজার হতে গেলে দু’টি জিনিষ দরকার এক, ‘যাদের জন্যে তোমার আজকের অবস্থান তাদের মনে রাখা।আর দুই, যাদের তুমি ম্যানেজার তাঁদের কষ্ট অনুভব করা’। পবন ঘাড় গুঁজে বসে আঙ্গুলের নখ খুটতে থাকলো ।
রইসুদ্দিন সাহেব বললেন, ‘তুমি কী বাথরুমে গিয়ে চোখ মুখে একটু পানি দিয়ে আসবে? আমি সেই ফাঁকে লাঞ্চ দিতে বলি। আমার সাথে লাঞ্চ করতে তোমার আপত্তি নেই তো?’

বিদেশি কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে।

২৩ টি মন্তব্য : “মায়ের হাত”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    কবিতা বলো অথবা গল্প বা ভ্রমণকাহিনী সবই দেখি তোমার হাতে প্রাণ পায়। 'কড়ি দিয়ে কিনলাম' এর মত পেটমোটা বই পড়ে আমার কৈশোর কেটেছে ভাইয়া, তোমার লেখা দেখি পড়তে না পড়তেই ফুরালো!

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মূল লেখাটা পড়া ছিল- তাই ইম্প্রোভাইজেশনের অংশগুলো ধরতে পারলাম!
    প্রাসঙ্গিক কিছু চরিত্র, ঘটনার কিছু ঘনঘটা মিলে দারুণ একটি ছোট গল্প হয়ে উঠেছে! :clap:

    খুব ভাল লাগল সাইদুল ভাই! 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    মূল লেখাটা পড়েছিলাম । তবে হাত ধোয়ানোর ব্যাপারটার বাইরে অন্য আনুসঙ্গগগুলো সেই মতো মনে নেই ।
    তবু এমন অনবদ্য উপস্থাপনাইয় গড়গড়িয়ে পড়লাম ।
    শেষের দিকে চিরাচরিত ভাবে বেয়াকুফের মতোন দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিলো আর্দ্রতায় ।

    আপনাকে অভিবাদন । অভিনন্দন লেখাটির জন্য ।

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "বাবলিই দরজা খুলে দিলো, ‘আমার মনে হচ্ছিল আপনি আসবেন" - এখানে এসেই একটু থমকে গেলাম। এই লাইনটিকে একটা বর্ণিল প্রজাপতির মত মনে হলো। মুগ্ধ হ'লাম।
    বলা বাহুল্য, একটা জানা বিদেশী গল্প দেশী ভাষায় পড়তে গিয়ে একবারের জন্যেও আকর্ষণ হারাইনি, এবং শেষ পর্যন্ত পৌঁছার আগেই চশমাটা ঝাপসা হয়ে আসছিলো।
    হৃদয়স্পর্শী লেখা। অভিনন্দন!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।