অজানা ডাইরীর পাতা থেকে

জীবনটা আর্শ্চয রকমের ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে।কিছু ভাললাগেনা কিচ্ছুনা।আমার নিজের মধ্যে আর্শ্চয রকমের একটা পরিবর্তন।আমি হেরে যাচ্ছি আমার কাছে।হাজারো চিন্তা আমাকে অজগরের মত পেচিয়ে ধরেছে।শুনেছি অজগরেরা নাকি শিকারকে না মারা পর্যন্ত এভাবে পিষতেই থাকে।জীবন আমাকে হয়ত অমৃত্যু এভাবেই পিষে যাবে।
পড়াশোনাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে বড় কথা সুমাইয়ার কাছে চেয়ে নেওয়া সময় গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে।ভয় হয় একদিন হয়ত হঠাৎ দেখব সব শেষ।এই যে জীবন নিয়ে এত চিন্তা সব অর্থহীন হয়ে যাবে।

সব মায়া।আমার শীর্ষেন্দু এর একটা উপন্যাস খুব ভাল লাগে।অখ্যাত হবে হয়ত, “ফেরিঘাট”।তবুও আমার ভাল লাগে।নায়ক এক কাল্পনিক ফেরিঘাট দেখে যেখানে সে কখনও যায়নি।কেন দেখে সে যানেনা।আমি জানি হয়ত, হয়ত জানিনা।

লেখাটা খুব অগোছালো হচ্ছে জানি আসলে আমি নিজেই হয়ত অগোছালো হয়ে গেছি।আজ অনার্স জীবনের শেষ পরীক্ষা হল।আমি কাল থেকে আক্ষরিক অর্থে বেকার।
আরো একটা ভয় আমাকে তাড়া করে ফিরছে এটা হল স্বপ্ন ভাঙার ভয়।আমার অজন্ম লালিত স্বপ্ন।ইচ্ছা ছিল কিছু ভাল করব,পড়াশোনাটা ছিল কিছু করার মত।জীবন বড়ই কঠিন।হয়ত আমার স্বপ্ন গুলোর টুঠি চেপে ধরে আমাকে নামতে হবে জীবন যুদ্ধে।

আমরাতো সবাই ক্যাডেট আমরা বন্ধুরা সব আর্মি অফিসার,কেউ বুয়েটে.মেডিকেলে পড়ে।আজকাল বন্ধুদের থেকেও পালিয়ে বেড়াই।ওদের আড্ডায় নিজেকে খুব অনাহূত মনে হয়।খুব কাছের এক বন্ধু বলল “সাদিক তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস”।আমারও অবশ্য তাই ধারণা।

পড়াশোনার এই চারটা বছর আমার খুব কষ্টে গেছে।আমি বুঝে গেছি অর্থ কষ্ট কাকে বলে।আমার বাসা থেকে শুধু পড়াশোনার খরচটা দিত আমি বাকিটা চালিয়ে নিতাম।রেজাল্ট ভাল ছিল বলে ভার্সিটির হলে শুধু খাওয়া খরচটা দিয়ে থাকতাম।এখন হয়ত সেটা ছেড়ে দিতে হবে।এই চার বছর আমি পাই টু পাই খরচের হিসাব জানি।আমার অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করত কিন্তু টাকা নেই।দিনে দুইটা করে টিউশনি করতাম বুয়েট মেডিকেলের ছাত্র না বলে বেতনটা আহামরি ছিলনা।

আমার এই কথা গুলো কেউ জানেনা।তবুও আজ কেন বলছি জানিনা।হয়ত বুকের মধ্যে জমে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।আমি মানুষটা খুব সাধারণ হাজার হাজার লক্ষ টাকার আশাও আমার নেই।মাঝে মাঝে হিসাব করি সব হারাতে হারাতে কি কি বাকি আছে?অবাক হয়ে দেখি লিস্টটা খুব ছোট্ট আমার স্বপ্ন গুলোই বাকি আছে আর সুমাইয়া।আমি জানি ও হয়ত হারিয়ে যাবে ওর দ্বায়িত্ব শেষ।ওর কাজ ছিল আমাকে মানসিক ভাবে শক্ত করা আমাকে চিনিয়ে দেওয়া “তোমার জীবনটা খুব কষ্টের নিজেকে তৈরী কর।” আমি তৈরী ও চলে যাবে।আমার এ নিয়ে একটু দুঃখ নাই।কারণ আমি ওর কাছে ঋণী আমার জীবনটা জন্য।

আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।হয়ত আমার এই বাজে কচকচানি শুনতে যেয়ে আপনাদের অনেক সময় নষ্ট হল।আসলে আমার খূব হালকা লাগছে কথা গুলো বলতে পেরে।আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।

২,৮৮৮ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “অজানা ডাইরীর পাতা থেকে”

  1. রাব্বী আহমেদ (২০০৫-২০১১)

    ভাইয়া এই রাতে আমাকে কাঁদিয়ে ফেললেন।মাত্র ক্যাডেট থেকে বের হলাম।বুকে জমা একরাশ স্বপ্ন।আর সেই স্বপ্ন গুলো জমা রেখেছি সুমাইয়া আপুর মতই একটি মেয়ের চোখে।বাবা মা আর ছোট বোনের পর আমার জীবনে যে সবকিছু।খুব ভয় হয় পারবো কি স্বপ্ন গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে দুঃস্বপ্নের এই পৃথিবীতে?দোয়া করবেন. . . .

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    সাদিক ভাই, সময় সবচেয়ে বড় পথ্য; প্রায় সব ক্ষতই বেশ মিলিয়ে দেয় ধোয়াশায়। এভাবে আপসেট হয়েন না ভাই। 🙁


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. নাফিজ (০৩-০৯)

    ভাই, জীবনকে আপনার দিকে তাকিয়ে উপহাসের হাসি হাসতে দেবেন না । জীবনকে দেখিয়ে দিন, “দেখ ব্যাটা, তুই আমার মনমতো না চললেও আমি দাঁড়াতে পারি ।”
    গত একটা বছর ধরে ভাই আমিও নিজের মনের সাথে এইসব ব্যাপার নিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছি ভাই।কলেজ পরবর্তী লাইফটা শুরু করেছিলাম একগাদা স্বপ্ন নিয়ে, যেগুলো এখন অনেক দূর অতীতের স্মৃতি বলে মনে হয়। এক একবার মনে হয় সব ছেড়ে পালিয়ে যাই । আমার অবস্থা দেখে আমার এক বন্ধু কিছুদিন আগে আমাকে একটা বুদ্ধি দিলো । বুদ্ধিটা আপনাকে বলি- খুব জটিল কিছু না ।
    আপনার জীবনে কিছু গান, কিছু মুভি আছে না- যেগুলা দেখলে আপনি খুব inspired ফীল করেন? কিছু মানুষ আছে না, যাদের দেখলে আপনার মনের মধ্যে কিছু একটা করার তাড়না অনুভব করেন ? আপনার ডেস্কটপে একটা ফোল্ডার বানাবেন (আমি এটার নাম দিয়েছি ব্যাটারী ।) সেখানে এইসব গান, মুভি, মানুষ –এদেরকে বন্দী করে রাখবেন ।নিজের ভাবনাগুলোকে বন্দী করে রাখবেন । যখনি মন খারাপ হবে, পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হবে- ফোল্ডারটা খুলে বসবেন ।
    ভাই প্রত্যয়, উদ্যম- এগুলা আসলে মহাপুরুষদের শব্দ ।আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য প্রতি মুহুর্তেই ইন্সপিরেশন লাগে- আর এই তেল সবসময় থাকেনা- এক মুহুর্ত ভালো লাগে, তো আরেক মুহুর্তে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। বেঁচে থাকতে হলে বাঁচার তাগাদা প্রতি মুহুর্তে ধরে রাখতে হবে- আর এটাই সব মুশকিলের সমাধান ।
    ভালো থাকবেন ।


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
  4. ইসতিয়াক (২০০০-২০০৬)

    খুব ভাল কথা দোস্ত। আমি কখনো compare করি না। আমিও ইনফিরিওরিটি তে ভুগসি। success এর shortcut নিসি। কিন্তু বুঝলাম ধীরে ধীরে, life worths not only a good job, a safe life. কি পাইসি কি পাইনাই, এই হিসাব তাই এখন আর করি না। নিজের মত করে বেচে থাকলে তা অনেক মানুসের কাছে কুকুরের জীবন মনে হবে হয়ত, কিন্তু আমার কাছে এইটা এ meaningfull life. ভাল থাকিস। 🙂

    জবাব দিন
  5. হায়দার (৯৮ - ০৪)

    আমি ডাক্তার হয়েছি বেশিদিন হয়নি। প্রায় ৭ মাস। ছাত্র থাকা অবস্থায় অনেক কিছুই বুঝিনি, যা এখন বুঝি। এই দেশে যার রাজনৈতিক শক্তি নেই, বা মামা চাচা নেই, তার জন্য মেধা একটা অভিশাপ। নিজের চেয়ে অযোগ্য লোকের হাতে আমার প্রাপ্য সুযোগ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। অনেক হতাশা চেপে ধরতে চায়।
    নিজেকে তবু বোঝাই, লেগে থাকতে হবে। আমি তাই লেগে আছি, বাকীটা নিয়তি।
    তোমাকেও তাই বলি, লেগে থাক। আর সুমাইয়া কে যেতে দিওনা, কারন ঐ মুখটাই সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    কাজ সারছে। এই বয়সেই এত হতাশা কেন ভাই?? তুমি হয়তো আমার উপর বিরক্ত সবসময়েই তোমার বিরুদ্ধমতে কথা বলি বলে 😉 যাই হোক এবারেও বিরুদ্ধ মত নিচ্ছি। বেঁচে থাকার আসল অর্থ শুধু বেঁচে থাকাতেই। নিজের অস্তিত্ব অনুভব করাতেই। কী নাই তা ভেবে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে কী আছে তা ভেবে সুখী হও। আমি কখনও হতাশ হই না। কী আছে ভাবতে গেলে প্রথমে তুমি ভাবো তুমি একজন সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষ। কোন শারীরিক মানসিক প্রতিবন্ধিতা তোমার নেই। তাদের চাইতে কত কম বাঁধা পেরুতে হয় জীবনে তোমাকে। আমি শুধু একটা উদাহরণ বললাম। চারদিকে তাকাও চোখ কান খুলে। দেখবে কত মানুষের চেয়ে কত দিক দিয়ে ভালো আছে। জীবনকে উপভোগ করো ভোগবাদিতায় না ডুবে।
    তোমার জীবন সুখে শান্তিতে ভরে উঠুক এই কামনা রইলো।

    জবাব দিন
  7. সাইফুল (৯২-৯৮)

    সাদিক,

    তোমার বয়স এখনো অনেক কম। তোমার মধ্যে যে হতাশা কাজ করছে, আমার মনে হয় আমাদের সবাইকে একই রকম ভাবে হতাশার সময় পার করতে হয়েছে, কিংবা এখনো অনেকে হয়ত তা করে যাচ্ছে। আমি আমার কথা বলতে পারি, আমি এখনো হতাশার মধ্যে দিয়ে সময় পার করছি। এটাই জীবন, এভাবেই যেতে হবে সবাইকে।

    হাল ছেড়ো না কখনো। নাফিজ (০৩-০৯) এর সাজেশনস গুলো ট্রাই করে দেখতে পার, তবে একেকজন একেক ভাবে হতাশা দূর করার চেষ্টা করে।

    বন্ধুদের আড্ডা থেকে পালিয়ে থাক, এটা মনে হয় ঠিক না। সবাই জীবনে একই রকম হবে, একই সময় সাকসেস পাবে, সেটা কখনো ভাববে না। কারো সাকসেস আগে আসে, কারোটা পরে, এই যা...

    এত বড় এক ক্যাডেট পরিবারের মধ্যে আছো, তোমার চিন্তার কি আছে?

    চীয়ার আপ, ইয়াং ব্রাদার... :thumbup: । লাইফ ইজ স্টীল এহেড...

    জবাব দিন
  8. আসিফ মাহমুদ

    gadha tor cheyeo kharap obosthay achi.but,chupchap...shudhu ekjone upor bisshash ache...ami jani seta haralei ami shesh...just,Allah er upor bisshash rakh...ekebare ogadh bisshash...


    ...একদিন সবকিছু মুছে যায় হিমেল হাওয়ায়, স্মৃতিমাত্র লিখে নাম...সেইখানে আমিও ছিলাম...

    জবাব দিন
  9. আসিফ আব্দুল্লাহ (০৩-০৯)

    ভাই খুব খারাপ লাগল পড়ে । তবে এটাই বলবো, আপনি ক্যাডেট । ক্যাডেট তো কখনো হাল ছাড়ে না । আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন । দেখবেন একটা গতি অবশ্য্ই হবে । আর আপুর দোয়া তো সাথে আছেই 🙂


    @Asif@

    জবাব দিন
  10. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    তোমার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়, যা নেই তা নিয়ে আফসোস করে করে লাভ হবে না। শুধু কস্টই বাড়বে।

    সফল হবার জন্য শর্টকাট কোন রাস্তা নেই।

    জাস্ট হ্যাং অন ব্রো, ইউ ক্যান উইন।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইফুল

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।