আমার প্রেমিকারা-৯

গানের ভাষায়- প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ,ঘুষ খাওয়া কখনোই নয়।এতো বড় অন্যায় কথা।তাহলে তো সবার আগে বদলাতে হবে নিজেকে।মানে ঘুষ খাওয়া ছেড়ে চুমু খাওয়া শুরু করব?হ্যাঁ,আপনি শুরু করুন,বাকিরা ঠিকই বদলাবে।বদলে যাও,বদলে দাও।তা কি হয়?কিন্তু আমার যে অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস নেই।ওদিকে অনেকেই আবার বারণ করছে,সবকিছু বদলে দিতে নেই।

যাই হোক অত অদল-বদলের মাঝে আমার প্রেমিকারা ও বদলে যাচ্ছে।আমিও তো বদলে যাচ্ছি।দিনদিন রাজনীতিবিদদের মত আরো বেশরম-বেহায়া হয়ে উঠছি।তবে সব বেহায়াপনার যে শেষ থাকে,এটা ও আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি!এই যেমন কিছুদিন আগে জলবিয়োগ করতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম।মনে মনে ভেবেছি এই দেশে ন্যায়মূর্তিরা যখন বিদেশী কূটনৈতিকের বাসার দেয়ালে মূত্রত্যাগ করেন,আমি করলে কি আর এমন ক্ষতি?যেই ভাবা সেই কাজ।কিন্তু অদৃষ্টের কি পরিহাস!ঠিক তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আমার প্রেমিকার ছোট বোন!এমনই পরিস্থিতি অবাধ জলধারা ও নিমিষেই থেমে গেল যেমনটি মাঝপথে নদী শুকিয়ে যায়।মনে মনে ভাবি,ন্যায়মূর্তি তো পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছে আর আমি সাক্ষাত যমের কাছে।মান-ইজ্জত কি আর থাকে? যাই হোক আমার এই লজ্জা চেপে রাখতে প্রেমিকার ছোট বোনের নানান আবদার রেখে চলতে হয়েছিল অনেকদিন।কারন আর কিছু নয়,সেই রাতে মুঠোফোনে পাঠানো হুমকি-‘ভাইয়া আপনি যে এত বড় চিত্রশিল্পী মানে দেয়ালের গাঁয়ে যে এত সুন্দর ছবি আঁকেন তা কিন্তু এখনও কাউকে বলিনি’!

যাই হোক এরকম নানান সময়ে কখন ও প্রেমিকার ভাই,কখনও বোন,কখনও বাবা,কখনও মা,কখনও মামা কখনও চাচা এরকম শত আত্নীয়-স্বজনের অত্যাচারে আমার প্রেমিক মনটাকে শতশত লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হয়েছে।তাই মনে হয়েছে,প্রেমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটা সমিতি থাকলে ভালো হত।সেই সমিতির আবার বার্ষিক সভা হত,নির্বাচন করে একটা পরিষদ গঠন করা হত।তার আবার পাল্টা কমিটি করে দু-পক্ষের মারামারি!তারপর আসল কাজ ফেলে মানে প্রেম-ট্রেম ছেড়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অফিস দখলবাজি!তার উপর নিজেদের দলে অমুক জেলা তমুক থানা একটা ইজমবাজি না করলেই নয়।আহ,তবেই না নিজেকে সার্থক বাঙ্গালী মনে হত।

যাইহোক,তবুও এগিয়ে যেতেই হবে।কিভাবে যে সামনে এগোব? বিজ্ঞাপন বলছে-দুধ খাও,এগিয়ে যাও।আবার কেউ বলে,দুধ না খেলে,হবে না ভালো ছেলে। আহারে,প্রেমিকার বাপদের কাছে আজো ভালো ছেলে হতে পারলামনা।কিভাবে যে ভালো সাজা যায়?আজকাল এই দেশে কেউ কি আর ভালো হয়?যাদের ভালো বলা হয়,তারা ভালো সাজার ভাণ করে।আর এই ভালো ছেলের ব্যাপারটা আমাদের এক প্রয়াত মন্ত্রীই বোধহয় সবচেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিলেন।তার আমলে দেশে যখন বাচ্চাদের গুড়ো দুধের দাম বেড়ে গিয়েছিল,তার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেছিলেন-‘গুঁড়ো দুধ খেতে কে বলেছে?বাচ্চাদের জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই।আমার পাঁচ বছরের ছেলে এখনও খায়,আমি ও বার বছর পর্যন্ত খেয়েছি’! আমার গুরু বলতেন-সকল নিরাশার মধ্যে ও কিছু আশা বেঁচে থাকে।সকল খারাপের মাঝে ও তাই ভাল খুঁজে নিতে হবে।তাই মন্ত্রীর কথাটা আমি একেবারে বাতিল করে দেইনি।বরং এই ভেবে অবাক হই,এর মাঝে ও কত মঙ্গল কামনা করে গেছেন তিনি। আজকাল তো গুঁড়ো দুধে ও ভেজাল মেশাচ্ছে ব্যবসায়ীরা তার উপর ম্যালামাইনের রাসায়নিক আশঙ্কা,কত কি।মন্ত্রী দূরদর্শী ছিলেন বলেই তো আগেই টের পেয়েছেন।এত কিছু ভেবে আমার কাজ নাই,আমি ভাবি আমার অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে।সেই ভবিষ্যতে পুরানো প্রেম না আবার মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠে।তাই বলি-

‘পুরানো প্রেমে ও মেশানো হছে ফরমালিন,
দাম্পত্য জীবন আশঙ্কায়,ভেবে অনাগত দিন’।

৫,২১৭ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “আমার প্রেমিকারা-৯”

  1. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    =)) =)) =)) =)) =))

    তার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেছিলেন-‘গুঁড়ো দুধ খেতে কে বলেছে?বাচ্চাদের জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই।আমার পাঁচ বছরের ছেলে এখনও খায়,আমি ও বার বছর পর্যন্ত খেয়েছি’!

    কে এই পামড় ?????

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    মন্ত্রীর কথাটা মনে হচ্ছে তোমার প্রেমিকাদের মতোই বায়বীয়। অবশ্য আমাদের মন্ত্রীরা মনে হয় ্মিডিয়ার সামনে ভড়কে যান।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।